দুদু মিঞা স্মরণীয় কেন? দুদু মিঞা স্মরণীয় হওয়ার কারণ আলোচনা করো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “দুদু মিঞা স্মরণীয় কেন? দুদু মিঞা স্মরণীয় হওয়ার কারণ আলোচনা করো। নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “দুদু মিঞা স্মরণীয় কেন? দুদু মিঞা স্মরণীয় হওয়ার কারণ আলোচনা করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

দুদু মিঞা স্মরণীয় কেন? দুদু মিঞা স্মরণীয় হওয়ার কারণ আলোচনা করো।

দুদু মিঞা স্মরণীয় কেন?

শরিয়ত উল্লাহের মৃত্যুর পর ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তার পুত্র মহম্মদ মুসিন, যিনি দুদু মিঞা নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি ছিলেন সুসংগঠক ও রাজনৈতিক চেতনার অধিকারী। তিনি সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তুলে, অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। তিনি গ্রাম্য বিবাদে ইংরেজদের আদালতে না গিয়ে সালিশীর ব্যবস্থা করেন এবং জমিদারদের করধার্য করার অধিকার অস্বীকার করেন।

দুদু মিঞা স্মরণীয় হওয়ার কারণ আলোচনা করো।

ভূমিকা –

ভারতে উনিশ শতকে মুসলিম সমাজের পুনরুজ্জীবন ও সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা ফরাজি আন্দোলনের জনক শরিয়ত উল্লাহের মৃত্যুর পর আন্দোলনের দায়িত্ব নেন তার পুত্র দুদু মিঞা। দুদু মিঞার নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন ধর্মীয়-সামাজিক আন্দোলন থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়।

দুদুমিঞা স্মরণীয় কারণ –

দুদু মিঞার প্রকৃত নাম মহম্মদ মহসীন। ইতিহাসে তিনি যেসব কারণে স্মরণীয় হয়ে আছেন, সেগুলি হল –

ফরাজী আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা –

দক্ষ সংগঠক ও প্রখর রাজনৈতিক চেতনা সম্পন্ন ব্যক্তি দুদু মিঞা ছিলেন বাংলার ফরাজি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। হাজি শরিয়ত উল্লাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দুদু মিঞা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।

আন্দোলনের প্রাণপুরুষ –

দুদু মিঞার নেতৃত্বেই পূর্ববঙ্গের অত্যাচারী জমিদার, নীলকর ও তাদের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ফরাজি আন্দোলন আরও সুসংহতভাবে পরিচালিত হয়। তার নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন ধর্মসংস্কার আন্দোলন থেকে ধর্মীয়-সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ নেয়।

দুদু মিঞার আহ্বান –

ফরাজী আন্দোলনে দুদুমিঞার তত্ব ছিল বৈপ্লবিক। তিনি বলতেন – জমি আল্লাহর দেন, তাই জমিদারের খাজনা আদায় করার করার কোনো অধিকার নেই। তিনি তার সমর্থকদের খাজনা না দেওয়া, ইংরেজদের অগ্রাহ্য করা এবং নীলচাষ না করার আহ্বান জানান।

ফরাজি-খিলাফত আন্দোলন –

দুদু মিঞা ফরাজি খিলাফত নামে একটি প্রশাসন গড়ে তোলেন। এই প্রশাসনের শীর্ষে ছিলেন তিনি স্বয়ং। তাঁকে বলা হত ওস্তাদ। আর তার সাহায্যকারীদের বলা হত খলিফা। প্রশাসনিক কার্যকে সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য তিনি সমগ্র পূর্ববঙ্গকে কয়েকটি অঞ্চল বা হল্কায় ভাগ করেন এবং প্রত্যেক হক্কায় একজন করে খলিফা নিযুক্ত করেন। দুদু মিঞার নির্দেশমতো নিজের এলাকার কৃষকদের সংগঠিত করা, জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং আসন্ন সংগ্রামের প্রস্তুতি হিসেবে অর্থ সংগ্রহ করা ছিল খলিফাদের প্রধান কাজ।

জমিদার ও নীলকরদের আক্রমণ –

দুদু মিঞা বাংলাদেশে তার প্রভাবিত অঞ্চলে ‘ফরাজ-ই-খিলাফৎ’ নামক এক প্রশাসন গঠন করেন এবং তাঁর প্রধান কার্যালয় ছিল বাহাদুরপুর। নীলকর ও জমিদারদের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র কৃষক তার নেতৃত্বে সমবেত হয়। অনুগামীদের নিয়ে তিনি অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের কাছারি ও কুঠিতে আক্রমণ চালাতেন।

মূল্যায়ন –

দুদু মিঞার সুযোগ্য নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন ধর্মীয়-সামাজিক আন্দোলন থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়। জমিদার ও নীলকরদের প্রচেষ্টায় 1857 খ্রিস্টাব্দে দুদু মিঞাকে ব্রিটিশ সরকার গ্রেপ্তার করে তাকে জেলে বন্দি করে। উচ্চতর আদালতের নির্দেশে তিনি ছাড়া পান।

কিন্তু মুক্তিলাভের পর নানারকম ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে 1862 খ্রিস্টাব্দে বাহাদুরপুরে মৃত্যুবরণ করেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ফরাজি আন্দোলন কী?

ফরাজি আন্দোলন ছিল বাংলার কৃষক ও মুসলিম সমাজের একটি ধর্মীয়-সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগ্রাম, যা ব্রিটিশ শাসন, জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে গড়ে উঠেছিল।

দুদু মিঞার সংগঠন কেমন ছিল?

তিনি সমগ্র পূর্ববঙ্গকে বিভিন্ন “হল্কা” (অঞ্চল) এ ভাগ করে প্রতিটিতে একজন “খলিফা” নিয়োগ দেন, যারা স্থানীয় কৃষকদের নেতৃত্ব দিতেন।

দুদু মিঞা কীভাবে ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরোধিতা করেন?

দুদু মিঞা ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরোধিতা করেন
1. তিনি কৃষকদের খাজনা না দেওয়ার আহ্বান জানান।
2. নীলকর ও জমিদারদের কাছারিতে আক্রমণ চালান।
3. ইংরেজ আদালতের পরিবর্তে গ্রাম্য সালিশি ব্যবস্থা চালু করেন।

দুদু মিঞার মৃত্যু কীভাবে হয়?

ব্রিটিশ সরকার তাকে 1857 সালে গ্রেপ্তার করে, কিন্তু পরে মুক্তি পেয়ে 1862 সালে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

দুদু মিঞার উত্তরাধিকার কী?

তিনি বাংলার কৃষক আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণা দিয়েছিলেন। তার আন্দোলন পরবর্তীতে নীল বিদ্রোহ ও অন্যান্য কৃষক আন্দোলনে প্রভাব ফেলে।

দুদু মিঞার প্রধান কেন্দ্রস্থল কোথায় ছিল?

তার প্রধান কার্যালয় ছিল ফরিদপুরের বাহাদুরপুরে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “দুদু মিঞা স্মরণীয় কেন? দুদু মিঞা স্মরণীয় হওয়ার কারণ আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “দুদু মিঞা স্মরণীয় কেন? দুদু মিঞা স্মরণীয় হওয়ার কারণ আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

দার কমিশন কী? দার কমিশন (1948 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল?

দার কমিশন কী? দার কমিশন (1948 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল?

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্রসমূহ