আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়, “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করব। এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু পড়ার সময় অধ্যায়টির কাঠামো ও প্রধান বিষয়াবলি বুঝতে সাহায্য করবে, যা আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, এই সংক্ষিপ্ত বিবেচনা আপনাদের প্রস্তুতি আরও ভালো করতে সাহায্য করবে।

মুদ্রণযন্ত্র –
হাতে লেখা কোনো বিষয়কে সুস্পষ্টভাবে জানতে বা বুঝতে মানুষের কঠিন শ্রমের পরিবর্তে স্বল্পায়াসে যে যন্ত্রের সাহায্যে। মুদ্রিত বা ছাপা হয়, তা সাধারণভাবে মুদ্রণযন্ত্র (Printing Press) নামে পরিচিত।
মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানার আবিষ্কার –
সম্ভবত প্রথম মুদ্রণশিল্পের উদ্ভব হয় চিনে, হীরকসূত্র হল বিশ্বের প্রাচীনতম ছাপা বই। পরবর্তীকালে চিন থেকে ইউরোপে এর প্রসার ঘটে। জার্মানির জোহান ফস্ট সুড গুটেনবার্গ আনুমানিক 1440 খ্রিস্টাব্দে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ছাপাখানার জগতে এক বিস্ময়কর অবদান রাখেন। তিনি মুভেবল টাইপ ব্যবহার করেন। তাঁর এই ছাপাখানা থেকে 1455 খ্রিস্টাব্দে বাইবেল মুদ্রিত বা ছাপা হয়। এই কারণে গুটেনবার্গকে ‘ছাপাখানার জনক’ বলে অভিহিত করা হয়।

লিথোগ্রাফি –
লিথোগ্রাফি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘লিথো’ (পাথর) ও ‘গ্রাফি’ (লেখা) শব্দের সমন্বয়ে। মসৃণ পাথরের উপর রাসায়নিক পদ্ধতির সাহায্যে ছবি ছাপানোর পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয় 1796 খ্রিস্টাব্দে। এর উদ্ভাবক ছিলেন জোহান অ্যালয় সেনফেল্ডার।

ভারতে ছাপাখানা –
পোর্তুগিজরা ভারতে প্রথম মুদ্রণযন্ত্র নিয়ে আসে। তারা 1556 খ্রিস্টাব্দে গোয়ায় প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করে।
কলকাতায় প্রথম ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা হয় 1777 খ্রিস্টাব্দে। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জেমস অগাস্টাস হিকি। এই ছাপাখানা থেকেই 1780 খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল গেজেট প্রকাশিত হয়।

বাংলার বিভিন্ন ছাপাখানা এবং তার মালিকের নামসমূহের তালিকা –
ছাপাখানার নাম | ছাপাখানার মালিক |
শ্রীরামপুর মিশন প্রেস | উইলিয়ম কেরি, জোসুয়া মার্শম্যান ও উইলিয়ম ওয়ার্ড। |
ইউনিটেরিয়ান প্রেস | রামমোহন রায়। |
শব্দকল্পদ্রুম প্রেস | রাজা রাধাকান্ত দেব। |
মথুরানাথ যন্ত্র | হরিনাথ মজুমদার। |
বঙ্গদর্শন প্রেস | সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। |
ন্যাশনাল মেশিন প্রেস | অশ্বিনীকুমার দত্ত। |
সংস্কৃত যন্ত্র | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। |
বীণাযন্ত্র | রাজকৃষ্ণ রায়। |
হিন্দু প্যাট্রিয়ট প্রেস, বাঙালি প্রেস | কালীপ্রসন্ন সিংহ। |
ইউ রায় অ্যান্ড সন্স প্রেস | উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। |
সংবাদ প্রভাকর যন্ত্র | ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। |
শোভাবাজার প্রেস | কালীপ্রসন্ন দেব। |
বাঙ্গালা যন্ত্র | দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ। |
স্কুল বুক প্রেস | প্যারীচরণ সরকার। |
ন্যাশনাল প্রেস | নবগোপাল মিত্র। |
অমৃতপ্রবাহিনী যন্ত্র | শিশির কুমার ঘোষ। |
গুপ্ত প্রেস | জগজ্যোতি গুপ্ত। |
বেঙ্গলি প্রেস | গিরিশচন্দ্র ঘোষ। |
ইন্ডিয়ান মিরর প্রেস | কেশবচন্দ্র সেন। |
ব্রাহ্ম মিশন প্রেস | শিবনাথ শাস্ত্রী। |
বিভিন্ন সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশের দিলের তালিকা –
- The India Gazette – সোমবার।
- The Calcutta Chronicle – মঙ্গলবার।
- The Asiatic Mirror – বুধবার।
- The Calcutta Gazette – বৃহস্পতিবার।
- Hickey’s Bengal Gazette – শনিবার।
- The Recorder – রবিবার।
কলকাতার বাংলা ছাপাখানা –
প্রতি দশ বছরে | শনাক্ত সংখ্যা | অশনাক্ত সংখ্যা | মোট |
1800-1810 খ্রিস্টাব্দ | 5 | 0 | 5 |
1811-1820 খ্রিস্টাব্দ | 9 | 0 | 9 |
1821-1830 খ্রিস্টাব্দ | 24 | 1 | 25 |
1831-1840 খ্রিস্টাব্দ | 36 | 0 | 36 |
1841-1850 খ্রিস্টাব্দ | 36 | 0 | 36 |
1851-1860 খ্রিস্টাব্দ | 81 | 0 | 81 |
1861-1870 খ্রিস্টাব্দ | 82 | 3 | 85 |
1871-1880 খ্রিস্টাব্দ | 134 | 13 | 147 |
1881-1890 খ্রিস্টাব্দ | 137 | 135 | 272 |
1891-1900 খ্রিস্টাব্দ | 77 | 190 | 267 |
কাল অনির্ণীত | 4 | 0 | 4 |
মোট | 625 | 342 | 960 |
বিভিন্ন সংস্থা, তাদের নাম, প্রতিষ্ঠাকাল ও প্রতিষ্ঠাতা –
সংস্থা | সংস্থার পুরো নাম | প্রতিষ্ঠাকাল | প্রতিষ্ঠাতা |
IACS | Indian Association for the Cultivation of Science. | 1876 খ্রিস্টাব্দ | ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার। |
NCE | National Council of Education. | 1906 খ্রিস্টাব্দ | সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ। |
SPTE | Society for the Promotion of Technical Education. | 1906 খ্রিস্টাব্দ | তারকনাথ পালিত। |
BTI | Bengal Technical Institute. | 1906 খ্রিস্টাব্দ | তারকনাথ পালিত, প্রমথ দত্ত, শরৎ বসু প্রমুখ। |
বসু বিজ্ঞান মন্দির –
বসু বিজ্ঞান মন্দির বর্তমানে বোস ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত। এই প্রতিষ্ঠানে 8টি বিজ্ঞানের বিষয় পড়ানো হয় –
- Biochemistry,
- Biophysics,
- Microbiology,
- Division of Plant Biology,
- Molecular Medicine,
- Physics,
- Chemistry এবং
- Environment.
কার্লাইল, লিয়ন ও পেডলার সার্কুলার –
1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের যোগদান আটকানোর জন্য। কার্লাইল সার্কুলার, লিয়ন সার্কুলার ও পেডলার সার্কুলার জারি করা হয়।
কার্লাইল (R W Carlyle) –
কার্লাইল ছিলেন বাংলায় ব্রিটিশ সরকারের চিফ সেক্রেটারি। তিনি 1905 খ্রিস্টাব্দের 10 অক্টোবর এই সার্কুলারটি জারি করেন।
পি সি লিয়ন (PC Lyan) –
পি সি লিয়ন ছিলেন বঙ্গভঙ্গের পর নবগঠিত ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ প্রদেশের চিফ সেক্রেটারি। তিনি 1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর সার্কুলারটি জারি করেন।
পেডলার (Pedler) –
পেডলার ছিলেন বাংলায় সরকারের শিক্ষাবিভাগের ডিরেক্টর। তিনি 1905 খ্রিস্টাব্দের 21 অক্টোবর সার্কুলার। জারি করেন।
শান্তিনিকেতন –
ভুবনডাঙা –
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদার ভুবনমোহন সিংহের কাছ থেকে 20 বিঘা জমি 16 আনার বিনিময়ে কিনে নিয়েছিলেন। এই জায়গাটিকে ‘ভুবনডাঙা’ বলা হত।
শান্তিনিকেতন –
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে একটি বাড়ি তৈরি করেন। এই বাড়িটির নাম ছিল শান্তিনিকেতন। কালক্রমে সমগ্র এলাকাটি ‘শান্তিনিকেতন’ নামে পরিচিত হয়।
বিশ্বভারতী –
রবীন্দ্রনাথ 1913 খ্রিস্টাব্দে ‘নোবেল’ পুরস্কার পান এবং সেই পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তিনি শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ের > সম্প্রসারণ করেন এবং নতুন নামকরণ করেন ‘বিশ্বভারতী’। সেই বিষয়ে ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ‘The Nation’-এ লেখা হয় – “Using the money he received with his Nobel Prize for Literature in 1913, the school was expanded and renamed Visva-Bharati University. It grew to become one of India’s most renowned places of higher learning…..”
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা –
শান্তিনিকেতনে ‘বিশ্বভারতী’-র বিভিন্ন শাখা বা অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলি হল –
- পাঠভবন – ‘বিশ্বভারতী’-র মধ্যে সবথেকে পুরোনো বিদ্যালয়। 1901 খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ এটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম যে পাঁচ জন ছাত্রকে নিয়ে তিনি এই বিদ্যালয় শুরু করেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন – রবীন্দ্রপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুধীরঞ্জন দাস প্রমুখ।
- শিক্ষাসত্র – 1924 খ্রিস্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৈরি এই গ্রামীণ বিদ্যালয় পরে 1927 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে। স্থানান্তরিত হয়।
- শিক্ষাভবন – শিক্ষাভবন হল শান্তিনিকেতনের বিজ্ঞানচর্চাকেন্দ্র।
- বিদ্যাভবন – স্নাতকোত্তর এবং গবেষণাকেন্দ্র।
- কলাভবন – ললিতকলা বিষয়ক পড়াশোনা এবং গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে কলাভবনের খ্যাতি জগৎজোড়া।
- রবীন্দ্রভবন – রবীন্দ্রবিষয়চর্চা এবং গবেষণাকেন্দ্র।
- সংগীতভবন – নৃত্য, নাটক এবং সংগীতচর্চাকেন্দ্র।
- দর্শনভবন – শান্তিনিকেতনের দর্শনচর্চাকেন্দ্র।
- চিনাভবন – চিনা ভাষা এবং সংস্কৃতিচর্চাকেন্দ্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধ্যাপক তান ইয়ুন সানের সহযোগিতায় 1937 খ্রিস্টাব্দে চিনাভবন প্রতিষ্ঠা করেন।
- শিল্পভবন – শান্তিনিকেতনের শিল্পভবন বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্পচর্চার কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত।
শান্তিনিকেতনে ‘বিশ্বভারতী’ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বিশিষ্ট উপাচার্য –
- রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর (1951-1953 খ্রিস্টাব্দ)।
- ইন্দিরাদেবী চৌধুরাণী (1956 খ্রিস্টাব্দ, অস্থায়ী)।
- সত্যেন্দ্রনাথ বসু (1956-1958 খ্রিস্টাব্দ)।
- কালীদাস ভট্টাচার্য (1966-1970 খ্রিস্টাব্দ)।
- প্রতুল চন্দ্র গুপ্ত (1970-1975 খ্রিস্টাব্দ)।
- নিমাই সাধন বসু (1984-1989 খ্রিস্টাব্দ)।
- অশীন দাশগুপ্ত (1990-1991 খ্রিস্টাব্দ)।
- দিলীপ কুমার সিনহা (1995-2001 খ্রিস্টাব্দ)।
শিক্ষা বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধের তালিকা –
প্রবন্ধের নাম | প্রকাশকাল | সাময়িকপত্র |
শিক্ষার হেরফের | পৌষ, 1299 বঙ্গাব্দ | সাধনা। |
য়ুনিভার্সিটি বিল | আষাঢ়, 1311 বঙ্গাব্দ | বঙ্গদর্শন। |
ছাত্রদের প্রতি সম্ভাষণ | বৈশাখ, 1312 বঙ্গাব্দ | বঙ্গদর্শন। |
শিক্ষাসংস্কার | আষাঢ়, 1313 বঙ্গাব্দ | ভাণ্ডার। |
শিক্ষাসমস্যা | আষাঢ়, 1313 বঙ্গাব্দ | বঙ্গদর্শন। |
জাতীয় বিদ্যালয় | ভাদ্র, 1313 বঙ্গাব্দ | বঙ্গদর্শন। |
আবরণ | ভাদ্র, 1313 বঙ্গাব্দ | বঙ্গদর্শন। |
সাহিত্য সম্মিলন | বৈশাখ, 1333 বঙ্গাব্দ | – |
আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়, “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছে। এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু পড়ার সময় অধ্যায়টির কাঠামো ও প্রধান বিষয়াবলি বুঝতে সাহায্য করবে, যা আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত।
মন্তব্য করুন