আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘প্রথম পাহাড় দেখা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

প্রথম পাহাড় দেখা
ভূমিকা – ছেলেবেলা থেকেই পাহাড় দেখার শখ ছিল। পাহাড় মানেই উচ্চতা। পাহাড় মানেই হাতের মুঠোয় মেঘের হাতছানি। রুপোলি ফিতের মতো ঝরনা। দীর্ঘ পাইনের নিস্তব্ধতায় ছোটো ছোটো পাহাড়ি গ্রাম। হিমেল বাতাসে মন কেমন-করা শীতলতা। পাহাড়ের এক ঢালে যখন আলোর বন্যা, অপর ঢালে তখন আলোছায়ার খেলা। পাকদণ্ডি পথে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শুধু ওপরে ওঠা; লক্ষ্যে পৌঁছে যেন পাওয়া যায় সাফল্যের অনন্ত স্বাদ। আবার পাহাড়ের সামনেই অবনত হওয়া। আমাদের সীমাবদ্ধতা, ক্ষুদ্রতা যেন ধরা পড়ে পাহাড়ের উচ্চতা আর বিশালতার সামনে।
ভ্রমণস্থান – সুযোগটা এলো গত বছর। বাবা বললেন, এবার পুজোয় সপরিবারে কাশ্মীরে যাওয়া হবে। ভূস্বর্গ কাশ্মীর প্রকৃতির স্বপ্নপুরী। পুরো রাজ্যটাই হিমালয়ের বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। মনটা আনন্দে নেচে উঠল। বই পড়ে জানলাম শিবালিক, পিরপাঞ্জাল, কারাকোরাম প্রভৃতি সব গিরিশ্রেণি দাঁড়িয়ে আছে এই রাজ্যের দক্ষিণ থেকে উত্তরে। চন্দ্রভাগা, ঝিলম প্রভৃতি নদী অগণিত, সরোবর আর অনিন্দ্যসুন্দর উপত্যকায় ভরা এই রাজ্য। রামায়ণ-মহাভারত থেকে হিউয়েন সাঙের ভ্রমণকাহিনিতে রয়েছে কাশ্মীরের কথা।
পাহাড় দেখার উন্মাদনা – নির্দিষ্ট দিনে রাত সাড়ে এগারোটায় ‘হাওড়া থেকে হিমগিরি এক্সপ্রেসে উঠে পড়লাম। সময়টা অক্টোবর মাস। শরৎশেষে হিমেল পরশ মেখে আমরা চলেছি বরফমাখা হিমালয়ের উদ্দেশে। তৃতীয় দিন সকালে পৌঁছে গেলাম জম্মু স্টেশনে। আমাদের গন্তব্য পাটনিটপ। নির্জন পাহাড়ি গ্রাম পাটনিটপ। উচ্চতা 2024 মিটার। পাহাড়ের ঢাল জুড়ে পাইন আর দেবদারুর নিবিড় জঙ্গল। পাইনের গন্ধ ও বিস্তীর্ণ অরণ্যের মাঝে চিরবসন্তের দেশ। পরদিন যাত্রা শুরু করলাম শ্রীনগরের পথে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলাম রামবন, কাজিগুন্দ, অবন্তীপুর, পামপোর। পথে পড়ল চন্দ্রভাগা ও ঝিলম। শ্রীনগরের প্রধান আকর্ষণ ডাল লেক ও মুঘল গার্ডেন। পরদিন সকালে শিকারায় চেপে বেরিয়ে পড়লাম ডাল লেকে। এ এক আশ্চর্য জলজীবন। অগণিত মানুষই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন ডাল লেকে। অদূরবর্তী পাহাড়ের চূড়ায় শঙ্করাচার্যের মন্দির। এখান থেকে দিগন্তবিস্তৃত ডাল লেকের সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। পাহাড়ের পাদদেশে মুঘল গার্ডেনগুলি ঘুরতে ঘুরতে মনটা আনন্দে ভরপুর হয়ে যায়। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনাকে অবলম্বন করে তৈরি হয়েছে নিশাতবাগ। ধাপে ধাপে গড়ে ওঠা এই রাজকীয় উদ্যানের প্রধান আকর্ষণ ফুলবাগিচা আর বেশ কিছু প্রাচীন চিনার গাছ। শরৎকালে চিনারের পাতায় যখন লাল রঙের ছোঁয়া লাগে, তখন সেই রূপ দেখে চোখ ফেরানো যায় না।
উপসংহার – এরপর ঘরে ফেরার পালা। ফেরার দিন সকাল থেকেই তুষারবৃষ্টি। অসম্ভব ঠান্ডায় ভারাক্রান্ত মন নিয়ে চলেছি জম্মুর দিকে। পিছনে রয়ে গেল পাহাড় আর উপত্যকা। ছেলেবেলায় পাহাড়ের ছবি আঁকতে গিয়ে অনেকবারই রং নির্বাচনে সন্দিহান হয়ে উঠতাম। প্রথম পাহাড় দেখার পর মনে হল, পাহাড়ের অনেক রং। ‘আপন মনের মাধুরী মিশায়ে’ এবার আর পাহাড়ের ছবি আঁকতে আমার মন দ্বিধান্বিত হবে না।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘প্রথম পাহাড় দেখা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন