এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “মুন্ডা বিদ্রোহ সর্ম্পকে আলোচনা করো। মুন্ডা বিদ্রোহকে ‘মুন্ডা বিপ্লব’ বললে কেন ভুল বলা হবে?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “মুন্ডা বিদ্রোহ সর্ম্পকে আলোচনা করো। মুন্ডা বিদ্রোহকে ‘মুন্ডা বিপ্লব’ বললে কেন ভুল বলা হবে?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

মুন্ডা বিদ্রোহ সর্ম্পকে আলোচনা করো।
ভূমিকা –
বর্তমান ঝাড়খন্ড রাজ্যের ছোটোনাগপুর ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায় বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে 1899-1900 খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ যে শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে তা সাধারণভাবে মুন্ডা বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ –
মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল –
- জমিতে মুন্ডাদের চিরাচরিত যৌথ মালিকানা ব্যবস্থা (খুঁৎকাঠি প্রথা) বাতিল করা,
- মুন্ডাদের নিজস্ব আইন, শাসন ও বিচার ব্যবস্থা বাতিল করা,
- মুন্ডাদের ওপর ভূমিরাজস্বের হার বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ধরনের নতুন কর আরোপ,
- মুন্ডা শ্রমিকদের বেগার শ্রমদানে বাধ্য করা,
- মুন্ডাদের জমিজমা বহিরাগত জমিদার ও মহাজনদের দ্বারা দখল,
- মুন্ডাদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরণ প্রভৃতি।
ক্ষোভের সূত্রপাত –
বিরসা এক নতুন ধর্ম প্রচার করে মুন্ডাদের ঐক্যবদ্ধ করেন। তিনি মুন্ডাদের খাজানা দিতে নিষেধ করেন এবং বিদেশিদের বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়ে এক স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন। এর ফলে তাঁকে দুই বছর (1895-1896 খ্রিস্টাব্দ) খ্রিস্টাব্দ জেলে থাকতে হয়।
বিদ্রোহের প্রসার –
বিরসা 1899 খ্রিস্টাব্দে এক সেনাদল গঠন করে নতুন উদ্যমে বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়েন। খুঁটি, রাঁচি, চক্রধরপুর, বুন্দু, তামার, তোরপা, কারা বাসিয়া প্রভৃতি স্থানে তারা গোপন ঘাঁটি গড়ে ওঠে। 1900 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বিদ্রোহ প্রবল আকার ধারণ করে। ইংরেজ কর্মচারী, পুলিশ, জমিদার, মহাজনদের পাশাপাশি থানা, গির্জা প্রভৃতির উপরও আক্রমণ চলে।
বিদ্রোহের অবসান –
প্রবল বিক্রমে লড়াই করেও বিদ্রোহী মুন্ডারা শেষপর্যন্ত আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ইংরেজ বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। বহু বিদ্রোহীর ফাঁসি বা কারাদণ্ড হয়। এভাবে বিদ্রোহ থেমে যায়। বিরসা মুন্ডার রাঁচি জেলে কলেরাই আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
উপসংহার –
মুন্ডা উপজাতিদের বিদ্রোহ ছিল এক অর্থে কৃষকবিদ্রোহ। দরিদ্র মুন্ডা কৃষকেরা ছিল এই বিদ্রোহের প্রধান চালিকাশক্তি। নরহরি কবিরাজও মুন্ডা বিদ্রোহকে কৃষকবিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন।
মুন্ডা বিদ্রোহকে ‘মুন্ডা বিপ্লব’ বললে কেন ভুল বলা হবে?
বিপ্লব শব্দটি যে দ্রুত, আমূল ও স্থায়ী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, 1899-1900 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সংঘটিত মুন্ডাদের সংগ্রামে তা অনুপস্থিত। মুন্ডাদের সংগ্রাম তাদের জীবন ধারায় কোনো মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারেনি এবং শেষ পর্যন্ত তা নিষ্ঠুরভাবে দমিত। হয়। বিদ্রোহের পর সরকার 1908 খ্রিস্টাব্দে ছোটোনাগপুর প্রজাস্বত্ত্ব আইন পাস করে মুন্ডাদের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলেও মুন্ডাদের বাসভূমি বহিরাগত ‘দিকু’দের হাত থেকে রেহাই পায়নি এবং চিরাচরিত ‘খুঁৎকাঠি’ প্রথাও তারা ফিরে পায়নি। তাদের ‘স্বাধীন মুন্ডারাজ্য’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নও বাস্তবায়িত হয়নি। তাই মুন্ডাদের সংগ্রামকে ‘বিপ্লব’ না বলে ‘বিদ্রোহ’ বলাই অধিকতর যুক্তিসংগত।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
মুন্ডা বিদ্রোহ কী?
মুন্ডা বিদ্রোহ ছিল 1899-1900 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসন ও জমিদারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের সংগ্রাম। বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে এই বিদ্রোহ বর্তমান ঝাড়খণ্ডের ছোটোনাগপুর অঞ্চলে সংঘটিত হয়।
মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি কী ছিল?
মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান কারণ –
1. মুন্ডাদের ঐতিহ্যবাহী খুঁৎকাঠি প্রথা (যৌথ জমি মালিকানা) বাতিল করা।
2. মুন্ডাদের স্বায়ত্তশাসন ও বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করা।
3. কর বৃদ্ধি ও নতুন শোষণমূলক নীতি চাপিয়ে দেওয়া।
4. মুন্ডাদের জমি জমিদার ও মহাজনদের দখলে চলে যাওয়া।
5. খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা জোরপূর্বক ধর্মান্তরণ।
বিরসা মুন্ডা কে ছিলেন?
বিরসা মুন্ডা ছিলেন মুন্ডা বিদ্রোহের নেতা। তিনি “ধরতি আবা” (পৃথিবীর পিতা) নামে পরিচিত। তিনি মুন্ডাদের ঐক্যবদ্ধ করে ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন এবং স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখান।
মুন্ডা বিদ্রোহ কীভাবে শুরু হয়?
বিরসা মুন্ডা 1895 সালে মুন্ডাদের কর না দেওয়ার আহ্বান জানান ও বিদেশিদের বিতাড়নের ডাক দেন। ফলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। 1899 সালে তিনি মুক্ত হয়ে পুনরায় বিদ্রোহ সংগঠিত করেন।
মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল?
মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফল –
1. ব্রিটিশ সেনাবাহিনী নিষ্ঠুরভাবে বিদ্রোহ দমন করে।
2. বহু মুন্ডা বিদ্রোহীর ফাঁসি বা কারাদণ্ড হয়।
3. বিরসা মুন্ডা রাঁচি জেলে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন (1900)।
4. 1908 সালে ছোটোনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন পাস হলেও মুন্ডাদের অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি।
মুন্ডা বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
মুন্ডা বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব –
1. এটি ছিল আদিবাসী স্বাধিকার আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
2. পরবর্তীতে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে আদিবাসী সংগ্রামের প্রেরণা যুগিয়েছে।
3. সরকারকে আদিবাসী অঞ্চলের আইন-কানুন পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করে।
খুঁৎকাঠি প্রথা কী?
এটি ছিল মুন্ডাদের যৌথ জমি মালিকানার প্রথা, যেখানে সম্প্রদায়ের সদস্যদের জমিতে সমান অধিকার থাকত। ব্রিটিশ ও জমিদাররা এই ব্যবস্থা ভেঙে দেয়।
মুন্ডা বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ কী?
মুন্ডা বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ –
1. ব্রিটিশদের আধুনিক অস্ত্র ও সেনাশক্তি।
2. মুন্ডাদের সংগঠিত সামরিক কৌশলের অভাব।
3. অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রত্যক্ষ সমর্থন না থাকা।
মুন্ডা বিদ্রোহকে কৃষক বিদ্রোহ বলা হয় কেন?
কারণ এটি মূলত জমি, কর ও শোষণের বিরুদ্ধে দরিদ্র মুন্ডা কৃষকদের সংগ্রাম ছিল। নরহরি কবিরাজের মতো ঐতিহাসিকরাও এটিকে কৃষক বিদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “মুন্ডা বিদ্রোহ সর্ম্পকে আলোচনা করো। মুন্ডা বিদ্রোহকে ‘মুন্ডা বিপ্লব’ বললে কেন ভুল বলা হবে?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “মুন্ডা বিদ্রোহ সর্ম্পকে আলোচনা করো। মুন্ডা বিদ্রোহকে ‘মুন্ডা বিপ্লব’ বললে কেন ভুল বলা হবে?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।