সংবেদনশীলতা কাকে বলে? উদ্ভিদের সাড়া প্রদানে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর ভূমিকা

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সংবেদনশীলতা কাকে বলে? উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা বা সাড়া প্রদানের ঘটনা আবিষ্কারে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সংবেদনশীলতা কাকে বলে? উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা বা সাড়া প্রদানের ঘটনা আবিষ্কারে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আলোচনা করো।
Contents Show

সংবেদনশীলতা কাকে বলে? উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা বা সাড়া প্রদানের ঘটনা আবিষ্কারে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আলোচনা করো।

সংবেদনশীলতা – বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের প্রভাবে পরিবেশের পরিবর্তনগুলিকে শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী সাড়াপ্রদান করার ধর্মকে সংবেদনশীলতা বলে।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর অবদান – উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা বা সাড়াপ্রদানের ঘটনা প্রথম ভারতীয় বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করেন তাঁরই আবিষ্কৃত Crescograph যন্ত্রের সাহায্যে এবং এই যন্ত্রটি উদ্ভিদের ন্যূনতম সংবেদনশীলতাও পরিমাপ করতে পারে। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু মূলত লজ্জাবতী এবং বনচাঁড়াল এই দুটি উদ্ভিদ -এর ওপর সংবেদনশীলতার পরীক্ষানিরীক্ষা করেন।

তাঁর নিজ আবিষ্কৃত Crescograph যন্ত্রের সাহায্যে প্রাপ্ত লেখচিত্র থেকে প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করেন যে –

  • বাহ্যিক বিভিন্ন উদ্দীপনা উদ্ভিদ কোশের অভ্যন্তরে নানা পরিবর্তন ঘটিয়ে উদ্ভিদের সাড়াপ্রদানে সাহায্য করে, প্রাণীর মতো উদ্ভিদদেহেও ছন্দোবদ্ধতা বর্তমান যা উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা তথা চলন নিয়ন্ত্রণ করে।
  • উদ্ভিদের কোশ বিভিন্ন ধরনের উদ্দীপনায় (চাপ, তাপ, স্পর্শ, বিদ্যুৎপ্রবাহ, চৌম্বক ক্ষেত্র, ইথার বা ক্লোরোফর্ম ইত্যাদি) নানা শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া দেখায় (শারীরবৃত্তীয় কাজের হার বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়)। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু ক্রেসকোগ্রাফ (Crescograph) যন্ত্রের সাহায্যে উদ্ভিদের এই সংবেদনশীলতা লেখচিত্রের মাধ্যমে দেখাতে সমর্থ হন। উদ্ভিদ কি প্রাণীর মতো প্রতিবর্ত ক্রিয়া দেখায়? বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু রেজোন্যান্ট রেকর্ডার নামক যন্ত্রের সাহায্যে উদ্ভিদদেহে প্রতিবর্ত পথ-এর অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। বেশি পরিশ্রম করলে মানুষ যেমন ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং বিশ্রাম পেলে আবার কর্মক্ষম হয়, তেমন উদ্ভিদও মানুষের মতো একই আচরণ দেখায়। প্ল্যান্ট ফাইটোগ্রাফ যন্ত্রে তিনি উদ্ভিদের মধ্যে এই আচরণের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। এর থেকে পরবর্তীকালে উদ্ভিদের মধ্যে প্রাণের অস্তিত্ব সংক্রান্ত গবেষণামূলক শাখার উদ্ভব হয়।
ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র

লজ্জাবতী ও বনচাঁড়ালের পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে সিদ্ধান্তে আসেন যে “উদ্ভিদরা ব্যথায় সাড়া দেয়, অনুভূতি দেখায়।”

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

সংবেদনশীলতা কাকে বলে?

বাহ্যিক (যেমন – আলো, স্পর্শ, তাপ) ও অভ্যন্তরীণ (যেমন – রাসায়নিক) উদ্দীপকের প্রভাবে পরিবর্তন শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী সাড়া প্রদানের জীবের সহজাত ধর্ম বা ক্ষমতাই হলো সংবেদনশীলতা।

জগদীশচন্দ্র বসু উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা প্রমাণ করতে কোন যন্ত্রটি ব্যবহার করেছিলেন?

তিনি মূলত দুটি যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন –
1. ক্রেস্কোগ্রাফ (Crescograph) – এটি উদ্ভিদের অতি ক্ষুদ্র বৃদ্ধি এবং চলন পরিমাপ করতে পারে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি দেখান যে উদ্ভিদ বিভিন্ন উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে তার বৃদ্ধির হার পরিবর্তন করে।
2. রেজোন্যান্ট রেকর্ডার (Resonant Recorder) – এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে তিনি উদ্ভিদের টিস্যুতে প্রাণীর মতোই প্রতিবর্ত ক্রিয়া (reflex action) এবং একটি নির্দিষ্ট “প্রতিবর্ত পথ” -এর অস্তিত্ব প্রমাণ করেন।

জগদীশচন্দ্র বসুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার কী ছিল?

তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিল এই ধারণা প্রমাণ করা যে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের মধ্যে একটি মৌলিক সাদৃশ্য রয়েছে। তিনি দেখান যে উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে; তারা ব্যথা-কষ্ট অনুভব করে, ক্লান্ত হয় এবং বিশ্রাম নেয়। তাঁর কাজ উদ্ভিদ স্নায়ুবিজ্ঞান (Plant Neurobiology) নামক গবেষণা ক্ষেত্রের ভিত্তি তৈরি করে।

জগদীশচন্দ্র বসু কেন লজ্জাবতী ও বনচাঁড়াল গাছ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন?

তিনি এই দুটি গাছ বেছে নিয়েছিলেন কারণ তাদের সাড়া প্রদানের ক্ষমতা খুবই দ্রুত এবং দৃশ্যমান।
1. লজ্জাবতী – স্পর্শের প্রতি এর তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া (পাতা বন্ধ হওয়া) সরাসরি পর্যবেক্ষণযোগ্য।
2. বনচাঁড়াল – এই গাছ বৈদ্যুতিক উদ্দীপনার প্রতি খুবই সংবেদনশীল, যা যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই রেকর্ড করা যায়। এই দুটি গাছই তাঁর তত্ত্বগুলি পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করার জন্য আদর্শ নমুনা ছিল।

উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা বা সাড়া প্রদানের ঘটনা আবিষ্কারে জগদীশচন্দ্র বসুর গবেষণার মূল সিদ্ধান্ত কী ছিল?

তাঁর গবেষণার মূল সিদ্ধান্তগুলো ছিল নিম্নরূপ –
1. উদ্ভিদের প্রাণ আছে এবং তারা বিভিন্ন উদ্দীপনায় সাড়া দেয়।
2. উদ্ভিদের দেহেও প্রাণীর মতো ছন্দোবদ্ধতা ও প্রতিবর্ত ক্রিয়া দেখা যায়।
3. বেশি পরিশ্রম করলে উদ্ভিদও ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং বিশ্রামের পরে তা পুনরুদ্ধার হয়।
4. “উদ্ভিদরাও ব্যথায় সাড়া দেয়, অনুভূতি দেখায়।”

উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা ও মানুষের সংবেদনশীলতার মধ্যে পার্থক্য কী?

উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা ও মানুষের সংবেদনশীলতার মধ্যে মূল পার্থক্যটি ব্যবস্থা গত। মানুষের একটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্ক রয়েছে যা জটিল অনুভূতি ও চিন্তার জন্ম দেয়। অন্যদিকে, উদ্ভিদের কোনো স্নায়ুতন্ত্র বা মস্তিষ্ক নেই। তারা রাসায়নিক, শারীরিক ও বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে তাদের দেহের বিভিন্ন অংশে যোগাযোগ করে এবং সাড়া দেয়। তাদের সাড়া সাধারণত বৃদ্ধি, চলন বা শারীরবৃত্তীয় হার পরিবর্তনের আকারে প্রকাশ পায়।

উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা বা সাড়া প্রদানের ঘটনা আবিষ্কারে জগদীশচন্দ্র বসুর কাজের গুরুত্ব কী?

উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা বা সাড়া প্রদানের ঘটনা আবিষ্কারে জগদীশচন্দ্র বসুর কাজ বৈজ্ঞানিক বিশ্বে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসে। সেই সময়ে উদ্ভিদকে জড় ও অনুভূতিহীন বলে মনে করা হতো। বসু প্রমাণ করে দেখান যে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবন প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি গভীর একতা রয়েছে। তাঁর কাজ আজকের উদ্ভিদ-জীববিজ্ঞান (Plant Biology) এবং পরিবেশ সংবেদনশীলতা (Environmental Sensitivity) সম্পর্কিত গবেষণার পথিকৃত্।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সংবেদনশীলতা কাকে বলে? উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা বা সাড়া প্রদানের ঘটনা আবিষ্কারে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

উদ্ভিদের বিভিন্ন উদ্দীপনায় সাড়া-প্রদানের বিষয়টি উদাহরণসহ সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

উদাহরণসহ উদ্ভিদের বিভিন্ন উদ্দীপনায় সাড়া-প্রদানের বিষয়টি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

উদাহরণসহ উদ্ভিদের বিভিন্ন উদ্দীপনায় সাড়া-প্রদানের বিষয়টি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

সংবেদনশীলতা কাকে বলে? উদ্ভিদের সাড়া প্রদানে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর ভূমিকা

ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

মঙ্গলের মাটিতে কিছুক্ষণ কাটানোর অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা