এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “স্নায়ুতন্ত্রের কাজ সংক্ষেপে উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

স্নায়ুতন্ত্র কাকে বলে?
স্নায়ুতন্ত্র হলো শরীরের প্রধান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এটি মানুষের নড়াচড়া, চিন্তাভাবনা, স্মৃতিশক্তি, কথা বলা (বক্তৃতা) এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
স্নায়ুতন্ত্রের কাজ সংক্ষেপে উল্লেখ করো।
স্নায়ুতন্ত্রের কাজ –
- প্রতিবর্ত ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ – স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে প্রাণীদেহে প্রতিবর্ত ক্রিয়াসমূহ নিয়ন্ত্রিত হয়।
- উদ্দীপনা গ্রহণ – স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে প্রাণীদেহে জ্ঞানেন্দ্রিয় তথা গ্রাহকের সাহায্যে বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনা গৃহীত হয়।
- উদ্দীপনা পরিবহণ, উত্তেজনা সৃষ্টি ও সাড়াপ্রদান – গৃহীত উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাণীদের মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
- সমন্বয়সাধন – প্রাণীদেহের বিভিন্ন অঙ্গ এবং তন্ত্রের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে তাদের কাজের মধ্যে সংযোগরক্ষা স্নায়ু-তন্ত্রের একটি বিশেষ কাজ।
- পেশির কার্যকারিতা ও গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ – স্নায়ুতন্ত্র প্রাণীদেহে পেশিকলার সংকোচনে এবং গ্রন্থিসমূহের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।
- মানসিক ক্রিয়া পরিচালন – উন্নত প্রাণীদের বুদ্ধি, চিন্তা, স্মৃতি, বিচার প্রভৃতি মানসিক ক্রিয়াগুলিকে স্নায়ুতন্ত্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে।
- বিভিন্ন জ্ঞানেন্দ্রিয়ের কাজ নিয়ন্ত্রণ – স্নায়ুতন্ত্র বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ সঠিক মাত্রায় পরিচালনার জন্য চোখ, কান, নাক, জিহ্বা ও ত্বকের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান কাজ কী?
স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান কাজ হলো প্রাণীদেহের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন, সমন্বয় সাধন এবং পরিবেশের পরিবর্তনের প্রতি দ্রুত ও উপযুক্ত সাড়া প্রদান করা।
প্রতিবর্ত ক্রিয়া কী এবং স্নায়ুতন্ত্র এটিকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে?
প্রতিবর্ত ক্রিয়া হলো দ্রুত, অনৈচ্ছিক ও স্বয়ংক্রিয় সাড়া (যেমন: গরম কিছুতে হাত লাগলে তা হঠাৎ টেনে নেওয়া)। স্নায়ুতন্ত্র—বিশেষ করে স্পাইনাল কর্ড—রিসেপ্টর, স্নায়ু এবং ইফেক্টরের মাধ্যমে এই প্রতিবর্ত পথ নিয়ন্ত্রণ করে।
স্নায়ুতন্ত্র কীভাবে উদ্দীপনা গ্রহণ ও সাড়া দেয়?
শরীরের বিভিন্ন রিসেপ্টর (চোখ, কান, ত্বক ইত্যাদি) বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনা গ্রহণ করে। স্নায়ুতন্ত্র এই সংকেত মস্তিষ্ক বা স্পাইনাল কর্ডে প্রেরণ করে; সেখানে প্রক্রিয়াকরণের পর পেশি বা গ্রন্থিতে নির্দেশ পাঠানো হয়, যার ফলেই সাড়া সৃষ্টি হয়।
দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে সমন্বয় সাধন স্নায়ুতন্ত্র কীভাবে করে?
কেন্দ্রীয় ও প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-তন্ত্রের কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ করে, বিশ্লেষণ করে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠিয়ে তাদের কার্যক্রমে সামঞ্জস্য বজায় রাখে। যেমন—হাঁটার সময় পেশি, ভারসাম্য ও দৃষ্টির সমন্বয়।
স্নায়ুতন্ত্র পেশি ও গ্রন্থির কাজ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে?
পেশির সংকোচন ও প্রসারণ মোটর স্নায়ু সংকেতের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। একইভাবে স্বায়ত্তিক (Autonomic) স্নায়ুতন্ত্র বিভিন্ন গ্রন্থির (যেমন: লালাগ্রন্থি, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি) রস বা হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
মানসিক কাজগুলো (চিন্তা, স্মৃতি) কোন অংশ নিয়ন্ত্রণ করে?
উন্নত প্রাণী, বিশেষ করে মানুষের ক্ষেত্রে, মস্তিষ্কের সেরেব্রাম, হিপোক্যাম্পাস, প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স ইত্যাদি অংশ চিন্তা, বিচার, স্মৃতি, শেখাসহ সব উচ্চতর মানসিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলোর কাজ স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে কেন?
জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলো তথ্য সংগ্রহ করে, আর স্নায়ুতন্ত্র সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে, সংবেদনশীলতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া গঠনে সাহায্য করে, যাতে প্রাণীটি পরিবেশের সাথে সঠিকভাবে মানিয়ে নেয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “স্নায়ুতন্ত্রের কাজ সংক্ষেপে উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন