এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন বা গমন কাকে বলে? উদাহরণ দাও। সামগ্রিক চলন কত প্রকারের হয় এবং কী কী ও তাদের সংজ্ঞা লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন বা গমন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন বা গমন বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রভাবে সমগ্র উদ্ভিদদেহ বা উদ্ভিদ দেহস্থিত কোনো অংশের সামগ্রিকভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থান পরিবর্তন হয়; একে উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন বা গমন বলে।
উদাহরণ – ফার্নের শুক্রাণু ম্যালিক অ্যাসিড দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে ডিম্বাণুর দিকে গমন করে।
সামগ্রিক চলন কত প্রকারের হয় এবং কী কী ও তাদের সংজ্ঞা লেখো।
সামগ্রিক চলনের প্রকারভেদ –
সামগ্রিক চলন দুই প্রকারের হয়। যেমন –
- স্বতঃস্ফূর্ত সামগ্রিক চলন এবং
- আবিষ্ট সামগ্রিক চলন।
স্বতঃস্ফূর্ত সামগ্রিক চলন -এর – স্বতঃস্ফূর্ত সামগ্রিক চলন বাহ্যিক কোনো উদ্দীপক ছাড়াই সম্পূর্ণ উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ দেহাংশ -এর অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের প্রভাবে স্বেচ্ছায় স্থান পরিবর্তন করাকে স্বতঃস্ফূর্ত সামগ্রিক চলন বলে। উদাহরণ – কুমড়ো গাছের কাণ্ডের রোমে সারকুলেশন পরিলক্ষিত হয়।
আবিষ্ট সামগ্রিক চলন -এর সংজ্ঞা – আবিষ্ট সামগ্রিক চলন বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রভাবে সম্পূর্ণ উদ্ভিদদেহ বা উদ্ভিদ দেহাংশের স্থান পরিবর্তনকে আবিষ্ট সামগ্রিক চলন বলে। উদাহরণ – ট্যাকটিক চলন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
স্বতঃস্ফূর্ত সামগ্রিক চলন কাকে বলে?
যে সামগ্রিক চলন বাহ্যিক কোনো উদ্দীপক ছাড়াই সম্পূর্ণ উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ দেহাংশের অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের প্রভাবে স্বেচ্ছায় ঘটে, তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সামগ্রিক চলন বলে।
উদাহরণ – কুমড়ো গাছের কান্ডের রোমে (তুলায়) প্রোটোপ্লাজমের প্রবাহ বা সারকুলেশন দেখা যায়, যা কোনো বাহ্যিক উদ্দীপক ছাড়াই ঘটে।
আবিষ্ট সামগ্রিক চলন কাকে বলে?
যে সামগ্রিক চলন বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রভাবে সম্পূর্ণ উদ্ভিদদেহ বা উদ্ভিদ দেহাংশের স্থান পরিবর্তন ঘটে, তাকে আবিষ্ট সামগ্রিক চলন বলে।
উদাহরণ – ফার্নের শুক্রাণুর ডিম্বাণুর দিকে চলা বা ব্যাকটেরিয়ার আলোর দিকে চলা (ট্যাকটিক চলন)।
স্বতঃস্ফূর্ত ও আবিষ্ট সামগ্রিক চলনের প্রধান পার্থক্য কী?
প্রধান পার্থক্য হলো উদ্দীপকের উৎস।
1. স্বতঃস্ফূর্ত চলনে উদ্দীপক অভ্যন্তরীণ।
2. আবিষ্ট চলনে উদ্দীপক বাহ্যিক।
সামগ্রিক চলন ও অঙ্গগতিক চলনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কী?
সামগ্রিক ও অঙ্গগতিক চলনের মৌলিক পার্থক্য হলো স্থান পরিবর্তনের পরিমাণ।
1. সামগ্রিক চলনে উদ্ভিদ বা তার অংশ এক স্থান থেকে সম্পূর্ণভাবে অন্য স্থানে সরে যায় (যেমন – ফার্নের শুক্রাণুর সাঁতার কাটা)।
2. অঙ্গগতিক চলনে উদ্ভিদের অঙ্গ কোনো নির্দিষ্ট দিকে বেঁকে যায় বা কুঞ্চিত হয়, কিন্তু তার স্থান পরিবর্তন হয় না (যেমন – সূর্যালোকে উদ্ভিদের ডালার বেঁকে যাওয়া)।
ট্যাকটিক চলন কী ধরনের চলন? এর আরেকটি উদাহরণ দাও।
ট্যাকটিক চলন হলো এক ধরনের আবিষ্ট সামগ্রিক চলন। এখানে বাহ্যিক উদ্দীপকের (আলো, রাসায়নিক) দিকে সম্পূর্ণ কোষ বা জীব সরে যায়।
আরেকটি উদাহরণ – ইউগ্লিনা নামক প্রোটিস্টা পর্বের জীবের আলোর দিকে সাঁতার কাটা (ফটোট্যাক্সিস)।
উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন সাধারণত কোন কোন জীবনে দেখা যায়?
উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন সাধারণত নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ, যেমন – শৈবাল, ফার্ন, ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়াতে দেখা যায়। এদের প্রজনন কোষ (শুক্রাণু) বা সম্পূর্ণ উদ্ভিদদেহই স্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম। উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদে (সপুষ্পক উদ্ভিদ) এ ধরনের চলন সাধারণত দেখা যায় না।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন বা গমন কাকে বলে? উদাহরণ দাও। সামগ্রিক চলন কত প্রকারের হয় এবং কী কী ও তাদের সংজ্ঞা লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন