শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি – প্রবন্ধ রচনা

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি - প্রবন্ধ রচনা

শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি – প্রবন্ধ রচনা

“বয়স তখন ছিল কাঁচা, হালকা দেহখানা।
ছিল পাখির মতো, শুধু ছিল না তার ডানা।”

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা –

মানুষের জীবন এক বিরামহীন এগিয়ে চলা। নতুন ঘটনা, নতুন অভিজ্ঞতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, আনন্দ-বেদনার বাঁকে বাঁকে জীবন নিজেকে সম্পন্ন করে। আজকের বর্তমান কাল হয়ে যায় অতীত। তবুও বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ক্লান্ত মানুষ নিজস্ব নির্জন মুহূর্তে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে তাকায়; শুশ্রূষার প্রলেপ খোঁজে আদরের অতীত থেকে।

আমার শৈশব –

আমার শৈশব কেটেছে ইছামতি নদীর ধারে এক মফসসল শহরে। জায়গাটার নাম টাকি। উত্তর 24 পরগনার বসিরহাট মহকুমার অন্তর্গত এই জায়গাটা অত্যন্ত বনেদি। অনেকগুলো জমিদারবাড়ি, স্কুল-কলেজ-লাইব্রেরি নিয়ে টাকি একটা সমৃদ্ধ অঞ্চল। আবার খুব কাছেই ধানখেত, ইতিউতি পুকুর-ডোবা, আর ছিল সরল-সহজ মানুষজন। এখানকারই টাকি সরকারি স্কুলে কেটেছে আমার শিক্ষাজীবনের প্রথম পর্ব।

শৈশবের স্মৃতি –

আমার শৈশব মানে দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে ঠাকুমার কাছে গল্প শোনা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া টুকটুকে ফরসা আমার ঠাকুমাই আমাকে শুনিয়েছিলেন উপেন্দ্রকিশোর, ‘ঠাকুরমার ঝুলি’, ‘ক্ষীরের পুতুল’। সেই অবুঝ বেলাতেও আশি পার করে দেওয়া এক বৃদ্ধা আমাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন কল্পনার জগতে। সন্ধে হলে মা-র কাছে দোতলার ঘরে পড়তে বসতাম। সস্তার কাগজে ছাপা ‘ধারাপাত’, বিদ্যাসাগরের ছবি আঁকা গোলাপি কাগজে মোড়ানো ‘বর্ণপরিচয়’। আজও সেসব বইয়ের কথা মনে পড়ে। গরমকালে জানলা দিয়ে হাওয়া আসত, আর সঙ্গে হাসনুহানার গন্ধ। বাবা সন্ধে বেলা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে টিভিতে খবর দেখতেন। আমার টিভি দেখা বারণ ছিল। শুধু ছোটোদের সিনেমা হলে ডাক পড়ত। আজ শহর কলকাতার ধোঁয়া-কালি মাখা দিনগুলোয় হারিয়ে গেছে শৈশবের হাসনুহানা।

আমার স্কুল –

প্রথম যেদিন স্কুলে ভরতি হতে গেলাম, কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম, “মা না এলে কিছুই বলব না।” বাবা বলেন, যিনি প্রশ্ন করেছিলেন সেই হৃষীকেশ স্যার আমাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন। রিকশায় করে ছোটোবেলার বন্ধু জাহাঙ্গিরের সঙ্গে স্কুলে আসা। সেদিনের হৃষীকেশ স্যার, সনাতন স্যার, বাদল স্যার-মনে আছে সকলের কথা। মনে আছে স্কুলের গাছ থেকে জামরুল পাড়ার ব্যর্থ চেষ্টা, পড়ে গিয়ে কপাল ফাটার মতো কত ঘটনা। বইয়ের অক্ষর ছাপিয়ে সে ছিল আমার সবুজ স্কুল।

স্মৃতি সতত সুখের –

এক ছুটে খেলার মাঠ, কিছুই খেলতে না শেখা দিনগুলোতে সবুজ ঘাসে গড়াগড়ি কিংবা হাঁটুজলে দাপাদাপি, বাবার বেদম মার-যন্ত্রণার স্মৃতি ভুলে আজ সবই মধুর। কলকাতা শহরের ফ্ল্যাটবাড়িতে এখন আমি থাকি। স্কুল বাসে যাতায়াত করা। আমার সেই শৈশব আজ যেন বিগত গল্পের স্মৃতি। গরমকালে দুপুরবেলা লুকিয়ে আম কুড়ানো, বৃষ্টিতে ভেজা-মনে পড়ে সব। সেদিনের বৃষ্টিতে আজও মনে মনে ভিজে যাই আমি।

উপসংহার –

মাধ্যমিক, জয়েন্ট এনট্রান্স, আইআইটি-আমার মগজজুড়ে আজ ঝাঁ-চকচকে আধুনিক জীবন কিন্তু হৃদয়ে আমার আজও নদীর ধার, সবুজ ধানখেতের পাশে দাঁড়িয়ে বহুদূরে ট্রেন যেতে দেখা, দেওয়ালের গায়ে রং-পেনসিলের দাগ, চাঁদের বুড়ি, আমার বুড়ি ঠাকুমা। আমার জীবন্ত শৈশব তাই আজকের এই বর্ণহীন শহরে বহুদূর থেকে ভেসে আসা সবুজের হাতছানি।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।

আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

একটি অচল পয়সার আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

একটি অচল পয়সার আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

একটি প্রাচীন বটগাছের আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

একটি প্রাচীন বটগাছের আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

একটি মেলা দেখার অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি মেলা দেখার অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্রতিসরণ কোণ কাকে বলে? কাচফলকে প্রতিসরণের ফলে আলোকরশ্মির চ্যুতি হয় না কেন?

একটি প্রিজমের i-δ লেখচিত্র আঁকো, যেখানে i হল আপতন কোণ ও δ হল চ্যুতিকোণ।

উত্তল লেন্স এবং অবতল লেন্স কয়প্রকার ও কী কী?

আলোকের বিক্ষেপণ কাকে বলে? র‍্যালের বিক্ষেপণ সূত্রটি লেখো।

রেখাচিত্রের সাহায্যে লেন্স দ্বারা প্রতিবিম্ব গঠনের নিয়মাবলি গুলি লেখো।