এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “মায়োপিয়া, হাইপারমেট্রোপিয়া ও প্রেসবায়োপিয়া কাকে বলে? অক্ষিগোলকের এই সকল ত্রুটি প্রতিকার করার পদ্ধতি উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

মায়োপিয়া, হাইপারমেট্রোপিয়া ও প্রেসবায়োপিয়া কাকে বলে? অক্ষিগোলকের এই সকল ত্রুটি প্রতিকার করার পদ্ধতি উল্লেখ করো।
নিকটবন্ধ দৃষ্টি (Myopia) – অক্ষিগোলকের ব্যাস স্বাভাবিকের তুলনায় বর্ধিত হওয়ায় ও লেন্সটি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উত্তল বা পুরু হওয়ায় বস্তুটির প্রতিবিম্ব রেটিনার সামনে সৃষ্টি হয়, ফলে দূরের দৃষ্টি ব্যাহত হয় কিন্তু নিকটের দৃষ্টি ঠিক থাকে, তাকে নিকটবদ্ধ দৃষ্টি বা মায়োপিয়া বলে।
দূরবন্ধ দৃষ্টি (Hypermetropia) – অক্ষিগোলকের ব্যাস স্বাভাবিকের তুলনায় ছোটো হওয়ায় এর লেন্সটি স্বাভাবিকের থেকে বেশি পাতলা হওয়ায় বস্তুটির প্রতিবিম্ব রেটিনার পশ্চাতে সৃষ্টি হয়, ফলে নিকটের দৃষ্টি ব্যাহত হয় ও দূরের দৃষ্টি ঠিক থাকে, একে দূরবদ্ধ দৃষ্টি বা হাইপারমেট্রোপিয়া বলে।
প্রেসবায়োপিয়া – সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে লেন্সের সংকোচন ও প্রসারণশীলতা হ্রাস পাওয়ার ফলে কাছের বস্তুকে দেখতে না পাওয়াকে প্রেসবায়োপিয়া বলে।
অক্ষিগোলকের বিভিন্ন ত্রুটি (যেমন – মায়োপিয়া, হাইপার-মেট্রোপিয়া ও প্রেসবায়োপিয়া) প্রতিকার করার পদ্ধতিগুলি হল –
মায়োপিয়া -এর প্রতিকার – অবতল লেন্সযুক্ত চশমা বা অবতল কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারে এই রোগ প্রতিকার করা যায়।
হাইপারমেট্রোপিয়া -এর প্রতিকার – উত্তল লেন্সযুক্ত চশমা বা উত্তল কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করে এই রোগ প্রতিকার করা হয়।
প্রেসবায়োপিয়া -এর প্রতিকার – উত্তল লেন্সযুক্ত চশমা বা উত্তল প্রকৃতির কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করে এই ত্রুটি সংশোধন করা যায়। কিন্তু ওই ব্যক্তির একই সঙ্গে মায়োপিয়া থাকলে ওই একই চশমার লেন্সে অবতল অংশও রাখা হয়। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে বাইফোকাল লেন্স (‘+’ ও ‘-‘ পাওয়ার) ব্যবহার করা হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
মায়োপিয়া কী এবং কেন হয়?
মায়োপিয়া বা নিকটদৃষ্টি হল চোখের একটি সাধারণ ত্রুটি যাতে দূরের বস্তু ঝাপসা দেখায় কিন্তু কাছের বস্তু স্পষ্ট দেখা যায়। এটি তখনই ঘটে যখন চোখের অক্ষিগোলকের দৈর্ঘ্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় অথবা কর্নিয়া বা লেন্স বেশি বক্রতাসম্পন্ন হয়, ফলে আলোক রশ্মি রেটিনার সামনে ফোকাস হয়।
হাইপারমেট্রোপিয়া কী? এর প্রধান লক্ষণ কী?
হাইপারমেট্রোপিয়া বা দূরদৃষ্টি হল এক ধরনের দৃষ্টি ত্রুটি যেখানে কাছের বস্তু দেখতে সমস্যা হয়, তবে দূরের বস্তু তুলনামূলকভাবে স্পষ্ট দেখা যায়। এটি চোখের গোলক স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হওয়া বা লেন্স কম উত্তল হওয়ার কারণে হয়, যার ফলে প্রতিবিম্ব রেটিনার পিছনে গঠিত হয়।
প্রেসবায়োপিয়া কেন হয় এবং এটি হাইপারমেট্রোপিয়া থেকে কীভাবে আলাদা?
প্রেসবায়োপিয়া সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে (40 বছরের পর) চোখের লেন্সের স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে, ফলে কাছের বস্তু ফোকাস করতে সমস্যা হয়।
হাইপারমেট্রোপিয়া হল চোখের গঠনগত ত্রুটি যা যেকোনো বয়সেই হতে পারে, কিন্তু প্রেসবায়োপিয়া বয়সজনিত এবং প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে হয়।
মায়োপিয়া ও হাইপারমেট্রোপিয়া কীভাবে চশমা দিয়ে সংশোধন করা যায়?
মায়োপিয়া সংশোধনে অবতল লেন্স (Concave lens) ব্যবহার করা হয় যা আলোক রশ্মিকে ছড়িয়ে দেয় ও রেটিনার উপর ফোকাস আনতে সাহায্য করে।
হাইপারমেট্রোপিয়া সংশোধনে উত্তল লেন্স (Convex lens) ব্যবহার করা হয় যা আলোক রশ্মিকে একত্রিত করে এবং প্রতিবিম্ব রেটিনার উপর ফোকাস করায়।
প্রেসবায়োপিয়া সংশোধনে বাইফোকাল লেন্স কীভাবে সাহায্য করে?
বাইফোকাল লেন্সের মধ্যে দুই ধরনের পাওয়ার থাকে—উপরে অংশে দূরের জন্য পাওয়ার (মাইনাস বা প্লাস) ও নিচের অংশে কাছের দেখার জন্য উত্তল পাওয়ার। এতে দূরের ও কাছের কাজ একই চশমায় করতে সুবিধা হয়, বিশেষ করে যদি প্রেসবায়োপিয়ার সাথে মায়োপিয়া বা হাইপারমেট্রোপিয়াও থাকে।
মায়োপিয়া ও হাইপারমেট্রোপিয়া একই ব্যক্তির মধ্যে একসঙ্গে হতে পারে কি?
সাধারণত একই চোখে মায়োপিয়া ও হাইপারমেট্রোপিয়া একসাথে হয় না, কিন্তু প্রেসবায়োপিয়ার সাথে যে কোনো একটি ত্রুটি থাকলে বাইফোকাল বা মাল্টিফোকাল লেন্স ব্যবহার করতে হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “মায়োপিয়া, হাইপারমেট্রোপিয়া ও প্রেসবায়োপিয়া কাকে বলে? অক্ষিগোলকের এই সকল ত্রুটি প্রতিকার করার পদ্ধতি উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন