মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

Solution Wbbse

আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” এর থেকে “সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন” আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা এর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরি বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পরীক্ষাতেও কাজে লাগবে। এই অধ্যায় থেকে স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এই প্রশ্নোত্তরগুলো সবাইকে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পড়ার শেষে এই অধ্যায়ের মুখ্য বিষয়গুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে এবং যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখতে পারবেন।

মাধ্যমিক ইতিহাস - বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা
Contents Show

মুদ্রণশিল্পের জনক কাকে, কেন বলা হয়?

মুদ্রণশিল্পের জনক – মুদ্রণশিল্পের জনক বলা হয় জার্মানির জোহান ফস্ট সুড গুটেনবার্গ-কে।

মুদ্রণশিল্পের জনক বলার কারণ – গুটেনবার্গ আনুমানিক 1440 খ্রিস্টাব্দে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের মাধ্যমে ছাপাখানার জগতে এক বিস্ময়কর অবদান রাখেন। তিনি মুভেবল টাইপ ব্যবহার করেন। তাঁর ছাপাখানা থেকে 1455 খ্রিস্টাব্দে বাইবেল মুদ্রিত হয়। এই সকল কারণে গুটেনবার্গকে ‘ছাপাখানার জনক’ বলে অভিহিত করা হয়।

ভারতবর্ষে প্রথম মুদ্রণশিল্পের আবির্ভাব কোথায়, কীভাবে হয়?

আবিসিনিয়ার পথে – ষষ্ঠ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে ইউরোপের পোর্তুগাল থেকে আফ্রিকার আবিসিনিয়ার পথে একটি জাহাজে করে যাত্রা করেছিলেন রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রধান বিশপ, কয়েকজন জেসুইট ধর্মযাজক এবং মুদ্রণযন্ত্র ও ছাপার কাজে দক্ষ কিছু কারিগর। উত্তমাশা অন্তরীপ থেকে আবিসিনিয়া যাওয়ার পথে গোয়ায় এই জাহাজটি কিছু সময় বিশ্রামের জন্য থেমেছিল।

গোয়ায় বসতি স্থাপন – কিন্তু এই সময় আবিসিনিয়ার সম্রাটের সঙ্গে জেসুইট মিশনারিদের মনোমালিন্যের কারণে আবিসিনিয়া না গিয়ে গোয়াতে মুদ্রণযন্ত্রটিকে নামিয়ে সেখানে পাকাপাকিভাবে বসতি স্থাপন করেন তারা।

মুদ্রণশিল্পের সূচনা – পোর্তুগিজদের হাত ধরে ভারতের গোয়াতে 1556 খ্রিস্টাব্দে প্রথম মুদ্রণযন্ত্র স্থাপিত হয় এবং এখান থেকেই ভারতের মুদ্রণশিল্পের সূচনা ঘটে।

পোর্তুগাল থেকে প্রকাশিত কয়েকটি বাংলা গ্রন্থের নাম লেখো।

পোতুর্গিজ পাদ্রি এবং তার শিষ্যরা সচেতনভাবে বাংলা গদ্যরচনার কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। ছাপার যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে ও রোমান হরফে বাংলা গ্রন্থ ছাপার ভার গ্রহণ করে তারা বাংলা গদ্য রচনায় বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

বাংলা গ্রন্থসমূহ – পোতুগাল থেকে প্রকাশিত কয়েকটি বাংলা গ্রন্থের নাম হল নিম্নরূপ –

  • দোম আন্তোনিওর লেখা ‘ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক সংবাদ’।
  • মনোত্রল-দ্য-আসুসম্প সাম্ -এর রচিত ‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ’।
  • মনোত্রল রচিত ‘বাংলা-পোতুর্গিজ শব্দকোষ’ ইত্যাদি।

ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে বাংলায় গণশিক্ষার পরিস্থিতি কিরূপ ছিল?

বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার প্রভাব ছিল সুদুরপ্রসারী। আঠারো শতকে ছাপাখানার প্রতিষ্ঠাকে আধুনিক যুগের সূচনা বলে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এর পূর্বেকার পরিস্থিতি ছিল অন্যরূপ।

ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে বাংলায় গণশিক্ষার পরিস্থিতি – ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে বাংলায় গণশিক্ষার অন্যতম মাধ্যমরূপে পাঠশালা, টোল, মক্তব, মাদ্রাসা ইত্যাদির উপস্থিতি লক্ষণীয়। সেখানে মুদ্রিত গ্রন্থ না থাকায় হাতে লেখা পুথির মাধ্যমে পড়ানো হত। এই সকল পুথি বা গ্রন্থগুলি বহুমূল্য হওয়ায় কেবল উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা সেগুলি কিনতে পারত। ফলে বহুসংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে গণশিক্ষা প্রসারলাভ করেনি।

বাংলা মুদ্রণের জয়যাত্রা কীভাবে শুরু হয়?

কোম্পানির উদ্দেশ্য – 1772 খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করার পরই উপলব্ধি করেছিল শাসক ও শাসিতের মধ্যে সম্পর্ক কায়েম রাখতে হলে ঘনিষ্ঠতর ভাষার সম্পর্ক জরুরি। এই প্রয়োজনের কথা মনে রেখেই শাসকগণ বাংলা ভাষাচর্চায় উৎসাহ দেখান এবং এর ফলেই বাংলা মুদ্রণের সূচনা হয়।

হ্যালহেডের ব্যাকরণ বই – সুদূর ইংল্যান্ড থেকে বাংলায় আগত ব্রিটিশ কর্মচারীগণকে বাংলা ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার জন্য 1778 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেডের যুগান্তকারী ব্যাকরণ গ্রন্থটিতেই প্রথম সঞ্চালনযোগ্য বাংলা মুদ্রাক্ষর ব্যবহৃত হয়। বাংলা মুদ্রণের জয়যাত্রা এখান থেকেই শুরু হয়।

বাংলায় ছাপাখানা প্রসারের কারণ কী?

বাংলায় ছাপাখানা প্রসারের পিছনে বিভিন্ন কারণ ছিল।

ছাপাখানার প্রসারের কারণ –

ছাপাখানার প্রসারের কারণগুলি হল –

  • ক্রমবর্ধমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান – বাংলায় প্রচলিত দেশজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ফলে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর পাঠ্যবই ছাপার জন্য ছাপাখানা দরকার হয়।
  • মুনাফা – ছাপাখানার ব্যাবসাতে প্রচুর মুনাফা হয়। তাই নতুন নতুন উদ্যোগীরা ছাপাখানা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন।

কে, কবে বাংলায় প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন?

ইউরোপে ছাপাখানা আবিষ্কারের প্রায় শতবর্ষ পরে পোর্তুগিজরা গোয়ায় ছাপাখানা স্থাপন করে 1556 খ্রিস্টাব্দে।

বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা –

  • প্রতিষ্ঠাতা – বাংলায় ছাপাখানার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জেমস অগাস্টাস হিকি নামে একজন আইরিশ মুদ্রাকর।
  • প্রতিষ্ঠাকাল – 1777 খ্রিস্টাব্দে হিকি এই ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

বাংলায় ছাপাখানার বিকাশকে কয়টি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়?

জার্মানির মেইনজ শহরে গুটেনবার্গের ছাপাখানা স্থাপনের পর থেকেই মুদ্রণশিল্পে বিপ্লবের সৃষ্টি হয়। আঠারো শতকের শেষদিকে বাংলায় ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা হয় এবং উনিশ শতকে বাংলায় বিভিন্নভাবে ছাপাখানার বিকাশ ঘটে।

বাংলায় ছাপাখানার বিকাশের পর্যায়সমূহ –

বাংলায় ছাপাখানার বিকাশকে নিম্নলিখিত কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায় –

  • সূচনাপর্ব – ছাপাখানার প্রথম পর্যায় ছিল 1667 থেকে 1777 খ্রিস্টাব্দ সময়কাল পর্যন্ত।
  • আদি পর্যায় – 1778 থেকে 1834 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল ছাপাখানার বিকাশের আদি পর্যায় নামে পরিচিত।
  • মধ্যবর্তী পর্যায় – 1835 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1934 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মধ্যবর্তী পর্যায়।
  • আধুনিক পর্যায় – 1935 খ্রিস্টাব্দ থেকে ছাপাখানার বিকাশের আধুনিক পর্যায়ের সূচনা হয়।

বাংলার মুদ্রণক্ষেত্রে শ্রীরামপুর মিশনারিদের অবদান লেখো।

বাংলার মুদ্রণক্ষেত্রে শ্রীরামপুর মিশনারিরা বিশিষ্ট অবদান রাখেন।

গ্রন্থ প্রকাশনা – বাইবেল -এর 26টি ভাষায় অনুবাদ, ভূগোল, পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়ন, শারীরবিদ্যার বই এবং রামায়ণ, মহাভারত, হিতোপদেশ, বত্রিশ সিংহাসন প্রভৃতি সংস্কৃত গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করা হয়।

সংবাদপত্র প্রকাশনা – বাংলা মাসিক পত্রিকা ‘দিগদর্শন’, বাংলা সাপ্তাহিক ‘সমাচার দর্পণ’ এবং ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়া’ প্রকাশিত হয়।

বাংলার মুদ্রণক্ষেত্রে শ্রীরামপুর মিশনারিদের অবদান – এই সকল প্রকাশনার মাধ্যমে মিশনারিরা শুধু বাংলার মানুষের মানসিক উন্নয়নেই নয়, জাতীয় চেতনা ও জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তুলতেও সাহায্য করেন।

বাংলায় কীভাবে সরকারি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়?

বাংলায় প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন জেমস অগাস্টাস হিকি 1777 খ্রিস্টাব্দে। বড়োলাট ওয়ারেন হেস্টিংস হিকির ‘বেঙ্গল গেজেট’-এ সমালোচিত হয়ে সরকারি ছাপাখানা তৈরির পরিকল্পনা করেন।

বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশনা – ওয়ারেন হেস্টিংস কোম্পানির কেরানি চার্লস উইলকিনসকে নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড -এর লেখা ‘এ গ্রামার অফ দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ ছাপার দায়িত্ব দেন। উইলকিনস এই উদ্দেশ্যে চুঁচুড়ায় একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

ছাপাখানা অধিগ্রহণ – সরকার এরপর উইলকিনসকে ছাপাখানার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করে। ছাপাখানাটি অধিগ্রহণ করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় 1781 খ্রিস্টাব্দে।

নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড বিখ্যাত কেন?

বাংলা ছাপাখানার ইতিহাসে নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড অন্যতম স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।

নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড বিখ্যাত হওয়ার কারণ –

  • ইংরেজ কোম্পানির কর্মচারী হিসেবে মুরশিদাবাদে থাকাকালীন নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড বাংলা শেখেন এবং 1776 খ্রিস্টাব্দে লেখেন হিন্দু আইনশাস্ত্রের অনুবাদ ‘আ কোড অফ জেন্টু ল’জ’।
  • তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজ কর্মচারীদের বাংলা শিক্ষার জন্য ‘এ গ্রামার অফ দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থের কিছু বাংলা উদ্ধৃতি ছাপানোর উদ্দেশ্যে বাংলা হরফ তৈরি হয়।

আঠারো শতকে কলকাতার সর্ববৃহৎ ছাপাখানার নাম লেখো। এটি কে প্রতিষ্ঠা করেন?

আঠারো শতকে কলকাতার সর্ববৃহৎ ছাপাখানার নাম হল – অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস।

আঠারো শতকে কলকাতার সর্ববৃহৎ ছাপাখানার প্রতিষ্ঠাতা – ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী চার্লস উইলকিনস চুঁচুড়াতে যে ছাপাখানা স্থাপন করেছিলেন 1778 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে সেটি সরকারি ছাপাখানায় পরিণত হয়। এই ছাপাখানার নাম হয় ‘অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস’।

অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস সম্পর্কে কী জান?

1778 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1800 খ্রিস্টাব্দ সময়কালের মধ্যে কলকাতায় অন্তত 17টি ছাপাখানা ছিল। যার মধ্যে সরকারি ছাপাখানা হিসেবে পরিচিত ছিল অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস।

অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস –

  • প্রতিষ্ঠা – চার্লস উইলকিনস হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় একটি প্রেস স্থাপন করেছিলেন। তাঁর এই ছাপাখানাটিই 1778 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে সরকারি ছাপাখানায় পরিণত হয়। নাম হয় অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস।
  • প্রকাশনা – সরকারি কাগজপত্র এই ছাপাখানায় ছাপা হত। পরবর্তীকালে 1784 খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস -এর প্রচেষ্টায় এখান থেকে প্রকাশিত হয় ‘ক্যালকাটা গেজেট’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। 1815 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার অনারেবল কোম্পানিজ প্রেসের পরিবর্তে সরকারি কাগজপত্র ছাপার দায়িত্ব মিলিটারি অরফ্যান প্রেস-কে অর্পণ করে।

বাংলায় প্রথম যুগের সংবাদপত্রের পরিচয় দাও।

প্রথম যুগের সংবাদপত্রসমূহ –

  • জেমস অগাস্টাস হিকি-র ‘বেঙ্গল গেজেট’ (1 জানুয়ারি, 1780 খ্রিস্টাব্দ)।
  • বার্নার্ড মেসেনিক -এর ‘ইন্ডিয়া গেজেট’ (নভেম্বর, 1783 খ্রিস্টাব্দ)।
  • বেঙ্গল জার্নাল ও ইন্ডিয়ান ওয়ার্ল্ড (1785 খ্রিস্টাব্দ)। এর সম্পাদক ছিলেন আমেরিকাবাসী আইরিশ উইলিয়ম ডুয়েন।
  • চার্লস ম্যাকলিয়েন – এর ‘বেঙ্গল হরকরা’ (1793 খ্রিস্টাব্দ)। এ ছাড়া ‘দ্য ক্যালকাটা ক্রনিকল’, ‘দ্য ক্যালকাটা গেজেট’, ‘দ্য এশিয়াটিক মিরর’ প্রভৃতি সংবাদপত্রও ছিল উল্লেখযোগ্য। এইসব সংবাদপত্রগুলির সবকটিই বিদেশিদের দ্বারা পরিচালিত হত।

বাংলার প্রথম সংবাদপত্র কোনটি? এর প্রকাশক কে ছিলেন?

বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার সূত্রে প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।

সংবাদপত্র – বাংলার প্রথম সংবাদপত্র ছিল ‘বেঙ্গল গেজেট’। সংবাদপত্রটি ছিল সাপ্তাহিক এবং ইংরেজি মাধ্যম।

প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশক – এই সংবাদপত্রের প্রকাশক ছিলেন জেমস অগাস্টাস হিকি। প্রকাশকাল ছিল 1 জানুয়ারি, 1780 খ্রিস্টাব্দ।

প্রথম সংবাদপত্রের পরিণতি – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদের ফলে 1782 খ্রিস্টাব্দে সংবাদপত্রটি বন্ধ হয়ে যায়।

শ্রীরামপুর মিশনারিরা কেন বাংলা ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশ করেন?

শ্রীরামপুর মিশনারিদের বাংলা ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশের কারণ –

শ্রীরামপুর মিশনারিদের বাংলা ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশের কারণ ছিল –

  • খ্রিস্টধর্ম প্রচার – শ্রীরামপুর মিশনারিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল খ্রিস্টধর্ম প্রচার করা। খ্রিস্টধর্ম প্রচারের মাধ্যমে ইংরেজপ্রীতি সৃষ্টি করা ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।
  • সংবাদ প্রচার – দেশ-বিদেশের খবর, স্কুল-কলেজের প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি সংবাদ প্রচারের জন্য বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।
  • মুনাফা – বিপুল সংখ্যক বাংলাভাষী জনগণের জন্য বাংলা সংবাদপত্র একচেটিয়া বাজার ও মুনাফা লাভ করবে এই ধারণা থেকে বাংলা সংবাদপত্র ‘দিগদর্শন’, ‘সমাচার দর্পণ’ প্রভৃতি প্রকাশিত হয়।

শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত দুটি সংবাদপত্রের নাম লেখো।

1800 খ্রিস্টাব্দের 10 জানুয়ারি মার্শম্যান, ওয়ার্ড ও উইলিয়ম কেরি ‘শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে তাঁরা প্রথম কাঠের তৈরি মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করেন।

শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত দুটি সংবাদপত্রসমূহ –

উইলিয়ম কেরির পরিচালনায় শ্রীরামপুর মিশন প্রেস হয়ে উঠেছিল এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাপাখানা। মিশনারিদের উদ্যোগেই প্রকাশিত দুটি সংবাদপত্রের নাম হল –

  1. বাংলার প্রথম সাময়িকপত্র ‘দিগদর্শন’।
  2. সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘সমাচার দর্পণ’।

উনিশ শতকের বাংলায় কোন্ কোন্ সংস্থা পাঠ্যবই প্রকাশনা ও সরবরাহ করত?

উনিশ শতকের বাংলায় বই প্রকাশনা ও সরবরাহের জন্য কয়েকটি সংস্থা গড়ে ওঠে।

উনিশ শতকের বাংলায় বই প্রকাশনা ও সরবরাহ সংস্থা –

  • প্রকাশনা – বিভিন্ন মিশনারি সভাসমিতি, পত্রপত্রিকা ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ছাপাখানা থেকে পাঠ্যবই প্রকাশিত হয়।
  • সরবরাহ – ক্যালকাটা বুক সোসাইটি, ভার্নাকুলার লিটারেচার সোসাইটি, ক্যালকাটা খ্রিস্টান ট্রাস্ট অ্যান্ড বুক সোসাইটি প্রভৃতি সংস্থা পাঠ্যবই সরবরাহ করত।

বাংলার প্রথম যুগের মুদ্রাকর কারা ছিলেন?

প্রথম যুগের মুদ্রাকর – গ্রাহাম শ -এর গবেষণা থেকে জানা যায়, 1770 থেকে 1800 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলায় চার জন মুদ্রাকর ছিলেন। এঁরা হলেন –

  • জেমস অগাস্টাস হিকি – তিনি বেঙ্গল গেজেট প্রকাশনার কাজ করেন।
  • জন জাকারিয়া কেরনিয়ানডার – তিনি ইংরেজি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেন।
  • বার্নার্ড মেসেনিক – তিনি ইন্ডিয়া গেজেট প্রকাশ করেন।
  • চার্লস উইলকিনস – তিনি হ্যালহেডের বাংলা ব্যাকরণ বই প্রকাশ করেন।

বাংলার ছাপাখানার ইতিহাসে জেমস অগাস্টাস হিকির অবদান কী ছিল?

বাংলার ছাপাখানার ইতিহাসে জেমস অগাস্টাস হিকি একজন উদ্যোগী ও অগ্রণী ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

অবদান –

  • প্রথম উদ্যোগী – হিকির উদ্যোগেই কলকাতায় প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে।
  • প্রথম প্রকাশক – হিকি ছিলেন বাংলাদেশ তথা ভারতের প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশক। তিনি সাপ্তাহিক ইংরেজি পত্রিকা বেঙ্গল গেজেট প্রকাশনা করতেন।
  • প্রথম সাংবাদিক – পেশাদার সাংবাদিক না হলেও তিনিই বাংলা তথা ভারতের সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক ছিলেন।

হিকির ছাপাখানায় কী ধরনের কাজ হত?

অথবা, হিকির ছাপাখানা বিখ্যাত কেন?

জেমস অগাস্টাস হিকি বাংলার রাজধানী কলকাতায় প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন 1777 খ্রিস্টাব্দে।

হিকির ছাপাখানার কাজ –

  • বাণিজ্যিক কাজ – এই ছাপাখানায় –
    • ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামরিক বিল ছাপা হত।
    • ব্যাবসাবাণিজ্যের বাট্টার কাগজপত্র ছাপানো হত।
  • প্রকাশনা – এই ছাপাখানায় সংবাদপত্র ছাপা ও প্রকাশনার কাজও করা হত।

হিকির ছাপাখানার পরিণতি – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদের ফলে হিকির সংবাদপত্র ও ছাপাখানা বন্ধ হয়ে যায়।

হিকির বেঙ্গল গেজেট পত্রিকা প্রকাশের দুটি উদ্দেশ্য লেখো।

হিকির বেঙ্গল গেজেট পত্রিকা প্রকাশের দুটি উদ্দেশ্য –

হিকির বেঙ্গল গেজেট পত্রিকা প্রকাশের দুটি উদ্দেশ্য হল –

  1. হিকি উপলব্ধি করেন যে, সমগ্র বাংলা প্রেসিডেন্সিতে যেসব ইউরোপীয়দের বসবাস, তাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য একটি ইংরেজি পত্রিকা থাকলে ভালো হয়। কলকাতা সেই সময়ে হয়ে উঠেছিল বাণিজ্যনগরী। তাই তিনি স্বল্প অর্থের ছাপাখানার ব্যাবসার কথা ভাবেন। কারণ – একটা কাগজ প্রকাশিত হলে তাতে বিজ্ঞাপনের অভাব হবে না এবং তার অনেক ক্রেতাও পাওয়া যাবে।
  2. এ ছাড়াও ওয়ারেন হেস্টিংসের কাছ থেকে যে অমানবিক ব্যবহার হিকি পেয়েছিলেন তার প্রতিশোধ গ্রহণার্থে তিনি প্রকাশনার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন।

হিকির বেঙ্গল গেজেট -এর প্রকৃতি কেমন ছিল?

হিকির বেঙ্গল গেজেট -এর সংবাদপত্রের প্রকৃতি – হিকির বেঙ্গল গেজেট ছিল একটি ইংরেজি মাধ্যম সাপ্তাহিকপত্র। এই সংবাদপত্রে –

  1. ব্যাবসাবাণিজ্য সম্পর্কিত সংবাদ ও বিজ্ঞাপন থাকত।
  2. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী থেকে লাটসাহেবের কাজকর্মের সমালোচনা ও কেচ্ছাকাহিনিও প্রকাশ করা হত এতে। শহরের ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা এই সংবাদপত্রের গ্রাহক ছিলেন।

চার্লস উইলকিনস কে ছিলেন?

অথবা, বাংলা মুদ্রণ জগতে চার্লস উইলকিনস -এর অবদান লেখো।

বাংলার মুদ্রণ জগতের ইতিহাসে চার্লস উইলকিনস -এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বাংলা হরফ প্রবর্তন – বড়োলাট ওয়ারেন হেস্টিংস -এর নির্দেশে কোম্পানির কেরানি চার্লস উইলকিনস হ্যালহেডের বাংলা ব্যাকরণ বই ছাপানোর দায়িত্ব নেন। ত্রিবেণীর বিখ্যাত হরফনির্মাতা পঞ্চানন কর্মকার উইলকিনসের নির্দেশমতো বাংলা হরফ তৈরি করেন। এরপর উইলকিনস চুঁচুড়ায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করে বাংলা হরফের ব্যাকরণ গ্রন্থ এ গ্রামার অফ দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রকাশ করেন।

চার্লস উইলকিনস -এর অবদান – এভাবে বাংলা হরফ তৈরি করিয়ে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রকাশনা করে চার্লস উইলকিনস বাংলা ভাষার বিকাশে বিশেষ অবদান রেখে গিয়েছেন।

কাকে, কেন বাংলার গুটেনবার্গ বলে অভিহিত করা হয়?

বাংলা ভাষার বিকাশে চার্লস উইলকিনস -এর অবদান অনস্বীকার্য।

বাংলার গুটেনবার্গ – চার্লস উইলকিনস-কে ‘বাংলার গুটেনবার্গ’ আখ্যা দেওয়া হয়।

বাংলার গুটেনবার্গ বলে অভিহিত করার কারণ – জার্মানিতে প্রথম সঞ্চালনযোগ্য মুদ্রাক্ষর প্রবর্তন করে আলোড়ন ফেলে দেন গুটেনবার্গ। ঠিক তেমনই ভারতে প্রথম সঞ্চালনযোগ্য বাংলা মুদ্রাক্ষর সৃষ্টি করেন চার্লস উইলকিনস। তাই তাঁকে ‘বাংলার গুটেনবার্গ’ বলা হয়।

বাংলার ছাপাখানার বিকাশে পঞ্চানন কর্মকারের ভূমিকা কী ছিল?

বাংলা হরফে ও বাংলা ভাষায় মুদ্রণের ক্ষেত্রে পঞ্চানন কর্মকারের মৌলিক অবদান রয়েছে।

বাংলা হরফ তৈরি – ত্রিবেণীর পঞ্চানন কর্মকার ধাতুর উপর নকশা খোদাই -এর পুরুষানুক্রমিক জীবিকার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ছেনি দিয়ে কাটা বাংলা হরফ তৈরি করেন। এই কাজের তত্ত্বাবধান করেন চার্লস উইলকিনস। এই হরফেই হ্যালহেডের বাংলা ব্যাকরণ মুদ্রিত হয়।

এরপর তিনি শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানায় যোগ দেন। এইভাবে পঞ্চানন কর্মকার পেশাগত কাজের সূত্রে বাংলা মুদ্রণ জগতে এক বিপ্লবের সূত্রপাত করেছিলেন।

বাংলা লাইনোটাইপ প্রবর্তনের গুরুত্ব কী?

1777 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রথম মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা করেন জেমস অগাস্টাস হিকি।

লাইনোটাইপ বাংলা হরফ – বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর বাংলা অক্ষরের ক্রমোন্নতি ঘটে। পঞ্চানন কর্মকারের বাংলা হরফের পর সুরেশচন্দ্র মজুমদার লাইনোটাইপ নামে আরও উন্নত বাংলা হরফ তৈরি করেন।

বাংলা লাইনোটাইপ প্রবর্তনের গুরুত্ব – বাংলা ভাষার লাইনোটাইপের আবির্ভাব বাংলা ভাষা, সাহিত্য এবং সর্বোপরি বাঙালি জনমানসে এক যুগান্তকারী প্রভাব বিস্তার করেছিল।

বাংলা ছাপার হরফের বিবর্তন সম্পর্কে লেখো।

নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড -এর ব্যাকরণ গ্রন্থটি ছাপানোর জন্য চার্লস উইলকিনস সর্বপ্রথম শক্ত ইস্পাতের উপর বাংলা হরফগুলি খোদাই করে সঞ্চালনযোগ্য মুদ্রাক্ষর তৈরি করেন। এই কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেন পঞ্চানন কর্মকার।

বাংলা ছাপার হরফের বিবর্তন – বাংলা ছাপার হরফ নানাভাবে বিবর্তিত হয়েছে। যথা –

  • হ্যালহেড সাহেবের ব্যাকরণ গ্রন্থের হরফগুলি আকার ও উচ্চতায় ছিল বেশ বড়ো মাপের।
  • 1778 খ্রিস্টাব্দে পরে হরফের আকার ও উচ্চতা কমিয়ে আনা হয়।
  • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা হরফের মধ্যে শৃঙ্খলা আনয়নের উদ্দেশ্যে স্বরবর্ণ, ব্যাঞ্জনবর্ণ ইত্যাদির জন্য পৃথক হরফের অবতারণা করেন।

বাংলা ছাপাখানার ইতিহাসে 1778 খ্রিস্টাব্দ গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আধুনিক যুগে উত্তরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল আধুনিক শিক্ষা আর আধুনিক শিক্ষার অন্যতম প্রধান উপাদান হল ছাপাখানা। বাংলা ছাপাখানার ইতিহাসে 1778 খ্রিস্টাব্দ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

বাংলা ছাপাখানার ইতিহাসে 1778 খ্রিস্টাব্দের গুরুত্ব – নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড কোম্পানির কর্মচারিদের বাংলা শিক্ষার উদ্দেশ্যে 1778 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজি ভাষায় ‘A Grammar of the Bengal Language’ নামক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থে তিনি উদাহরণস্বরূপ কৃত্তিবাস, কাশীরাম দাস প্রমুখের রচনা থেকে উদ্ধৃতি ব্যবহার করেন। ফলে ওয়ারেন হেস্টিংস -এর নির্দেশে এই গ্রন্থ ছাপানোর জন্য বাংলা হরফ প্রস্তুত করেন চার্লস উইলকিনস। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেন পঞ্চানন কর্মকার।

বাংলা হরফের আবিষ্কার বাংলা ছাপাখানায় নবজাগরণের সূচনা করে। উপরোক্ত কারণগুলির জন্য বাংলা ছাপাখানার ইতিহাসে 1778 খ্রিস্টাব্দ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে 1800 খ্রিস্টাব্দ গুরুত্বপূর্ণ কেন?

1800 খ্রিস্টাব্দ ছিল বাংলা মুদ্রণশিল্পের ইতিহাসে এক স্মরণীয় বছর। এর কারণগুলি হল –

শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনের প্রতিষ্ঠা – এই বছর ব্যাপটিস্ট মিশনারি সম্প্রদায় বাংলার শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশনের প্রতিষ্ঠা করেন।

ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ প্রতিষ্ঠা – অপরদিকে লর্ড ওয়েলেসলি কলকাতায় আগত ব্রিটিশ সিভিলিয়ানদের এদেশের ভাষা, আদবকায়দা ইত্যাদি শেখানোর জন্য ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ স্থাপন করেন।

পারস্পরিক সম্পর্ক – এই দুটি প্রতিষ্ঠান ভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলায় প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও উভয়ের মধ্যে এক সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, যার ফলশ্রুতি হিসেবে একাধারে বাংলা গদ্যের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল ও অন্যদিকে বাংলার মুদ্রণের গতি ত্বরান্বিত হয়েছিল।

ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ কীভাবে বাংলা মুদ্রণশিল্পে গতি এনেছিল?

1800 খ্রিস্টাব্দের 4 মে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে মুদ্রণশিল্পে গতির সঞ্চার – ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ বাংলা মুদ্রণশিল্পে গতির সঞ্চার করেছিল। এই কলেজের ইংরেজ সিভিলিয়ানদের দেশীয় ভাষাতে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে বাংলায় মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তকের প্রয়োজন হয়। ফলে শ্রীরামপুর মিশনের প্রেস ছাড়াও সংস্কৃত প্রেস, হিন্দুস্থানি প্রেস-এ বাংলা পাঠ্যবই ছাপা হতে শুরু করলে মুদ্রণশিল্পে গতির সঞ্চার হয়।

সজনীকান্ত দাস তাঁর ‘বাংলা গদ্যের প্রথম যুগ’ গ্রন্থে কী উল্লেখ করেছেন?

সজনীকান্ত দাস তাঁর ‘বাংলা গদ্যের প্রথম যুগ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন – “1778 খ্রিস্টাব্দকেই আমরা বাংলা গদ্যের ঐতিহাসিক যুগের আরম্ভ বৎসর বলিব।”

মুদ্রণ শিল্পের ইতিহাসে ওয়ারেন হেস্টিংস স্মরণীয় কেন?

মুদ্রণশিল্পের ইতিহাসে ওয়ারেন হেস্টিংস এক অন্যতম ব্যক্তিত্ব।

মুদ্রণ শিল্পের ইতিহাসে ওয়ারেন হেস্টিংস -এর অবদান –

  • গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস মুদ্রণের ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন। নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড -এর ব্যাকরণ গ্রন্থ ছাপানোর ব্যয়ভার তিনি গ্রহণ করেন। এই উদ্দেশ্যে হেস্টিংস 15 হাজার টাকা প্রদান করেন।
  • হ্যালহেড -এর গ্রন্থ ছাপানোর জন্য তিনি বিলেত থেকে কাগজ আনার ব্যবস্থাও করেন।
  • ওয়ারেন হেস্টিংসের নির্দেশে 1778 খ্রিস্টাব্দে চার্লস উইলকিনস পঞ্চানন কর্মকারের সহায়তায় বাংলা হরফ প্রস্তুত করেন। এই বাংলা হরফের আবিষ্কার বাংলার ছাপাখানায় নবজাগরণের সূচনা করে।

বাংলা ভাষাচর্চায় ওয়ারেন হেস্টিংস কেন উৎসাহী ছিলেন?

বাংলা ভাষাচর্চায় উৎসাহের কারণ – ওয়ারেন হেস্টিংসের সাংস্কৃতিক কর্মনীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল শাসক ও শাসিতের মধ্যে মানসিক সেতুবন্ধন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, শাসক ও শাসিতের মধ্যে মানসিক যোগসূত্র বা ভাবগত আদানপ্রদানের এক সহজ মাধ্যম গড়ে তুলতে না পারলে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে দৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপন করা যাবে না। তাই তিনি দেশীয় ভাষাচর্চার গুরুত্ব বুঝে তার চর্চায় উৎসাহী হয়েছিলেন।

বাংলা ভাষাচর্চা প্রকাশনায় সহায়তা – এই কারণেই হেস্টিংস বিভিন্ন প্রকাশককে প্রকাশনার কাজে সাহায্য করেছিলেন। তাঁর সহায়তায় হ্যালহেড সাহেবের ব্যাকরণ বইটি প্রকাশিত হয়েছিল।

সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় ছাপা বই কবে, কার দ্বারা প্রকাশিত হয়?

বাংলা হরফে ছাপা বই – হ্যালহেড সাহেবের ব্যাকরণ বইটি মূলত ছিল ইংরেজি বই। তবে এর উদাহরণগুলি ছিল বাংলা হরফে ছাপা। সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় ছাপা বই প্রকাশিত হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কলকাতার প্রেস থেকে। জোনাথান ডানকান 1784-1785 খ্রিস্টাব্দে বাংলায় অনুদিত কতকগুলি আইনের বই প্রকাশ করেন, যা ছিল সম্পূর্ণ বাংলা ভাষা ও হরফে ছাপা।

ছাপাখানাগুলির ব্যাবসায়িক সুযোগ বৃদ্ধির দুটি কারণ কী?

জার্মানির গুটেনবার্গ ছাপাখানা আবিষ্কার করলে ইউরোপের মুদ্রণ জগতে বিপ্লব ঘটে। পোর্তুগিজদের মাধ্যমে প্রায় শতবর্ষ পরে ভারতের গোয়ায় ছাপাখানার প্রচলন হয় (1556 খ্রিস্টাব্দ)। এর আরও 200 বছর পর ছাপাখানা তৈরি হয় কলকাতায়।

ছাপাখানাগুলির ব্যাবসায়িক সুযোগ বৃদ্ধির কারণ –

ছাপাখানাগুলির ব্যাবসায়িক সুযোগ বৃদ্ধির কারণগুলি হল নিম্নরূপ –

  • স্কুলপাঠ্য বইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি – উনিশ শতকে শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন বইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুলপাঠ্য বইয়ের চাহিদা বৃদ্ধির ফলেই ছাপাখানার ব্যাবসায়িক উদ্যোগ গড়ে ওঠে। এক শ্রেণির শিক্ষিত বাঙালি ছাপাখানার ব্যাবসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে।
  • সাহিত্যচর্চা – সাহিত্যচর্চা বিকাশলাভ করায় ছাপাখানাগুলির ব্যাবসায়িক সুযোগ অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।

ছাপাখানা শিল্পে বাঙালি উদ্যোগীদের পরিচয় দাও।

ছাপাখানা শিল্পে বাঙালি উদ্যোগীগণ –

  • গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য – শ্রীরামপুর মিশনারি ছাপাখানার কম্পোজিটার গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য 1818 খ্রিস্টাব্দে ‘বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস’ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • লেখকগোষ্ঠী – পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও মদনমোহন তর্কালঙ্কার ‘সংস্কৃত যন্ত্র’ এবং রাজকৃষ্ণ রায় ‘বীণাযন্ত্র’ নামে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ইউ রায় অ্যান্ড সন্স – সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী 1895 খ্রিস্টাব্দে ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

এইভাবে বাংলাদেশে ছাপাখানা ব্যবসায়ে বাঙালি উদ্যোগীরা এগিয়ে আসেন।

মদনমোহন তর্কালঙ্কার বিখ্যাত কেন?

অথবা, শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের অবদান কী ছিল?

মদনমোহন তর্কালঙ্কার ছিলেন সংস্কৃত কলেজের ছাত্র এবং বিদ্যাসাগরের সতীর্থ। অসাধারণ কবিত্বশক্তির জন্য সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপকমণ্ডলী তাঁকে ‘কাব্যরত্নাকর’ উপাধি দেন।

মদনমোহন তর্কালঙ্কার অবদান –

মদনমোহন তর্কালঙ্কার এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।

  • সংস্কৃত যন্ত্র স্থাপন – 1847 খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি ‘সংস্কৃত যন্ত্র’ নামক ছাপাখানা স্থাপন করেন।
  • শিশুশিক্ষা বিষয়ে – শিশুদের মধ্যে শিক্ষাপ্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি ‘শিশুশিক্ষা’ নামক গ্রন্থ রচনা করে পাঠ্যপুস্তকের অভাব স্বল্প হলেও দূর করেছিলেন। ‘পাখী সব করে রব/রাতি পোহাইল’ কবিতাটি তাঁর রচনা।
  • স্ত্রীশিক্ষা বিষয়ে – মদনমোহন তর্কালঙ্কার স্ত্রীশিক্ষার সপক্ষে ‘সর্বশুভকরী’ নামক মাসিক পত্রিকায় দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন।

বর্ণপরিচয় প্রকাশিত হওয়ার আগে বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত শিশুশিক্ষা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

1955 খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর কর্তৃক রচিত ‘বর্ণপরিচয়’ প্রকাশিত হওয়ার আগে বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে শিশুশিক্ষা বিষয়ক নানা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

শিশুশিক্ষা বিষয়ক গ্রন্থসমূহ –

বর্ণপরিচয় -এর পূর্বে প্রকাশিত শিশুশিক্ষা বিষয়ক গ্রন্থগুলি হল নিম্নরূপ –

  • 1815 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন থেকে প্রকাশিত ‘লিপিধারা’।
  • 1821 খ্রিস্টাব্দে রাজা রাধাকান্ত দেব রচিত ‘বাঙ্গালা শিক্ষাগ্রন্থ’।
  • মদনমোহন তর্কালঙ্কার রচিত ‘শিশুশিক্ষা’।
  • ক্ষেত্রমোহন দত্ত -এর ‘শিশুসেবধি’ ইত্যাদি।

যোগীন্দ্রনাথ সরকার রচিত শিশুপাঠ্য বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

বাংলা শিশুসাহিত্যে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের অবদান চিরস্মরণীয়। আজগুবি ছড়া রচনায় তাঁর দক্ষতা ছিল অসাধারণ।

যোগীন্দ্রনাথ সরকার রচিত শিশুপাঠ্য বিষয়ক গ্রন্থসমূহ –

  • যোগীন্দ্রনাথ সরকারের লেখা গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘ছড়া ও ছবি’, ‘রাঙাছবি’, ‘শিশু চয়নিকা’ ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
  • তবে তাঁর রচিত ‘হাসিখুসি’ গ্রন্থটি তাঁকে অমরত্ব দান করেছে।

সংস্কৃত যন্ত্র বিখ্যাত কেন?

বাংলার মুদ্রণশিল্পের ইতিহাসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং তাঁর সৃষ্ট ‘সংস্কৃত যন্ত্র’ -এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

সংস্কৃত যন্ত্র বিখ্যাত হওয়ার কারণ –

  • প্রতিষ্ঠা – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর 1847 খ্রিস্টাব্দে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সঙ্গে 32 নং আমহার্স্ট স্ট্রিটে ‘সংস্কৃত প্রেস’ বা ‘সংস্কৃত যন্ত্র’ নামে এক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
  • প্রকাশনা – এই প্রেস থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা গ্রন্থ হল ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ (1847 খ্রিস্টাব্দ)। ‘বর্ণপরিচয়’ -এর প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগও এই প্রেস থেকেই ছাপা হয়।

বাংলা প্রকাশনার ইতিহাসে বর্ণপরিচয় -এর গুরুত্ব কী?

1855 খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত যন্ত্র ছাপাখানা থেকে ‘বর্ণপরিচয়’ গ্রন্থের প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ প্রকাশিত হয়।

বাংলা প্রকাশনার ইতিহাসে বর্ণপরিচয় -এর গুরুত্ব –

বাংলা ছাপাখানার জগতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘বর্ণপরিচয়’ গ্রন্থের গুরুত্ব অপরিসীম। যথা –

  • শিশুপাঠ্য হিসেবে সুপরিচিত এই গ্রন্থে বাংলা স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ নির্দিষ্ট করা হয়।
  • বর্ণপরিচয় ছাপার সময়ে বিদ্যাসাগর বাংলা হরফগুলিকে পরিশীলিত রূপ দান করেন।

চন্দ্রোদয় যন্ত্র সম্পর্কে লেখো।

বাংলা ছাপাখানার ইতিহাসে শ্রীরামপুরের চন্দ্রোদয় যন্ত্র -এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

চন্দ্রোদয় যন্ত্র –

  • প্রতিষ্ঠা – চন্দ্রোদয় যন্ত্রের প্রতিষ্ঠাকাল এবং প্রতিষ্ঠাতার নাম নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সাধারণভাবে বলা যায়, পঞ্চানন কর্মকারের সহকারী ও জামাতা মনোহর কর্মকার শ্রীরামপুরে নিজের বাড়িতে ছাপাখানা খুলেছিলেন। এই ছাপাখানাটি মনোহরের দ্বিতীয় পুত্র কৃষ্ণচন্দ্র কর্মকারের সময়ে সমৃদ্ধি লাভ করে এবং তখন থেকেই ছাপাখানার নাম হয় ‘চন্দ্রোদয় যন্ত্র’।
  • প্রকাশনা – চন্দ্রোদয় প্রেসে ছাপানো পঞ্জিকা খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এই পত্রিকার নাম ছিল ‘নূতন পঞ্জিকা’।

গুপ্ত প্রেস -এর পরিচয় দাও।

উনিশ শতকে বাংলার অপর একটি নামকরা প্রেস হল গুপ্ত প্রেস বা গুপ্ত যন্ত্র।

গুপ্ত প্রেস –

  • প্রতিষ্ঠাতা – ‘গুপ্ত প্রেস’ স্থাপন করেন দুর্গাচরণ গুপ্ত। তিনি ‘গুপ্ত ব্রাদার্স’ নামে একটি বইয়ের দোকানও খুলেছিলেন।
  • প্রকাশনা – ‘গুপ্ত প্রেস’ -এ ছাপা গ্রন্থের মধ্যে ‘বঙ্গভাষার ইতিহাস’, ‘সঙ্গীতমালা’, ‘ভারতলক্ষ্মী’, ‘প্রভাস মিলন’, ‘মাছ খাবো কি পোকা খাবো’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গুপ্ত প্রেস -এর পকেট পঞ্জিকা ও পকেট অভিধান বহুল জনপ্রিয়। শুধু গ্রন্থই নয়, ‘অবোধবন্ধু’, ‘চিকিৎসাতত্ত্ব’, ‘জ্ঞানরত্ন’, ‘সহোদর’ ইত্যাদির মতো পত্রপত্রিকাও প্রকাশ করেন দুর্গাচরণ গুপ্ত।

আশুতোষ লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

আশুতোষ লাইব্রেরি ছিল উনিশ শতকের অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি প্রেস।

আশুতোষ লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ –

আশুতোষ লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত কয়েকটি গ্রন্থের নাম হল –

  • দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার রচিত ঠাকুমার ঝুলি।
  • যোগেন্দ্রনাথ গুপ্তের বাংলার ডাকাত ইত্যাদি।

বটতলার প্রকাশনা বলতে কী বোঝো?

উনিশ শতকে কলকাতার কালচারের ভিতরেই জন্ম হয় বটতলার কালচারের।

বটতলার প্রকাশনা – উনিশ শতক সময়কালের মধ্যে কলকাতার মূলত দর্জিপাড়া, শ্যামবাজার, জোড়াসাঁকো, শিয়ালদহ ইত্যাদি জায়গা জুড়ে জনরুচি (Public Test) অনুযায়ী যেসব প্রকাশনা চলত, তা বটতলার প্রকাশনা নামে পরিচিত।

  • বৈশিষ্ট্যসমূহ – তৎকালীন জনরুচির বড়ো অংশের ধারক ছিল বটতলা। বিভিন্ন বিচিত্র বিষয়, ব্রতকথা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সমসাময়িক ঘটনা, রসালো কেচ্ছাকাহিনি, সচিত্র গুপ্তকথা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে লেখা বাংলা বই সস্তায় ছাপাত বটতলার প্রেসগুলি।
  • নামকরা বটতলার প্রেসসমূহ – বটতলা অঞ্চলের যেসব প্রেস জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল, সেগুলি হল – অরুণ, কবিতা রত্নাকর, কমলালয়, গ্রেট ইডেন ইত্যাদি।
  • প্রকাশক – বটতলার প্রকাশকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কলিকাতা কমলালয়’, ‘নববাবুবিলাস’, ‘দূতীবিলাস’, ‘নববিবিবিলাস’ ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ।

বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্ব কী?

উনিশ শতকে কলকাতার মূলত দর্জিপাড়া, শ্যামবাজার, জোড়াসাঁকো, শিয়ালদহ ইত্যাদি জায়গা জুড়ে জনরুচি অনুযায়ী যেসব প্রকাশনা চলত, তা বটতলার প্রকাশনা নামে পরিচিত।

বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলার প্রকাশনার গুরুত্ব – বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলার প্রকাশনার গুরুত্ব অপরিসীম।

  • বিষয়বৈচিত্র্য – বটতলার বইগুলির বিষয়বৈচিত্র্য লক্ষণীয়। গুপ্তবিদ্যা, গোপাল ভাঁড়, রসসাহিত্য, ম্যাজিক, দুর্ঘটনা, রান্নাবান্না, কৃষিবিদ্যা ইত্যাদি নানান বিষয় ছাড়াও পুথি, পাঁচালি এবং অনুবাদ সাহিত্যকে কেন্দ্র করে বইগুলি ছাপা হত। ফলে এইসকল বইগুলি থেকে তৎকালীন সমাজচিত্র সম্পর্কে ধারণা লাভ করা সম্ভব।
  • অপ্রতুল জোগান এবং স্বল্পমূল্য – বটতলার বইগুলি মূলত সস্তা কাগজে পুরোনো হরফে ছাপা হত। ফলে বইগুলির দাম খুব কম ছিল। প্রকাশকরা প্রচুর পরিমাণে বইগুলি ছাপাতেন এবং জনপ্রিয়তার কারণে সেগুলি বিক্রিও হয়ে যেত।

কে, কবে ইউ রায় অ্যান্ড সন্স -এর প্রতিষ্ঠা করেন?

বাংলা মুদ্রণের জগতে ইউ রায় অ্যান্ড সন্স ছিল একটি বিখ্যাত সংস্থা।

ইউ রায় অ্যান্ড সন্স -এর প্রতিষ্ঠা –

  • প্রতিষ্ঠাতা – শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • প্রতিষ্ঠাকাল – 1895 খ্রিস্টাব্দে ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মুদ্রণসংস্থা ছাপার ক্ষেত্রে খুব উন্নত ছিল।

ইউ রায় অ্যান্ড সন্স -এর প্রকাশনার পরিচয় দাও।

বাংলাদেশে মুদ্রণ ও প্রকাশনা জগতে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ইউ রায় অ্যান্ড সন্স ছিল একটি বিখ্যাত বাঙালি উদ্যোগ।

ইউ রায় অ্যান্ড সন্স -এর প্রকাশনা –

ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ বাণিজ্যিকভাবে মুদ্রণের সঙ্গে প্রকাশনার কাজও করত।

  • গ্রন্থ প্রকাশনা – এই সংস্থা থেকে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর নিজের লেখা ছেলেদের রামায়ণ, ছেলেদের মহাভারত, টুনটুনির বই, গুপী গাইন বাঘা বাইন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
  • পত্রিকা প্রকাশনা – উপেন্দ্রকিশোর জ্ঞানবিজ্ঞান ও কৌতুক বিষয়ক পত্রিকা সন্দেশ প্রকাশ করেন।

বাংলায় মুদ্রণশিল্পে ইউ রায় অ্যান্ড সন্স -এর ভূমিকা লেখো।

ইউ রায় অ্যান্ড সন্স -এর ভূমিকা –

  • প্রসেসিং – উপেন্দ্রকিশোর ফোটোর নেগেটিভের মান উন্নত করা, প্রসেসিং, ক্যামেরা বিষয়ে কাজকর্মে মৌলিক অবদান রাখেন।
  • ব্লক তৈরি – প্রথমে কাঠের ব্লক এবং সাদা-কালো ছবি, তারপর হাফটোন ব্লক ও রঙিন ছবি তৈরি করে মুদ্রণে অভিনবত্ব আনেন তিনি।
  • ফোটো এনগ্রেভিং ও লিথোগ্রাফি – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পুত্র সুকুমার রায় লন্ডনে ফোটো এনগ্রেভিং ও লিথোগ্রাফি বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন এবং ছাপার মান আরও উন্নত করেন।

এইভাবে মুদ্রণশিল্পে ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে। ছাপাখানাটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অত্যন্ত বিখ্যাত হয়ে ওঠে।

প্রসেস ওয়ার্ক সম্বন্ধে কী জান?

বাংলা তথা সমগ্র ভারতে প্রকাশনার জগতের এক অবিস্মরণীয় নাম হল উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। তিনি 1895 খ্রিস্টাব্দে তাঁর নিজস্ব মুদ্রণ ও প্রকাশনা সংস্থা ইউ রায় অ্যান্ড সন্স প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রসেস ওয়ার্ক – ইউ রায় অ্যান্ড সন্স কোম্পানি থেকেই ভারতবর্ষে প্রসেস শিল্প বিকাশলাভ করে। ফোটোগ্রাফির সাহায্য নিয়ে বহুসংখ্যক প্রতিচ্ছবি ছাপার কাজকে বলা হয় প্রসেস ওয়ার্ক বা প্রসেস শিল্প।

জনরুচির প্রকাশ কী?

জনরুচির প্রকাশ – বাংলার মুদ্রণশিল্পের ইতিহাস দেখলে বোঝা যায় উনিশ শতকের সংস্কৃতির দুটি প্রধান দিক ছিল। একদিকে ছিল ভদ্রশ্রেণির কালচার এবং অন্যদিকে ছিল বটতলা কালচার। সেই সময়কার সাধারণ বাঙালি জনমানসের অবদমিত কামনা বাসনার প্রকাশ ঘটে বটতলার বইগুলির মাধ্যমে। বটতলার বইগুলি জনরুচি বুঝত, আর তাই এই বইগুলির জনপ্রিয়তা ছিল, বিক্রিও হত বেশি।

বাংলার ছাপাখানার অগ্রগতিতে সুকুমার রায়ের ভূমিকা সম্পর্কে লেখো।

বাংলার ছাপাখানার যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্যক্তিগত ছাপাখানার মধ্য দিয়েই। এক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক ছিলেন ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং তাঁর সুযোগ্য পুত্র সুকুমার রায়।

ছাপাখানার অগ্রগতিতে সুকুমার রায়ের ভূমিকা – সুকুমার রায় ছিলেন ‘বিখ্যাত পিতার যোগ্য সন্তান’।

  • ফোটোগ্রাফি ও প্রিন্টিং টেকনোলজি-তে উচ্চশিক্ষার জন্য ‘গুরুপ্রসন্ন ঘোষ স্কলারশিপ’ লাভ করে সুকুমার রায় লন্ডনে যান।
  • লন্ডনে তিনি পিতার উদ্ভাবিত হাফটোন পদ্ধতি প্রদর্শন করে তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেন।
  • দেশে ফিরে তিনি পিতার ব্যাবসা ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ -এ যোগ দেন। তাঁর আমলে সংস্থাটির আরও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।

কীভাবে মুদ্রণযন্ত্র বাংলায় রেনেসাঁসের পটভূমি রচনা করেছিল?

রেনেসাঁস -এর পটভূমিকা রচনায় মুদ্রণের ভূমিকা – অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলা মুদ্রণ ও ছাপার অক্ষরে বাংলা গদ্যের জন্মলাভের ফলে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটে। বাংলা মুদ্রণ বাংলা গদ্যসাহিত্যের জন্ম ও অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছিল। এর ফলস্বরূপ সাহিত্যের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগ ঘনিষ্ঠতর হয়ে উঠে। মুদ্রণ ব্যবস্থার প্রসারের ফলেই জ্ঞানের আলো উচ্চবিত্তের গণ্ডি পেরিয়ে নেমে এসেছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে, যা ধীরে ধীরে জন্ম দিয়েছিল বাংলার রেনেসাঁস বা নবজাগরণের।

মুদ্রণশিল্প কীভাবে সর্বভারতীয় চেতনাবোধ গড়ে তুলেছিল?

সর্বভারতীয় চেতনাবোধের বিকাশ – মুদ্রণশিল্পের বিকাশের ফলে ভারতীয়রা পাশ্চাত্য ইতিহাস, দর্শন, গণিত, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রভৃতির সঙ্গে পরিচিতি লাভ করে। পাশ্চাত্য উদারতন্ত্রবাদ, গণতন্ত্রবাদ ইত্যাদি ধারণার দ্বারা তারা প্রভাবিত হয়। এর থেকেই ভারতীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হতে থাকে। ক্রমশ সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে একটি জাতীয়তাবাদী চেতনাবোধ গড়ে উঠেছিল।

উনিশ শতকে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণার গুরুত্ব স্বীকার করে প্রবন্ধ প্রকাশ করে কোন্ কোন্ পত্রিকা?

বিভিন্ন পত্রপত্রিকা – সংবাদ প্রভাকর, বেঙ্গল স্পেকটেটর, সোমপ্রকাশ, তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা ইত্যাদি বিজ্ঞান, শিক্ষা ও গবেষণার গুরুত্ব বিষয়ে প্রবন্ধ প্রকাশ করত।

  • তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা – তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ভৌতবিজ্ঞান নিয়ে প্রায়ই প্রবন্ধ ছাপা হত।
  • সোমপ্রকাশ পত্রিকা – সোমপ্রকাশ পত্রিকা লিখেছিল এদেশে প্রকৃত বিজ্ঞানসাধনার সুযোগ নেই বললেই চলে। বিজ্ঞানচর্চা রুরকি ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেই আবদ্ধ হয়ে আছে। বিজ্ঞানচর্চায় সরকারি উদাসীনতা এবং স্বদেশি শিক্ষাব্রতীদের মৌলিক গবেষণার অভাব নিয়ে দুর্ভাবনা – এই সবই আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল।
  • ক্যালকাটা গেজেট – ক্যালকাটা গেজেট নামে পত্রিকায় সেইসময় চিকিৎসাবিদ্যার উন্নতির উপর প্রচুর প্রবন্ধ ছাপা হত।

বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে শ্রীরামপুর মিশনারিদের ভূমিকা লেখো।

বিজ্ঞানচর্চায় শ্রীরামপুর মিশনারিদের ভূমিকা –

  • উইলিয়ম কেরি – মিশনের সদস্য উইলিয়ম কেরি উদ্ভিদবিদ্যা ও কৃষিবিদ্যার বিষয়ে শ্রীরামপুর কলেজে পড়ানোর ব্যবস্থা করেন।
  • ফেলিক্স কেরি – মানবশরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে তিনি শারীরবিদ্যার উপর একটি বাংলা বই লেখেন।
  • জন ম্যাক – শিক্ষা সহায়ক উপকরণ ও পরীক্ষাগার ব্যবহার করে তিনি রসায়নবিদ্যা পড়াতেন। তিনি রসায়নের সূত্রাবলি নামে একটি বাংলা গ্রন্থও রচনা করেন।

এইভাবে শ্রীরামপুর মিশনারিগণ বাংলার বিজ্ঞানচর্চায় মৌলিক অবদান রাখেন।

বাংলার বিজ্ঞানচর্চায় উইলিয়ম কেরির অবদান কী ছিল?

বাংলার বিজ্ঞানচর্চায় উইলিয়ম কেরির অবদান –

  • কৃষির উন্নতি – উইলিয়ম কেরি মিশনের কাজে দিনাজপুরে থাকাকালীন এখানকার কৃষির অবস্থার উন্নতির জন্য ‘দ্য স্টেট অফ এগ্রিকালচার ইন দ্য ডিস্ট্রিক্ট অফ দিনাজপুর’ (The State of Agriculture in the District of Dinajpur) নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন 1812 খ্রিস্টাব্দে।
  • উদ্ভিদবিদ্যা – 1820 খ্রিস্টাব্দে তিনি এগ্রি-হর্টিকালচার সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় সহযোগী ছিলেন। শ্রীরামপুরে পাঁচ একর জমিতে তিনি বিভিন্ন প্রজাতির গাছের একটি বাগান তৈরি করেন। বাংলার 3500টি গাছের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন কেরি। তিনি এর নাম দেন হার্টস বেঙ্গলেনসিস।
  • বিজ্ঞানের পঠনপাঠন – কেরি শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে আধুনিক বিজ্ঞানের পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করেন।

বাংলার বিজ্ঞানচর্চায় শ্রীরামপুর কলেজের অবদান লেখো।

বাংলার প্রথমদিকে বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে যে-সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবদান ছিল শ্রীরামপুর কলেজ তাদের মধ্যে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে।

শ্রীরামপুর কলেজের অবদান –

  • পঠনপাঠন – বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা (পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, শারীরবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা) এই কলেজে পড়ানো হত।
  • পরীক্ষাগার – বাংলার মধ্যে এই কলেজে প্রথম রসায়নের পরীক্ষাগার তৈরি করা হয়। বিজ্ঞানশিক্ষার জন্য সহায়ক উপকরণও ব্যবহার করা হত।

বাঙালিদের মধ্যে কে প্রথম বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন? তাঁর বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচয় দাও।

বাঙালির বিজ্ঞানমনস্কতা –

  • প্রথম বিজ্ঞানমনস্ক বাঙালি – রাজা রামমোহন রায় ছিলেন প্রথম বিজ্ঞানমনস্ক বাঙালি।
  • বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচয় – তিনি ‘দ্রাঘিজ্যা’ নামে একটি জ্যামিতির বই লেখেন। এ ছাড়া ‘সম্বাদ কৌমুদী’ পত্রিকায় বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধও লেখেন তিনি।

বিজ্ঞানশিক্ষার ক্ষেত্রে রাজা রাধাকান্ত দেব -এর ভূমিকা কী ছিল?

বিজ্ঞানশিক্ষায় রাজা রাধাকান্ত দেব -এর ভূমিকা –

  • উৎসাহ দান – রাজা রাধাকান্ত দেব কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের শবব্যবচ্ছেদ বিষয়ে উৎসাহ দেন।
  • বিজ্ঞানচর্চায় গুরুত্ব দান – তিনি এগ্রিকালচার এবং হর্টিকালচার সোসাইটিতে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। তাতে তিনি বিজ্ঞানচর্চার উপর সমধিক গুরুত্ব দেন। বিজ্ঞানশিক্ষায় রাজা রাধাকান্ত দেব -এর উদ্যোগ প্রমাণ করে যে, বাঙালি সমাজ তখন এই নব্য বিজ্ঞান শিক্ষাকে স্বাগত জানিয়েছিল।

অক্ষয়কুমার দত্তের বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচয় দাও।

উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বিশিষ্ট বাঙালিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অক্ষয়কুমার দত্ত।

অক্ষয়কুমার দত্তের সহযোগিতা – তিনি কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটি-কে বাংলায় বিজ্ঞানের বই প্রকাশে সাহায্য করেন।

অক্ষয়কুমার দত্তের প্রবন্ধ প্রকাশ – তিনি তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও জীবজগৎ সম্বন্ধে মৌলিক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাহ্যবস্তুর সঙ্গে প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার।

বিজ্ঞানী না হয়েও তিনি বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা ও বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহ দিয়ে বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচয় দেন।

রাধানাথ শিকদার কেন বিখ্যাত?

গণিতশাস্ত্রজ্ঞ, বৈজ্ঞানিক এবং হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গের আবিষ্কারক হিসেবে রাধানাথ শিকদারের নাম চিরস্মরণীয়।

রাধানাথ শিকদার পরিচয় –

  • ডিরোজিওর ভাবধারায় প্রভাবিত রাধানাথ শিকদার 1832 খ্রিস্টাব্দে ত্রিকোণমিতিভিত্তিক জরিপ বিভাগে যোগ দেন।
  • 1852 খ্রিস্টাব্দে তিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর এভারেস্ট আবিষ্কার করেন। এই বছরই তিনি কলকাতার আবহাওয়া দফতরের সুপারিনটেন্ডেন্ট হন।
  • সামাজিক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের বিরোধী এবং বিধবাবিবাহে উৎসাহী ছিলেন তিনি।

শিবচন্দ্র নন্দী বিখ্যাত কেন?

শিবচন্দ্র নন্দী হলেন প্রথম ভারতীয় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।

শিবচন্দ্র নন্দীর বিখ্যাত হওয়ার কারণ –

  • প্রচলিত উচ্চশিক্ষা না পেলেও ইংরেজি শিখে টাকশালে কেরানির চাকরিতে যোগ দেন। তিনি বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে টেলিগ্রাফের কাজে দক্ষতা অর্জন করেন।
  • 1852 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার পর্যন্ত পরীক্ষামূলক টেলিগ্রাফ লাইন পাতার কাজে সফল হন এবং গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি স্বয়ং এই সাফল্যের জন্য তাঁকে সাংকেতিক ধ্বনির মাধ্যমে অভিনন্দন জানান।
  • এরপর টেলিগ্রাফ বিভাগের সর্বময় কর্তা হিসেবেও কাজ করেন। ঢাকা পর্যন্ত টেলিগ্রাফ লাইন বিস্তারের উদ্দেশ্যে পদ্মা নদীতে 7 মাইল ব্যাপী কেব্ল বসানোর দায়িত্ব নেন। মাটির নীচ থেকে লাইন তোলার জন্য তালগাছের খুঁটি ব্যবহারের নকশাও দিয়েছিলেন তিনি।

এই সকল কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ লর্ড কার্জন শিবচন্দ্র নন্দীকে ‘রায়বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

রাধানাথ শিকদার এভারেস্ট শৃঙ্গ আবিষ্কার করলেও এর নাম ‘মাউন্ট এভারেস্ট’ রাখা হয় কেন?

রাধানাথ শিকদার আবিষ্কার করলেও তৎকালীন সার্ভে অধিকর্তা কর্নেল জর্জ এভারেস্ট -এর নামানুসারে এই শিখরের নাম ‘মাউন্ট এভারেস্ট’ রাখা হয়।

স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় কেন বিখ্যাত?

ঊনবিংশ-বিংশ শতকে বাঙালি ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।

স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বিখ্যাত হওয়ার কারণ –

  • ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, পলতা ওয়াটার ওয়ার্কস ইত্যাদি তাঁর তত্ত্বাবধানে নির্মিত।
  • এ ছাড়া মার্টিন কোম্পানির রেলপথ স্থাপনের কৃতিত্ব স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়েরই।
  • 1911 খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতার ‘শেরিফ’ হন।

স্কুল ফর নেটিভ ডক্টরস কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?

স্কুল ফর নেটিভ ডক্টরস প্রতিষ্ঠার কারণ – 1768 খ্রিস্টাব্দে ঔপনিবেশিক সরকার কলকাতায় একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে। এই জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করার জন্য প্রচুর সংখ্যক চিকিৎসকের প্রয়োজন দেখা দেয়। ফলে দেশীয় জনগণের মধ্য থেকে চিকিৎসক তৈরির উদ্দেশ্যে স্কুল ফর নেটিভ ডক্টরস প্রতিষ্ঠিত হয়।

ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি বিজ্ঞানশিক্ষার প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করো।

ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটেছিল।

বাংলায় প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানশিক্ষার প্রতিষ্ঠানসমূহ – ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞানশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হল – ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স বা IACS, কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ, বসু বিজ্ঞান মন্দির, বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট বা BTI ইত্যাদি।

ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার কে ছিলেন?

উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালিদের অন্যতম ছিলেন ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার।

ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার পরিচিতি –

  • চিকিৎসক – তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করা এক বিশিষ্ট চিকিৎসক (MD) ছিলেন।
  • IACS প্রতিষ্ঠাতা – তিনি বিজ্ঞানচর্চার জন্য ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স প্রতিষ্ঠা করেন 1876 খ্রিস্টাব্দে।

এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বাঙালির বিজ্ঞানচর্চাকে উন্নত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। তাই তাঁকে ‘ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চার জনক’ বলা হয়।

ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার কেন IACS প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করেন?

IACS প্রতিষ্ঠার কারণ –

  • সামাজিক বিরোধিতা – ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার পেশায় অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক হয়েও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার পক্ষে প্রচার করেন। এজন্য অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকরা তাঁকে সমাজচ্যুত করার চেষ্টা করেন।
  • বিজ্ঞানমনস্কতা – পেশায় চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে ডাঃ সরকার বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি ছিলেন। এই বিজ্ঞানচর্চার সম্প্রসারণও তাঁর অন্যতম লক্ষ্য ছিল। উনিশ শতকের বাংলাদেশে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষাপ্রসারের ফলে যে নবজাগরণের সূচনা হয় – সেখানে বিজ্ঞানচর্চার অভাব ছিল। সেই অভাবপূরণের জন্য ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার IACS নামক প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন।

উনিশ শতকে বিজ্ঞানশিক্ষার বিকাশে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স -এর ভূমিকা কী ছিল?

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স বা সংক্ষেপে IACS হল কলকাতায় অবস্থিত একটি বিজ্ঞান গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 1876 খ্রিস্টাব্দে ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

বিজ্ঞানশিক্ষার বিকাশে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স -এর ভূমিকা – বাংলা তথা ভারতে প্রতিষ্ঠিত প্রথম এই বৈজ্ঞানিক সংগঠনটির কার্যাবলি ছিল ব্যাপক।

  • এই সংগঠন সর্বসাধারণের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক জনপ্রিয় বক্তৃতা ও সীমিত অগ্রণীদের জন্য বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণামূলক বিশেষ বক্তৃতার আয়োজন করে। নারীদের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনা জাগ্রত করার বিষয়েও এই সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • রেভারেন্ড ইউজিন লাফোঁ, জগদীশচন্দ্র বসু, নীলরতন সরকার প্রমুখ আলোক ও ধ্বনিবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, ভৌত আলোকবিদ্যা, ভূবিদ্যা ও জীববিদ্যা সম্পর্কে আলোচনা ও শিক্ষাদান করতেন। বিখ্যাত বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন শিক্ষকতার ফাঁকে এখানে নিরলস গবেষণা চালিয়েছিলেন। তাঁর আবিষ্কৃত ‘রমন এফেক্ট’ -এর স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি 1930 খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার পান।

IACS প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোন্ কোন্ সংবাদপত্রের ভূমিকা ছিল?

সংবাদপত্রের ভূমিকা – IACS প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

  • ক্যালকাটা জার্নাল অফ মেডিসিন – ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার নিজ সম্পাদিত ক্যালকাটা জার্নাল অফ মেডিসিন পত্রিকায় এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রবন্ধ লেখেন 1879 খ্রিস্টাব্দে।
  • হিন্দু প্যাট্রিয়ট – 1870 খ্রিস্টাব্দের 3 জানুয়ারি IACS -এর অনুষ্ঠানপত্র বা প্রসপেকটাস ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় প্রচারিত হয়।
  • বঙ্গদর্শন – ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার 1271 বঙ্গাব্দের ভাদ্র সংখ্যায় ‘ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞানসভা’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধে বিজ্ঞানসভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য জানা যায়।

IACS প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?

IACS প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যসমূহ –

IACS প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি হল –

  • বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলা।
  • বৈজ্ঞানিক গবেষণার মান উন্নত করা।
  • পাশ্চাত্য দেশের বিজ্ঞানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা।
  • পাশ্চাত্যের বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিয়ে আলোচনা করা প্রভৃতি।

IACS প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কারা সহযোগী ছিলেন?

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স (IACS) প্রতিষ্ঠা করেন ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার। এক্ষেত্রে অনেকেই তাঁর সহযোগী ছিলেন।

IACS প্রতিষ্ঠার সহযোগীগণ –

  • প্রচার – বাগ্মী কেশবচন্দ্র সেন ও পাদরি ইউজিন লাফোঁ (সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অধ্যাপক) বক্তৃতার মাধ্যমে IACS গঠনের পক্ষে প্রচার করেন।
  • আর্থিক সহায়তা – জয়কৃষ্ণ মুখার্জি, রাজা কমলকৃষ্ণ দেব, দিগম্বর মিত্র, যোগেশ্বর সিং, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ আর্থিক সহযোগিতা করেন। এই কাজে ব্রিটিশ সরকারও সহযোগিতা করে।

IACS -এর কার্যাবলির পরিচয় দাও।

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স বা IACS বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষে বিজ্ঞানচর্চার জন্য গড়ে ওঠে।

IACS -এর কার্যাবলি –

এই সমিতির কার্যাবলি ছিল –

  • বক্তৃতা – এই সমিতি
    • সর্বসাধারণের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক জনপ্রিয় বক্তৃতা ও
    • সীমিত অগ্রণীদের জন্য বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণামূলক বিশেষ বক্তৃতার আয়োজন করে।
  • শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ – রেভারেন্ড ইউজিন লাফোঁ, জগদীশচন্দ্র বসু, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, প্রমথনাথ বসু ও নীলরতন সরকার আলোক ও ধ্বনিবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, ভৌত আলোকবিদ্যা, ভূবিদ্যা ও জীববিদ্যা সম্পর্কে আলোচনা ও শিক্ষাদান করতেন। IACS এই গঠনমূলক কার্যাবলির দ্বারা ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল।

IACS -এর কার্যক্রমে কোন্ কোন্ বিশিষ্ট বিজ্ঞানী যুক্ত হন?

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স বা IACS -এ অনেক বিশিষ্ট বিজ্ঞানী যুক্ত হন।

IACS -এর বিশিষ্ট বিজ্ঞানীগণ –

  • চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, যিনি পরে 1930 খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
  • ডঃ মেঘনাদ সাহা, যিনি পরে সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স প্রতিষ্ঠা করেন।
  • কে এস কৃষ্ণান, যিনি পদার্থবিদ্যায় বিশেষ খ্যাতিলাভ করেন।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ কে, কবে প্রতিষ্ঠা করেন?

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা –

  • প্রতিষ্ঠাতা – কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ‘কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ’ -এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এর নাম ছিল ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
  • প্রতিষ্ঠাকাল – 1914 খ্রিস্টাব্দের 27 মার্চ তারিখে এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কলেজ প্রতিষ্ঠা বিজ্ঞানচর্চার মাত্রাকে উচ্চস্তরে পৌঁছে দেয়।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠার কারণ কী ছিল?

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠার কারণ –

  • স্বদেশিয়ানা – স্বদেশি আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে আত্মশক্তি বিকাশের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। এই সময় বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। তার সূত্র ধরেই এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • বিজ্ঞানচর্চা – প্রেসিডেন্সি কলেজ, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, শ্রীরামপুর কলেজে সেসময় বিজ্ঞান পড়ানো হত। বিজ্ঞানের জন্য কোনো বিশেষ কলেজ ছিল না। এই অভাবপূরণের জন্য ও যথার্থ বিজ্ঞানচর্চার জন্য এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

সরকারি সাহায্য ছাড়া কীভাবে বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

1857 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলেও 1914 খ্রিস্টাব্দের আগে সেখানে বিজ্ঞান কলেজ খোলা হয়নি।

বিজ্ঞান কলেজের প্রতিষ্ঠা – 1914 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের কোনোরকম সাহায্য ছাড়াই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ (University College of Science and Technology) গড়ে ওঠে।

ব্যারিস্টার স্যার তারকনাথ পালিত ও ব্যারিস্টার স্যার রাসবিহারী ঘোষের আর্থিক সহায়তায় এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। 92 নম্বর আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডে অবস্থিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ‘রাসবিহারী শিক্ষাপ্রাঙ্গণ’ নামে পরিচিত। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, শিশির কুমার মিত্র, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বিজ্ঞান কলেজকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কারা সহযোগী ছিলেন?

ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বা কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে অনেকে সহযোগিতা করেন।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠার সহযোগীগণ –

  • আর্থিক সহযোগিতা – ব্যারিস্টার তারকনাথ পালিত, ব্যারিস্টার রাসবিহারী ঘোষ, রানি বাগেশ্বরী, গুরুপ্রসাদ সিং প্রমুখ আর্থিক সাহায্য করেন।
  • উপকরণ – মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র -এর বহরমপুর কলেজের পদার্থবিদ্যার পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি, শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কিছু যন্ত্রপাতি, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের কনডাক্টিভিটি যন্ত্র কলকাতা বিজ্ঞান কলেজকে দান করা হয়।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের পঠনপাঠনের পরিচয় দাও।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে তৎকালীন বহু খ্যাতনামা অধ্যাপক শিক্ষাদান করতেন। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পঠনপাঠন চলত।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের পঠনপাঠন – রসায়নবিদ্যায় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, পদার্থবিদ্যায় চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, ফলিত গণিতে মেঘনাদ সাহা ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু পঠনপাঠনের দায়িত্বে ছিলেন। পরে জীববিদ্যা ও উদ্ভিদবিদ্যার পঠনপাঠনের ব্যবস্থাও করা হয়।

এইভাবে কৃতি অধ্যাপকদের সাহায্যে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে শিক্ষাদান চলত।

বসু বিজ্ঞান মন্দির কে, কবে প্রতিষ্ঠা করেন?

বসু বিজ্ঞান মন্দির বা বোস ইনস্টিটিউট বিজ্ঞানচর্চার একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।

বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা –

  • প্রতিষ্ঠাতা – আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা।
  • প্রতিষ্ঠাকাল – 1917 খ্রিস্টাব্দের 30 নভেম্বর এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

বসু বিজ্ঞান মন্দির গড়ে ওঠার পর ভারতে বিজ্ঞানচর্চার ধারা শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

জগদীশচন্দ্র বসু নিজ প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক গবেষণাকেন্দ্রকে মন্দির আখ্যা দিয়েছিলেন কেন?

বসু বিজ্ঞান মন্দির – জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রের নাম দিয়েছিলেন বসু বিজ্ঞান মন্দির। তিনি তাঁর বৈজ্ঞানিক উপলব্ধিকে প্রকাশের জন্য উপনিষদ থেকে উদ্ধৃতি দিতেন।

জগদীশচন্দ্র বসু নিজ প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক গবেষণাকেন্দ্রকে মন্দির বলার কারণ – ‘মন্দির’ বলতে শুধু দেবগৃহ বোঝায় না, এর মূল অর্থ হল ‘ভবন’। এই অর্থে জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর বিজ্ঞান গবেষণাগারের নাম রাখেন ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’; যেখানে বিজ্ঞানের গবেষণা ও প্রগতির জন্য বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিত্বরা সমবেত হয়ে ভারতবর্ষের বিজ্ঞানচর্চাকে আরও উচ্চস্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন।

বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?

বিজ্ঞানসাধক আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণের পর 1917 খ্রিস্টাব্দে বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য – জগদীশচন্দ্রের মতে, এটির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও জ্ঞানের প্রসার, বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সুফল সকলের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া, বিজ্ঞানের প্রগতি সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া প্রভৃতি। মহান উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও এই প্রতিষ্ঠান জনকল্যাণের জন্য তেমন কোনো সুফল দিতে পারেনি। তবুও প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত আছে।

বসু বিজ্ঞান মন্দির -এর কার্যাবলির পরিচয় দাও।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু 1917 খ্রিস্টাব্দে বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

বসু বিজ্ঞান মন্দির -এর কার্যাবলি – অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণের পর বিজ্ঞানচর্চার জন্য তিনি এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেন। ইংল্যান্ডের রয়‍্যাল ইনস্টিটিউটের অনুকরণে এখানে কাজ হত। এখানে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়, যেমন – পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যার (বায়ো-ফিজিক্স) উপরেও গবেষণা করা হত।

এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় নতুনত্ব ছিল। এই পথ ধরেই আজকের বহু নতুন বিজ্ঞানের শাখা বিষয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কে ছিলেন?

বাংলার কৃতি সন্তানদের অন্যতম ছিলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর পরিচিতি –

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর ছিলেন –

  • প্রেসিডেন্সি কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক।
  • বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা।
  • ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রের আবিষ্কারক। এই যন্ত্র দিয়ে তিনি প্রমাণ করেন যে, গাছের প্রাণ আছে।
  • ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক তরঙ্গের অন্যতম প্রধান গবেষক।

এই বিজ্ঞানসাধকের জন্ম 1858 খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুর জেলায় হলেও কর্মজীবন ছিল কলকাতায়। এখানেই তাঁর মৃত্যু হয় 1937 খ্রিস্টাব্দে।

ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রটি কে আবিষ্কার করেন? যন্ত্রটির কাজ কী?

ক্রেসকোগ্রাফ – বিখ্যাত বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু তড়িৎ চুম্বকীয় প্রবাহের সাহায্যে উদ্ভিদের প্রাণ ও স্পন্দনের বার্তা ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁর বিখ্যাত ক্রেসকোগ্রাফ (Crescograph) যন্ত্রটির সাহায্যে।

ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রটির কাজ – এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মতে, এই যন্ত্র অতি সামান্য বৃদ্ধিকে এক কোটি গুণ বড়ো করে দেখাতে পারে। অর্থাৎ এর Magnifying Power (বৃহদীকরণ শক্তি) এক কোটি গুণ। কোনো উদ্ভিদ যদি মূলরোম দ্বারা শোষিত রস আকর্ষণ করে এক ইঞ্চির এক কোটিতম অংশ বাড়ে (111,00,00,000), তাহলে এই যন্ত্র দেখাবে যে, এটি এক ইঞ্চি বেড়েছে।

কে, কেন বেঙ্গল কেমিক্যালস স্থাপন করেন?

বেঙ্গল কেমিক্যালস – স্বদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে বেঙ্গল কেমিক্যালস অন্যতম প্রধান।

  • প্রতিষ্ঠা – 1901 খ্রিস্টাব্দের 12 এপ্রিল প্রফুল্লচন্দ্র রায় কলকাতায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
  • প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য – ভারতে রসায়নচর্চা ও গবেষণার উদ্দেশ্যে প্রফুল্লচন্দ্র রায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যালস’ -এর প্রতিষ্ঠা করেন। ‘বেঙ্গল কেমিক্যালস’-ই ভারতের প্রথম রাসায়নিক দ্রব্য ও ওষুধ প্রস্তুতের কারখানা হিসেবে পরিচিত।

কাকে, কেন আধুনিক ভারতীয় রসায়ন শাস্ত্রের জনক বলা হয়?

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে ‘আধুনিক ভারতীয় রসায়ন শাস্ত্রের জনক’ বলে অভিহিত করা হয়।

আধুনিক ভারতীয় রসায়ন শাস্ত্রের জনক বলার কারণ – প্রফুল্লচন্দ্র রায় ছিলেন প্রখ্যাত রসায়নবিদ, অধ্যাপক ও ভারতবর্ষে রাসায়নিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রথম ভারতীয় স্থপয়িতা।

  • 1896 খ্রিস্টাব্দে প্রফুল্লচন্দ্র রায় আবিষ্কার করেন মারকিউরাস নাইট্রেট (HgNO3)2
  • 1901 খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘বেঙ্গল কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস’। প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনাকালে তিনি রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘History of Hindu Chemistry’।
  • 1924 খ্রিস্টাব্দে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অনুপ্রেরণা ও অর্থসাহায্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি’।

ডাঃ ভোলানাথ বসুর কৃতিত্ব উল্লেখ করো।

ভারতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে ডাঃ ভোলানাথ বসুর নাম চিরস্মরণীয়।

ডাঃ ভোলানাথ বসুর কৃতিত্ব –

  1. 1840 খ্রিস্টাব্দে লর্ড অকল্যান্ডের বদান্যতায় ভোলানাথ বসু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভরতি হন। 1845 খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে বিলেত যাত্রা করেন।
  2. বিলেতে উদ্ভিদবিদ্যার পরীক্ষায় ভোলানাথ বসু তৃতীয় স্থান লাভ করেন।
  3. তিনিই ছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমডি উপাধিধারী ব্যক্তি।

পরবর্তীকালে দেশে ফিরে তিনি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন।

গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের কৃতিত্ব সম্পর্কে লেখো।

প্রকৃতিপ্রেমিক, স্বভাববিজ্ঞানী গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য ভূগোল শিক্ষক হিসেবে তাঁর চাকরিজীবন শুরুকরেন।

গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের কৃতিত্ব –

  • তিনি এক ঘনান্ধকার রাতে পচা গাছপালার যে আশ্চর্য আলো বিকিরণ করার ক্ষমতা আছে, তা আবিষ্কার করেন। এরপর গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য ‘পচা গাছপালার আশ্চর্য আলো বিকিরণ করার ক্ষমতা’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখে প্রবাসী পত্রিকায় পাঠিয়ে দেন এবং 1918 খ্রিস্টাব্দে সেটি প্রকাশিত হয়।
  • জগদীশচন্দ্র বসুর আহ্বানে 1921 খ্রিস্টাব্দে তিনি বসু বিজ্ঞান মন্দির -এ রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টের পদে নিযুক্ত হন।
  • গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় ঘটনা, মাছ, অন্যান্য প্রাণী ও কীটপতঙ্গের আচার-আচরণ, মেটামরফোসিস ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করেছেন।

বাংলায় প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানচর্চার উন্নতিতে ডন সোসাইটির ভূমিকা আলোচনা করো।

ডন সোসাইটি – সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত ডন সোসাইটি বিজ্ঞানের প্রসারে অনবদ্য ভূমিকা নিয়েছিল।

ডন সোসাইটির লক্ষ্য – এই সোসাইটির অন্যতম লক্ষ্য ছিল ছাত্রদের কারিগরি ও ব্যাবহারিক শিক্ষাদান করা।

ডন সোসাইটির অবদান – দেশের আর্থিক উন্নতির জন্য কারিগরি শিক্ষা ও শিল্প সংক্রান্ত শিক্ষার বিশেষ প্রয়োজন ছিল। ছাত্রদের মধ্যে আত্মনির্ভরতার আদর্শ ও স্বদেশপ্রেম জাগরণের ক্ষেত্রে দেশীয় কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষার উপযোগিতার উপর এই ডন সোসাইটি জোর দিয়েছিল।

সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বিখ্যাত কেন?

ঊনবিংশ শতকের বিখ্যাত বাঙালি ব্যক্তিত্বদের মধ্যে সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় অন্যতম।

সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বিখ্যাত হওয়ার কারণ –

  • তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা জাতীয়তাবাদী নেতা। তাঁর স্বদেশপ্রেম এবং সৃষ্টিশীল প্রতিভার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল জাতীয়তাবাদী ইংরেজি ‘ডন’ (Dawn) পত্রিকার সুষ্ঠু প্রকাশ এবং তার পরিচালনা। 1897 থেকে 1913 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়।
  • বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ 1902 খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘ডন সোসাইটি’। মাত্র চার-পাঁচ বছর এই সোসাইটি কাজ করলেও জাতীয় আন্দোলনে তা গভীর প্রভাব বিস্তার করে।
  • জাতীয় শিক্ষা পরিষদ এবং বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ সংগঠনের তিনি ছিলেন প্রাণস্বরূপ।

SPTE কারা, কবে প্রতিষ্ঠা করেন?

সোসাইটি ফর দ্য প্রোমোশন অফ টেকনিক্যাল এডুকেশন (SPTE) হল বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষাপ্রসারের জন্য স্বদেশি নেতাদের দ্বারা গঠিত একটি সমিতি।

SPTE প্রতিষ্ঠা –

  • প্রতিষ্ঠাতা – তারকনাথ পালিত, নীলরতন সরকার, ভূপেন্দ্রনাথ বসু, মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, রাজেন্দ্রনাথ মুখার্জি এই সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
  • প্রতিষ্ঠাকাল – 1906 খ্রিস্টাব্দের 1 জুন এই সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই সমিতি বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণের জন্য BTI প্রতিষ্ঠা করে।

কারা, কবে BTI প্রতিষ্ঠা করেন?

বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের সময় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট বা BTI প্রতিষ্ঠিত হয়।

BTI প্রতিষ্ঠা –

  • প্রতিষ্ঠাতা – স্বদেশি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বিশেষত নীলরতন সরকার, রাজেন্দ্রনাথ মুখার্জি, মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, ভূপেন্দ্রনাথ বসু BTI -এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
  • প্রতিষ্ঠাকাল – 1906 খ্রিস্টাব্দের 25 জুলাই BTI প্রতিষ্ঠিত হয়। BTI -এর প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং প্রসার ঘটায়।

BTI -এর পাঠ্যক্রম কী ধরনের ছিল?

BTI -এর পাঠ্যক্রম – BTI দুই ধরনের পাঠ্যক্রম চালু করে। এগুলি ছিল –

  • মাধ্যমিক পাঠ্যক্রম – এই পাঠ্যক্রমের মেয়াদ ছিল চার বছর। পদার্থবিদ্যা, গণিত, ইংরেজি ও চিত্রাঙ্কন প্রভৃতি বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
  • অন্তর্বর্তী পাঠ্যক্রম – এই পাঠ্যক্রমের মেয়াদ ছিল তিন বছর। যন্ত্রবিদ্যা, বৈদ্যুতিক যন্ত্রবিদ্যা, ফলিত গণিত, রসায়ন, ভূবিদ্যা ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

BTI -এর প্রবর্তিত পাঠ্যক্রম কাজের বাজারের উপযোগী হওয়ায় ছাত্রসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ডন সোসাইটির শিল্প বিভাগের পরিচালনায় কোন সালে একটি স্বদেশি দ্রব্যের দোকান খোলা হয়, যা স্বদেশি আন্দোলনের পটভূমি রচনা করে?

ডন সোসাইটির শিল্প বিভাগের পরিচালনায় 1903 খ্রিস্টাব্দে একটি স্বদেশি দ্রব্যের দোকান খোলা হয়, যা স্বদেশি আন্দোলনের পটভূমি রচনা করে।

তারকনাথ পালিত কে ছিলেন?

ঊনবিংশ শতকের বাঙালি ব্যক্তিত্বদের মধ্যে তারকনাথ পালিত ছিলেন অন্যতম।

তারকনাথ পালিত -এর পরিচয় –

  • সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহপাঠী সম্ভ্রান্ত বংশীয় তারকনাথ পালিত 1871 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে দেশে ফেরেন এবং আইন পেশায় নিযুক্ত হন।
  • উচ্চতর বিজ্ঞানচর্চার সুবিধার্থে তিনি 15 লক্ষ টাকা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন। তাঁর দানকৃত অর্থ এবং রাসবিহারী ঘোষের প্রদত্ত অর্থে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • তারকনাথ পালিতের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় 1906 খ্রিস্টাব্দের 11 মার্চ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ এবং 25 জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট বা BTI

কার্লাইল সার্কুলার কী?

কার্লাইল সার্কুলার – কার্লাইল ছিলেন বাংলা সরকারের চিফ সেক্রেটারি। 1905 খ্রিস্টাব্দের 10 অক্টোবর তিনি যে সার্কুলার জারি করেন, তা কার্লাইল সার্কুলার নামে পরিচিত। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা যোগদান করেছিল। সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের যোগদান আটকানোর জন্য কার্লাইল সার্কুলার জারি করা হয়।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি কী?

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা যোগদান করলে সরকার বিভিন্ন সার্কুলার জারি করে তাদের স্কুল থেকে বহিষ্কার করে।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির প্রতিষ্ঠা – এর বিরুদ্ধে শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর উদ্যোগে 1905 খ্রিস্টাব্দের 4 নভেম্বর অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির উদ্দেশ্য – এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন স্কুল থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

জাতীয় শিক্ষা বলতে কী বোঝো?

জাতীয় শিক্ষা – 1905 খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি আন্দোলন। বিদেশি পণ্যদ্রব্য বর্জনের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষাব্যস্থাকেও বর্জন করা হয়। ঔপনিবেশিক শিক্ষার বিকল্পস্বরূপ স্বদেশি শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা এবং তাকে সম্প্রসারিত করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তা জাতীয় শিক্ষা নামে পরিচিত।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?

বাংলাতেই প্রথম পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয় এবং এই শিক্ষার ত্রুটি সংশোধনের জন্য জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গড়ে ওঠে।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গড়ে ওঠার কারণ –

  • স্বদেশিয়ানা – বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি আন্দোলনে সমগ্র আত্মশক্তি বিকাশের উপর জোর দেওয়া হয়। জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠন ছিল তারই অঙ্গ।
  • ঔপনিবেশিক শিক্ষার বিকল্প – ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি দূর করে জাতীয় আদর্শে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয় এই জাতীয় শিক্ষা পরিষদের মাধ্যমে।
  • স্বীকৃতি – ইংরেজ সরকার বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করে বেসরকারি কলেজগুলির স্বীকৃতি বাতিল করে।

এই সমস্ত কারণে স্বদেশি নেতৃত্ব বিকল্প শিক্ষার লক্ষ্যে 1906 খ্রিস্টাব্দের 11 মার্চ প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কী ধরনের জাতীয় শিক্ষা গড়ে তোলে?

স্বদেশি আন্দোলনের সময় ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। এজন্য জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গড়ে ওঠে।

জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা – জাতীয় শিক্ষা পরিষদ দু-ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলে। এইগুলি ছিল –

  1. বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ – 1906 খ্রিস্টাব্দের 14 আগস্ট কলকাতার বৌবাজারে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ খোলা হয়। এখানে কলাবিদ্যা, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হত।
  2. বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট – 1906 খ্রিস্টাব্দের 25 জুলাই তারকনাথ পালিত কারিগরি শিক্ষার প্রসারের জন্য বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট -এর প্রতিষ্ঠা করেন। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের গঠনমূলক পদক্ষেপ ছিল এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদের গুরুত্ব কী ছিল?

1906 খ্রিস্টাব্দের 11 মার্চ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদের গুরুত্ব – উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে না পারলেও জাতীয় শিক্ষা পরিষদের গুরুত্বকে একেবারে অস্বীকার করা যায় না –

  • জাতীয় শিক্ষা পরিষদ জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে প্রথম কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল।
  • জাতীয় শিক্ষা পরিষদ মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান ও কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছিল।
  • রাসবিহারী ঘোষ, তারকনাথ পালিত, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী প্রমুখ ব্যক্তিত্বরা শিক্ষাপ্রসারের মহান আদর্শ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, যা উচ্চ প্রশংসার দাবি রাখে।

রাসবিহারী ঘোষ কে ছিলেন?

উনবিংশ শতকের ভারত ইতিহাসে রাসবিহারী ঘোষ একটি স্মরণীয় নাম।

রাসবিহারী ঘোষের পরিচয় –

  • 1865 খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ, 1866 খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণির অনার্স-সহ এমএ এবং 1867 খ্রিস্টাব্দে স্বর্ণপদক-সহ আইন পাস করেন।
  • জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং আমৃত্যু তার সভাপতির পদ অলংকৃত করেছেন তিনি।
  • বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু লক্ষ টাকা দান করেন।
  • 1907 খ্রিস্টাব্দে সুরাটে এবং 1908 খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন।

ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

ইংরেজরা ভারতে যে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে, তাকে ঔপনিবেশিক শিক্ষা নামে অভিহিত করা হয়।

ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ –

  • সুযোগ বৈষম্য – এই শিক্ষাব্যবস্থায় সমাজের উচ্চবর্গের মানুষদের শিক্ষাদান সরকারের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
  • পাশ্চাত্য জ্ঞান – এই শিক্ষাব্যবস্থার মূল নীতি ছিল পাশ্চাত্য জ্ঞান বিতরণ করা।
  • পুথিগত শিক্ষা – এই শিক্ষাব্যবস্থা ছিল পুথিগত। বাস্তবমুখী প্রযুক্তি শিক্ষার অভাব ছিল এই ব্যবস্থায়।

ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার কী কী ত্রুটি ছিল?

ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটিসমূহ – ইংরেজদের প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ।

  • উচ্চবিত্তদের জন্য শিক্ষা – এই শিক্ষার সুযোগ পেয়েছিল সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষেরা। বিরাট সংখ্যক সাধারণ ভারতীয় জনগণ নিরক্ষরই থেকে যায়।
  • মাতৃভাষা অবহেলিত – ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চশিক্ষার মাধ্যম ছিল ইংরেজি। মাতৃভাষা সেখানে ছিল অবহেলিত।
  • যান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা – এই যান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর স্বতঃস্ফূর্ত স্বাভাবিক বিকাশের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।

ঔপনিবেশিক শিক্ষাকাঠামোর বিরুদ্ধে বাংলায় গড়ে ওঠা দুটি উদ্যোগ উল্লেখ করো।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার সূচনা ও প্রসার ঘটলেও এই বিদেশি শিক্ষানীতি নানাভাবে সমালোচিত হয়।

দেশীয় উদ্যোগ – ঔপনিবেশিক শিক্ষাকাঠামোর বিরুদ্ধে অনেকেই সোচ্চার হন। এর ফলশ্রুতি হিসেবে বাংলায় দেশীয় উদ্যোগে গড়ে ওঠা দুটি প্রতিষ্ঠান হল –

  • জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (1906 খ্রিস্টাব্দ) এবং
  • বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (1921 খ্রিস্টাব্দ)।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শের স্বরূপ কী ছিল?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বাধীন ভারতে আশ্রমিক শিক্ষা ও পাশ্চাত্যের আধুনিক শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়সাধনের চেষ্টা করেন।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শ –

  • আশ্রমিক – চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে খোলা আকাশের নীচে বা গাছতলায় শিক্ষাদান, গুরু-শিষ্যের ব্রহ্মচর্য পালন এই শিক্ষাদর্শের বৈশিষ্ট্য ছিল।
  • পাঠ্যক্রম – শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ রবীন্দ্র শিক্ষাদর্শের মূল লক্ষ্য ছিল। এইজন্য গান, ছবি আঁকা, খেলাধুলা, সাপ্তাহিক সভার আয়োজন করা হত। পাশাপাশি ইংরেজি, বাংলা, সংস্কৃত, অঙ্ক, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান পড়ানো হত।

প্রাচীন ভারতের আশ্রমিক শিক্ষাধারার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞানকেও পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করেন।

শিশুশিক্ষা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ কী বলেছেন?

শিশুশিক্ষা বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের মতামত – রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, শিশুকে প্রাকৃতিক পরিবেশে শিক্ষাদান করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ শিশু শৈশবকালে মস্তিষ্কের চেয়ে ইন্দ্রিয়ানুভূতির মাধ্যমে বেশি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

প্রকৃতি ও শিক্ষা – প্রকৃতিই হবে শিশুর শিক্ষক ও মুক্ত পরিবেশ হবে শিশুর বিদ্যালয়। খোলামেলা পরিবেশে শিশু শিক্ষা পেলে তার সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটবে। তাই কবিগুরু শিশুশিক্ষার জন্য প্রকৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথা বলেছেন।

হিতৈষী তহবিল কী?

পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রজাকল্যাণের উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ ‘হিতৈষী তহবিল’ নামে একটি তহবিল গঠন করেন।

হিতৈষী তহবিল – প্রজারা যে খাজনা প্রদান করত তার উপর হিতৈষী বৃত্তি ধার্য করে এবং জমিদারি থেকে তার সমপরিমাণ অর্থ ভরতুকি দিয়ে হিতৈষী তহবিল গঠন করা হয়। এই তহবিলের সঞ্চিত অর্থ গ্রামের পথঘাট নির্মাণ, স্কুল-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, বিপদকালে চাষিদের সহায়তা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে ব্যয় করা হত।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য বা কাজ সম্পর্কে লেখো।

1893 খ্রিস্টাব্দে ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথের যে শিক্ষাভাবনার সূচনা হয়, 1937 খ্রিস্টাব্দে ‘ছাত্রসম্ভাষণ’-এ তার পরিসমাপ্তি ঘটে। তিনি তাঁর প্রবন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য বা কাজ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য বা কাজ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য বা কাজগুলি হল –

  • বিদ্যাপ্রদান,
  • মুক্তচিন্তার অনুশীলন,
  • রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা ইত্যাদি।

কীভাবে বিশ্বভারতী গড়ে ওঠে?

শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ভুবনডাঙা গ্রামে প্রায় 20 বিঘা জমির পাট্টা পান। 1863 খ্রিস্টাব্দে এখানেই তিনি শান্তিনিকেতন আশ্রম স্থাপন করেন।

বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা – 1901 খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন আশ্রমে স্বল্প কিছু বালককে নিয়ে এক বিদ্যালয় স্থাপন করে নাম দেন ব্রহ্মচর্যাশ্রম। 1913 খ্রিস্টাব্দে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান এবং তার অর্থ দিয়েই 1921 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে এক কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এইভাবে শান্তিনিকেতনের স্কুল উচ্চশিক্ষার এক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীকালে বিশ্বভারতী নামে খ্যাত হয়।

বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে 1921 খ্রিস্টাব্দে নিজের শিক্ষাচিন্তার ভিত্তিতে বিশ্বভারতী নামক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য –

  • রবীন্দ্রনাথ ‘বিশ্বভারতী’-কে বিশ্বজাতির মিলনভূমিতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটানোর উদ্দেশ্যে শান্তিনিকেতনে চিন, জাপান, ইউরোপ, আমেরিকা-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্ডিতদের নিয়ে এসেছিলেন।
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় ঘটাতে চেয়েছিলেন। এইজন্য শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষের বাইরে প্রকৃতির মধ্যে গাছের তলায় শিক্ষা দেওয়া হত। তা ছাড়া শান্তিনিকেতনের সঙ্গে পাশাপাশি গ্রাম ও তার মানুষদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তাই শান্তিনিকেতনের শিক্ষা হয়ে উঠেছিল মানবতাবোধের শিক্ষা।

শ্রীনিকেতন কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

শান্তিনিকেতন থেকে প্রায় 3 কিমি দূরত্বে অবস্থিত শ্রীনিকেতন হল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় -এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা প্রতিষ্ঠান।

শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য – রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, মানুষের সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয়ের জন্য পল্লিগ্রামের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হওয়া প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে কবি গ্রামোন্নয়ন এবং কিশোর-যুবকদের জন্য উন্নয়নমূলক কার্যাবলির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন শ্রীনিকেতন। কৃষি ও পল্লিসংগঠন ভবন এবং শিল্পভবন এর অন্যতম অঙ্গ।

কবে, কী উদ্দেশ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে কলাভবন প্রতিষ্ঠা করেন?

1913 খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ‘নোবেল’ পুরস্কার পান এবং সেই পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তিনি শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ করেন এবং নতুন নামকরণ করেন বিশ্বভারতী।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে কলাভবন –

শান্তিনিকেতনে ‘বিশ্বভারতী’-র বিভিন্ন শাখা বা অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম হল কলাভবন।

  • প্রতিষ্ঠা – 1919 খ্রিস্টাব্দে ‘কলাভবন’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • উদ্দেশ্য – ললিতকলা বিষয়ক পড়াশোনা এবং গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে রবীন্দ্রনাথ কলাভবনের প্রতিষ্ঠা করেন।

নন্দলাল বসু স্মরণীয় কেন?

ভারতীয় চিত্রকলার ইতিহাসে নন্দলাল বসু এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছাত্র ছিলেন তিনি। 1922 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনের ‘কলাভবন’ -এর অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন নন্দলাল বসু।

নন্দলাল বসু স্মরণীয় হওয়ার কারণ –

  • আর্ট স্কুলে পড়ার সময়ে তাঁর আঁকা কিছু বিখ্যাত চিত্র হল – ‘শোকার্ত সিদ্ধার্থ’, ‘সতী’, ‘শিবসতী’, ‘ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা’ ইত্যাদি।
  • লেডি হেরিংহ্যামের সহকারীরূপে অজন্তা গুহাচিত্র নকল করার কাজ করেন নন্দলাল বসু। রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু গ্রন্থের অলংকরণও করেন তিনি।
  • স্বাধীন ভারতের সংবিধান গ্রন্থও তাঁর চিত্রে ও নির্দেশে অলংকৃত।

বিশ্বভারতী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কোন্ কোন্ দিক থেকে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির থেকে স্বতন্ত্র ছিল?

প্রাচীন ভারতবর্ষের আদর্শ ও মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে বিশ্বভারতী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

বিশ্বভারতীর স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য – মুক্তাঙ্গনে গাছের ছায়ায় এখানে পঠনপাঠন চলত। গুরু ও শিষ্য একই ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারায় অভ্যস্ত ছিল। পাঠ্যক্রমের মধ্যে সংগীত, নাটক, অঙ্কন এবং অন্যান্য সৃষ্টিশীল কার্যাবলি গুরুত্ব পেত। ব্যক্তিত্ব বিকাশের অন্যান্য দিকগুলিকেও গুরুত্ব দেওয়া হত।

তাই বলা যায়, পাঠ্যক্রম, শিক্ষার পদ্ধতি, আদর্শ ইত্যাদি নানা দিক থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি তৎকালীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের থেকে স্বতন্ত্র ছিল।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন এরকম কয়েকজন বিদেশি পণ্ডিতের নাম লেখো।

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীকে বিশ্বজাতির মিলনভূমিরূপে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি চিন, জাপান, ইউরোপ, আমেরিকা থেকে পণ্ডিত ব্যক্তিদের শান্তিনিকেতনে নিয়ে এসেছিলেন।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন এরকম বিদেশি শিক্ষকমণ্ডলী – বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন এরকম কয়েকজন বিদেশি পণ্ডিতবর্গের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন – অধ্যাপক তান ইয়ুন সান, অ্যালন ডেনিয়েলু, ইংরেজি শিক্ষক ডেভিড ম্যাককুচিয়ন, ঐতিহাসিক সিলভাঁ লেভি, ব্রিটিশ শিল্পবিশারদ স্টেলা ক্রামরিশ, ঐতিহাসিক উইন্টারনিৎস প্রমুখ।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের উন্নতির উদ্দেশ্যে গৃহীত কয়েকটি পদক্ষেপ উল্লেখ করো।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে 1921 খ্রিস্টাব্দের 23 ডিসেম্বর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন। এটি পরবর্তীকালে 1951 খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের উন্নতির উদ্দেশ্যে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ – বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের উন্নতির উদ্দেশ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলি হল নিম্নরূপ –

  • দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়।
  • বিশ্বভারতীর গ্রন্থাগারকে দেশ-বিদেশের বহু মূল্যবান গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার দ্বারা সমৃদ্ধ করা হয় ইত্যাদি।

বাংলায় ছাপাখানার ইতিহাসের প্রস্তুতিপর্ব বা প্রেক্ষাপট কী ছিল?

1778 খ্রিস্টাব্দে হ্যালহেডের বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থের পূর্বে প্রায় 100 বছর ধরে বিক্ষিপ্তভাবে ছাপার কাজে বাংলা হরফের খুব স্বল্প ব্যবহার হতে থাকে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আতানাসিউস কির্চের রচিত চায়না ইলাস্ট্রেটা (আমস্টারডাম, 1667) বা হ্যালহেডের রচিত এ কোড অব জেন্টু লজ (লন্ডন, 1776 খ্রি.)। এই মুদ্রণগুলি ছিল ব্লক মুদ্রণ, তা সচল ছিল না।

কবে ও কীভাবে বাংলার ছাপার অক্ষর ব্যবহৃত হয়?

1778 খ্রিস্টাব্দে ব্রাসি হ্যালহেড (ইংরেজ কোম্পানির কর্মচারী) ইংরেজদের বাংলা শিক্ষার জন্য ইংরেজি ভাষায় A Grammar of the Bengal Language নামক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থের মোট পৃষ্ঠার চারভাগের একভাগ অংশে উদাহরণরূপে বাংলা হরফ ব্যবহার করা হয়। এইভাবে প্রথম বাংলা মুদ্রণ বা ছাপার কাজ শুরু হয়।

বাংলায় ছাপাখানা উদ্ভবের সহায়ক উপাদানগুলি কী ছিল?

বাংলায় ছাপাখানা উদ্ভবের সহায়ক উপাদানগুলি হল — প্রথমত, ইংরেজ কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠা ও 1773 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্টের প্রবর্তন। এর ফলে বাংলা প্রদেশে বাংলা ভাষায় সরকারি কাজকর্ম ও নির্দেশের প্রয়োজন দেখা দেয়। দ্বিতীয়ত, তৎকালীন গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলা ভাষায় মুদ্রণের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন।

হিকির বেঙ্গল গেজেট কী?

ছাপাখানার উদ্ভব বাংলায় সংবাদপত্রের যুগের সূচনা করেছিল এবং এরই পরিণতি ছিল হিকির বেঙ্গল গেজেট প্রকাশ। এটি কোম্পানির প্রেস থেকে ছাপা হত। এটি ছিল জেমস অগাস্টাস হিকি কর্তৃক সম্পাদিত সাপ্তাহিক সংবাদপত্র।

ছাপার হরফের বিবর্তন চিহ্নিত করো।

হ্যালহেড রচিত বাংলা গ্রামার বইয়ের হরফগুলি ছিল আকারে বেশ বড়ো ও উচ্চতায় 4.5 মিমি.। কিন্তু হরফের গঠন, স্পষ্টতা, আকার ও উচ্চতাকে আরো দৃষ্টিনন্দন করার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকে। ফলে হরফের উচ্চতা ক্রমশ ছোট হতে থাকে এবং একটি আদর্শরূপদানের চেষ্টা শুরু হয়।

শ্রীরামপুর ত্রয়ী বিখ্যাত কেন?

শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরি, জে. মার্শম্যান এবং ওয়ার্ড একত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ী নামে পরিচিত। এঁদের উদ্যোগে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি বাংলা মুদ্রণ শিল্পেরও বিকাশ ঘটে। এঁদের হাতেই 1800 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়।

ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের সম্পর্ক কী?

বাংলায় ছাপাখানার উদ্ভবের পূর্বে জ্ঞান বা শিক্ষাজগৎ ছিল হাতে লেখা পুঁথি বা মুখস্থবিদ্যার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ছাপা বইয়ের ফলে মুষ্টিমেয় ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ জ্ঞান অন্যান্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, শ্রীরামপুর মিশন, স্কুল বুক সোসাইটির উদ্যোগে বাংলায় পাঠ্যপুস্তক রচনা ও পরিবেশনার কাজও শুরু হয়।

পঞ্চানন কর্মকার বিখ্যাত কেন?

বাংলা মুদ্রাক্ষর তৈরির ক্ষেত্রে উইলকিন্সের সহযোগী ছিলেন হুগলি নিবাসী শিল্পী পঞ্চানন কর্মকার। তাঁর তৈরি মুদ্রাক্ষর হ্যালহেডের বাংলা ব্যাকরণে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীকালে 1793 খ্রিস্টাব্দে কর্ণওয়ালিশ কোড-এর বাংলা সংস্করণেও তাঁর তৈরি উন্নত বাংলা মুদ্রাক্ষর ব্যবহার করা হয়। তাঁর প্রচেষ্টাতেই বাংলা হরফ নির্মাণ একটি স্থায়ী শিল্পে পরিণত হয়।

ছাপাখানার প্রসারে স্কুল বুক সোসাইটি বিখ্যাত কেন?

ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত (1817 খ্রি.) স্কুল বুক সোসাইটির উদ্দেশ্য ছিল অল্প খরচে শিশু ও শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা। ডেভিড হেয়ার আমৃত্যু বাংলা পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজে ব্রতী ছিলেন। এই সোসাইটি নিজের ছাপাখানার পাশাপাশি শ্রীরামপুর মিশন প্রেস সহ অন্যান্য প্রেসেও বই ছাপানোর ব্যবস্থা করেছিল।

ব্যাবসায়িক ভিত্তিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার কারণ কী ছিল?

ব্যাবসায়িক ভিত্তিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার কারণগুলি হল – প্রথমত, শিক্ষাবিস্তার, ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের প্রয়োজনে বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক ও প্রচার পুস্তিকার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয়ত, এই চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি জীবিকার্জনের ব্যবস্থা ও শিক্ষাদানকারী হয়ে ওঠাও ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য। উদাহরণরূপে মদনমোহন তর্কালংকার ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা বলা যায়।

ছাপাখানা প্রবর্তনের গুরুত্ব কী?

ছাপাখানা প্রবর্তনের গুরুত্বগুলি হল—বাংলায় মুদ্রণ সম্ভব হলে বাংলা ভাষা, জ্ঞান ও শিক্ষার বিস্তার ঘটে। ছাপাখানা ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে কলকাতা-কেন্দ্রিক নতুন পেশার উদ্ভব ঘটে। বাংলার সমাজ ও ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্নধর্মী পত্র-পত্রিকা ও সাহিত্যের উদ্ভব ঘটে।

ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স কী?

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা সংস্থার নাম হল ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স। এই প্রকাশনার সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ছিল বিদেশি। এখানে ছাপার পদ্ধতি ছিল উন্নত ধরনের হাফটোন ব্লকে ছাপা পদ্ধতি। তিন-চার রকম রং ব্যবহার করে ছোটোদের জন্য মজার বই প্রকাশ করা ছিল এই প্রকাশনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

ছাপাখানা জগতে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী বিখ্যাত কেন?

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (1863-1915 খ্রি.) ছিলেন একজন বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক ও চিত্রকর। ছেলেদের রামায়ণ ও ছেলেদের মহাভারত ছিল তাঁর লেখা প্রথম দুটি বই। তিনি ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স নামক একটি ছাপাখানা ও প্রকাশনা সংস্থা খুলেছিলেন এবং ছাপাখানার জন্য বিভিন্ন নতুন ও উন্নত পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।

ব্রিটিশ শাসনপর্বে সার্ভে বা জরিপ ব্যবস্থার গুরুত্ব কী?

ব্রিটিশ শাসনপর্বে ফ্রাঙ্কল্যান্ড ও হগ্ ক্যামেরন 24 পরগনার জমি জরিপ করেন। আবার 1770-র দশকে জেমস রেনেল বাংলার নদীপথগুলি জরিপ করে মোট 16টি মানচিত্র তৈরি করেন। এভাবে জরিপ ও মানচিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে এদেশের প্রাকৃতিক, বনজ ও জলজ সম্পদ চিহ্নিত করে এদেশকে শোষণের ব্যবস্থা করা হয়।

ব্রিটিশ শাসনপর্বে কীভাবে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রাথমিক বিকাশ ঘটে?

ব্রিটিশ শাসনপর্বে বিভিন্ন ধরনের জরিপ, সমীক্ষা ও মানচিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও কারিগরি ব্যবস্থার বিকাশ ঘটে। অষ্টাদশ শতকে এশিয়াটিক সোসাইটি ও বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং উনিশ শতকে অ্যাগ্রো-হর্টিকালচারাল সোসাইটি ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রাথমিক বিকাশ ঘটে।

ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি হল — স্বাধীনভাবে বিজ্ঞানচর্চা করা এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের প্রসার ঘটানো। বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার পাশাপাশি বিজ্ঞান বিষয়ে বক্তৃতার আয়োজন করে শ্রোতাদেরকে বিজ্ঞান বিষয়ে ওয়াকিবহাল বা সচেতন করা। এভাবে দেশীয় উদ্যোগে ও তত্ত্বাবধানে প্রকৃত বিজ্ঞান গবেষণাই ছিল এই প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠায় তারকনাথ পালিতের ভূমিকা কী ছিল?

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তারকনাথ পালিতের ভূমিকা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রথমত, তিনি বাংলায় বিজ্ঞানভিত্তিক ও প্রাযুক্তিক শিক্ষা বিস্তারে সচেষ্ট হন। দ্বিতীয়ত, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি জমি ও টাকা দান (দুটি পর্যায়ে যথা জুন ও অক্টোবর 1912 খ্রি.) করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এই জমি ও অর্থের উপর ভিত্তি করেই কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হন।

জগদীশচন্দ্র বসুর গবেষণার দুটি দিক চিহ্নিত করো।

জগদীশচন্দ্র বসুর গবেষণার দুটি দিক হল –

  • বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ সম্পর্কে গবেষণা করে বেশ কিছু নতুন তথ্যের আবিষ্কার করেন। তিনি এ সম্পর্কে ইংল্যান্ডের রয়্যাল ইন্সটিটিউশনে বক্তৃতাও দেন।
  • তিনি জীব ও জড় জগতের মধ্যে সম্পর্ক ও উদ্ভিদবিদ্যা সম্পর্কেও গবেষণা করেন।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ব্যর্থতার কারণগুলি কী ছিল?

জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ব্যর্থতার কারণগুলি হল —

  • জাতীয় শিক্ষাপরিষদ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে অর্থ সংকটের সম্মুখীন হয়।
  • প্রথম দিকে অনেক শিক্ষক এগিয়ে এলেও বেতনের স্বল্পতার কারণে অনেক শিক্ষক এই প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন।
  • চাকরির বাজারে এই প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত ডিগ্রি বা সার্টিফিকেট ছিল গুরুত্বহীন এবং একারণেই এই কলেজে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি।
  • তৎকালীন চরমপন্থী নেতারা এই পরিষদকে স্বীকৃতিও দেয়নি।

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের পাঠ্যক্রম কী ছিল?

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের পাঠ্যক্রম ছিল কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্রিক। এখানে তিন বছরের ইন্টারমিডিয়েট ও চার বছরের সেকেন্ডারি বা মাধ্যমিক শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়। সমকালীন শিক্ষক বিনয়কুমার সরকার উপহাস করে এই প্রতিষ্ঠানকে “মিস্তিরি তৈরীর কারখানা” বলে অভিহিত করেন।

শান্তিনিকেতন আশ্রম কী?

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বোলপুরে নির্জনে ব্রহ্ম উপাসনা করার জন্য একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই শান্তিনিকেতন আশ্রম নামে পরিচিত। এই আশ্রমকে কেন্দ্র করেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্রহ্মচর্যাশ্রম নামক বিদ্যালয় ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল –

  • এরূপ আবাসিক ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠা করা এবং এভাবে প্রাচীন ভারতের ব্রহ্মচর্যাশ্রমের গুরু-শিষ্য সম্পর্ককে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
  • প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে এক নতুন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

বিশ্বভারতীর বিভাগগুলি কী ছিল?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর বিভিন্ন বিভাগগুলি ছিল — পাঠভবন, শিক্ষাভবন, বিদ্যাভবন, রবীন্দ্রভবন, চিনা ভবন, কলা ভবন, সংগীত ভবন, হিন্দি ভবন।


আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” এর “সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন” থেকে পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো দশম শ্রেণির মাধ্যমিক পরীক্ষা, এমনকি চাকরি বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও উপযোগী। কারণ, এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক ইতিহাস - বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ - অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস - বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ - বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক ইতিহাস - বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা - বিশ্লেষণমূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – বিশ্লেষণমূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

About The Author

Solution Wbbse

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – বিশ্লেষণমূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

মেঘাচ্ছন্নতা বলতে কী বোঝো? মেঘ কীভাবে সৃষ্টি হয়?