আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সমুদ্রতীরে কয়েকদিন‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!
সমুদ্রতীরে কয়েকদিন
“শুধু কি রাতের শব্দ
(অরুণ মিত্র – ‘শুধু রাতের শব্দ নয়’)
আমি নিশ্চিত জানি ভোরবেলার যাত্রার আয়োজন
আমার শেষ সমুদ্রে”
ভূমিকা – দূরে সমুদ্রের অশান্ত জলরাশি মিশেছে দিগন্তে। মাছ-ধরা নৌকাগুলি ঢেউ -এর তালে হেলতে-দুলতে চলেছে মাছের খোঁজে। ভোরবেলাকার নির্জন বেলাভূমিতে কাঁকড়ারা তৈরি করেছে লাল কার্পেট। উথালপাথাল হাওয়ায় ঝাউবনের শন শন আওয়াজ। একটু পরেই সূর্য উঠল। তার রং কুসুমের মতো লাল। অলক্ত রাগে যেন সমুদ্রের জল রক্তিম। ছোটো ছোটো ঢেউ সাদা ফেনা বয়ে এনে ভরিয়ে দিচ্ছে বেলাভূমির আঁচল। ঝিনুক খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছে গেলাম আমার ফেলে-আসা শৈশবের দিনগুলিতে।
সমুদ্রতীরে কাটাবার অভিজ্ঞতা – অনুসন্ধিৎসু মন নিশ্চয়ই জানতে চাইছে জায়গাটি কোথায়? জায়গাটি কলকাতা থেকে মাত্র ঘন্টা পাঁচেকের পথ-শংকরপুর। গত বছর বার্ষিক পরীক্ষার পর আমরা সপরিবারে গিয়েছিলাম সেখানে। উদ্দেশ্য, নির্জন নিরিবিলিতে কয়েকটা দিন কাটাব সমুদ্রতীরে। কলকাতা থেকে দিঘাগামী বাসে চেপে আমরা পৌঁছোলাম রামনগর। ভ্যানরিকশায় খালের পাশ দিয়ে ছায়া-ঘেরা পথ পেরিয়ে প্রবেশ করলাম শংকরপুর। বেনফিশের হোটেল ‘কিনারা’, সমুদ্রের পাশে ঝাউবনসংলগ্ন অঞ্চলে অবস্থিত। কয়েকটা দিন সমুদ্রতীরে কাটাবার আদর্শ জায়গা সেটি। খাওয়া-দাওয়ার পর কখন যে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই। ঘুম ভাঙল বিকেলবেলা। সমুদ্রে যাওয়ার জন্য মনটা কেমন আনন্দে নেচে উঠল। ঝাউবনের সরু পথ বেয়ে এগোতেই অশান্ত সমুদ্রের কলরব শোনা গেল। বিরাট ঢেউ, ফেনিল জলরাশি, হাওয়ায় আন্দোলিত ঝাউয়ের বনে শন শন আওয়াজ আমার সঙ্গী। একটু পরেই নিঝুম সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। সমুদ্রগর্ভে দু-একটা দীপমালা জানিয়ে দিল, ওগুলি মাছ ধরার ট্রলার। সারারাত নোনা, জোলো বাতাসে জেলেরা মাছ ধরবে। ফিরবে কাল সকালে। সমুদ্রতটে কিছু পর্যটক থাকলেও বেশ ফাঁকা ফাঁকা। আসলে শংকরপুরে পর্যটকরা খুব বেশি থাকে না। দিঘা বা পুরীর মতো কোলাহল এখানে নেই। যাঁরা নির্জনতা পছন্দ করেন, সমুদ্রকে নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করতে চান, তাঁদের পছন্দ শংকরপুর। সমুদ্রতটে দু-একটা দোকান অবশ্য রয়েছে। ভাড়া করা চেয়ারে বসে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকি উদাস হয়ে। আকাশে সোনালি থালার মতো চাঁদ। আজ পূর্ণিমা। জ্যোৎস্নার মায়াবী আলোকে নিরন্তর ঢেউ -এর আসা-যাওয়া যেন আমাদের জীবনের অন্তহীন চাওয়া-পাওয়া। অথচ উপরিতলে যখন বিক্ষুব্ধ তরঙ্গের অভিঘাত, ভিতরের সমুদ্র তখন শান্ত, তন্ময়, ধ্যানগম্ভীর।
উপসংহার – পরদিন সকালে গেলাম এখানকার বিশাল মৎস্যবন্দরে। কর্মব্যস্ত মাছ ধরার ট্রলারগুলির আসা-যাওয়া, জেলেদের হাঁকডাক, ট্রলার থেকে মাছ নামানোর দৃশ্যগুলি অবশ্যই নজর কাড়ে। দু-দিন সমুদ্রতীরে কাটিয়ে এবার ফিরবার পালা। ফিরবার পথে মনে পড়ল রবীন্দ্রনাথের কবিতার একটি পঙক্তি – “অসীম সমুদ্র, স্বপ্নের ঢেউ তোলা নীল ঘুমের মতো” (‘রাজপুত্তুর’ – লিপিকা)।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সমুদ্রতীরে কয়েকদিন’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন