হিমালয় পর্বতমালা কেবল একটি প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়, বরং ভারতের জনজীবনেও এর গভীর প্রভাব রয়েছে। এই বিশাল পর্বতমালা ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, জলবায়ু, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতি সহ বিভিন্ন দিক থেকে ভারতীয় জনগোষ্ঠীর জীবনকে প্রভাবিত করে।
দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য “ভারতীয় জনজীবনে হিমালয়ের প্রভাব” একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রবন্ধে, আমরা এই প্রশ্নের একটি বিস্তারিত উত্তর প্রদান করব যা আপনাকে পরীক্ষায় ভালো করতে সাহায্য করবে।
হিমালয় পর্বতমালা বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতমালা এবং ভারতের উত্তরে অবস্থিত। এই মহান পর্বতমালা ভারতের ভূগোল এবং জলবায়ুকে প্রভাবিত করে, এবং এর ফলে ভারতীয় জনজীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।
ভারতীয় জনজীবনে হিমালয়ের প্রভাব –
ভারতের জনজীবনে হিমালয়ের গুরুত্ব অপরিসীম —
জলবায়ুগত প্রভাব –
- এই পর্বতমালা ভারতের উত্তর ও পূর্বদিকে প্রাকৃতিক প্রাচীরের (natural barrier) মতো বিরাজ করায় শীতকালে মধ্যএশিয়ার তীব্র ঠান্ডা বায়ুকে ভারতে প্রবেশ করতে বাধা দেয়, এজন্য উত্তর ভারত প্রচণ্ড ঠান্ডা থেকে রক্ষা পায়।
- গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয়ে বাধা পায় বলে সারা ভারতে বৃষ্টিপাত হয়।
ভূমিরূপগত প্রভাব –
- সুউচ্চ হিমালয়ের বিভিন্ন হিমবাহ থেকে গঙ্গা, যমুনা, তিস্তা প্রভৃতি বহু বরফগলা জলে পুষ্ট নদীর সৃষ্টি হয়েছে। এইসব নদী পার্বত্য প্রবাহে বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূমিরূপ গঠন করেছে, যেমন — গিরিখাত, জলপ্রপাত প্রভৃতি।
- হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে পলি বয়ে এনে নদীগুলি উত্তর ভারতে বিস্তীর্ণ উর্বর সমভূমির সৃষ্টি করেছে। ফলে এই সমভূমি অঞ্চলে কৃষিকার্য ও পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এখানে জনবসতির ঘনত্ব বেশি।
অর্থনৈতিক প্রভাব –
- পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলি খরস্রোতা এবং সারাবছর বরফগলা জল পায় বলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী।
- পশ্চিম হিমালয়ের বিক্ষিপ্ত অল্পবিস্তৃত তৃণভূমিগুলি মেষপালন এবং বিস্তীর্ণ সরলবর্গীয় অরণ্যগুলি কাষ্ঠ সম্পদের জন্য বিখ্যাত।
- পার্বত্য ঢালে প্রচুর পরিমাণে ভেষজ উদ্ভিদ, চা, সিঙ্কোনা এবং বিভিন্ন ফল (আপেল, কমলালেবু প্রভৃতি) উৎপন্ন হয়।
- এখানকার জলবায়ু সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি (যেমন — ঘড়ি), শাল, কার্পেট, সূক্ষ্ম কারুশিল্প ও মৃৎশিল্প নির্মাণের পক্ষে বিশেষভাবে উপযোগী।
- হিমালয়ের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক আসেন যা হোটেল শিল্প তথা পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছে।
সাংস্কৃতিক প্রভাব –
- পার্বত্য অঞ্চলে পৃথক পৃথক সামাজিক গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। এদের প্রত্যেকের নিজস্ব ঐতিহ্যবিশিষ্ট সভ্যতা গড়ে উঠেছে।
- প্রাচীনকাল থেকেই হিমালয় পর্বতমালা প্রাচীরের মতো অবস্থান করে বহিঃশত্রুর হাত থেকে ভারতকে রক্ষা করে এসেছে (কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া), যা ভারতের নিজস্ব সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য গড়ে তুলতে ও বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।
আরও পড়ুন –
- পূর্ব হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো
- পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো
- উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও
হিমালয় পর্বতমালা ভারতের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ। এই পর্বতমালা ভারতের ভূগোল, জলবায়ু, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।