এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি – প্রবন্ধ রচনা

আজকের আলোচনার বিষয় হল “শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি”। প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় বারবার দেখা যায়। শৈশব জীবনের স্মৃতি আমাদের মনে গেঁথে থাকে অমলিন রঙে। নির্দোষতা, আনন্দ, খেলাধুলা, স্বপ্ন – এই সবকিছু মিলিয়ে তৈরি হয় শৈশবের অমূল্য সময়।

এই প্রবন্ধে আমরা সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলির কথা বলব, সেই স্মৃতিগুলিকে লেখার মাধ্যমে মনে করার চেষ্টা করব। শৈশবের বন্ধু, খেলাধুলা, স্কুল, প্রকৃতি – এই সবকিছুই আমাদের মনে জীবন্ত হয়ে উঠবে।

এই প্রবন্ধটি মুখস্ত করে রাখলে ৬ষ্ঠ থেকে ১২ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।

শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি – প্রবন্ধ রচনা

শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি - প্রবন্ধ রচনা

“বয়স তখন ছিল কাঁচা, হালকা দেহখানা।
ছিল পাখির মতো, শুধু ছিল না তার ডানা।”

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা –

মানুষের জীবন এক বিরামহীন এগিয়ে চলা। নতুন ঘটনা, নতুন অভিজ্ঞতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, আনন্দ-বেদনার বাঁকে বাঁকে জীবন নিজেকে সম্পন্ন করে। আজকের বর্তমান কাল হয়ে যায় অতীত। তবুও বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ক্লান্ত মানুষ নিজস্ব নির্জন মুহূর্তে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে তাকায়; শুশ্রূষার প্রলেপ খোঁজে আদরের অতীত থেকে।

আমার শৈশব –

আমার শৈশব কেটেছে ইছামতি নদীর ধারে এক মফসসল শহরে। জায়গাটার নাম টাকি। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার অন্তর্গত এই জায়গাটা অত্যন্ত বনেদি। অনেকগুলো জমিদারবাড়ি, স্কুল-কলেজ-লাইব্রেরি নিয়ে টাকি একটা সমৃদ্ধ অঞ্চল। আবার খুব কাছেই ধানখেত, ইতিউতি পুকুর-ডোবা, আর ছিল সরল-সহজ মানুষজন। এখানকারই টাকি সরকারি স্কুলে কেটেছে আমার শিক্ষাজীবনের প্রথম পর্ব।

শৈশবের স্মৃতি –

আমার শৈশব মানে দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে ঠাকুমার কাছে গল্প শোনা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া টুকটুকে ফরসা আমার ঠাকুমাই আমাকে শুনিয়েছিলেন উপেন্দ্রকিশোর, ‘ঠাকুরমার ঝুলি’, ‘ক্ষীরের পুতুল’। সেই অবুঝ বেলাতেও আশি পার করে দেওয়া এক বৃদ্ধা আমাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন কল্পনার জগতে। সন্ধে হলে মা-র কাছে দোতলার ঘরে পড়তে বসতাম। সস্তার কাগজে ছাপা ‘ধারাপাত’, বিদ্যাসাগরের ছবি আঁকা গোলাপি কাগজে মোড়ানো ‘বর্ণপরিচয়’। আজও সেসব বইয়ের কথা মনে পড়ে। গরমকালে জানলা দিয়ে হাওয়া আসত, আর সঙ্গে হাসনুহানার গন্ধ। বাবা সন্ধে বেলা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে টিভিতে খবর দেখতেন। আমার টিভি দেখা বারণ ছিল। শুধু ছোটোদের সিনেমা হলে ডাক পড়ত। আজ শহর কলকাতার ধোঁয়া-কালি মাখা দিনগুলোয় হারিয়ে গেছে শৈশবের হাসনুহানা।

আমার স্কুল –

প্রথম যেদিন স্কুলে ভরতি হতে গেলাম, কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম, “মা না এলে কিছুই বলব না।” বাবা বলেন, যিনি প্রশ্ন করেছিলেন সেই হৃষীকেশ স্যার আমাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন। রিকশায় করে ছোটোবেলার বন্ধু জাহাঙ্গিরের সঙ্গে স্কুলে আসা। সেদিনের হৃষীকেশ স্যার, সনাতন স্যার, বাদল স্যার-মনে আছে সকলের কথা। মনে আছে স্কুলের গাছ থেকে জামরুল পাড়ার ব্যর্থ চেষ্টা, পড়ে গিয়ে কপাল ফাটার মতো কত ঘটনা। বইয়ের অক্ষর ছাপিয়ে সে ছিল আমার সবুজ স্কুল।

স্মৃতি সতত সুখের –

এক ছুটে খেলার মাঠ, কিছুই খেলতে না শেখা দিনগুলোতে সবুজ ঘাসে গড়াগড়ি কিংবা হাঁটুজলে দাপাদাপি, বাবার বেদম মার-যন্ত্রণার স্মৃতি ভুলে আজ সবই মধুর। কলকাতা শহরের ফ্ল্যাটবাড়িতে এখন আমি থাকি। স্কুল বাসে যাতায়াত করা। আমার সেই শৈশব আজ যেন বিগত গল্পের স্মৃতি। গরমকালে দুপুরবেলা লুকিয়ে আম কুড়ানো, বৃষ্টিতে ভেজা-মনে পড়ে সব। সেদিনের বৃষ্টিতে আজও মনে মনে ভিজে যাই আমি।

উপসংহার –

মাধ্যমিক, জয়েন্ট এনট্রান্স, আইআইটি-আমার মগজজুড়ে আজ ঝাঁ-চকচকে আধুনিক জীবন কিন্তু হৃদয়ে আমার আজও নদীর ধার, সবুজ ধানখেতের পাশে দাঁড়িয়ে বহুদূরে ট্রেন যেতে দেখা, দেওয়ালের গায়ে রং-পেনসিলের দাগ, চাঁদের বুড়ি, আমার বুড়ি ঠাকুমা। আমার জীবন্ত শৈশব তাই আজকের এই বর্ণহীন শহরে বহুদূর থেকে ভেসে আসা সবুজের হাতছানি।

শৈশব জীবনের সবচেয়ে মধুর সময়। নির্ভুলতা, সরলতা, আনন্দে ভরা এই সময়কাল আমাদের জীবনে অমলিন স্মৃতি হয়ে থেকে যায়। আজকের আলোচনায় আমরা ‘শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি’ প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করবো।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রায়ই এই প্রবন্ধটি দেখা যায়। তাই, শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখার সময় শৈশবের স্মৃতিগুলোকে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে। গ্রাম বা শহরে কাটানো শৈশব, বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা, স্কুলের মজার ঘটনা, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, উৎসবের আনন্দ – এসব বিষয়কে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে।

শুধু স্মৃতি বর্ণনা করাই নয়, সেই স্মৃতিগুলোর সাথে জড়িত অনুভূতিগুলোকেও প্রকাশ করতে হবে। শৈশবের নির্দোষতা, আনন্দ, উৎসাহ, ব্যথা – এসব অনুভূতি যেন পাঠকের মনেও স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।

ভাষা সহজ ও সাবলীল হতে হবে। ব্যাকরণগত ভুল এড়িয়ে চলতে হবে।

এই প্রবন্ধ রচনাটি একবার ভালোভাবে লিখে মুখস্ত করলে ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় ‘শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি’ বিষয়ে ভালো উত্তর লিখতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

Share via:

মন্তব্য করুন