এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবা বিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ – বিদ্যাসাগর কতটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন?

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবা বিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। বিদ্যাসাগর কতটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন? নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবা বিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। বিদ্যাসাগর কতটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবা বিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। বিদ্যাসাগর কতটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন?
Contents Show

বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবা বিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

নারী মুক্তি আন্দোলনের কাজে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন রাজা রামমোহনের স্বার্থক উত্তরসূরী। 1829 খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহনের উদ্যোগ ও আন্দোলনের ফলে সতীদাহ প্রথা নিবারিত হলেও বিধবাদের ভবিষ্যতের বিষয়টি তখনও ছিল প্রশ্নের সম্মুখীন। এ ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা নেন করুণাসাগর বিদ্যাসাগর। তিনি পুনর্বিবাহের মাধ্যমে বিধবাদের অন্ধকারময় জীবনে আশাকিরণ সঞ্চারকে তাঁর জীবনের অন্যতম ব্রত রূপে গ্রহণ করেন।

বিধবা বিবাহ আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের অবদান –

বিধবা বিবাহের সপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে বিদ্যাসাগর ‘সর্বশুভকরী’, ‘সংবাদ প্রভাকর’, ‘তত্ত্ববোধিনী প্রভৃতি পত্রিকায় প্রথমে লেখনী ধারণ করেন। পরে 1855 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ‘বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। ‘পরাশর সংহিতা’ থেকে উদ্ধৃতি তুলে বিদ্যাসাগর প্রমাণ করেন – বিধবা বিবাহ সম্পূর্ণভাবে শাস্ত্রসম্মত।

বিদ্যাসাগর বিধবার পুনর্বিবাহ নিয়ে আন্দোলন শুরু করলে তাঁর বিরোধিতায় নেমে পড়েন শোভাবাজার রাজবাড়ির রাধাকান্ত দেব ও তাঁর ধর্মসভা। বিদ্যাসাগরের বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এসময় তারা কমপক্ষে 30টি পুস্তিকা প্রকাশ করেন।

বিরোধী শিবিরের রাজা রাধাকান্তও চুপচাপ বসে রইলেন না। তিনি বিদ্যাসাগরের বিরোধিতা করে বিধবা বিবাহের বিরুদ্ধে 36,763 জনের স্বাক্ষরিত এক দরখাস্ত সরকারের কাছে পাঠালেন।

শেষপর্যন্ত রাধাকান্ত দেব ও রক্ষণশীলদের বিরোধিতা সত্ত্বেও বড়োলাট ক্যানিং 1856 খ্রিস্টাব্দে 26 জুলাই 15 নং রেগুলেশন জারি করে বিধবা বিবাহকে আইনসিদ্ধ করেন।

বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবা বিবাহ আন্দোলনের বিদ্যাসাগর কতটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন?

বিদ্যাসাগরের সাফল্যের মূল্যায়ন –

রক্ষণশীল ভারতবর্ষে বিধবা বিবাহ সংক্রান্ত আন্দোলন সংগঠন এবং এ বিষয়ে সরকারের আইন পাস এমনিতেই বিদ্যাসাগরের এক বড়ো সাফল্য। তবে কেবল আইন পাস করিয়েই নয়, বিধবা বিবাহকে বাস্তবে কার্যকরী করতেও তিনি উদ্যোগী হন। রক্ষণশীলদের শতবিরোধিতা সত্ত্বেও বিদ্যাসাগরের অদম্য চেষ্টায় 1856 খ্রিস্টাব্দে 7 ডিসেম্বর কলকাতার রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে বিধবা বিবাহের প্রথম আসর বসে। পাত্র সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক তথা বিদ্যাসাগরের সহকর্মী শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন, পাত্রী বর্ধমানের কালীমতি দেবী। পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে বিদ্যাসাগর নিজ ব্যয়ে মোট 60টি বিধবা বিবাহের আয়োজন করেন। এমনকি, নিজের পুত্র নারায়ণচন্দ্রের সঙ্গে ভবসুন্দরী নামক এক অষ্টাদশীর বিবাহ দেন। দরিদ্র বিধবাদের বিবাহের জন্য 1872 খ্রিস্টাব্দে তিনি গঠন করেন ‘হিন্দু ফ্যামিলি অ্যানুইটি ফান্ড’। স্বয়ং বিদ্যাসাগরের পরিভাষায় – ‘বিধবা বিবাহ প্রথা প্রবর্তন আমার জীবনের প্রধান সৎকর্ম।’

বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলনে প্রভাবিত হয়ে দক্ষিণ ভারতের সমাজ সংস্কারক বিরসালিঙ্গম পান্তুলু বিধবা বিবাহকে জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে ‘বিধবা বিবাহ সমিতি’ গড়ে তোলেন। এই কাজের জন্য তিনি ‘দক্ষিণ ভারতের বিদ্যাসাগর’ নামে অভিহিত করেন।

মূল্যায়ন –

পরিশেষে বলা যায়, বিধবা বিবাহের ব্যাপক সাফল্য আসত এর সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ও প্রসারের মাধ্যমে, কিন্তু রক্ষণশীলদের বিরোধিতায় বিধবা বিবাহের তেমন কোন প্রসার ঘটেনি। এমনকি বর্তমানেও বিধবা বিবাহ সমাজের চোখে অনেকটাই ব্রাত্য।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বিদ্যাসাগর কেন বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন?

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দেখেছিলেন যে হিন্দু সমাজে বিধবাদের জীবন অত্যন্ত কষ্টকর ও অমানবিক। তারা সমাজে নিগৃহীত হতেন এবং পুনর্বিবাহের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। বিদ্যাসাগর বিধবাদের এই দুঃখময় জীবন থেকে মুক্তির জন্য বিধবা বিবাহের প্রচলনকে তাঁর জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন।

বিধবা বিবাহ আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের প্রধান অবদান কী ছিল?

তিনি “বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব” (1855) নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে শাস্ত্রীয় প্রমাণ দেন যে বিধবা বিবাহ বৈধ।
সংবাদপত্র ও পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে জনমত গঠন করেন।
1856 সালে বিধবা বিবাহ আইন (15 নং রেগুলেশন) পাস করাতে সফল হন।
নিজে 60টি বিধবা বিবাহের আয়োজন করেন এবং আর্থিক সহায়তা দেন।

বিধবা বিবাহ আইন কবে পাশ হয়?

1856 সালের 26 জুলাই লর্ড ক্যানিং-এর শাসনামলে 15 নং রেগুলেশন পাস হয়, যা বিধবা বিবাহকে বৈধতা দেয়।

বিধবা বিবাহ আন্দোলনের বিরোধিতা কারা করেছিল?

1. রাধাকান্ত দেব (শোভাবাজার রাজবাড়ি) ও তাঁর ধর্মসভা
2. রক্ষণশীল পণ্ডিতরা, যারা শাস্ত্রের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিরোধিতা করেছিলেন।
3. রাধাকান্ত দেব সরকারের কাছে 36,763 জনের স্বাক্ষরযুক্ত একটি পিটিশন জমা দেন।

প্রথম বিধবা বিবাহ কবে ও কার মধ্যে হয়েছিল?

7 ডিসেম্বর, 1856 তারিখে কলকাতায় শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন (সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক) ও কালীমতি দেবী (বর্ধমানের এক বিধবা) -এর মধ্যে প্রথম বিধবা বিবাহ হয়।

বিদ্যাসাগর নিজের পরিবারে কোনো বিধবা বিবাহ দিয়েছিলেন কি?

হ্যাঁ, বিদ্যাসাগর তাঁর পুত্র নারায়ণচন্দ্রের সঙ্গে ভবসুন্দরী নামে এক বিধবার বিবাহ দিয়েছিলেন।

বিদ্যাসাগর বিধবাদের সাহায্যের জন্য কোন তহবিল গঠন করেছিলেন?

“হিন্দু ফ্যামিলি অ্যানুইটি ফান্ড” (1872), যা দরিদ্র বিধবাদের আর্থিক সহায়তা দিত।

বিদ্যাসাগরকে ‘দক্ষিণ ভারতের বিদ্যাসাগর’ কাকে বলা হয়?

বিরসালিঙ্গম পান্তুলু -কে, যিনি দক্ষিণ ভারতে বিধবা বিবাহ আন্দোলন চালিয়েছিলেন।

বিধবা বিবাহ আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

এটি ছিল নারী অধিকার ও সামাজিক সংস্কারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা ভারতীয় সমাজে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছিল। যদিও সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে এটি পূর্ণ সাফল্য পায়নি, তবুও এটি পরবর্তী নারী মুক্তি আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করেছিল।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবা বিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। বিদ্যাসাগর কতটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবা বিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। বিদ্যাসাগর কতটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন