এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “থ্যালামাস ও হাইপোথ্যামাসের অবস্থান ও কাজ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

থ্যালামাস ও হাইপোথ্যামাসের অবস্থান ও কাজ লেখো।
থ্যালামাস –
থ্যালামাসের অবস্থান – মস্তিষ্কের তৃতীয় ভেন্ট্রিকলের উভয় পার্শ্বে প্রথম ও দ্বিতীয় ভেন্ট্রিকলের নীচে এবং মধ্যমস্তিষ্কের উপরিভাগে থ্যালামাস গঠিত হয়।
থ্যালামাসের কাজ –
- থ্যালামাসকে রিলে স্টেশন বলা হয়, কারণ দেহ থেকে আসা সবরকম সংজ্ঞাবহ উদ্দীপনা প্রথমে থ্যালামাসে আসে, তারপর তা গুরুমস্তিষ্কে যায়।
- থ্যালামাস মানুষের নিদ্রা ও জাগরণের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে এবং ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক আচরণের প্রকাশ ঘটায়।
হাইপোথ্যালামাস –
হাইপোথ্যামাসের অবস্থান – মস্তিষ্কের ডায়েনসেফালন অংশে থ্যালামাসের নীচে তৃতীয় ভেন্ট্রিকলের উভয়পাশে ও পিটুইটারি গ্রন্থির ওপরে হাইপোথ্যালামাস অংশটি অবস্থিত।
হাইপোথ্যামাসের কাজ –
- দেহের তাপমাত্রা এবং ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও নিদ্রা নিয়ন্ত্রণে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
- হাইপোথ্যালামাসে অবস্থিত নিউরোসিক্রেটরি কোশগুলি থেকে বিভিন্ন নিউরোহরমোন (ADH, অক্সিটোসিন রিলিজিং ও ইনহিবিটিং হরমোন) ক্ষরিত হয়, যা অগ্র পিটুইটারি থেকে বিভিন্ন হরমোনের সংশ্লেষ ও ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
থ্যালামাসকে কেন “রিলে স্টেশন” বলা হয়?
থ্যালামাসকে “রিলে স্টেশন” বলা হয় কারণ এটি দেহের বিভিন্ন অংশ (চোখ, কান, ত্বক ইত্যাদি) থেকে আসা প্রায় সব ধরনের সংবেদনশীল তথ্য (ব্যথা, তাপ, স্পর্শ, দর্শন, শব্দ) সংগ্রহ করে প্রথমে প্রক্রিয়াকরণ করে এবং তারপর সেই তথ্যগুলো সংশ্লিষ্ট গুরুমস্তিষ্কের (সেরিব্রাল কর্টেক্স) এলাকায় পাঠায়
থ্যালামাস ঘুমের সাথে কীভাবে সম্পর্কিত?
থ্যালামাস আমাদের জাগরণ ও নিদ্রা চক্র নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি জাগ্রত অবস্থায় সংবেদনশীল তথ্য প্রবাহিত করে এবং গভীর ঘুমের (স্লো-ওয়েভ স্লিপ) সময় এই সংকেত প্রবাহকে বাধা দেয়, যাতে আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারি।
হাইপোথ্যালামাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কী?
হাইপোথ্যালামাস মূলত দেহের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য (হোমিওস্ট্যাসিস) বজায় রাখার কেন্দ্র। এটি শরীরের তাপমাত্রা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, জল ও লবণের ভারসাম্য, ঘুমের চক্র এবং আবেগের অভিব্যক্তির মতো মৌলিক কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।
হাইপোথ্যালামাস কীভাবে পিটুইটারি গ্রন্থিকে নিয়ন্ত্রণ করে?
হাইপোথ্যালামাস সরাসরি রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ (নিউরোহরমোন) পিটুইটারি গ্রন্থিতে পাঠায়। এই রাসায়নিকগুলো পিটুইটারি গ্রন্থিকে নির্দেশ দেয় কোন ধরনের হরমোন (যেমন – বৃদ্ধি হরমোন, থাইরয়েড-উদ্দীপক হরমোন) নিঃসরণ করতে হবে। এইভাবে হাইপোথ্যালামাস পুরো অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি তন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করে।
থ্যালামাস ও হাইপোথ্যালামাসের অবস্থান সহজভাবে কীভাবে বোঝানো যায়?
মস্তিষ্কের কেন্দ্রে একটি ছোট কক্ষ আছে—এটি তৃতীয় ভেন্ট্রিকল। এই কক্ষের দেয়ালের উপরের অর্ধাংশ হলো থ্যালামাস। আর এই কক্ষের নিচের দিকের মেঝে ও দেয়ালের নিম্নাংশ হলো হাইপোথ্যালামাস। হাইপোথ্যালামাসের ঠিক নিচেই পিটুইটারি গ্রন্থি অবস্থান করে।
হাইপোথ্যালামাস সরাসরি কোন কোন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় জড়িত?
শরীর গরম হলে ঘামানো বা ঠাণ্ডা হলে কাঁপুনির মতো প্রতিক্রিয়াগুলোর সূচনা করে হাইপোথ্যালামাস। এটি রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও মাতৃসুলভ আচরণ (অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে) এবং দৈনন্দিন জৈবিক ছন্দ বা সারকাডিয়ান রিদম নিয়ন্ত্রণে হাইপোথ্যালামাসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “থ্যালামাস ও হাইপোথ্যামাসের অবস্থান ও কাজ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন