তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো। তেলেঙ্গানা আন্দোলন সংগঠনের পিছনে কারণগুলি কী ছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো। তেলেঙ্গানা আন্দোলন সংগঠনের পিছনে কারণগুলি কী ছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো। তেলেঙ্গানা আন্দোলন সংগঠনের পিছনে কারণগুলি কী ছিল?
Contents Show

তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।

প্রাক্-স্বাধীনতার যুগে তেলেঙ্গানা অঞ্চলটি ছিল হায়দরাবাদের নিজাম শাসিত অঞ্চল। মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিক পরিবেশে এই অঞ্চলের কৃষকদের কোনো স্বাধীন সত্তা ছিল না। এখানকার কৃষিজীবী মানুষের বেশিরভাগ ছিল ‘ভেট্টি’ প্রথার শিকার। ‘ভেট্টি’ বলতে বোঝানো হত বেগার শ্রমকে। এখানকার ভূস্বামীরা, যেমন – জমিদার, জায়গিরদার বা দেশমুখরা বহু সংখ্যক কৃষকদের উপর ‘ভেট্টি’ প্রথার মাধ্যমে শোষণ চালাত। এই পরিপ্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট দলের নেতৃত্বে কৃষকরা গেরিলা প্রতিরোধ শুরু করে (1946 খ্রিস্টাব্দ)। এই প্রতিরোধ ‘তেলেঙ্গানা আন্দোলন’ নামে পরিচিত। 

1946 খ্রিস্টাব্দে আন্দোলন চলাকালীন কমিউনিস্ট নেতারা রেশন ব্যবস্থার অপব্যবহার, অপরিমিত খাজনা ও ভেট্টি সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য তেলেঙ্গানার গ্রামগুলিতে শক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলেন। অন্ধ্র মহাসভা-ও এ ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তেলেঙ্গানার গ্রামগুলিতে কমিউনিস্টদের বলা হত ‘চিকাটি ডোবালু’ বা ‘রাতের রাজা’। খোলাবাজার থেকে অস্ত্র ও গুলি জোগাড় করে 10,000 স্বেচ্ছাসেবীর স্বেচ্ছাসেবীর এক এক বাহিনী গড়ে তুলে তারা নিজামবাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে।

1946 খ্রিস্টাব্দে 4 জুলাই লালগোন্ডায় প্রথম বিদ্রোহ শুরু হলে ধীরে ধীরে তা ওয়ারাঙ্গল, খাম্বাস ও অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। কমিউনিস্ট পরিচালিত এই দীর্ঘস্থায়ী সশস্ত্র আন্দোলনে তিন হাজার গ্রামের প্রায় 30 লক্ষ দরিদ্র কৃষক অংশ নিয়েছিল। পি. সি. সুন্দরাইয়া, রবিনারায়ণ রেড্ডি, ইয়েলো রেড্ডি প্রমুখরা ছিলেন তেলেঙ্গানা আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব।

1948 খ্রিস্টাব্দে নাগাদ তেলেঙ্গানা কৃষক আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করলে শেষপর্যন্ত ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী কৃষক অভ্যুত্থান দমন করার জন্য এগিয়ে আসে। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর আক্রমণকে উপেক্ষা করে তেলেঙ্গানার বিপ্লবী কৃষকরা সংগ্রাম চালিয়ে যান। 1951 সালের অক্টোবর মাসে কমিউনিস্ট পার্টি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। তেলেঙ্গানা আন্দোলনে নিহত হন প্রায় 4000 কমিউনিস্ট ও কৃষক বিপ্লবী। 10000 কমিউনিস্ট কর্মী ও সমর্থক গ্রেপ্তার হন।

রক্তাক্ত তেলেঙ্গানা বিপ্লব’ আজ পর্যন্ত ভারতের কৃষক ইতিহাসে বিশেষত বৈপ্লবিক গণসংগ্রামের ইতিহাসে এক স্মরণীয় নাম। এখান থেকেই ভারতের গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পথচলা শুরু। তাই রক্তাক্ত তেলেঙ্গানা সংগ্রাম ভারতের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় ধ্রুবতারার মতো, যা ম্লান হবে না কোনোদিন। সুপ্রকাশ রায়ের মতে – “তেলেঙ্গানার এই সংগ্রামই ভারতের জনগণতন্ত্র স্থাপনের প্রথম প্রয়াস।”

তেলেঙ্গানা আন্দোলন সংগঠনের পিছনে কারণগুলি কী ছিল?

তেলেঙ্গানা আন্দোলন সংগঠনের পিছনে উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হল –

  • এই অঞ্চলের কৃষকদের তাদের কোনো রকমের রাজনৈতিক, সামাজিক অধিকার বলে কিছু ছিল না।
  • বেগার শ্রম দেওয়ার জন্য তাদের ওপর জুলুম করা হত।
  • জোর করে চেট্টি আদায় করা হত এবং
  • কৃষকদের বিভিন্ন প্রকার ঋণের জালে জড়িয়ে তাদের জীবনযাত্রায় সর্বনাশ নিয়ে আসত।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

তেলেঙ্গানা আন্দোলন কী?

তেলেঙ্গানা আন্দোলন (1946-1951) ছিল হায়দরাবাদ রাজ্যের (বর্তমান তেলেঙ্গানা) কৃষকদের একটি সশস্ত্র গণআন্দোলন। এটি কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিল এবং এর মূল লক্ষ্য ছিল জমিদারি শোষণ, ভেট্টি প্রথা (বেগার শ্রম) ও নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম।

তেলেঙ্গানা আন্দোলনের প্রধান কারণগুলি কী ছিল?

তেলেঙ্গানা আন্দোলনের প্রধান কারণগুলি ছিল –
1. ভেট্টি প্রথা – কৃষকদের বিনা মজুরিতে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা হত।
2. অতিরিক্ত খাজনা ও শোষণ – জমিদার ও দেশমুখরা কৃষকদের উপর চড়া হারে খাজনা আদায় করত।
3. সামন্ততান্ত্রিক শাসন – নিজামের শাসনামলে কৃষকদের কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অধিকার ছিল না।
4. কমিউনিস্ট নেতৃত্ব – কমিউনিস্ট পার্টি কৃষকদের সংগঠিত করে শোষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দেয়।

তেলেঙ্গানা আন্দোলনের নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন?

তেলেঙ্গানা আন্দোলনের প্রধান নেতারা ছিলেন –
1. পি. সি. সুন্দরাইয়া,
2. রবিনারায়ণ রেড্ডি,
3. ইয়েলো রেড্ডি,
4. চাল্লাপুল্লা লক্ষ্মী নারায়ণ (অন্ধ্র মহাসভার নেতা)।

তেলেঙ্গানা আন্দোলনে ‘চিকাটি ডোবালু’ কারা ছিল?

‘চিকাটি ডোবালু’ (রাতের রাজা) নামে পরিচিত কমিউনিস্ট গেরিলারা রাতের অন্ধকারে গ্রামে গ্রামে সংগঠন গড়ে তুলতেন এবং জমিদার ও নিজামের সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতেন।

তেলেঙ্গানা আন্দোলন কবে শুরু হয় এবং কখন শেষ হয়?

1. তেলেঙ্গানা আন্দোলন শুরু – 4 জুলাই, 1946 (লালগোন্ডায় প্রথম বিদ্রোহ)।
2. তেলেঙ্গানা আন্দোলন সমাপ্তি – অক্টোবর 1951 (কমিউনিস্ট পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলন প্রত্যাহার করে)।

ভারতীয় সেনাবাহিনী তেলেঙ্গানা আন্দোলন দমনে কখন করে?

1948 সালে হায়দরাবাদ ভারতীয় ইউনিয়নে যোগ দিলে ভারতীয় সেনাবাহিনী তেলেঙ্গানায় প্রবেশ করে এবং কমিউনিস্ট গেরিলাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়।

তেলেঙ্গানা আন্দোলনের ফলাফল কী ছিল?

তেলেঙ্গানা আন্দোলনের ফলাফল ছিল –
1. প্রায় 4000 কমিউনিস্ট ও কৃষক নিহত হন।
2. 10,000 কর্মী গ্রেফতার হন।
3. জমিদারি প্রথা ও ভেট্টি শ্রমের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
4. ভারতের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

তেলেঙ্গানা আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?

তেলেঙ্গানা আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য হল –
1. এটি ছিল ভারতের প্রথম বড়সড় সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহ
2. এটি পরবর্তীতে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের আন্দোলনে প্রেরণা দেয় (2014 সালে তেলেঙ্গানা ভারতের 29তম রাজ্য হয়)।
3. সুপ্রকাশ রায়ের মতে, এটি “ভারতের জনগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রয়াস” ছিল।

তেলেঙ্গানা আন্দোলন ও টিপ্পু সুলতানের বিদ্রোহের মধ্যে পার্থক্য কী?

তেলেঙ্গানা আন্দোলন ও টিপ্পু সুলতানের বিদ্রোহের মধ্যে পার্থক্য হল –
1. টিপ্পু সুলতানের বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে, অন্যদিকে তেলেঙ্গানা আন্দোলন ছিল স্থানীয় জমিদার ও নিজামের শোষণের বিরুদ্ধে।
2. তেলেঙ্গানা আন্দোলন কমিউনিস্ট আদর্শে পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে টিপ্পুর সংগ্রাম ছিল স্বাধীন রাজ্য রক্ষার লড়াই।

তেলেঙ্গানা আন্দোলন কি সম্পূর্ণ সফল হয়েছিল?

তেলেঙ্গানা আন্দোলন সরাসরি সফল না হলেও এটি –
1. কৃষকদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করেছিল।
2. পরবর্তীতে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদে ভূমিকা রাখে।
3. ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো। তেলেঙ্গানা আন্দোলন সংগঠনের পিছনে কারণগুলি কী ছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো। তেলেঙ্গানা আন্দোলন সংগঠনের পিছনে কারণগুলি কী ছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

দার কমিশন কী? দার কমিশন (1948 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল?

দার কমিশন কী? দার কমিশন (1948 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল?

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

সময়ের মূল্য – প্রবন্ধ রচনা

ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে আলোকরশ্মির প্রতিসরণের চিত্র অঙ্কন করো এবং কৌণিক চ্যুতি নির্ণয় করো।

লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে আলোকরশ্মির প্রতিসরণের চিত্র অঙ্কন করো এবং কৌণিক চ্যুতি নির্ণয় করো।

অবতল দর্পণ কাকে বলে? দন্ত চিকিৎসকগণ অবতল দর্পণ ব্যবহার করেন কেন?

গোলীয় দর্পণের মেরু, বক্রতা কেন্দ্র, বক্রতা ব্যাসার্ধ ও প্রধান অক্ষ কাকে বলে?