নিউরোগ্লিয়ার বৈশিষ্ট্য লেখো। এর কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “নিউরোগ্লিয়ার বৈশিষ্ট্য লেখো। এর কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

নিউরোগ্লিয়ার বৈশিষ্ট্য লেখো। এর কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

নিউরোগ্লিয়ার বৈশিষ্ট্য লেখো। এর কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

নিউরোগ্লিয়ার বৈশিষ্ট্য –

  • নিউরোগ্লিয়া একপ্রকার পরিবর্তিত যোগকলা কোশ।
  • নিউরোগ্লিয়া স্নায়ুতন্ত্রের ধারক কোশ হিসেবে কাজ করে। স্নায়ুকোশের মৃত্যুর পর নিউরোগ্লিয়া তার স্থান দখল করে।
  • নিউরোগ্লিয়া স্নায়ুস্পন্দন পরিবহণে অক্ষম।
  • নিউরোগ্লিয়া বহু প্রবর্ধকযুক্ত এবং বিভাজনে সক্ষম।
  • স্নায়ুতন্ত্রের কোশসমষ্টির প্রায় 90% হল নিউরোগ্লিয়া।

নিউরোগ্লিয়ার কাজ –

  • স্নায়ুতন্ত্রে ইনসুলেটর হিসেবে কাজ করে এবং নিউরোনকে যান্ত্রিক দৃঢ়তা প্রদান করে।
  • অধিকাংশ গ্লিয়াল কোশ ধারক কোশ হিসেবে কাজ করে।
  • মায়েলিন শিদ গঠনে সাহায্য করে (অলিগোডেনড্রোগ্লিয়া)।
  • মাইক্রোগ্লিয়া, আগ্রাসী কোশ হিসেবে স্নায়ুকোশকে রক্ষা করে ও বিনষ্ট কোশকে অপসারিত করে (মাইক্রোগ্লিয়া)।
  • নিউরোনকে পুষ্টিদ্রব্য সরবহার করে (অ্যাস্ট্রোসাইট)।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

নিউরোন এবং নিউরোগ্লিয়ার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কী?

নিউরোন এবং নিউরোগ্লিয়ার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য –
1. নিউরোন স্নায়ু সংকেত (ইম্পাল্স) উৎপাদন ও পরিবহনে সরাসরি অংশ নেয়। এরা সাধারণত বিভাজন ক্ষমতা হারায়।
2. নিউরোগ্লিয়া (গ্লিয়াল কোষ) সংকেত পরিবহন করে না। এরা নিউরোনকে যান্ত্রিক ও পুষ্টি সমর্থন, অন্তরণ, প্রতিরক্ষা এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। এরা বিভাজনক্ষম।

নিউরোগ্লিয়া প্রধানত কত প্রকার ও তাদের কি কি কাজ?

প্রধানত দুই প্রকার –
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের (CNS) গ্লিয়া –
1. অ্যাস্ট্রোসাইট – নিউরোনে পুষ্টি সরবরাহ, রক্ত-মস্তিষ্ক বাধা গঠন।
2. অলিগোডেনড্রোসাইট – মায়েলিন শীথ তৈরি করে অন্তরণ প্রদান।
3. মাইক্রোগ্লিয়া – প্রতিরক্ষা ও বিনষ্ট কোষ/অপদ্রব্য অপসারণ (ফ্যাগোসাইটোসিস)।
4. এপেন্ডিমাল কোষ – মস্তিষ্কের গহ্বর রেখাযুক্ত।
প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের (PNS) গ্লিয়া –
1. শোয়ান কোষ – PNS-এ মায়েলিন তৈরি।
2. স্যাটেলাইট কোষ – নিউরোনে পুষ্টি ও রক্ষা।

“ধারক কোশ” বলতে কী বোঝায়? নিউরোগ্লিয়া কীভাবে এই ভূমিকা পালন করে?

ধারক কোষ (Supporting cells) হলো সেই কোষ যা অঙ্গ বা টিস্যুকে কাঠামোগত সহযোগিতা করে। নিউরোগ্লিয়া স্নায়ুকোশগুলোর মাঝের স্থান পূরণ করে, তাদের অবস্থান স্থির রাখে, যান্ত্রিক দৃঢ়তা দেয় এবং কোনো নিউরোন ক্ষতিগ্রস্ত বা মারা গেলে অনেক সময় তার স্থান দখল করে।

মায়েলিন শীথ তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে কোন গ্লিয়াল কোষগুলো ভূমিকা রাখে?

1. কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে (CNS) – অলিগোডেনড্রোসাইট একেকটি একসাথে অনেকগুলো নিউরনের এক্সনের চারপাশে মায়েলিন তৈরি করে।
2. প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রে (PNS) – শোয়ান কোষ শুধুমাত্র একটি এক্সনের একটি অংশকে মায়েলিন দিয়ে আবৃত করে।

অ্যাস্ট্রোসাইটের প্রধান ভূমিকা কী?

অ্যাস্ট্রোসাইটের প্রধান ভূমিকা –
1. নিউরোন এবং রক্তকণিকার মধ্যে পুষ্টি (গ্লুকোজ) ও গ্যাসের বিনিময়ে সাহায্য করে।
2. সাইন্যাপসের চারপাশে আয়ন ভারসাম্য (বিশেষত পটাশিয়াম) নিয়ন্ত্রণ করে।
3. রক্ত-মস্তিষ্ক বাধা (Blood-Brain Barrier) গঠনে অংশ নেয়, যা মস্তিষ্কে ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশে বাধা দেয়।

মাইক্রোগ্লিয়া কেন অন্যান্য গ্লিয়াল কোষ থেকে আলাদা?

মাইক্রোগ্লিয়া অন্যান্য গ্লিয়াল কোষ থেকে আলাদা কারণ মাইক্রোগ্লিয়া ম্যাক্রোফেজের মতোই প্রতিরক্ষাকারী কোষ (ইমিউন সেল)। এরা অন্যান্য গ্লিয়াল কোষের মতো এক্টোডার্ম থেকে না জন্মিয়ে মেসোডার্ম থেকে উদ্ভূত হয়। এরা সংক্রমণ বা ক্ষতির সময় সক্রিয় হয়ে ক্ষতিকর জীবাণু বা মৃত কোষ ভক্ষণ করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “নিউরোগ্লিয়ার বৈশিষ্ট্য লেখো। এর কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে একটি সাদৃশ্য ও একটি বৈসাদৃশ্য লেখো। হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে কাজের পার্থক্য লেখো।

হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে একটি সাদৃশ্য ও একটি বৈসাদৃশ্য লেখো। হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে কাজের পার্থক্য লেখো।

CSF এবং মেনিনজেস -এর অবস্থান ও কাজ লেখো।

CSF এবং মেনিনজেস -এর অবস্থান ও কাজ লেখো।

মানবচক্ষুর বিভিন্ন অংশগুলি একটি ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো।

মানবচক্ষুর বিভিন্ন অংশগুলি একটি ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে একটি সাদৃশ্য ও একটি বৈসাদৃশ্য লেখো। হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে কাজের পার্থক্য লেখো।

নিউরোগ্লিয়ার বৈশিষ্ট্য লেখো। এর কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

CSF এবং মেনিনজেস -এর অবস্থান ও কাজ লেখো।

মানবচক্ষুর বিভিন্ন অংশগুলি একটি ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো।

মায়োপিয়া, হাইপারমেট্রোপিয়া ও প্রেসবায়োপিয়া কাকে বলে? এই ত্রুটি প্রতিকার করার পদ্ধতি