এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? ন্যাস্টিক চলনের প্রকারভেদগুলি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? ন্যাস্টিক চলনের প্রকারভেদগুলি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।
ন্যাস্টিক চলন যে প্রকার আবিষ্ট বক্রচলনে উদ্ভিদ অঙ্গের চলন উদ্দীপকের তীব্রতার তারতম্যের দ্বারা প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে ন্যাস্টিক চলন বা ব্যাপ্তি চলন বলে।
ন্যাস্টিক চলনের প্রকারভেদ –
- ফোটোন্যাস্টি বা আলোকব্যাপ্তি চলন – উদ্ভিদ অঙ্গের আবিষ্ট বক্রচলন আলোকের তীব্রতার প্রভাবে হলে, তাকে ফোটোন্যাস্টি চলন বলে। যেমন – পদ্মফুল, সূর্যমুখী দিনের বেশি আলোতে ফোটে এবং রাতের মৃদু আলোতে মুদে যায়।
- থার্মোন্যাস্টি চলন বা তাপব্যাপ্তি চলন – উষ্ণতার তীব্রতার তারতম্যে উদ্ভিদ অঙ্গের ব্যাপ্তি চলন ঘটলে, তাবে থার্মোন্যাস্টি চলন বলে। যেমন – টিউলিপ ফুল দিনের উন্নত বৃদ্ধির সঙ্গে ফোটে, শিম্বিগোত্রীয় উদ্ভিদের পক্ষল যৌগিকপত্র বেশি উষ্ণতায় মুদে যায়।
- সিসমোন্যাস্টি বা স্পর্শব্যাপ্তি চলন – স্পর্শ বা আঘাতজনিত উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদ অঙ্গে যে ব্যাপ্তি চলন হয়, তাকে সিসমোন্যাস্টি চলন বলে। যেমন – লজ্জাবতী উদ্ভিদের পাতা স্পর্শ করলে এরা নুয়ে পড়ে।
- কেমোন্যাস্টি বা রসায়নব্যাপ্তি চলন – যে প্রকার ন্যাস্টিক চলন রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে ঘটে, উদ্ভিদের সেই প্রকার ন্যাস্টিক চলনকে কেমোন্যাস্টি চলন বলে। যেমন – সূর্যশিশির গাছের পাতায় পতঙ্গ বসলে পাতার কর্ষিকা গুটিয়ে যায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ন্যাস্টিক চলন কী?
ন্যাস্টিক চলন হল এক ধরনের আবিষ্ট বক্রচলন, যেখানে উদ্ভিদ অঙ্গের চলন উদ্দীপকের তীব্রতার তারতম্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়, কিন্তু উদ্দীপকের অভিমুখ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। অর্থাৎ, চলনের দিক উদ্দীপকের দিকের উপর নির্ভরশীল নয়।
ন্যাস্টিক চলন ও ট্রপিক চলনের মধ্যে মূল পার্থক্য কী?
ন্যাস্টিক চলন ও ট্রপিক চলনের মধ্যে মূল পার্থক্য –
1. ন্যাস্টিক চলনে চলনের দিক উদ্দীপকের অভিমুখ দ্বারা নির্ধারিত হয় না। এটি সাধারণত দ্রুত হয়।
2. ট্রপিক চলনে (যেমন – আলোকপ্রবণতা) চলনের দিক উদ্দীপকের অভিমুখ দ্বারা নির্ধারিত হয় (যেমন – আলোর দিকে বৃদ্ধি)। এটি সাধারণত ধীরগতির হয়।
ফোটোন্যাস্টি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
আলোর তীব্রতার পরিবর্তনের কারণে উদ্ভিদ অঙ্গে যে ন্যাস্টিক চলন ঘটে, তাকে ফোটোন্যাস্টি বলে।
উদাহরণ – পদ্মফুল দিনের আলোতে ফোটে এবং রাতের অন্ধকারে মুদে যায়। সূর্যমুখী ফুলও আলোর তারতম্যে ফোটে ও মুদে যায়।
থার্মোন্যাস্টি বলতে কী বোঝায়?
তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ন্যাস্টিক চলনকে থার্মোন্যাস্টি বলে।
উদাহরণ – টিউলিপ ফুল গরম তাপমাত্রায় ফোটে এবং ঠান্ডা তাপমাত্রায় মুদে যায়।
সিসমোন্যাস্টি কী? এর সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ কোনটি?
স্পর্শ, আঘাত বা কম্পনের কারণে উদ্ভিদ অঙ্গে যে ন্যাস্টিক চলন ঘটে, তাকে সিসমোন্যাস্টি বলে।
উদাহরণ – লজ্জাবতী (Touch-me-not) গাছের পাতা স্পর্শ করলে তা দ্রুত নুয়ে পড়ে। এটি সিসমোন্যাস্টির সবচেয়ে জনপ্রিয় উদাহরণ।
কেমোন্যাস্টি চলন কী? এটি কীভাবে কাজ করে?
রাসায়নিক পদার্থের (যেমন: অ্যামোনিয়া, নির্দিষ্ট গ্যাস) প্রভাবে উদ্ভিদ অঙ্গে যে ন্যাস্টিক চলন ঘটে, তাকে কেমোন্যাস্টি বলে।
উদাহরণ – সূর্যশিশির (Drosera) নামক মাংসাশী উদ্ভিদের পাতায় পতঙ্গ বসলে, পতঙ্গের দেহ থেকে নিঃসৃত কিছু রাসায়নিকের প্রভাবে পাতার কর্ষিকা গুটিয়ে পতঙ্গকে আটকে ফেলে।
নিকটিন্যাস্টি কী?
নিকটিন্যাস্টি হল এক ধরনের ন্যাস্টিক চলন যা দিন ও রাতের চক্র বা আলো-অন্ধকারের পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। এটি মূলত ফোটোন্যাস্টিরই একটি রূপ, যেখানে চলন একটি নিয়মিত দৈনিক ছন্দ অনুসরণ করে।
উদাহরণ – অনেক গাছের পাতা রাতে মুদে যায় ও দিনে খোলে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? ন্যাস্টিক চলনের প্রকারভেদগুলি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন