পনস, লঘুমস্তিষ্ক ও সুষুম্নাশীর্ষকের কাজ উল্লেখ করো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পনস ও সুষুম্নাশীর্ষকের কাজ উল্লেখ করো। লঘুমস্তিষ্কের কাজ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

পনস ও সুষুম্নাশীর্ষকের কাজ উল্লেখ করো। লঘুমস্তিষ্কের কাজ লেখো।

পনস ও সুষুম্নাশীর্ষকের কাজ উল্লেখ করো। লঘুমস্তিষ্কের কাজ লেখো।

পনসের কাজ –

  • শ্বাসকার্য নিয়ন্ত্রণ – মানুষের মস্তিষ্কের চারজোড়া শ্বাসকেন্দ্রের মধ্যে ওপরের দু-জোড়া শ্বাসকেন্দ্র পনসে অবস্থান করে এবং শ্বাসকার্য নিয়ন্ত্রণ করে।
  • মূত্রত্যাগ নিয়ন্ত্রণ – পনসে অবস্থিত মুত্রত্যাগের স্নায়ুকেন্দ্র প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মাধ্যমে মূত্রথলির ডেট্রুসার পেশির সংকোচন ঘটিয়ে মূত্রত্যাগ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • প্রেরকস্থানরূপে কাজ – পনসের বিভিন্ন নিউক্লিয়াস সংবেদী স্নায়ুপথে প্রেরকস্থান হিসেবে কাজ করে।
  • অক্ষিগোলক ও চোয়ালের বিচলন – পনসের সাহায্যে অক্ষিগোলক ও চোয়ালের বিচলন নিয়ন্ত্রিত হয়।
  • করোটীয় স্নায়ুর উৎপত্তিস্থল – পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম করোটীয় স্নায়ুর উৎপত্তিস্থলরূপে এটি কাজ করে।
পশ্চাদমস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ

সুষুম্নাশীর্ষকের কাজ –

পশ্চাদমস্তিষ্কের সর্বশেষ অংশ। এর কাজ নিম্নরূপ-

  • শ্বাসক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ – দু-জোড়া প্রধান শ্বাসকেন্দ্র এখানে অবস্থিত (প্রশ্বাসকেন্দ্র ও নিশ্বাসকেন্দ্র), যা শ্বসনের হার ও গভীরতা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • আন্তরযন্ত্রীয় প্রতিবর্ত ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ – মেডালা অবলংগাটা হাঁচি, কাশি, সাকলিং বমন, লালাক্ষরণ, খাদ্য গলাধঃকরণ প্রভৃতি আন্তরযন্ত্রীয় প্রতিবর্ত ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
  • হৃৎস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ – মেডালা ভেগাস স্নায়ুকে উদ্দীপিত করে হৃৎস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাভাবিক হৃদ্‌-রক্তবাহ টান বজায় রাখে।
  • করোটীয় স্নায়ুর উৎপত্তিস্থল – মেডালা অবলংগাটা থেকে নবম ও দশম জোড়া মিশ্র স্নায়ু এবং একাদশ ও দ্বাদশ জোড়া চেষ্টীয় স্নায়ু উৎপত্তি লাভ করে।

লঘুমস্তিষ্কের কাজ –

প্রত্যাবর্তী স্নায়ুকেন্দ্র (Feedback Centre) সেরিব্রাল কর্টেক্স যে সকল চেষ্টীয় কাজের সূচনা করে লঘুমস্তিষ্ক তা নিয়ন্ত্রণ করে, দেহভঙ্গি ও ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে, পেশিটান নিয়ন্ত্রণ করে, ঐচ্ছিক সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

মস্তিষ্কের প্রধান তিনটি অংশ কী কী?

মস্তিষ্ককে প্রধানত তিনটি বৃহৎ অংশে ভাগ করা যায় –
1. সামগ্রিক মস্তিষ্ক বা প্রমস্তিষ্ক (Cerebrum) – চিন্তা, স্মৃতি, বোধ, ইচ্ছাকৃত চলন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে।
2. মধ্য মস্তিষ্ক (Midbrain) – দর্শন, শ্রবণ, চোখের নড়াচড়া ও দেহের ভঙ্গি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
3. পশ্চাদ মস্তিষ্ক (Hindbrain) – এর তিনটি উপাংশ হল পনস (Pons), লঘুমস্তিষ্ক (Cerebellum) এবং সুষুম্নাশীর্ষক/মেডুলা অবলংগাটা (Medulla Oblongata)। এগুলি মৌলিক জীবন ধারণকারী ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

পনস, মেডুলা এবং লঘুমস্তিষ্কের অবস্থান সম্পর্কে লেখো।

এরা সবাই মস্তিষ্কের পশ্চাদ অংশে (Hindbrain) অবস্থিত। মেডুলা অবলংগাটা মস্তিষ্কের একেবারে নিচে ও সুষুম্নাকাণ্ডের সাথে যুক্ত। পনস মেডুলার ঠিক উপরে অবস্থিত একটি স্ফীত অংশ। আর লঘুমস্তিষ্ক পনসের পিছনে ও মেডুলার উপরে অবস্থিত, যা দেখতে অনেকটা ছোট মস্তিষ্কের মতো।

লঘুমস্তিষ্ককে “ছোট মস্তিষ্ক” বলা হয় কেন? এর প্রধান কাজ কী?

এর গঠন প্রমস্তিষ্কের মতই ভাঁজযুক্ত ও দুটি গোলার্ধ বিশিষ্ট হওয়ায় একে ‘ছোট মস্তিষ্ক’ বলা হয়। এর প্রধান কা হল ইচ্ছাকৃত পেশির চলন, দেহের ভঙ্গি, সমন্বয় এবং ভারসাম্য বজায় রাখা। যেমন – হাঁটা, সাইকেল চালানো, বল ধরার সময় হাত-চোখের সমন্বয় ইত্যাদি।

হাঁচি, কাশি, বমি ইত্যাদি প্রতিবর্ত ক্রিয়া কীসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়?

এই সব অন্তর্বাহী বা ভিসেরাল রিফ্লেক্স অ্যাকশন মূলত মেডুলা অবলংগাটা -এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।

লঘুমস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে কী সমস্যা দেখা দেবে?

লঘুমস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দেয় –
1. চলনের অসমন্বয় (Ataxia) ও ভারসাম্যহীনতা।
2. কথা বলায় অস্পষ্টতা।
3. চোখের অনৈচ্ছিক নড়াচড়া (Nystagmus)।
4. পেশির টোন কমে যাওয়া বা দুর্বলতা।

পনসের নামকরণ “পনস” (সেতু) হয়েছে কেন?

পনস ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ “সেতু”। এটি মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংযোগ বা সেতুর মতো কাজ করে। এটি মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশের সাথে লঘুমস্তিষ্কের তথ্য আদান-প্রদানে সাহায্য করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পনস ও সুষুম্নাশীর্ষকের কাজ উল্লেখ করো। লঘুমস্তিষ্কের কাজ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

প্রতিবর্ত চাপের চিত্রসহ বর্ণনা দাও।

চিত্রসহ প্রতিবর্ত চাপের বর্ণনা দাও।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

চিত্রসহ প্রতিবর্ত চাপের বর্ণনা দাও।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।

পনস, লঘুমস্তিষ্ক ও সুষুম্নাশীর্ষকের কাজ উল্লেখ করো।

সুষুম্নাকাণ্ডের গঠন ও কাজ উল্লেখ করো।