এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “মানবদেহের ক্যালোরিজেনিক হরমোনটির নাম এবং উৎস লেখো। এই হরমোনটির কাজের বিবরণ সংক্ষেপে লেখো।।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
মানবদেহের ক্যালোরিজেনিক হরমোনটির নাম এবং উৎস লেখো। এই হরমোনটির কাজের বিবরণ সংক্ষেপে লেখো।
মানবদেহে ক্যালোরিজেনিক হরমোনটি হল থাইরক্সিন বা T4 (Tetraiodothyronine)। এটি থাইরয়েড নামক অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ফলিকিউলার কোশে সংশ্লেষিত হয়।
থাইরক্সিন হরমোনের কার্যাবলি –
- BMR বৃদ্ধি – থাইরক্সিন হরমোন দেহকোশে O₂ -এর ব্যবহার বৃদ্ধি করে অধিক তাপ উৎপন্ন করে, ফলে মৌল বিপাকের হার বা BMR বৃদ্ধি পায়, তাই থাইরক্সিনকে শক্তি উৎপাদনকারী হরমোন বা ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলে।
- বিপাকের ওপর ক্রিয়া – থাইরক্সিন প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটের বিপাক হার বৃদ্ধি করে। থাইরক্সিন রক্তশর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং প্রোটিন সংশ্লেষ করে। এই হরমোন দেহে ফ্যাটের সঞ্চয় হ্রাস করে।
- হৃৎস্পন্দনের ওপর ক্রিয়া – থাইরক্সিনের প্রভাবে হৃৎস্পন্দনের হার বৃদ্ধি পায়। SA নোডের ওপর প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
- স্তনগ্রন্থির ওপর ক্রিয়া – থাইরক্সিন স্তনগ্রন্থিতে দুধের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে।
- দৈহিক বৃদ্ধি এবং পরিস্ফুরণের ওপর ক্রিয়া – মানবদেহের বৃদ্ধি, পরিস্ফুরণ, অস্থির বৃদ্ধি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে এ ছাড়াও শিশুদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করে।
- রক্তকণিকার ওপর ক্রিয়া – থাইরক্সিন লোহিত রক্তকণিকার ক্রমপরিণতি-তে সাহায্য করে।
- শ্বাসক্রিয়ার ওপর ক্রিয়া – থাইরক্সিন হরমোন দেহে বিপাকক্রিয়ার হার বৃদ্ধি করে এবং এর ফলে অক্সিজেনের ব্যবহার ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, ফলে শ্বাসক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পায়।
- অন্যান্য ক্রিয়া – থাইরক্সিন হরমোন ব্যাঙাচির রূপান্তরে এবং সরীসৃপের খোলস ত্যাগে সাহায্য করে। পাখির পালকের বর্ণ গঠনে সাহায্য করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
“ক্যালোরিজেনিক হরমোন” বলতে কী বোঝায়?
যে হরমোন দেহের মৌল বিপাক হার (BMR) বৃদ্ধি করে এবং খাদ্যবস্তু থেকে শক্তি (ক্যালোরি) উৎপাদনের হার বাড়ায়, তাকে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলে। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত থাইরক্সিন (T4) হল এর প্রধান উদাহরণ।
থাইরক্সিন (T4) এবং ট্রাইআইওডোথাইরোনিন (T3) এর মধ্যে পার্থক্য কী?
উভয়ই থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় এবং কাজ প্রায় একই। তবে, T4 হল প্রাথমিকভাবে নিঃসৃত নিষ্ক্রিয় হরমোন, যা যকৃৎ ও অন্যান্য কলায় গিয়ে T3 (সক্রিয় রূপে) রূপান্তরিত হয়। T3 শক্তিশালী এবং দ্রুত কাজ করে।
থাইরক্সিনের নিঃসরণ কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়?
হাইপোথ্যালামাস থেকে TRH (Thyrotropin-Releasing Hormone) এবং পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে TSH (Thyroid-Stimulating Hormone) নিঃসৃত হয়ে থাইরয়েড গ্রন্থিকে থাইরক্সিন নিঃসরণের জন্য উদ্দীপ্ত করে। রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রা বেশি হলে TRH ও TSH নিঃসরণ কমে (নেগেটিভ ফিডব্যাক)।
থাইরক্সিনের অপর্যাপ্ততা বা আধিক্যের ফলে কী রোগ হয়?
থাইরক্সিনের অপর্যাপ্ততা বা আধিক্যের ফলে রোগ –
1. অপর্যাপ্ততা (হাইপোথাইরয়েডিজম) – মৌল বিপাক হার কমে, ওজন বাড়ে, ক্লান্তি, শীত সহ্য না হওয়া, গলগণ্ড (Goitre) ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। শিশুদের ক্রেটিনিজম হতে পারে।
2. আধিক্য (হাইপারথাইরয়েডিজম) – ওজন কমে, হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়, ঘাম বেশি হয়, উত্তেজনা বাড়ে, গরম সহ্য না হওয়া ইত্যাদি হয়।
থাইরক্সিন কেন “শক্তির হরমোন” বা “মেটাবলিজমের হরমোন” বলা হয়?
এটি দেহের প্রায় সব কলার বিপাকীয় হার বাড়ায়, শ্বসন ও শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, ফলে দেহের শক্তি ব্যয় ও তাপ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
থাইরক্সিনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয় কেন?
থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা (স্বাভাবিক, কম-বেশি) নির্ণয়, হাইপো- বা হাইপারথাইরয়েডিজম রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পর্যবেক্ষণের জন্য রক্তে TSH, T3 ও T4 হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।
থাইরক্সিন দৈহিক বৃদ্ধিতে কীভাবে সাহায্য করে?
থাইরক্সিন (GH) এর সাথে সমন্বয় করে অস্থি ও কলার বৃদ্ধি, পরিস্ফুরণ এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিশুদের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য এটি অপরিহার্য।
থাইরক্সিনের উৎস হিসেবে “থাইরয়েড গ্রন্থি” কোথায় অবস্থিত?
মানবদেহে থাইরয়েড গ্রন্থি শ্বাসনালির সামনে, গলার নিচের অংশে (আদামের আপেলের নিচে) প্রজাপতির আকৃতিতে অবস্থিত একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “মানবদেহের ক্যালোরিজেনিক হরমোনটির নাম এবং উৎস লেখো। এই হরমোনটির কাজের বিবরণ সংক্ষেপে লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন