এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অক্ষিগোলকের আলোক প্রতিসারক মাধ্যমগুলি কী কী? তাদের কাজ বর্ণনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অক্ষিগোলকের আলোক প্রতিসারক মাধ্যমগুলি কী কী? তাদের কাজ বর্ণনা করো।
অক্ষিগোলকের আলোক প্রতিসারক মাধ্যমগুলি হল –
- কর্নিয়া,
- অ্যাকুয়াস হিউমর,
- লেন্স,
- ভিট্রিয়াস হিউমর।
কর্নিয়া (Cornea) –
অক্ষিগোলকের বাইরের স্তরের সামনের দিকের প্রায় \(\frac16\) ভাগ স্বচ্ছ অংশকে কর্নিয়া বলে। কর্নিয়া হল সর্ববহিস্থ আলোক প্রতিসারক মাধ্যম।
কাজ – কর্নিয়া স্বচ্ছ হওয়ায় এর মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মি অক্ষিগোলকের ভেতর প্রবেশ করে। কর্নিয়ার আলোক প্রতিসারক মাধ্যম আলোকরশ্মিকে কেন্দ্রীভূত করে। অ্যাকুয়াস হিউমর অংশে প্রেরণ করে। বাইরের পরিবেশের আঘাত থেকে চোখকে রক্ষা করাও কর্নিয়ার অপর কাজ।
অ্যাকুয়াস হিউমর (Aqueous Humour) –
অ্যাকুয়াস চেম্বারে অবস্থিত প্রোটিন, শর্করা এবং লবণ দ্বারা গঠিত স্বচ্ছ, জলীয় তরলকে অ্যাকুয়াস হিউমর বলে।
কাজ – অ্যাকুয়াস হিউমর অক্ষিগোলকের বিভিন্ন অংশে পুষ্টি জোগায়। এটি চোখের আকৃতি প্রদান করে এবং চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ নিয়ন্ত্রণ করে। অ্যাকুয়াস হিউমর আলোক প্রতিসারক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
লেন্স (Lens) –
আইরিশের পিছনে অবস্থিত, সিলিয়ারি বডি থেকে উৎপন্ন সাসপেনসরি লিগামেন্ট দ্বারা যুক্ত ক্রিস্টালাইন প্রোটিন দ্বারা গঠিত, স্বচ্ছ, স্থিতিস্থাপক, দ্বি-উত্তল, চাকতির ন্যায় অংশটিকে লেন্স বলে।
কাজ – আলোকরশ্মির প্রতিসরণ ঘটানো লেন্সের প্রধান কাজ। বাইরে থেকে আগত আলোকরশ্মি লেন্সের দ্বারা প্রতিসৃত হয়ে লেন্সের ফোকাসে রেটিনার ওপর বস্তুর প্রতিবিম্বের সৃষ্টি করে।
ভিট্রিয়াস হিউমর (Vitreous Humour) –
লেন্স ও রেটিনার মধ্যবর্তী ভিট্রিয়াস চেম্বারে অবস্থিত স্বচ্ছ, জেলির ন্যায়, সান্দ্র, তরল পদার্থকে ভিট্রিয়াস হিউমর বলে।
কাজ – চোখের আকৃতি প্রদান করে এবং চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ নিয়ন্ত্রণ করে। আলোক প্রতিসারক মাধ্যমরূপে এটি কাজ করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অক্ষিগোলকের আলোক প্রতিসারক মাধ্যম বলতে কী বোঝায়?
অক্ষিগোলকের ভেতরে অবস্থিত সেই সব স্বচ্ছ মাধ্যম বা অংশকে আলোক প্রতিসারক মাধ্যম বলে, যাদের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মি প্রতিসৃত হয়ে রেটিনার ওপর স্পষ্ট প্রতিবিম্ব গঠন করে। এগুলি হল কর্নিয়া, অ্যাকুয়াস হিউমর, লেন্স ও ভিট্রিয়াস হিউমর।
অক্ষিগোলকের আলোক প্রতিসরণের ক্ষেত্রে কর্নিয়ার ভূমিকা কী?
কর্নিয়া হল প্রধান প্রতিসারক মাধ্যম। এটি বাইরের থেকে আগত আলোর মোট প্রায় 2/3 ভাগ প্রতিসরণ ঘটিয়ে আলোকরশ্মিকে লেন্সের দিকে কেন্দ্রীভূত করে। এটি একটি স্থির ফোকাসিং ক্ষমতাসম্পন্ন অংশ।
অক্ষিগোলকের অ্যাকুয়াস হিউমর ও ভিট্রিয়াস হিউমরের মধ্যে পার্থক্য কী?
অ্যাকুয়াস হিউমর ও ভিট্রিয়াস হিউমরের মধ্যে পার্থক্য –
1. অ্যাকুয়াস হিউমর জলীয় ও তরল, যা কর্নিয়া ও লেন্সের মধ্যবর্তী অ্যাকুয়াস চেম্বারে থাকে। এটি পুষ্টি সরবরাহ করে ও চোখের সামনের অংশের চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
2. ভিট্রিয়াস হিউমর জেলির মতো ও সান্দ্র, যা লেন্স ও রেটিনার মধ্যবর্তী বৃহৎ ভিট্রিয়াস চেম্বারে থাকে। এটি চোখের গোলাকার আকৃতি বজায় রাখে এবং পেছনের অংশের চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
অক্ষিগোলকের লেন্স কীভাবে তার প্রতিসারক ক্ষমতা পরিবর্তন করে?
লেন্সটি সিলিয়ারি পেশি ও সাসপেনসরি লিগামেন্টের সাথে যুক্ত। দূরের বস্তু দেখতে গেলে সিলিয়ারি পেশি শিথিল হয় এবং লেন্স চ্যাপ্টা হয় (কম প্রতিসরণ)। কাছের বস্তু দেখতে গেলে সিলিয়ারি পেশি সংকুচিত হয়, লেন্স উত্তল হয় (বেশি প্রতিসরণ)। এই প্রক্রিয়াকে অ্যাকোমোডেশন বলে।
আলোর প্রতিসরণ ছাড়া এই মাধ্যমগুলির অন্য কোন কাজ আছে কি?
হ্যাঁ। প্রতিটি মাধ্যমের বাড়তি কাজ আছে –
1. কর্নিয়া – চোখকে বাইরের আঘাত, জীবাণু ও ধুলোবালি থেকে রক্ষা করে।
2. অ্যাকুয়াস হিউমর – কর্নিয়া ও লেন্সকে পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করে।
3. লেন্স – আইরিসের সঙ্গে সমন্বয় করে চোখে প্রবেশকারী আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
4. ভিট্রিয়াস হিউমর – চোখের ভিতরের গোলাকৃতি ও কাঠামো ঠিক রাখে, রেটিনাকে তার স্থানে ধরে রাখতে সাহায্য করে।
অক্ষিগোলকের অ্যাকুয়াস হিউমরের চাপ বেড়ে গেলে কী হয়?
অ্যাকুয়াস হিউমর যদি সঠিকভাবে নিষ্কাশিত না হয় এবং এর চাপ বেড়ে যায়, তবে গ্লুকোমা নামক একটি মারাত্মক চোখের রোগ হয়। এতে অপটিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে স্থায়ী অন্ধত্বও হয়।
অক্ষিগোলকের ভিট্রিয়াস হিউমরে কোনো পরিবর্তন হলে দৃষ্টিতে কী সমস্যা হয়?
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে বা রোগের কারণে ভিট্রিয়াস হিউমর তরল হয়ে গেলে বা সংকুচিত হলে এটি রেটিনা থেকে আলগা হয়ে যেতে পারে (ভিট্রিয়াস ডিট্যাচমেন্ট)। তখন রোগী দৃষ্টিতে “মাছি উড়া” (ফ্লোটার) বা আলোর ঝলকানি দেখতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে রেটিনা ডিট্যাচমেন্টও হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অক্ষিগোলকের আলোক প্রতিসারক মাধ্যমগুলি কী কী? তাদের কাজ বর্ণনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন