এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “মানবচক্ষুর বিভিন্ন অংশগুলি একটি ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

মানবচক্ষুর বিভিন্ন অংশগুলি একটি ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো।
মানবচক্ষুর বিভিন্ন অংশ –

মানবচক্ষু একটি জটিল সংবেদী অঙ্গ যা আমাদের দেখতে সাহায্য করে। এর গঠন ও কাজ একটি ছকের মাধ্যমে নিচে তুলে ধরা হলো
| অংশের নাম (Part Name) | অবস্থান (Location) | কাজ (Function) |
| 1. স্ক্লেরা বা শ্বেতমণ্ডল (Sclera) | অক্ষিগোলকের বাইরের দিকের সাদা, অস্বচ্ছ ও শক্ত আবরণ। | চোখের অভ্যন্তরীণ অংশকে রক্ষা করা এবং চোখের আকৃতি বজায় রাখা। |
| 2. কর্নিয়া (Cornea) | স্ক্লেরার সামনের দিকের স্বচ্ছ ও উত্তল অংশ। | আলোকরশ্মিকে চোখের ভেতরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে এবং প্রতিসারক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। |
| 3৩. কোরয়েড বা কৃষ্ণমণ্ডল (Choroid) | স্ক্লেরার নিচে থাকা রক্তজালকসমৃদ্ধ ও মেলানিন রঞ্জকযুক্ত কালো রঙের স্তর। | চোখের ভেতরে আলোর প্রতিফলন রোধ করে এবং অক্ষিপট বা রেটিনাকে পুষ্টি জোগায়। |
| 4. আইরিস (Iris) | কর্নিয়ার পেছনে অবস্থিত রঙিন, বৃত্তাকার পেশিময় পর্দা। | তারারন্ধ্র বা পিউপিলের আকার ছোট-বড় করে চোখে প্রবেশকারী আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। |
| 5. পিউপিল বা তারারন্ধ্র (Pupil) | আইরিসের মাঝখানে থাকা ছোট ছিদ্র। | এর মাধ্যমে আলো চোখের ভেতরে লেন্সের ওপর পড়ে। তীব্র আলোতে এটি ছোট এবং মৃদু আলোতে বড় হয়। |
| 6. লেন্স (Lens) | আইরিসের ঠিক পেছনে অবস্থিত স্বচ্ছ, নমনীয় ও দ্বি-উত্তল জেলির মতো অংশ। | আলোকরশ্মিকে প্রতিসৃত করে রেটিনার ওপর ফোকাস করতে সাহায্য করে। |
| 7. সিলিয়ারি বডি (Ciliary Body) | আইরিস ও কোরয়েডের সংযোগস্থলে অবস্থিত পেশিময় বলয়। | লেন্সের বক্রতা পরিবর্তন করে উপযোজনে (Accommodation) সাহায্য করে এবং অ্যাকুয়াস হিউমার তৈরি করে। |
| 8. রেটিনা (Retina) | অক্ষিগোলকের সবচেয়ে ভেতরের আলোক সংবেদী স্তর। | বস্তুর উল্টো প্রতিবিম্ব তৈরি করে এবং আলোক শক্তিকে স্নায়ু উদ্দীপনায় পরিণত করে মস্তিষ্কে পাঠায়। এতে রড ও কোণ কোষ থাকে। |
| 9. অপটিক স্নায়ু (Optic Nerve) | রেটিনা থেকে উৎপন্ন হয়ে মস্তিষ্কের দর্শন কেন্দ্রে যায়। | রেটিনায় সৃষ্ট প্রতিবিম্বের সংকেত মস্তিষ্কে বহন করে নিয়ে যায়, যার ফলে আমরা দেখতে পাই। |
| 10. অ্যাকুয়াস হিউমার (Aqueous Humor) | কর্নিয়া ও লেন্সের মাঝখানে থাকা স্বচ্ছ জলীয় তরল। | চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং লেন্স ও কর্নিয়াকে পুষ্টি জোগায়। |
| 11. ভিট্রিয়াস হিউমার (Vitreous Humor) | লেন্স ও রেটিনার মধ্যবর্তী প্রকোষ্ঠে থাকা জেলি সদৃশ তরল। | অক্ষিগোলকের আকার বজায় রাখে এবং আলোকরশ্মিকে রেটিনায় পৌঁছাতে সাহায্য করে। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অক্ষিগোলকের ব্যাস কত এবং এর প্রধান স্তর কয়টি?
একটি পূর্ণবয়স্ক মানুষের অক্ষিগোলকের গড় ব্যাস প্রায় 2.5 সেমি। অক্ষিগোলকের প্রধান স্তর বা আবরণ তিনটি –
1. তন্তুময় বহিঃআবরণ (স্ক্লেরা ও কর্নিয়া),
2. মধ্যআবরণ (কোরয়েড, সিলিয়ারি বডি ও আইরিশ),
3. স্নায়বিক অন্তঃআবরণ (রেটিনা)।
চোখের কোন অংশ আলোর প্রতিসরণে সাহায্য করে?
‘প্রতিসারক মাধ্যম’ গুলো প্রধানত আলোর প্রতিসরণে সাহায্য করে। এগুলো হলো –
1. কর্নিয়া,
2. অ্যাকুয়াস হিউমার,
3. লেন্স,
4. ভিট্রিয়াস হিউমার।
রেটিনায় অবস্থিত আলোক-সুবেদী কোষগুলো কী কী?
রেটিনায় দুই ধরণের স্নায়ুকোষ বা আলোক-সুবেদী কোষ থাকে –
1. রড কোষ (Rod Cells) – এগুলো কম আলোতে বা মৃদু আলোতে দেখতে সাহায্য করে।
2. কোন কোষ (Cone Cells) – এগুলো উজ্জ্বল আলোতে দেখতে এবং বর্ণ (রং) চিনতে সাহায্য করে।
চোখের ‘রক্ষক অংশ’ বা আনুষঙ্গিক অংশগুলো কী কী?
চোখের মূল গোলকটি ছাড়াও একে রক্ষা করার জন্য কিছু আনুষঙ্গিক অংশ থাকে –
1. ভ্রু ও অক্ষিপট,
2. অক্ষিপল্লব (চোখের পাতা),
3. কনজাংটিভা,
4. অশ্রুগ্রন্থি (যা চোখকে ভেজা রাখে)।
অ্যাকুয়াস হিউমার ও ভিট্রিয়াস হিউমার কোথায় থাকে?
অ্যাকুয়াস হিউমার – কর্নিয়া এবং লেন্সের মধ্যবর্তী প্রকোষ্ঠে (অ্যাকুয়াস প্রকোষ্ঠ) থাকে।
ভিট্রিয়াস হিউমার – লেন্স এবং রেটিনার মধ্যবর্তী বড় প্রকোষ্ঠে (ভিট্রিয়াস প্রকোষ্ঠ) থাকে। এটি অক্ষিগোলকের আকার বজায় রাখতে সাহায্য করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “মানবচক্ষুর বিভিন্ন অংশগুলি একটি ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন