এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বারাসাত বিদ্রোহ বলতে কী বোঝো? বারাসাত বিদ্রোহের প্রকৃতি বিশ্লেষণের করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বারাসাত বিদ্রোহ বলতে কী বোঝো? বারাসাত বিদ্রোহের প্রকৃতি বিশ্লেষণের করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বারাসাত বিদ্রোহ বলতে কী বোঝো?
বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রবর্তক তিতুমির 24 পরগণার বারাসাত-বসিরহাট অঞ্চলের নারকেলবেড়িয়া গ্রামে তার প্রধান কর্মকেন্দ্র স্থাপন করে স্থানীয় জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে দরিদ্র হিন্দু ও মুসলমান কৃষকদের সংগঠিত করেন এবং শোষকের মদতদাতা ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি নিজেকে ওই অঞ্চলের ‘বাদশাহ্’ বলে ঘোষণা করেন। এটি বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
বারাসাত বিদ্রোহের প্রকৃতি বিশ্লেষণের করো।
1831 খ্রিস্টাব্দে তিতুমীরের নেতৃত্বে সংগঠিত বারাসাত বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ দেখা যায়।
ধর্মীয় আন্দোলন –
ইসলামের পুনরুজ্জীবন ও ইসলামের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় আন্দোলন হিসাবে বারাসত বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার, বিহারীলাল সরকার, কুমুদরঞ্জন মল্লিক প্রমুখ ঐতিহাসিকরা একে এক উগ্র ধর্মীয় সাম্প্র-দায়িক আন্দোলন বলে উল্লেখ করেছেন। ডঃ ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত এই বিদ্রোহকে হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সংগঠিত আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন।
জমিদার বিরোধী আন্দোলন –
পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের সঙ্গে তিতুমীরের সংঘর্ষ হয়। মুসলিমদের সঙ্গে নিম্নবর্গের হিন্দুরাও জমিদারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সামিল হয়েছিল। তাই বারাসাত বিদ্রোহকে জমিদার বিরোধী এবং অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন বলে ঐতিহাসিক হান্টার, থর্নটন প্রমুখ মন্তব্য করেছেন।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন –
ঐতিহাসিক নরহরি কবিরাজ ও কেয়ামুদ্দিন আহমেদ এই বিদ্রোহকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন বলে মনে করেন। বারাসাত বিদ্রোহ ছিল নীলকর ও ব্রিটিশ বণিকদের বিরুদ্ধে। ডঃ বিনয়ভূষণ চৌধুরীর মতে বারাসাত বিদ্রোহ ছিল কৃষক বিদ্রোহ। বারাসাত-বসিরহাট অঞ্চলে স্বল্প সময়ের জন্য ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে ও কৃষক শ্রেণির মানুষ ক্ষমতা দখল করে। ডঃ শশীভূষণ চৌধুরীর অভিমত ‘এই আন্দোলন ছিল প্রবলভাবে ব্রিটিশ বিরোধী।’
নিম্নবর্গের শ্রেণি সংগ্রাম –
তিতুমীরের আহ্বানে নিম্নবর্গের সাধারণ মানুষ শোষণ ও নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে জাতীয় ভাবাবেগে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই লড়াইয়ে সামিল হয়েছিল। সেই কারণে ঐতিহাসিক রনজিৎ গুহ বারাসাত বিদ্রোহকে নিম্নবর্গের শ্রেণি সংগ্রাম বলে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে ‘এই আন্দোলন ছিল নিম্নবর্গের মানুষের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও মর্যাদা রক্ষার লড়াই।’
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বারাসাত বিদ্রোহ কী?
বারাসাত বিদ্রোহ ছিল তিতুমীরের নেতৃত্বে সংগঠিত একটি কৃষক-বিদ্রোহ (1831 খ্রিস্টাব্দে), যা মূলত ব্রিটিশ শাসন, জমিদার ও নীলকরদের শোষণের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল। তিতুমীর 24 পরগনার বারাসাত-বসিরহাট অঞ্চলে নারকেলবেড়িয়া গ্রামে তার কেন্দ্র স্থাপন করে দরিদ্র কৃষকদের সংগঠিত করেন।
বারাসাত বিদ্রোহের নেতা কে ছিলেন?
এই বিদ্রোহের প্রধান নেতা ছিলেন তিতুমীর (মীর নিসার আলী), যিনি বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বারাসাত বিদ্রোহের কারণ কী ছিল?
বারাসাত বিদ্রোহের কারণগুলি হল –
1. জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচার,
2, ব্রিটিশ শাসনের শোষণমূলক নীতি
3. ধর্মীয় ও সামাজিক নিপীড়ন (হিন্দু জমিদারদের দ্বারা মুসলিম কৃষকদের ওপর কর চাপানো),
4. কৃষকদের অর্থনৈতিক দুর্দশা।
বারাসাত বিদ্রোহের প্রকৃতি কী ছিল?
এই বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে –
1. ধর্মীয় আন্দোলন – কিছু ঐতিহাসিক একে ইসলামিক পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন বলে মনে করেন।
2. জমিদার-বিরোধী আন্দোলন – জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়েছিল।
3. ব্রিটিশ-বিরোধী সংগ্রাম – ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধগুলোর মধ্যে একটি।
4. নিম্নবর্গের শ্রেণি সংগ্রাম – দরিদ্র কৃষক ও শোষিত মানুষের সংঘর্ষ।
বারাসাত বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল?
বারাসাত বিদ্রোহের ফলাফলগুলি হল –
1. ব্রিটিশ সেনাবাহিনী তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা (যা তিনি প্রতিরক্ষার জন্য তৈরি করেছিলেন) ধ্বংস করে।
2. তিতুমীর ও তার অনেক অনুগামী নিহত হন।
3. বিদ্রোহ দমন করা হলেও এটি পরবর্তীকালে কৃষক ও স্বাধীনতা আন্দোলনকে প্রেরণা দেয়।
বারাসাত বিদ্রোহ কবে সংঘটিত হয়েছিল?
এই বিদ্রোহ 1831 খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়েছিল।
তিতুমীর কেন বিখ্যাত?
তিতুমীর বিখ্যাত কারণ –
1. তিনি ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিলেন।
2. তিনি বাঁশের কেল্লা তৈরি করে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।
3. তিনি দরিদ্র কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।
বারাসাত বিদ্রোহ কি ধর্মীয় বিদ্রোহ ছিল?
কেউ কেউ একে ধর্মীয় আন্দোলন বলে মনে করেন, আবার অনেকে মনে করেন এটি ছিল মূলত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম।
বারাসাত বিদ্রোহের গুরুত্ব কী?
বারাসাত বিদ্রোহের গুরুত্বগুলি হল –
1. এটি ছিল বাংলার প্রথম সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহগুলোর মধ্যে একটি।
2. এটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ তৈরি করেছিল।
3. পরবর্তীকালে সিপাহী বিদ্রোহ (1857) ও অন্যান্য কৃষক আন্দোলনে এর প্রভাব দেখা যায়।
তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা কী ছিল?
তিতুমীর ও তার অনুসারীরা নারকেলবেড়িয়ায় বাঁশের একটি দূর্গ তৈরি করেছিলেন, যা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বারাসাত বিদ্রোহ বলতে কী বোঝো? বারাসাত বিদ্রোহের প্রকৃতি বিশ্লেষণের করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বারাসাত বিদ্রোহ বলতে কী বোঝো? বারাসাত বিদ্রোহের প্রকৃতি বিশ্লেষণের করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।