ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।
Contents Show

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

গান্ধিজি কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলন অকস্মাৎ প্রত্যাহারের পর সমাজতান্ত্রিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ কংগ্রেসের কিছু যুব নেতা শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনকে সংগঠিত করতে প্রয়াসী হন। ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে আবির্ভূত হয় ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টির পটভূমি –

ভারতীয় কমিউনিস্টদের পক্ষে খোলাখুলিভাবে কাজ করা অনেকক্ষেত্রেই ছিল অসুবিধাজনক। তাই শ্রমিক-কৃষককের স্বার্থে জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরেই এই দল গড়ে ওঠে। জাতীয় কংগ্রেসেরও এই আন্দোলনের প্রতি পরোক্ষ সহানুভূতি ছিল। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয় – “Workers and peasants are the hands and feet of the Indian National Congress.”

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টির প্রতিষ্ঠা –

1925 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘লেবার স্বরাজ পার্টি অফ দি ইন্ডিয়ার ন্যাশনাল কংগ্রেস’ নামে এই রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টির নাম পরিবর্তন –

1928 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এই দলের সর্ব ভারতীয় সম্মেলনে এর নতুন নামকরণ হয় ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি’। দলের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন আর. এস. নিম্বকার।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টির নেতৃবৃন্দ –

এই দলের নেতৃত্বের অধিকাংশই ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের কাজকর্মের প্রতি বীতশ্রদ্ধ। এদের মধ্যে কুতুবুদ্দিন আহম্মেদ, কাজী নজরুল ইসলাম, গোপেন চক্রবর্তী, নলিনী গুপ্ত প্রমুখ ছিলেন বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টির উদ্দেশ্য –

‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি’ গড়ে উঠেছিল শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা হ্রাস, সর্বনিম্ন মজুরির হার নির্ধারণ, জমিদারি প্রথার অবসান ঘটানো, শ্রমিক শ্রেণির আর্থ-সামাজিক উন্নতি সাধন, তাদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার জাগরণ ঘটানো প্রভৃতির উদ্দেশ্যে। কাজী নজরুল ইসলাম, মুজাফ্ফর আহমেদ প্রমুখের উদ্যোগে ‘লাঙল’ ও ‘গণবাণী’ পত্রিকাকে মুখপত্র করে প্রাথমিকভাবে কংগ্রেসের মধ্যে থেকে ও পরবর্তীতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে শ্রমিক-কৃষক শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করতে চেয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টির প্রসার –

প্রাথমিকভাবে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হলেও অচিরেই এই দলের সর্ব ভারতীয় প্রকাশ ঘটে। বোম্বাই, উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব প্রভৃতি স্থানে এর শাখা স্থাপিত হয় এবং শ্রমিক কৃষকদের স্বার্থে জোরদার আন্দোলন শুরু হয়।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টির মূল্যায়ন –

জাতীয় আন্দোলনে জাতীয় কংগ্রেসের মূল ধারার পাশাপাশি ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি’ দীর্ঘদিন একই সঙ্গে পথ হেঁটেছে বহুদুর। এদের প্রচেষ্টাতেই প্রাথমিক পর্বে সংঘবদ্ধ কৃষক-শ্রমিক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল ভারতের বুকে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি কী?

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি ছিল একটি সমাজতান্ত্রিক আদর্শে অনুপ্রাণিত রাজনৈতিক দল, যা ভারতের শ্রমিক ও কৃষকদের স্বার্থরক্ষার জন্য গঠিত হয়েছিল।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি কখন গঠিত হয়?

1925 সালে কলকাতায় “লেবার স্বরাজ পার্টি অফ দি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস” নামে এই দল প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে 1928 সালে এর নাম পরিবর্তন করে “Workers and Peasants Party” রাখা হয়।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি গঠনের পটভূমি কী ছিল?

মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারের পর কিছু যুব নেতা শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনকে সংগঠিত করতে চেয়েছিলেন। কমিউনিস্টদের সরাসরি কাজ করা কঠিন ছিল বলে কংগ্রেসের ভেতর থেকেই এই দল গড়ে তোলা হয়।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?

1. শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো।
2. ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ।
3. জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ।
4. শ্রমিক-কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন।
5. সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রচার।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টির প্রধান নেতারা কারা ছিলেন?

কুতুবুদ্দিন আহম্মেদ, কাজী নজরুল ইসলাম (জাতীয় কবি), গোপেন চক্রবর্তী, নলিনী গুপ্ত, মুজাফ্ফর আহমেদ।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টির সাথে যুক্ত মুখপত্রগুলি কী ছিল?

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টির সাথে যুক্ত মুখপত্রগুলি ছিল – লাঙল (কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত), গণবাণী

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি কংগ্রেসের সাথে কীভাবে যুক্ত ছিল?

দলটি প্রথমে কংগ্রেসের ভেতরেই গঠিত হয়েছিল এবং কংগ্রেসের কিছু নেতার সমর্থন পেয়েছিল। পরে এটি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি কতদিন সক্রিয় ছিল?

1925 থেকে 1930 -এর দশকের শুরু পর্যন্ত দলটি সক্রিয় ছিল, পরে এটি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে মিলিত হয়।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টির গুরুত্ব কী?

এটি ভারতের শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ভিত্তি তৈরি করে এবং পরবর্তীতে কমিউনিস্ট পার্টির বিকাশে ভূমিকা রাখে।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি কোন অঞ্চলে সবচেয়ে সক্রিয় ছিল?

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি মূলত বাংলা, বোম্বাই (মুম্বাই) ও পাঞ্জাবে এই দলের প্রভাব বেশি ছিল।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

দার কমিশন কী? দার কমিশন (1948 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল?

দার কমিশন কী? দার কমিশন (1948 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল?

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

সময়ের মূল্য – প্রবন্ধ রচনা

ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে আলোকরশ্মির প্রতিসরণের চিত্র অঙ্কন করো এবং কৌণিক চ্যুতি নির্ণয় করো।

লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে আলোকরশ্মির প্রতিসরণের চিত্র অঙ্কন করো এবং কৌণিক চ্যুতি নির্ণয় করো।

অবতল দর্পণ কাকে বলে? দন্ত চিকিৎসকগণ অবতল দর্পণ ব্যবহার করেন কেন?

গোলীয় দর্পণের মেরু, বক্রতা কেন্দ্র, বক্রতা ব্যাসার্ধ ও প্রধান অক্ষ কাকে বলে?