নদীর কাজ কয় প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকার কাজের বিবরণ দাও।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নদীর কাজ কয় প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকার কাজের বিবরণ দাও।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “নদীর কাজ কয় প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকার কাজের বিবরণ দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তার দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – নদীর বিভিন্ন কাজ ও তাদের সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

নদীর কাজ কয় প্রকার ও কী কী
নদীর কাজ কয় প্রকার ও কী কী

নদীর কাজ কয় প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকার কাজের বিবরণ দাও।

নদীর কাজ –

নদী উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত তার দীর্ঘ গতিপথে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। নদী তার প্রবাহপথে প্রধানত তিনধরনের কাজ করে, যথা – ক্ষয়, বহন ও অবক্ষেপণ।

নদীর জলের আয়তন ও পরিমাণ, গতিপথের ঢাল, জলপ্রবাহের গতি এবং বাহিত বস্তুভারের ওপর নদীর শক্তি নির্ভর করে। এই বিষয়গুলি নদীর কাজের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

ক্ষয় –

পার্বত্য অঞ্চলের ভূমির ঢাল বেশি এবং ভূমিরূপ খুব বন্ধুর প্রকৃতির হওয়ায় নদীর জলস্রোতের বেগ খুব প্রবল হয়। নদী প্রস্তরখণ্ডকে ক্ষয় করে চূর্ণবিচূর্ণ এবং স্থানচ্যুত করে নিজের চলার পথ দীর্ঘায়িত করে। একেই নদীর ক্ষয় কাজ বলে। নদীর ক্ষয় কাজ সাধারণত দু-ধরনের হয়, যথা – নিম্নক্ষয় ও পার্শ্বক্ষয়। এই ক্ষয় আবার বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয়।

  • জলপ্রবাহের দ্বারা ক্ষয় – প্রবহমান নদীর জলস্রোতের প্রভাবে নদীর খাত ও পার্শ্বে অবস্থিত অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও অসংলগ্ন প্রস্তরখণ্ডগুলি ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়।
  • অবঘর্ষ – নদীবাহিত প্রস্তরখণ্ডের সঙ্গে নদীগর্ভের সংঘর্ষের ফলে নদীখাতে নিম্ন ও পার্শ্ব উভয় প্রকার ক্ষয় হয়।
  • ঘর্ষণজনিত ক্ষয় – নদীবাহিত অপেক্ষাকৃত বৃহদাকৃতির প্রস্তরখণ্ডগুলির মধ্যে পারস্পরিক সংঘাতের ফলে ভেঙে গিয়ে ক্ষুদ্রাকার কণায় পরিণত হয় এবং ক্রমে নুড়ি ও ক্ষুদ্র দানার পলিতে পরিণত হয়।
  • দ্রবণজনিত ক্ষয় – কোনো নদী যদি চুনাপাথর বা অন্য কোনো সহজ দ্রাব্য খনিজসমৃদ্ধ শিলা বহন করে, তবে তা সহজেই দ্রবণে পরিণত হয়।

বহন –

নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে যেসব ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থ অর্থাৎ প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি, বালি, কাদা ইত্যাদি নদী জলস্রোতের দ্বারা একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হয়, তাকে নদীর বহন কাজ বলে। বহন ক্ষমতা তিনটি প্রধান কারণের ওপর নির্ভর করে। যথা – ক্ষয়প্রাপ্ত কণার আকৃতি, ঘূর্ণন গতি এবং স্রোতের গতিবেগের ওপর। এই প্রক্রিয়া চার ভাগে সংঘটিত হয়। যথা –

  • দ্রবণ প্রক্রিয়া – এই প্রক্রিয়ায় জলে দ্রবীভূত বিভিন্ন খনিজ পদার্থের কার্বনেট, সালফেট, ক্লোরাইড, অক্সাইড ইত্যাদির দ্রবণকে নদী বহন করে নিয়ে যায়।
  • আকর্ষণ প্রক্রিয়া – অপেক্ষাকৃত বৃহৎ দানার বালি বা নুড়ি, পাথর স্রোতের আকর্ষণ প্রক্রিয়ার দ্বারা নদীখাত বরাবর গড়িয়ে চলে।
  • লম্ফদান প্রক্রিয়া – মাঝারি আকৃতির শিলাকণা নদীতে ভাসতে পারে না বলে সেগুলি নদীগর্ভে লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যায়। এগুলি নদীখাতে 30-120 সেমি পর্যন্ত লাফ দেয়।
  • ভাসমান প্রক্রিয়া – শিলা ও প্রস্তরখণ্ডসমূহ ক্ষুদ্রাকার কণায় পরিণত হয়ে জলের ঘূর্ণিস্রোতে ভাসতে থাকে এবং দূরে বাহিত হয়। ঘূর্ণিস্রোতের প্রাবল্য কমে গেলে প্রথমেই ভারী কণাগুলি ভাসতে পারে না এবং ওই স্থানে সঞ্চিত হয়। কিন্তু সূক্ষ্ম কণাগুলি অর্থাৎ কাদা, পলি, বালি ইত্যাদি ভাসমান বোঝা হিসেবে বহুদূরে বাহিত হয়।

অবক্ষেপণ –

  • নদীর গতিবেগ হ্রাস।
  • গতিপথের ঢাল হ্রাস।
  • বস্তুভারের পরিমাণ বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে নদীর বহন ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে নদীর বস্তুভার বা অতিরিক্ত বোঝা নদীর তলদেশে কিংবা উপত্যকার বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত হয়, একে নদীর অবক্ষেপণ বলে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

নদীর কাজ কয় প্রকার ও কী কী?

নদীর কাজ প্রধানত তিন প্রকার –
1. ক্ষয় (Erosion)
2. বহন (Transportation)
3. অবক্ষেপণ (Deposition)

নদীর ক্ষয় কাজ কী?

নদীর ক্ষয় কাজ বলতে নদীর জলস্রোতের মাধ্যমে ভূমির ক্ষয় সাধনকে বোঝায়। এটি প্রধানত দুটি প্রকারের হয় –
1. নিম্নক্ষয় (Vertical Erosion) – নদীখাতের তলদেশ ক্ষয় করা।
2. পার্শ্বক্ষয় (Lateral Erosion) – নদীর পাড় বা পার্শ্ব ক্ষয় করা।

নদীর ক্ষয় কাজ কীভাবে সংঘটিত হয়?

নদীর ক্ষয় কাজ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয় –
1. জলপ্রবাহের দ্বারা ক্ষয় – জলস্রোতের প্রভাবে নদীর খাত ও পার্শ্ব ক্ষয় হয়।
2. অবঘর্ষ (Abrasion) – নদীবাহিত প্রস্তরখণ্ডের সঙ্গে নদীগর্ভের সংঘর্ষের ফলে ক্ষয় হয়।
3. ঘর্ষণজনিত ক্ষয় (Attrition) – নদীবাহিত প্রস্তরখণ্ডগুলির মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ক্ষয় হয়।
4. দ্রবণজনিত ক্ষয় (Solution) – দ্রাব্য শিলা (যেমন চুনাপাথর) জলে দ্রবীভূত হয়ে ক্ষয় হয়।

নদীর বহন কাজ কী?

নদীর বহন কাজ বলতে নদীর জলস্রোতের মাধ্যমে ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থ (প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি, বালি, কাদা ইত্যাদি) একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হওয়াকে বোঝায়।

নদীর বহন কাজ কীভাবে সংঘটিত হয়?

নদীর বহন কাজ চারটি প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয় –
1. দ্রবণ প্রক্রিয়া (Solution) – জলে দ্রবীভূত খনিজ পদার্থ বহন করা।
2. আকর্ষণ প্রক্রিয়া (Traction) – বৃহৎ দানার বালি বা নুড়ি নদীখাত বরাবর গড়িয়ে চলা।
3. লম্ফদান প্রক্রিয়া (Saltation) – মাঝারি আকৃতির শিলাকণা নদীগর্ভে লাফিয়ে লাফিয়ে চলা।
4. ভাসমান প্রক্রিয়া (Suspension) – ক্ষুদ্রাকার কণা জলের ঘূর্ণিস্রোতে ভাসমান অবস্থায় বহন করা।

নদীর অবক্ষেপণ কাজ কী?

নদীর অবক্ষেপণ কাজ বলতে নদীর গতিবেগ হ্রাস পাওয়ার কারণে বহনকৃত পদার্থ নদীর তলদেশে বা উপত্যকার বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত হওয়াকে বোঝায়।

নদীর অবক্ষেপণ কাজ কী কারণে হয়?

1. নদীর অবক্ষেপণ কাজ নিম্নলিখিত কারণে হয় –
2. নদীর গতিবেগ হ্রাস পাওয়া।
3. গতিপথের ঢাল হ্রাস পাওয়া।
4. বস্তুভারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া।

নদীর কাজের ওপর কী কী বিষয় প্রভাব বিস্তার করে?

নদীর কাজের ওপর নিম্নলিখিত বিষয়গুলি প্রভাব বিস্তার করে –
1. নদীর জলের আয়তন ও পরিমাণ।
2. গতিপথের ঢাল।
3. জলপ্রবাহের গতি।
4. বাহিত বস্তুভারের পরিমাণ।

নদীর ক্ষয় কাজের ফলে কী কী সৃষ্টি হয়?

নদীর ক্ষয় কাজের ফলে নিম্নলিখিত ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় –
1. গিরিখাত (Gorge)
2. ক্যানিয়ন (Canyon)
3. জলপ্রপাত (Waterfall)

নদীর অবক্ষেপণ কাজের ফলে কী কী সৃষ্টি হয়?

নদীর অবক্ষেপণ কাজের ফলে নিম্নলিখিত ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় –
1. বদ্বীপ (Delta)
2. প্লাবনভূমি (Floodplain)
3. বালিয়াড়ি (Sandbar)

নদীর বহন কাজের ফলে কী কী সৃষ্টি হয়?

নদীর বহন কাজের ফলে নিম্নলিখিত ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় –
1. নদীবাহিত পলি (Alluvium)
2. নদীর মোহনা (Estuary)

নদীর কাজের গুরুত্ব কী?

নদীর কাজের গুরুত্ব নিম্নরূপ –
1. ভূমিরূপ গঠনে সাহায্য করে।
2. উর্বর পলিমাটি সৃষ্টি করে কৃষিকাজে সহায়তা করে।
3. জলসেচ ও পানীয় জলের উৎস হিসেবে কাজ করে।
4. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নদীর কাজ কয় প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকার কাজের বিবরণ দাও।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “নদীর কাজ কয় প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকার কাজের বিবরণ দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তার দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – নদীর বিভিন্ন কাজ ও তাদের সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান-কষে দেখি 26.4-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.4

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান-কষে দেখি 26.3-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.3

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান - কষে দেখি 26.2-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.2

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse (Marks 4)

Madhyamik History Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (2 Marks)

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (2 Marks)

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse – বিবৃতি ও ব্যাখ্যা

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse – স্তম্ভ মেলাও