এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উপযোজন কাকে বলে? দূরবর্তী ও নিকটবর্তী বস্তু দেখার ক্ষেত্রে উপযোজনের গুরুত্ব আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

উপযোজন কাকে বলে? দূরবর্তী ও নিকটবর্তী বস্তু দেখার ক্ষেত্রে উপযোজনের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উপযোজন –
বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত কোনো বস্তুকে স্পষ্ট দেখার জন্য চক্ষুগোলকের পেশি ও লেন্সের সাহায্যে স্থান পরিবর্তন না করে লেন্সের বক্রতার পরিবর্তন করার প্রক্রিয়াকে উপযোজন বলে।
দূরবর্তী স্থানের কোনো বস্তু দেখার ক্ষেত্রে উপযোজনের গুরুত্ব –
কোনো বস্তু স্বাভাবিক দূরত্ব 6 মিটারের বেশি দূরত্বে অবস্থিত হলে চোখের যে-উপযোজন হয়, তা হল –
সিলিয়ারি পেশি প্রসারিত হয় → সাসপেনসরি লিগামেন্ট সংকুচিত হয় → লেন্সের বক্রতা কমে যায় এবং লেন্সটি পাতলা হয় → লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্য বেড়ে যায় → রেটিনায় বস্তুটির প্রতিবিম্ব গঠিত হয় (20 ফুট দূরের বস্তুকে স্পষ্ট দেখা যায়)
নিকটবর্তী স্থানের কোনো বস্তু দেখার ক্ষেত্রে উপযোজনের গুরুত্ব –
কোনো বস্তু, স্বাভাবিক দূরত্ব অর্থাৎ 6 মিটার দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত হলে চোখের যে-উপযোজন হয়, তা হল –
সিলিয়ারি পেশি সংকুচিত হয় → সাসপেনসরি লিগামেন্ট প্রসারিত হয় → লেন্সের বক্রতা বেড়ে যায় এবং লেন্সটি পুরু হয় → লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্য হ্রাস পায় এবং ফোকাস দূরত্ব কমে → রেটিনায় বস্তুটির প্রতিবিম্ব গঠিত হয় (10 সেমি বা 4 ইঞ্জি দূরের বস্তুকে স্পষ্ট দেখা যায়)
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
“উপযোজন” বলতে সাধারণত কী বোঝায়?
“উপযোজন” (Accommodation) হল চোখের স্বচ্ছ লেন্সের বক্রতা পরিবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত বস্তুকে স্পষ্ট দেখার ক্ষমতা। এটি চোখের সিলিয়ারি পেশি এবং সাসপেনসরি লিগামেন্টের সমন্বিত কাজের মাধ্যমে ঘটে।
দূরের বস্তু দেখার সময় চোখের লেন্সের কী পরিবর্তন হয়?
দূরের বস্তু (সাধারণত 6 মিটারের বেশি) দেখার সময় –
1. সিলিয়ারি পেশি শিথিল হয় (প্রসারিত হয়)।
2. সাসপেনসরি লিগামেন্ট টান পড়ে ও সংকুচিত হয়।
3. লেন্সের বক্রতা কমে, লেন্স পাতলা হয়।
4. লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্য বেড়ে যায়, যাতে দূরের বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনায় সঠিকভাবে পড়ে।
কাছের বস্তু দেখার সময় চোখের লেন্সের কী পরিবর্তন হয়?
কাছের বস্তু (সাধারণত 6 মিটারের মধ্যে) দেখার সময় –
1. সিলিয়ারি পেশি সংকুচিত হয় (সঙ্কুচিত হয়)।
2. সাসপেনসরি লিগামেন্ট শিথিল হয় ও প্রসারিত হয়।
3. লেন্সের বক্রতা বেড়ে যায়, লেন্স পুরু হয়।
4. লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্য কমে যায়, যাতে কাছের বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনায় গঠিত হয়।
“সাধারণ দৃষ্টির ন্যূনতম দূরত্ব” কত?
স্বাভাবিক চোখের জন্য সাধারণ দৃষ্টির ন্যূনতম দূরত্ব প্রায় 25 সেমি (10 ইঞ্চি)। এই দূরত্বে কাছের বস্তুকে চোখ অতিরিক্ত চাপ ছাড়াই স্পষ্ট দেখতে পারে।
উপযোজন ক্ষমতা বয়সের সাথে কীভাবে পরিবর্তিত হয়?
বয়স বাড়ার সাথে চোখের লেন্সের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়, ফলে উপযোজন ক্ষমতা হ্রাস পায়। এই অবস্থাকে প্রেসবায়োপিয়া বলে, যার ফলে কাছের বস্তু স্পষ্ট দেখা যায় না এবং সাধারণত চশমার প্রয়োজন হয়।
উপযোজন প্রক্রিয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উপযোজন গুরুত্বপূর্ণ কারণ –
1. এটি ছাড়া আমরা শুধু একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের বস্তু স্পষ্ট দেখতে পেতাম।
2. এটি দ্রুত ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেন্সের ফোকাস পরিবর্তন করে দূর ও কাছের বস্তু দেখার সুযোগ দেয়।
3. এটির মাধ্যমে আমরা পড়া, লেখা, গাড়ি চালানো ইত্যাদি দৈনন্দিন কাজ সহজে করতে পারি।
উপযোজন প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে কী সমস্যা দেখা দেয়?
উপযোজন প্রক্রিয়া ঠিকমতো না হলে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দেয় –
1. মায়োপিয়া (কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখা, দূরের অস্পষ্ট),
2. হাইপারমেট্রোপিয়া (দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখা, কাছের অস্পষ্ট),
3. প্রেসবায়োপিয়া (বয়সজনিত কাছের দেখায় অসুবিধা)।
উপযোজন ও অভিযোজনের মধ্যে পার্থক্য কী?
উপযোজন ও অভিযোজনের মধ্যে পার্থক্য –
1. উপযোজন (Accommodation) → চোখের লেন্সের ফোকাস পরিবর্তন করে দূর-কাছের বস্তু স্পষ্ট দেখা।
2. অভিযোজন (Adaptation) → আলোর প্রাবল্যের পরিবর্তনের সাথে রেটিনার সংবেদনশীলতা পরিবর্তন (অন্ধকারে বা আলোয় দেখার সামঞ্জস্য)।
উপযোজন প্রক্রিয়ায় সিলিয়ারি পেশির ভূমিকা কী?
সিলিয়ারি পেশি সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে সাসপেনসরি লিগামেন্টের টান নিয়ন্ত্রণ করে, যা লেন্সের বক্রতা পরিবর্তনে সাহায্য করে। এটি উপযোজন প্রক্রিয়ার মূল চালিকাশক্তি।
চোখের লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্য কীভাবে পরিবর্তিত হয়?
লেন্সের বক্রতা পরিবর্তনের মাধ্যমে ফোকাস দৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হয় –
1. লেন্স পুরু হলে → বক্রতা বেশি → ফোকাস দৈর্ঘ্য কমে (কাছের বস্তুর জন্য)।
2. লেন্স পাতলা হলে → বক্রতা কম → ফোকাস দৈর্ঘ্য বাড়ে (দূরের বস্তুর জন্য)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উপযোজন কাকে বলে? দূরবর্তী ও নিকটবর্তী বস্তু দেখার ক্ষেত্রে উপযোজনের গুরুত্ব আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন