এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো।
প্রাক্-মহাবিদ্রোহ পর্বে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংঘটিত অসংখ্য কৃষক-উপজাতি বিদ্রোহগুলির মধ্যে সম্ভবত সর্বাপেক্ষা ব্যাপক, বিস্তৃত তথা রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহ ছিল 1855-1856 খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ। নিরীহ, নির্বিবাদী সাঁওতালদের বিদ্রোহী হয়ে ওঠার পশ্চাতে ছিল একাধিক কারণ।
সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ –
ভূমিরাজস্বের চাপ বৃদ্ধি –
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের ফলে সাঁওতালদের নিজস্ব বাসভূমি ‘দামিন-ই-কোহ্’ অঞ্চল ব্রিটিশের খাজনা বলয়ের অন্তলক্ষ হয়। স্বাভাবিক পরিণামে সাঁওতালদের উপর আরোপিত হয় মাত্রাতিরিক্ত রাজস্বের চাপ। মধ্যস্বত্বভোগীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাঁওতালরা তাই বিদ্রোহকেই সমীচীন মনে করে।
মহাজনী শোষণ –
মহাজন নামে পরিচিত বহিরাগত সুদের কারবারীরা অজ্ঞ সাঁওতালদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তাদের চড়া সুদে ঋণ দিয়ে এবং চুক্তিপত্রে তদুপেক্ষা চড়া হারের উল্লেখ করে জন্মান্তরব্যাপী তাদেরকে শোষণের এক ঢালাও বন্দোবস্ত সুসম্পন্ন করতেন। মহাজনী ঋণের এই জন্মান্তর বিস্তৃত জাল ছিন্ন করে বেড়িয়ে আসার উদগ্র বাসনা সাঁওতালদের বিদ্রোহের পথে পরিচালিত করেছিল।
রেল-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের নির্যাতন –
রেল নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারী ও ঠিকাদাররা ‘দামিন-ই-কোহ’ তে এসে অত্যাচার, অবিচার শুরু করে। সাঁওতাল রমণীদের সম্ভ্রমও তাদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে রক্ষা পায়নি। স্বাভিমানী সাঁওতালরা তাই বিদ্রোহকেই হাতিয়ার স্বরুপ বেছে নেয়।
ব্যবসায়ীদের কারচুপি –
বহিরাগত অসাধু ব্যবসায়ীরা সাঁওতালদের সরলতা ও অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে প্রায়শই তাদের ঠকাত। ‘কেনারাম’ নামক বাটখারা দিয়ে সঠিক ওজন অপেক্ষা বেশি দ্রব্য নিয়ে এবং ‘বেচারাম’ নামক বাটখারা দিয়ে সঠিক ওজন অপেক্ষা কম দ্রব্য দিয়ে সাঁওতালদের ঠকানো সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছিল। এই ব্যবসায়িক কারচুপি সাঁওতালদের কাছে ক্রমে পরিস্ফুট হতে থাকলে তারা আর মুখ বুজে তা মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না।
সাঁওতাল বিদ্রোহের অন্যান্য কারণ –
- নীলকরদের অত্যাচার;
- খ্রিস্টান মিশনারিগণ কর্তৃক বলপূর্বক সাঁওতালদের ধর্মান্তর করণের প্রচেষ্টা প্রভৃতি।

সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলাফল –
সাঁওতাল বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও এর সুদূরপ্রসা পরোক্ষ ফল ছিল লক্ষণীয়, যেমন –
প্রথমত, সাঁওতালরা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে নিজের এলাকায় বসবাস করতে পারে তার জন্য ঔপনিবেশিক সরকার সাঁওতালদের জন ‘সাঁওতাল পরগণা’ নামে একটি নতুন জেলা গঠন করে।
দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় মিশনারি ব্যতীত অন্যদের সাঁওতাল পরগণায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।
তৃতীয়ত, সুদের হার বেঁধে দেওয়া হয় এবং ছোটোনাগপুরের মতো এখানেও ঔপনিবেশিক আইন কার্যকরী হবে না বলে ঘোষণা করা হয়।
মূল্যায়ন –
ভারতের অগণিত কৃষক-উপজাতি বিদ্রোহের ভিড়ে সাঁওতাল বিদ্রোহ এক স্বতন্ত্র স্থানের অধিকারী। অধ্যাপক নরহরি কবিরাজ যথার্থই লিখেছেন – ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ আপসহীন গণসংগ্রামের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।’
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সাঁওতাল বিদ্রোহ কখন সংঘটিত হয়েছিল?
সাঁওতাল বিদ্রোহ 1855-1856 খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়েছিল।
সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রধান নেতারা কারা ছিলেন?
সিধু, কানু, চাঁদ ও ভাইরো ছিলেন এই বিদ্রোহের প্রধান নেতা।
সাঁওতাল বিদ্রোহের মূল কারণ কী ছিল?
সাঁওতাল বিদ্রোহের মূল কারণগুলি ছিল –
1. ব্রিটিশ ভূমিরাজস্ব নীতি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ,
2. মহাজনদের ঋণের জাল ও সুদের অত্যাচার,
3. রেলকর্মচারী ও ঠিকাদারদের অত্যাচার,
4. ব্যবসায়ীদের ওজনে কারচুপি,
5. নীলকর ও মিশনারিদের ধর্মান্তরের চেষ্টা।
দামিন-ই-কোহ কী?
এটি সাঁওতালদের আদি বাসভূমি, যা বর্তমান ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের কিছু অংশে অবস্থিত ছিল। ব্রিটিশরা এটিকে নিজেদের করদ রাজ্যে পরিণত করে।
সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল?
সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলাফলগুলি ছিল –
1. সাঁওতাল পরগণা জেলা গঠন (1855 সালে),
2. সাঁওতাল অঞ্চলে মহাজনদের শোষণ রোধে আইন প্রণয়ন,
3. মিশনারিদের কার্যকলাপ সীমিত করা,
4. স্থানীয় প্রশাসনে কিছু স্বায়ত্তশাসন দেওয়া।
সাঁওতাল বিদ্রোহ কি সফল হয়েছিল?
না, এটি সামরিকভাবে দমন করা হয়েছিল, কিন্তু এর ফলে ব্রিটিশ সরকার সাঁওতালদের জন্য বিশেষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়।
সাঁওতাল বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
এটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটি সংগঠিত উপজাতীয় বিদ্রোহ, যা পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কৃষক ও আদিবাসী সংগ্রামের প্রেরণা দেয়।
সাঁওতাল বিদ্রোহকে কোন বৃহত্তর বিদ্রোহের পূর্বসূরি বলা হয়?
এটি 1857 সালের মহাবিদ্রোহের (সিপাহী বিদ্রোহ) একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচিত হয়।
সাঁওতাল বিদ্রোহের অন্য নাম কী?
এটি “সাঁওতাল হুল” (হুল অর্থ বিদ্রোহ) নামেও পরিচিত।
সাঁওতাল বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ কী ছিল?
সাঁওতাল বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ –
1. ব্রিটিশদের আধুনিক অস্ত্র ও কৌশলের সামনে সাঁওতালদের আদিম অস্ত্রের পেরে ওঠা সম্ভব হয়নি,
2. সংগঠিত সামরিক কাঠামোর অভাব,
3. ব্রিটিশদের কূটনৈতিক ও সামরিক শক্তির কাছে পরাজয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।