প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।

প্রতিবর্ত ক্রিয়া –

বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ কোনো আকস্মিক সংজ্ঞাবহ উদ্দীপনায় প্রাণীদেহে যে দ্রুত, স্বতঃস্ফূর্ত বা অনৈচ্ছিক চেষ্টীয় প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তাকে প্রতিবর্ত ক্রিয়া (Reflex action) বলে। প্রতিবর্ত ক্রিয়া প্রধানত সুষুম্নাকাণ্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ –

রুশবিজ্ঞানী প্যাভলভ প্রতিবর্ত ক্রিয়াকে প্রধানত দু-ভাগে ভাগ করেছেন, যথা –

  • সহজাত বা অভ্যাস নিরপেক্ষ বা অনপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়া – যে প্রতিবর্ত ক্রিয়া সহজাত অর্থাৎ, জন্মের সময় থেকেই বংশগত সূত্রে পূর্বপুরুষ থেকে প্রাপ্ত হয় এবং অভ্যাস বা অনভ্যাসের ফলে পরিবর্তিত হয় না, তাকে সহজাত বা অভ্যাস নিরপেক্ষ, বা অনপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।
    • উদাহরণ – খাদ্যগ্রহণে লালারসের ক্ষরণ, জন্মের পর শিশুর মাতৃদুগ্ধ পান করার প্রবণতা, উজ্জ্বল আলোতে তারার সংকুচিত হওয়া, পায়ের পাতায় সুড়সুড়ি দিলে পায়ের পাতার সংকোচন। হাঁটুর ঝাঁকুনি, বাইসেপস পেশির ঝাঁকুনি প্রভৃতি।
  • অভ্যাসনির্ভর বা সাপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়া – যে প্রতিবর্ত ক্রিয়া সহজাত নয়, জন্মের পরে ক্রমাগত অভ্যাসের ফলে অর্জিত হয় এবং দীর্ঘদিন অনভ্যাসের ফলে পরিবর্তিত হয়, তাকে অভ্যাসনির্ভর বা সাপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।
    • উদাহরণ – দিনের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে মলত্যাগ করা, প্যাভলভের পরীক্ষায় ঘণ্টাধ্বনির কারণে কুকুরের লালারসের ক্ষরণ, কোনো কিছু পড়ে মনে রাখা প্রভৃতি।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

প্রতিবর্ত ক্রিয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?

প্রতিবর্ত ক্রিয়া দ্রুত ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেহকে সম্ভাব্য বিপদ (যেমন – গরম জিনিস স্পর্শ করলে হাত সরিয়ে নেওয়া) বা পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষায় সাহায্য করে। এটি সচেতন চিন্তা ছাড়াই কাজ করে বলে সময় বাঁচায় এবং দেহরক্ষা করে।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার সাথে সাধারণ উদ্দীপনা-প্রতিক্রিয়ার পার্থক্য কী?

সাধারণ উদ্দীপনা-প্রতিক্রিয়ায় মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে এবং ইচ্ছাশক্তি কাজ করে। কিন্তু প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় মস্তিষ্ক সরাসরি জড়িত নাও হতে পারে, এটি সুষুম্নাকাণ্ড বা সংশ্লিষ্ট স্নায়ুকেন্দ্রের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটে।

প্রতিবর্ত চাপ কী?

প্রতিবর্ত চাপ হলো কোনো উৎসেচক বা হরমোনের ক্ষরণের মতো অভ্যন্তরীণ দেহক্রিয়া, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি সাধারণত দেহের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।

সুষুম্নাকাণ্ড ছাড়া প্রতিবর্ত ক্রিয়া সম্ভব কি?

হ্যাঁ, কিছু প্রতিবর্ত ক্রিয়া (যেমন, চোখের আলোক প্রতিবর্ত) মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে অধিকাংশ সরল প্রতিবর্ত ক্রিয়া সুষুম্নাকাণ্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

প্রতিবর্ত চাপ ও প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য কী?

প্রতিবর্ত চাপ ও প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য –
1. প্রতিবর্ত ক্রিয়া সাধারণত পেশি বা গ্রন্থির দ্রুত কার্যকলাপ (যেমন – হাঁটু ঝাঁকুনি)।
2. প্রতিবর্ত চাপ ধীরগতির ও দীর্ঘস্থায়ী অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ (যেমন – রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ)।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার পথকে কী বলে?

প্রতিবর্ত চাপে উদ্দীপনা স্নায়ুর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে যায় এবং সেখান থেকে প্রেষক স্নায়ুর মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়। এই পথকে প্রতিবর্ত চাপ বলে।

“হাঁটুর ঝাঁকুনি” কী ধরনের প্রতিবর্ত?

এটি একটি সহজাত, সরল ও অনৈচ্ছিক প্রতিবর্ত, যা সুষুম্নাকাণ্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। চিকিৎসকের রবার হাতুড়ির আঘাত হাঁটুর পেশিতে টেন্ডনে টান সৃষ্টি করে, যা সরাসরি প্রতিক্রিয়া ঘটায়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

প্রতিবর্ত চাপের চিত্রসহ বর্ণনা দাও।

চিত্রসহ প্রতিবর্ত চাপের বর্ণনা দাও।

পনস ও সুষুম্নাশীর্ষকের কাজ উল্লেখ করো। লঘুমস্তিষ্কের কাজ লেখো।

পনস, লঘুমস্তিষ্ক ও সুষুম্নাশীর্ষকের কাজ উল্লেখ করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

চিত্রসহ প্রতিবর্ত চাপের বর্ণনা দাও।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।

পনস, লঘুমস্তিষ্ক ও সুষুম্নাশীর্ষকের কাজ উল্লেখ করো।

সুষুম্নাকাণ্ডের গঠন ও কাজ উল্লেখ করো।