এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “চিত্রসহ প্রতিবর্ত চাপের বর্ণনা দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

চিত্রসহ প্রতিবর্ত চাপের বর্ণনা দাও।
যে নির্দিষ্ট স্নায়ুপথে প্রতিবর্ত ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে প্রতিবর্ত চাপ (Reflex arc) বলে।
প্রতিবর্ত চাপের গঠন ও কাজ –
প্রতিবর্ত চাপ নিম্নলিখিত পাঁচটি অংশ দ্বারা গঠিত –
- গ্রাহক (Receptor) – গ্রাহক কতকগুলি বিশেষ জ্ঞানেন্দ্রিয় দ্বারা গঠিত, যার মধ্যে সংজ্ঞাবহ স্নায়ুকোশের ডেনড্রাইটগুলি মুক্ত বা আবদ্ধ অবস্থায় থাকে।
- কাজ – এগুলি বিভিন্ন উদ্দীপনাতে উদ্দীপিত হয়।
- অন্তর্বাহী স্নায়ুকোশ (Afferent Neurone) – প্রতিবর্ত চাপে অন্তর্বাহী স্নায়ুকোশ বা নিউরোন অন্তর্বাহী শাখা গঠন করে। এই অন্তর্বাহী নিউরোনের ডেনড্রাইটগুলি দেহের প্রান্তদেশে থাকে এবং কোশদেহ পৃষ্ঠমূলীয় স্নায়ুগ্রন্থিতে থাকে। এই নিউরোনের অ্যাক্সন সুষুম্নাকাণ্ডের ধূসর বস্তুতে অবস্থান করে।
- কাজ – অন্তর্বাহী স্নায়ুকোশ গ্রাহক থেকে উদ্দীপনাকে স্নায়ুকেন্দ্রে বহন করে নিয়ে যায়।
- স্নায়ুকেন্দ্র (Nerve Centre) – সাধারণত সুষুম্নাকাণ্ডের ধূসর বস্তু স্নায়ুকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
- কাজ – স্নায়ুকেন্দ্রে অন্তর্বাহী নিউরোন এবং বহির্বাহী নিউরোনের মধ্যে সরাসরি বা অন্তর্বর্তী নিউরোনের মাধ্যমে সংযোগ রক্ষা হয়।
- বহির্বাহী স্নায়ুকোশ (Efferent Neurone) – এই স্নায়ুকোশ বা নিউরোন প্রতিবর্ত চাপে বহির্বাহী শাখা গঠন করে। এই স্নায়ুকোশের কোশদেহ স্নায়ুকেন্দ্রের ধূসর বস্তুতে এবং অ্যাক্সন প্রান্ত কারক (Effector) বা ক্রিয়াস্থানে অবস্থান করে।
- কাজ – সুষুম্নাকাণ্ড থেকে সাড়া বা রেসপন্সকে কারকে বহন করে নিয়ে আসে।
- কারক (Effector) – দেহের যে সব অংশ (পেশি, গ্রন্থি প্রভৃতি) বহির্বাহী স্নায়ুকোশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাদের কারক (Effector) বলে।
- কাজ – কারক স্নায়ুকোশ দ্বারা আগত উদ্দীপনায় উদ্দীপিত হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
প্রতিবর্ত ক্রিয়া কী?
প্রতিবর্ত ক্রিয়া হলো দেহের একটি স্বয়ংক্রিয়, দ্রুত ও অনৈচ্ছিক সাড়া, যা কোনো উদ্দীপনায় মস্তিষ্কের নির্দেশ ছাড়াই সুষুম্নাকাণ্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। যেমন – গরম কিছু স্পর্শ করলে সাথে সাথে হাত সরিয়ে নেওয়া।
প্রতিবর্ত চাপ কাকে বলে?
যে নির্দিষ্ট স্নায়ুপথের মাধ্যমে প্রতিবর্ত ক্রিয়া সংঘটিত হয়, তাকে প্রতিবর্ত চাপ বলে। এটি গ্রাহক থেকে শুরু করে কারক পর্যন্ত একটি সম্পূর্ণ স্নায়বিক পথ।
প্রতিবর্ত চাপের মূল অংশগুলো কী কী?
প্রতিবর্ত চাপ পাঁচটি মূল অংশ দ্বারা গঠিত –
1. গ্রাহক (Receptor) – উদ্দীপনা গ্রহণ করে।
2. অন্তর্বাহী স্নায়ুকোশ (Afferent Neurone) – উদ্দীপনা স্নায়ুকেন্দ্রে বহন করে।
3. স্নায়ুকেন্দ্র (Nerve Centre) – সাধারণত সুষুম্নাকাণ্ডের ধূসর বস্তু; স্নায়ুসংকেত প্রক্রিয়াকরণ করে।
4. বহির্বাহী স্নায়ুকোশ (Efferent Neurone) – সাড়া কারকে বহন করে।
5. কারক (Effector) – পেশি বা গ্রন্থি; চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়।
অন্তর্বাহী ও বহির্বাহী স্নায়ুকোশের পার্থক্য কী?
অন্তর্বাহী ও বহির্বাহী স্নায়ুকোশের পার্থক্য –
1. অন্তর্বাহী স্নায়ুকোশ সংবেদনশীল; এটি গ্রাহক থেকে সংকেত স্নায়ুকেন্দ্রে (সুষুম্নাকাণ্ড/মস্তিষ্কে) বহন করে।
2. বহির্বাহী স্নায়ুকোশ চালক; এটি স্নায়ুকেন্দ্র থেকে প্রেরিত সাড়া কারকে (পেশি/গ্রন্থিতে) বহন করে।
স্নায়ুকেন্দ্র কোথায় থাকে?
সাধারণ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্নায়ুকেন্দ্র থাকে সুষুম্নাকাণ্ডের ধূসর বস্তুতে। কিছু প্রতিবর্ত ক্রিয়া মস্তিষ্কে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে (যেমন – চোখের আলোক প্রতিবর্ত)।
কারক বলতে কী বোঝায়?
কারক হলো সেই অঙ্গ বা টিস্যু যেটি বহির্বাহী স্নায়ুকোশের সংকেতে সাড়া দিয়ে চূড়ান্ত ক্রিয়া সম্পাদন করে। যেমন – পেশি সংকোচন বা গ্রন্থি থেকে রস নিঃসরণ।
প্রতিবর্ত ক্রিয়ার গুরুত্ব কী?
প্রতিবর্ত ক্রিয়া দেহকে দ্রুত বিপদ থেকে রক্ষা করে (যেমন – গরম থেকে হাত সরানো), শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে (যেমন – হাঁটু-ঠুক প্রতিবর্ত) এবং মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার চাপ কমিয়ে স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষা দেয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “চিত্রসহ প্রতিবর্ত চাপের বর্ণনা দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন