সাইন্যাপসের গঠন বর্ণনা করো এবং এর কাজ লেখো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সাইন্যাপসের গঠন বর্ণনা করো এবং এর কাজ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সাইন্যাপসের গঠন বর্ণনা করো এবং এর কাজ লেখো।

সাইন্যাপসের গঠন বর্ণনা করো এবং এর কাজ লেখো।

সাইন্যাপসের গঠন নীচে আলোচনা করা হল –

ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে সাইন্যান্সের নিম্নলিখিত অংশগুলি লক্ষ করা যায় –

  • সাইন্যাপটিক নব – পূর্ববর্তী নিউরোনের অ্যাক্সনপ্রান্ত বোতামের মতো স্ফীত দেখায়, একে সাইন্যাপটিক নব বলে। সাইন্যাপটিক নবের মধ্যে বহুসংখ্যক মাইটোকন্ড্রিয়া এবং অসংখ্য গোলাকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাইন্যাপটিক থলি থাকে।
  • সাইন্যাপটিক ক্লেফট – পূর্ববর্তী নিউরোনের সাইন্যাপটিক নব এবং পরবর্তী নিউরোনের মাঝে 200Å দূরত্বের যে ফাঁকা স্থানটি থাকে, তাকে সাইন্যাপটিক ক্লেফট বলে। অ্যাসিটাইল কোলিন নামের নিউরোট্রান্সমিটার এই ক্লেফট অঞ্চলে ক্ষরিত হয় এবং এর মাধ্যমেই প্রি-সাইন্যাপটিক নিউরোন থেকে পোস্ট-সাইন্যাপটিক নিউরোনে স্নায়ুস্পন্দন পরিবাহিত হয়।
  • প্রি-সাইন্যাপটিক মেমব্রেন – সাইন্যাপস অঞ্চলে সাইন্যাপটিক নবের ঝিল্লিকে প্রি-সাইন্যাপটিক মেমব্রেন বলে।
  • পোস্ট-সাইন্যাপটিক মেমব্রেন – সাইন্যাপস অঞ্চলে পরবর্তী নিউরোনের ঝিল্লিকে পোস্ট সাইন্যাপটিক মেমব্রেন বলে।
স্নায়ুসন্নিধি

সাইন্যাপস -এর কাজ –

একটি স্নায়ুকোশ থেকে অপর স্নায়ুকোশে রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে উদ্দীপনা প্রেরণ করাই সাইন্যাপসের প্রধান কাজ। নিউরোহিউমর এই কাজে সাইন্যাপসকে সাহায্য করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

সাইন্যাপস কী?

সাইন্যাপস হল দুটি নিউরোন (স্নায়ুকোষ) এর মধ্যকার সংযোগস্থল যেখানে একটি নিউরোন থেকে অপর নিউরোনে স্নায়ুস্পন্দন (ইমপালস) প্রবাহিত হয়। এটি মূলত স্নায়ুতন্ত্রের তথ্য স্থানান্তরের কারখানা।

সাইন্যাপসের প্রধান অংশগুলি কী কী?

ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা সাইন্যাপসের প্রধান অংশগুলি হল –
1. সাইন্যাপটিক নব/বোতাম – পূর্ববর্তী নিউরোনের অ্যাক্সনের প্রান্তের স্ফীত অংশ, যাতে মাইটোকন্ড্রিয়া ও সাইন্যাপটিক থলি থাকে।
2. প্রি-সাইন্যাপটিক ঝিল্লি – সাইন্যাপটিক নবের ঝিল্লি।
3. সাইন্যাপটিক ক্লেফট – প্রি- ও পোস্ট-সাইন্যাপটিক ঝিল্লির মধ্যকার 200Å (আংস্ট্রম) প্রস্থের ফাঁকা স্থান।
4. পোস্ট-সাইন্যাপটিক ঝিল্লি – পরবর্তী নিউরোনের সাইন্যাপস অঞ্চলের ঝিল্লি।

সাইন্যাপটিক ক্লেফটে কী ঘটে?

প্রি-সাইন্যাপটিক নিউরোন থেকে নিউরোট্রান্সমিটার (যেমন – অ্যাসিটাইলকোলিন) নামক রাসায়নিক বার্তাবাহক সাইন্যাপটিক ক্লেফটে ক্ষরিত হয়। এই ক্লেফটের মাধ্যমেই তা ভ্রমণ করে পোস্ট-সাইন্যাপটিক নিউরোনের রিসেপ্টরে পৌঁছায় এবং নতুন একটি স্নায়ুস্পন্দন তৈরি করে।

সাইন্যাপসে স্নায়ুস্পন্দন কীভাবে পরিবাহিত হয়?

সাইন্যাপসে স্নায়ুস্পন্দন বৈদ্যুতিক উপায়ে নয়, বরং রাসায়নিক উপায়ে পরিবাহিত হয়। প্রি-সাইন্যাপটিক নব থেকে নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরণের মাধ্যমে উদ্দীপনা পোস্ট-সাইন্যাপটিক নিউরোনে পৌঁছায়।

সাইন্যাপটিক থলি এবং মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজ কী?

সাইন্যাপটিক থলি এবং মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজ –
1. সাইন্যাপটিক থলি – এগুলি নিউরোট্রান্সমিটার পদার্থ সঞ্চয় করে রাখে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সাইন্যাপটিক ক্লেফটে নিঃসরণ করে।
2. মাইটোকন্ড্রিয়া – সাইন্যাপটিক নবে অবস্থিত এই শক্তিঘরগুলি নিউরোট্রান্সমিটার সংশ্লেষণ, প্যাকেজিং ও ক্ষরণের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি (ATP) সরবরাহ করে।

প্রি-সাইন্যাপটিক ও পোস্ট-সাইন্যাপটিক ঝিল্লির মধ্যে পার্থক্য কী?

প্রি-সাইন্যাপটিক ও পোস্ট-সাইন্যাপটিক ঝিল্লির মধ্যে পার্থক্য –
1. প্রি-সাইন্যাপটিক ঝিল্লি পূর্ববর্তী নিউরোনের অংশ। এটি ডিপোলারাইজেশনের ফলে ক্যালসিয়াম আয়ন প্রবেশের পর নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরণ করে।
2. পোস্ট-সাইন্যাপটিক ঝিল্লি পরবর্তী নিউরোনের অংশ। এতে বিশেষ রিসেপ্টর প্রোটিন থাকে যা নিউরোট্রান্সমিটার বাঁধে, ফলে নতুন একটি বৈদ্যুতিক সিগন্যাল সৃষ্টি হয়।

সাইন্যাপসের প্রধান কাজ কী?

সাইন্যাপসের প্রধান কাজ হল এক নিউরোন থেকে অন্য নিউরোনে (বা একইভাবে নিউরোন থেকে পেশী বা গ্রন্থিকোষে) রাসায়নিক মাধ্যমের সাহায্যে উদ্দীপনা/স্নায়ুস্পন্দন সঞ্চালন করা। এটি তথ্য প্রবাহের দিক নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।

নিউরোট্রান্সমিটার কাকে বলে? উদাহরণ দিন।

নিউরোট্রান্সমিটার হল সেই সব রাসায়নিক যৌগ যা সাইন্যাপটিক ক্লেফটে নিঃসৃত হয়ে স্নায়ুস্পন্দন পরিবহনে মধ্যস্থতা করে। প্রদত্ত বিষয়বস্তুতে অ্যাসিটাইলকোলিনের নাম উল্লেখ আছে। অন্য উদাহরণের মধ্যে ডোপামিন, সেরোটোনিন, গ্লুটামেট ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।

কেন সাইন্যাপসে রাসায়নিক সংকেত গুরুত্বপূর্ণ?

রাসায়নিক সংকেতের কারণে সাইন্যাপস এক-মুখী সংকেত পরিবহন নিশ্চিত করে (শুধু প্রি-সাইন্যাপটিক থেকে পোস্ট-সাইন্যাপটিক দিকে)। এটি সংকেতকে সময়ক্ষেপণ ও সংহতকরণ এর সুযোগ দেয়, যা স্নায়ুতন্ত্রের জটিল গণনা এবং শিখনের ভিত্তি তৈরি করে।

সাইন্যাপস না থাকলে কী সমস্যা হতো?

সাইন্যাপস না থাকলে নিউরোনগুলির মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট ও নিয়ন্ত্রিত সংযোগ থাকত না। নিউরোনগুলির নেটওয়ার্ক গঠন হতো না, ফলে জটিল চিন্তা, স্মৃতি, শেখা, প্রেরণা এবং সমন্বিত শরীরী ক্রিয়া (যেমন চলাফেরা) সম্ভব হতো না।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সাইন্যাপসের গঠন বর্ণনা করো এবং এর কাজ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

প্রতিবর্ত চাপের চিত্রসহ বর্ণনা দাও।

চিত্রসহ প্রতিবর্ত চাপের বর্ণনা দাও।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অক্ষিগোলকের আবরকগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

চিত্রসহ প্রতিবর্ত চাপের বর্ণনা দাও।

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করো।

পনস, লঘুমস্তিষ্ক ও সুষুম্নাশীর্ষকের কাজ উল্লেখ করো।

সুষুম্নাকাণ্ডের গঠন ও কাজ উল্লেখ করো।