এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
অক্ষিগোলকের তিনটি আবরক স্তর আছে। বাইরের দিক থেকে ভিতরের দিকে আবরক স্তরগুলি হল যথাক্রমে –
তন্তুময় বহিঃআবরক বা ফাইব্রাস কোট (স্ক্লেরা ও কর্নিয়া) –
- স্ক্লেরা (Sclera) – অক্ষিগোলকের সবচেয়ে বাইরের তন্তুময় আবরক স্তরটির পশ্চাদভাগের প্রায় \(\frac56\) অংশে যে সাদা রঙের অস্বচ্ছ, অল্প রক্তজালকপূর্ণ স্তরটি অবস্থিত, তাকে স্কেরা বলে।
- কাজ – অক্ষিগোলকের নির্দিষ্ট আকৃতি দান এবং দৃঢ়তা দানে সাহায্য করে।
- কর্নিয়া (Cornea) – অক্ষিগোলকের বহিঃআবরকের সম্মুখভাগের স্বচ্ছ, রক্তজালকবিহীন, উত্তল \(\frac16\) অংশকে কর্নিয়া বলে।
- কাজ – আলোক প্রতিসারক মাধ্যমরূপে কাজ করে।

রক্তবাহময় মধ্যআবরক বা ভাসকুলার কোট (কৃষ্ণমণ্ডল বা কোরয়েড, আইরিশ, সিলিয়ারি বডি) –
- কৃষ্ণমণ্ডল (Cloroid) – অক্ষিগোলকের পশ্চাদভাগে অবস্থিত রক্তজালক এবং মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থপূর্ণ কালো বর্ণের স্তরটিকে কৃষ্ণমণ্ডল বলে।
- কাজ – কোরয়েড বা কৃষ্ণমণ্ডল কালো বর্ণের হওয়ায় অক্ষিগোলকে বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মির প্রতিফলন রোধ করে। এই স্তরটি রক্তবাহ সমন্বিত হওয়ায় অক্ষিগোলকের পুষ্টিতে সাহায্য করে।
- কনীনিকা (Iris) – অক্ষিগোলকের সম্মুখভাগে লেন্সের সামনে অবস্থিত এবং কেন্দ্রে 1-8 mm ব্যাসবিশিষ্ট রঞ্জক পদার্থপূর্ণ, পেশিবহুল, পাতলা পদার্থটিকে কনীনিকা (Iris) বলে। এই কেন্দ্রের ছিদ্রটিকে তারারন্ধ্র (Pupil) বলে।
- কাজ – লেন্সে আলোকরশ্মির প্রবেশকে নিয়ন্ত্রণ করে।
- সিলিয়ারি বডি (Ciliary Body) – লেন্সের চারপাশে বৃত্তাকারে অবস্থিত পেশিকোশযুক্ত স্তরকে সিলিয়ারি বডি বলে। এটি কোরয়েড ও আইরিশের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এই সিলিয়ারি বডির সঙ্গে লেন্সের সাসপেনসরি লিগামেন্ট যুক্ত থাকে।
- কাজ – সিলিয়ারি বডি সংকোচন এবং প্রসারণের মাধ্যমে লেন্সকে উপযোজনে সাহায্য করে।
স্নায়ুময় অন্তঃআবরক বা নার্ভাস কোট (রেটিনা) –
অক্ষিপট (Retina) – অক্ষিগোলকের সবচেয়ে ভিতরের স্নায়ুকোশ দ্বারা গঠিত স্তরটিকে রেটিনা বলে। রেটিনা 10টি স্তর নিয়ে গঠিত-এর মধ্যে 1টি পিগমেন্ট স্তর, ২টি লিমিটিং স্তর এবং 7টি স্নায়ুস্তর থাকে। এই স্নায়ুস্তরগুলিতে রড এবং কোনকোশ বর্তমান।
কাজ – রেটিনা আলোক গ্রাহক বা আলোকসুবেদী হিসেবে কাজ করে। বস্তুর উল্টো প্রতিবিম্ব রেটিনায় গঠিত হয়। রেটিনাতে দর্শনের জন্য দায়ী অপটিক স্নায়ু যুক্ত থাকে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অক্ষিগোলকের তিনটি আবরক স্তরের নাম কী কী?
তন্তুময় বহিঃআবরক, রক্তবাহময় মধ্যআবরক এবং স্নায়ুময় অন্তঃআবরক।
অক্ষিগোলকের কোন আবরক স্তরটি আলোক প্রতিসারণে সাহায্য করে?
তন্তুময় বহিঃআবরকের অংশ কর্নিয়া আলোক প্রতিসারক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
স্ক্লেরা ও কর্নিয়া কী? এদের কাজ উল্লেখ করো।
স্ক্লেরা হল অক্ষিগোলকের পশ্চাদভাগের সাদা, দৃঢ় তন্তুময় আবরক যা আকৃতি বজায় রাখে। কর্নিয়া হল সম্মুখভাগের স্বচ্ছ, উত্তল অংশ যা আলোকরশ্মি প্রতিসরণ করে।
অক্ষিগোলকের আলোকসুবেদী স্তরটির নাম কী? বস্তুর প্রতিবিম্ব এখানে কীভাবে গঠিত হয়?
আলোকসুবেদী স্তরটির নাম রেটিনা। কর্নিয়া ও লেন্স দিয়ে প্রতিসৃত হয়ে বস্তুর উল্টো (বাস্তব ও অবশীর্ষ) প্রতিবিম্ব রেটিনার উপর গঠিত হয়।
রেটিনায় কোন কোন ধরনের আলোকগ্রাহক কোশ থাকে? এরা কীসের জন্য দায়ী?
রড (Rod) ও কোন (Cone) কোশ থাকে। রড কোশ মৃদু আলো ও সাদা-কালো দর্শনের জন্য, আর কোন কোশ উজ্জ্বল আলো ও রং দর্শনের জন্য দায়ী।
অক্ষিগোলকের কোন অংশটি দৃঢ়তা প্রদান করে এবং কেন দরকার?
স্ক্লেরা অক্ষিগোলককে দৃঢ়তা ও নির্দিষ্ট গোলাকার আকৃতি দেয়, যা অভ্যন্তরীণ নরম কোমল অংশগুলিকে সুরক্ষা ও তাদের সঠিক অবস্থান বজায় রাখতে অত্যাবশ্যক।
কর্নিয়া স্বচ্ছ ও রক্তজালকবিহীন কেন?
আলোকরশ্মি বাধাহীনভাবে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে এবং সঠিকভাবে প্রতিসৃত হতে পারে, তাই কর্নিয়া স্বচ্ছ ও রক্তনালিবিহীন।
কোরয়েডে মেলানিন রঞ্জক থাকা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মেলানিন অতিরিক্ত আলো শোষণ করে এবং অভ্যন্তরে আলোর অপ্রয়োজনীয় প্রতিফলন রোধ করে, যা প্রতিবিম্বের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক।
রেটিনার সাথে অপটিক স্নায়ুর সম্পর্ক কী?
অপটিক স্নায়ু রেটিনার আলোকগ্রাহক কোশ থেকে উৎপন্ন দর্শন সংবেদ রেটিনার একটি নির্দিষ্ট স্থান (ব্লাইন্ড স্পটের কাছে) দিয়ে মস্তিষ্কের দর্শন কেন্দ্রে বহন করে।
আইরিশ বা কনীনিকা কীভাবে আলোক প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে?
আইরিশের পেশিগুলি সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে কেন্দ্রস্থ তারারন্ধ্র (Pupil) -এর আকার বাড়ায় বা কমায়, এভাবে লেন্সে প্রবেশকারী আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন