এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উনিশ শতকে লেখায় ও রেখায় ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “উনিশ শতকে লেখায় ও রেখায় ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

উনিশ শতকে লেখায় ও রেখায় ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো।
ভূমিকা –
উনিশ শতকের ভারতীয় জাতীয়তাবোধের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বিভিন্ন লেখক (লেখায়) ও চিত্রশিল্পী (রেখায়)। এ বিষয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গোরা’ স্বামী বিবেকানন্দের ‘বর্তমান ভারত’ এবং গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’ চিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।
লেখায় ও রেখায় জাতীয়তাবাদের বিকাশ
বঙ্কিমচন্দ্রের “আনন্দমঠ” উপন্যাস এর ভূমিকা –
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা আনন্দমঠ জাতীয়তাবাদী আদর্শ স্বদেশিকতার বীজমন্ত্র ছিল। বঙ্গদর্শন পত্রিকায় তিনি ‘বন্দেমাতারাম’ সংগীতটি প্রকাশ করেন, যা পরে ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে যুক্ত হয়। 1882 খ্রিস্টাব্দে তার ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে যুবসমাজকে পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচনের জন্য জাতীয়তাবোধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে বঙ্কিমচন্দ্র।
স্বামী বিবেকানন্দের “বর্তমান ভারত” এর অবদান –
স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর বর্তমান ভারত নামক গ্রন্থে ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে এক উচ্চ অধ্যাত্মিক আদর্শে উন্মীত করেন। বিবেকানন্দের মতে স্বদেশ প্রেম ও মানব প্রেমের সমন্বিত রূপ হল জাতীয়তাবাদ। উপনিবেশদের ঋষির মত বেদান্তবাদী বিবেকানন্দ তার বর্তমান ভারত গ্রন্থে ভারতবাসীকে নতুন করে জেগে ওঠার আহ্বান জানান। বর্তমান ভারত গ্রন্থে তিনি বলেন – “হে ভারত ভুলিওনা – তুমি জন্ম হইতেই মায়ের জন্য বলিপ্রদত্ত, ভুলিওনা নীচ জাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজত, মুচি, মেথর তোমার রক্ত তোমার ভাই।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “গোরা” উপন্যাসের অবদান –
গোরা উপন্যাসটির মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ জাতিভেদের দ্বারা অস্পৃশ্যতা দ্বারা কলঙ্কিত ভারতীয় সমাজে সমন্বয়ের আদর্শ তুলে ধরে ভারতবাসীকে ভারতীয়তা বোধে উদ্দীপ্ত করে তোলেন। ভারতীয় সংস্কৃতি উদার ধর্মনিরপেক্ষতা, নিঃসঙ্গ, ব্রাহ্মণ্য মহিলা, সার্মভৌম সর্বোপরি শান্ত-সত্য-নিষ্ঠা প্রভৃতি তুলে ধরেন। এই উপন্যাসের মাধ্যমে দেশবাসীকে তিনি জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত করে তোলার চেষ্টা করেন।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “ভারতমাতা” চিত্রের অবদান –
জাতীয়তাবাদীর চেতনায় উদ্বুদ্ধ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতমাতা চিত্রটির মাধ্যমে বিশ শতকে জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার ঘটান। 1902 খ্রিস্টাব্দে অঙ্কিত বঙ্গমাতা চিত্রটি স্বদেশী আন্দোলনের আবহে 1905 খ্রিস্টাব্দে ভারতমাতারূপে খ্যাতি লাভ করে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই আনন্দময়ীকেই রূপ দিলেন বঙ্গমাতা রূপে এবং তা পরবর্তীতে ভারতমাতা হিসেবে ভারতীয়দেরকে জাতীয়তাবাদ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ভারত মাতা হয়ে উঠেন ভারতের প্রতিচ্ছবি।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের “বঙ্গচিত্র” এর অবদান –
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যামূলক ব্যঙ্গচিত্রগুলির মাধ্যমে ঔপনিবেশিক সমাজ ব্যবস্থার সমালোচনার করেছিলেন। অদ্ভুতলোক, বিরূপ বজ্র, নব হুল্লোড়, ইত্যাদি এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
মূল্যায়ন –
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে উনবিংশ শতাব্দীতে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশের দেশীয় লেখক সাহিত্যিক এবং চিত্রশিল্পী ও ব্যঙ্গচিত্রশিল্পীরা তাদের সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে জাতীয়তাবাধ জাগ্রত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটি কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা সৃষ্টি করেছিল?
বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’ (1882) উপন্যাসে ‘বন্দেমাতরম’ সংগীতটি অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা পরবর্তীতে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেরণাদায়ী মন্ত্রে পরিণত হয়। এই উপন্যাসে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের কাহিনীর মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের আদর্শ ফুটে উঠেছিল, যা তরুণদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগিয়ে তোলে।
স্বামী বিবেকানন্দের ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটি কী বার্তা দিয়েছিল?
স্বামী বিবেকানন্দের ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থে তিনি ভারতীয়দের আত্মবিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক শক্তির উপর জোর দেন। তিনি বলেছিলেন, “হে ভারত, ভুলিও না—তোমার রক্তে সকলেই সমান,” যা জাতীয় ঐক্য ও সাম্যবাদের বার্তা দেয়। তাঁর রচনা ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত করেছিল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গোরা’ উপন্যাসে জাতীয়তাবাদ কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে?
রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ উপন্যাসে জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতা ও ধর্মীয় সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে ভারতীয় সমাজের ঐক্য ও উদারনৈতিক আদর্শ ফুটে উঠেছে। এই উপন্যাসে ভারতীয় সংস্কৃতির গৌরব ও মানবতাবাদী দর্শন তুলে ধরা হয়েছে, যা জাতীয়তাবাদী চিন্তাকে প্রসারিত করে।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি কীভাবে জাতীয়তাবাদী প্রতীক হয়ে উঠেছিল?
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’ (1905) চিত্রটি ভারতকে একজন দেবীর রূপে চিত্রিত করে, যা স্বদেশী আন্দোলনের সময় জাতীয়তাবাদের শক্তিশালী প্রতীকে পরিণত হয়। এই চিত্রটি ভারতীয়দের মধ্যে দেশাত্মবোধ ও ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্রগুলি কীভাবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিল?
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের অন্যায়, শোষণ ও ভারতীয় সমাজের কুসংস্কারের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর ‘অদ্ভুতলোক’, ‘বিরূপ বজ্র’ প্রভৃতি চিত্রমালা ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সাহায্য করেছিল।
উনিশ শতকের সাহিত্য ও শিল্পে জাতীয়তাবাদের মূল বার্তা কী ছিল?
এই সময়ের সাহিত্য ও শিল্পে জাতীয়তাবাদের মূল বার্তা ছিল –
1. স্বদেশপ্রেম ও ঐক্য (বন্দেমাতরম, ভারতমাতা),
2. ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা (ব্যঙ্গচিত্র, আনন্দমঠ),
3. ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গৌরব (গোরা, বর্তমান ভারত),
4. সামাজিক সংস্কার ও মানবতাবাদ (রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উনিশ শতকে লেখায় ও রেখায় ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “উনিশ শতকে লেখায় ও রেখায় ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।