আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘ট্রেনযাত্রার অভিজ্ঞতা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

ট্রেনযাত্রার অভিজ্ঞতা
“দূর প্রসারিত চর
– রবীন্দ্রনাথ
শূন্য আকাশের নীচে শূন্যতার ভাষ্যকার যেন”
ভূমিকা – অচেনাকে চেনা, অজানাকে জানা আর অসীমের অন্বেষণে দুই মলাটের ভিতর চলার অন্য নাম ভ্রমণসাহিত্য। কিন্তু “ইচ্ছা সম্যক জগদরশনে/ কিন্তু পাথেয় নাস্তি পায়ে শিকলি, মন উড়ু উড্ড/একি দৈবের শাস্তি।” – অথচ আশ্চর্যভাবে আমার সে সুযোগ জুটল; ভারতের শিল্পসৌন্দর্যের প্রকাশ শাজাহান প্রিয়া মুমতাজের স্মৃতিমর্মর সমাধি মন্দির তাজমহল দেখার। চাঁদনি রাতে যার দেহতল হয়ে ওঠে অমরার কুসুমকোরক।
উপলক্ষ্য ও যাত্রা – এবার পুজোয় বাবা-মায়ের সঙ্গে আগ্রা ভ্রমণের সুযোগ এল। দশমীতে যাত্রা শুরু। স্টেশনে যাত্রীমিছিল, কুলিদের হইচই, চরম ব্যস্ততা, হকারদের চ্যাঁচামেচি, মাইকে যাত্রা-বিলম্বের ঘোষণা- কিন্তু এসবের কোনো কিছুই আমার মনের ব্যাকুলতাকে প্রভাবিত করতে পারছিল না। ট্রেন ছাড়ল – উদ্গ্রীব আমার কিশোর মন অনুসন্ধিৎসু হয়ে রইল ভারতে শিল্পসৌন্দর্যের প্রতীক তাজমহল দেখার জন্য।
ট্রেনযাত্রার পাথেয় সঞ্চয় – রাতের খাওয়া শেষে সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও আমার চোখে ঘুম নেই। বাইরে ঘোর অন্ধকারের বুক চিরে এগিয়ে চলেছে ট্রেন। আমার কৌতূহলী চোখ দূরের গাঢ় অন্ধকারের উৎস থেকে খুঁজে নিতে চাইছে অনাস্বাদিত পাথেয়। মনে পড়ছে ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসের মহাশ্মশানের কথা। হঠাৎ চমক ফিরল একজনের ডাকে-দেখি আমারই মতো আর-এক জোড়া ঘুমহীন চোখের কিশোর-নিত্যকালের যাত্রী যেন। সেও চলেছে আগ্রায়। এমনি করে রাত ফুরাল। ভোরের হিমেল হাওয়ায় ট্রেন চলেছে এক সেতুর ওপর দিয়ে। চরে ফুটে থাকা রাশি রাশি কাশফুলের বনে বাতাসের হিল্লোল। মনে পড়ছে ‘প্রান্তিক’ কাব্যের সেই কবিতা –
“মেঘ মুক্ত শরতের
– রবীন্দ্রনাথ
দূরে চাওয়া আকাশেতে ভারমুক্ত চিরপথিকের
বাঁশিতে বেজেছে ধ্বনি”
বাইরের দৃশ্যও আমাদের সাথে পাল্লা দিয়ে বিপরীতপানে ছুটে চলেছে। গ্রাম-মাঠ, মাঠের সবুজ মোড়ক আমার চোখে পরিয়ে দিয়েছে বিহ্বল স্নেহের মোহাঞ্জন। দূরে মেঠো পথ দিয়ে চলে যাওয়া গ্রাম্য মানুষের দল – নগরজীবনের ব্যস্ততা যাদের নেই। এমনি এক বিভোর অবস্থায় সংবিৎ ফিরে পেলাম ক্ষণিক সখার ডাকে। জানলা দিয়ে দেখলাম ‘তাজমহল’। প্রথম সকালের শিশিরস্নাত বেলফুলের কুঁড়ির মতো লাগছে তাকে। গাড়ি থামলে নামলাম আমরা আর আমাদের ফেলে রেখে স্বপ্নের সেই মহারথ হারিয়ে গেল যবনিকার অন্তরালে।
তাজমহল দর্শন – ট্রেন যাত্রার ধকল সামলে আমরা উঠলাম এক হোটেলে। খাওয়া শেষে মনে পড়ল কালজয়ী সেই কবিতা –
“এক বিন্দু নয়নের জল
কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল
এ তাজমহল”।
জ্যোৎস্নার দুধের ধারা গড়িয়ে পড়ছে তাজমহলের মাথায়। পিছনে যমুনা নদী, অপূর্ব মোহময় পরিবেশ যা আমার স্মৃতিতে আজও অক্ষয়।
উপসংহার – আমার প্রথম ট্রেনভ্রমণ আজও আমার স্মৃতিকে ভারাক্রান্ত করে। মনে পড়ে বিরহী মুমতাজের কাতর মুখটি। আমি যেন Tennyson -এর Ulysses, যে বলেছিল – ‘I cannot rest from travel’। আসলে জীবনের মেয়াদ এত অল্প বলেই বুঝি বিরামহীন যাত্রার প্রতি এত আকর্ষণ।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘ট্রেনযাত্রার অভিজ্ঞতা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন