দশম শ্রেণি – বাংলা – সিন্ধুতীরে – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

সৈয়দ আলাওলের রচিত সিন্ধুতীরে কবিতাটি দশম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত একটি অনন্য সৃষ্টি। এটি একটি ভাবপ্রধান কবিতা। কবিতাটি পাঠকদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মূল্য বুঝতে শেখায়।

Table of Contents

দশম শ্রেণি – বাংলা – সিন্ধুতীরে – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

দিব্য পুরী সমুদ্র মাঝার। – কোন পুরীকে ‘দিব্য পুরী’ বলা হয়েছে? তাকে ‘দিব্য’ বলার কারণ কী?

দিব্য পুরী-র পরিচয় – সমুদ্রের ঢেউ পদ্মাবতীর মান্দাসকে যেখানে পৌঁছে দেয়, সেখানে জলের মধ্যে এক সুন্দর নগরী ছিল। সেটিকেই ‘দিব্য পুরী’ বলা হয়েছে।

দিব্য পুরী বলার কারণ – সেই পুরী দিব্য’, কারণ সেখানে মানুষের কোনো দুঃখকষ্ট ছিল না। সমুদ্রকন্যা পদ্মার নিজস্ব বিচরণক্ষেত্র সেই স্থানের ফলফুলে শোভিত প্রাকৃতিক শোভা ছিল অতুলনীয়। সেখানে বসবাস করা মানুষদের সকলেই ধর্ম মেনে চলত এবং সবসময় সদাচার করত। অর্থাৎ নৈতিক আদর্শের উচ্চতা সেই নগরীকে অলৌকিক মহিমা দিয়েছিল।

অতি মনোহর দেশ। – এই ‘মনোহর দেশে’-র সৌন্দর্যের পরিচয় দাও।

অথবা, ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতা অবলম্বনে দেশটির বর্ণনা দাও।
অথবা, কোন্ স্থানকে কেন মনোহর দেশ বলা হয়েছে?

মনোহর দেশ – পদ্মাবতীর মাঞ্জস সমুদ্রের ঢেউর দ্বারা জলের মধ্যে যে ‘দিব্য পুরী’-তে গিয়ে পৌঁছোয় তাকেই ‘মনোহর দেশ’ বলা হয়েছে।

মনোহর বলার কারণ – কবির বর্ণনানুসারে এই দিব্য পুরী অতি মনোহর। কেন-না সেখানে কোনো দুঃখকষ্ট নেই; আছে শুধু সত্যধর্ম এবং সদাচার। সেখানে আছে একটি পর্বত এবং নানা ফুলে ভরা অপূর্ব এক উদ্যান। সেখানকার গাছগুলিতে নানা ফল ও ফুলের সমারোহ। একদিকে প্রকৃতির শোভা, অন্যদিকে সুস্থ জীবনাদর্শ দেশটিকে মনোহর করে তুলেছিল।

সিন্ধুতীরে দেখি দিব্যস্থান। – সিন্ধুতীরে এই দিব্যস্থানে কে থাকেন? স্থানটিকে দিব্যস্থান বলা হয়েছে কেন?

দিব্যস্থানের বাসিন্দা – সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে সিন্ধুতীরের দিব্যস্থানে থাকেন সমুদ্রকন্যা পদ্মা।

দিব্যস্থান বলার কারণ – ‘দিব্যস্থান’ কথাটির অর্থ হল সুন্দর, মনোহর স্থান। সমুদ্রঘেরা এই স্থানটি খুব মনোহর। সেখানে দুঃখকষ্ট নেই। সত্য এবং সদাচার স্থানটিকে স্বর্গীয় মহিমা দান করেছে। সেখানে রয়েছে একটি পর্বত এবং সুরম্য এক উদ্যান। গাছগুলোতে বিচিত্র ফুল ও ফলের সমারোহ। তাই সবদিক থেকে সুন্দর হওয়ার কারণেই স্থানটিকে দিব্যস্থান বলা হয়েছে।

তথা কন্যা থাকে সর্বক্ষণ – মন্তব্যটির প্রসঙ্গ নির্দেশ করো। কন্যাটি কে? কোথায় সে সর্বক্ষণ থাকে?

প্রসঙ্গ – মান্দাস ভাসতে ভাসতে পদ্মাবতীকে যেখানে নিয়ে গিয়ে ফেলে, তা ছিল অত্যন্ত মনোহর এক দেশ। সেখানে বহুমূল্য রত্নে সাজানো এক প্রাসাদে পদ্মা থাকতেন। সেই প্রসঙ্গেই উক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

কন্যার পরিচয় – কন্যাটি হলেন সমুদ্রকন্যা পদ্মা।

পদ্মার বাসস্থান – আলোচ্য মনোহর দেশে যে রত্নসজ্জিত প্রাসাদ ছিল, সেই প্রাসাদেই পদ্মা সর্বক্ষণ থাকতেন।

মনেতে কৌতুক বাসি – কার মনে, কেন কৌতুকের উদয় হয়েছিল?

উদ্দিষ্ট জন – সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে সমুদ্রকন্যা পদ্মার মনে কৌতুকের উদয় হয়েছিল।

কৌতুকের উদয় হওয়ার কারণ – সমুদ্রকন্যা পদ্মা পিতৃগৃহে রাত কাটিয়ে সকালে সখীদের সঙ্গে নিয়ে সুরম্য উদ্যানে এসেছিলেন। হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ে সমুদ্রতীরে একটি ভেলা পড়ে রয়েছে। সেই ভেলার চারদিকে চার সখী-সহ অপূর্ব সুন্দরী এক কন্যা অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। নির্জন সমুদ্রতীরে এমন দৃশ্য দেখে পদ্মার মনে কৌতূহলের উদয় হয়েছিল।

রূপে অতি রম্ভা জিনি / নিপতিতা চেতন রহিত। – কার কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।

উদ্দিষ্ট জন – উল্লিখিত অংশে সমুদ্রতীরে অচেতন পদ্মাবতীর কথা বলা হয়েছে।

ব্যাখ্যা – সকালবেলা সমুদ্রকন্যা পদ্মা তাঁর সখীদের নিয়ে নিজের সুরম্য উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন। এইসময়ে সমুদ্রের ধারে একটি ভেলা পড়ে থাকতে দেখে কৌতূহলী হয়ে তিনি দ্রুত সেখানে আসেন। সেখানে পৌঁছে পদ্মা দেখেন, চারদিকে চার জন সখী পড়ে আছেন, আর মধ্যখানে এক অপরূপা কন্যা অচেতন হয়ে আছেন। তাঁর রূপের সৌন্দর্য এতটাই ছিল যে, তা স্বর্গের বিখ্যাত অপ্সরা রম্ভার সৌন্দর্যকেও পরাজিত করে।

বিস্মিত হইল বালা। — বালা কে? তাঁর বিস্ময়ের কারণ কী?

বালার পরিচয় – উল্লিখিত অংশে ‘বালা’ বলতে সমুদ্রকন্যা পদ্মার কথা বলা হয়েছে।

বিস্ময়ের কারণ – পদ্মা তাঁর সখীদের সঙ্গে নিয়ে সিন্ধুতীরে নিজের সুরম্য উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন। সেইসময় সমুদ্রের ধারে একটি ভেলা পড়ে থাকতে দেখে কৌতূহলী পদ্মা সেখানে যান এবং দেখেন যে, চারদিকে চার সখী-সহ এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। ওই মেয়েটির সৌন্দর্য স্বর্গের অপ্সরা রম্ভাকেও পরাজিত করে; তা দেখেই পদ্মা বিস্মিত হয়েছিলেন।

অনুমান করে নিজ চিতে। – কার, কোন্ অনুমানের কথা বলা হয়েছে আলোচনা করো।

উদ্দিষ্ট জন – উল্লিখিত অংশে সমুদ্রকন্যা পদ্মার অনুমানের কথা বলা হয়েছে।

অনুমানের বিষয় – সখীদের সঙ্গে সকালবেলা উদ্যানে যাবার সময় সমুদ্রকন্যা পদ্মা দেখেন সমুদ্রতীরে একটি মান্দাস পড়ে রয়েছে। সেখানে গিয়ে তিনি সখীদের মধ্যে অচেতন পদ্মাবতীকে দেখতে পান। তার সৌন্দর্য যেন স্বর্গের অপ্সরা রম্ভাকেও পরাজিত করবে। তার সেই রূপের বিস্তারে বিস্মিতা পদ্মা নানারকম অনুমান করতে থাকেন। তখন তাঁর মনে হয় যে, এ কোনো সাধারণ মানবী নয়, স্বর্গের নর্তকী বিদ্যাধরী যেন স্বর্গভ্রষ্ট হয়ে মাটিতে পড়ে রয়েছেন।

ইন্দ্রশাপে বিদ্যাধরি – কে কাকে ‘বিদ্যাধরি’ বলে অনুমান করেন? কেন এই অনুমান?

বিদ্যাধরি অনুমান – সমুদ্রকন্যা পদ্মা সমুদ্রতীরে অচেতন পদ্মাবতীকে দেখে তাঁকে ‘বিদ্যাধরি’ বলে অনুমান করেছেন।

অনুমানের কারণ – পিতৃপুরে রাত কাটিয়ে পদ্মা তাঁর সখীদের নিয়ে নিজের সুরম্য উদ্যানের দিকে আসছিলেন। সেই সময়ে সমুদ্রতীরে চার সখীর মধ্যে অচেতন অবস্থায় এক কন্যাকে তিনি দেখতে পান, যিনি আসলে সিংহল রাজকন্যা পদ্মাবতী। তাঁর রূপের সৌন্দর্য যেন স্বর্গের অপ্সরা রম্ভাকেও পরাজিত করে। এই সৌন্দর্যের কারণেই পদ্মার মনে হয়েছিল স্বর্গের গায়িকা বিদ্যাধরি যেন স্বর্গভ্রষ্ট হয়ে পৃথিবীতে এসে পড়েছেন।

অচৈতন্য পড়িছে ভূমিতে। – কে অচৈতন্য হয়ে ভূমিতে পড়েছিলেন? তাঁর অচৈতন্য হওয়ার কারণ কী?

উদ্দিষ্ট জন – সিংহল-রাজকন্যা এবং চিতোরের রানা রত্নসেনের পত্নী পদ্মাবতী অচৈতন্য হয়ে সমুদ্রতীরে পড়েছিলেন।

অচৈতন্য হওয়ার কারণ – রানা রত্নসেনের সঙ্গে পদ্মাবতী সমুদ্রপথে চিতোরে ফিরে যাচ্ছিলেন। সমুদ্রের ক্রোধের কারণে তাঁদের জলযান বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। কোনো রকমে একটি ভেলায় রত্নসেন এবং চার সখী-সহ পদ্মাবতী আশ্রয় নেন। কিন্তু সেই ভেলাও দু-খণ্ড হয়ে যায় এবং পদ্মাবতী রত্নসেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সামুদ্রিক ঝঞ্ঝার তাণ্ডবে এবং প্রাণহানির ভয়ে পদ্মাবতী জ্ঞান হারান।

বেথানিত হৈছে কেশ বেশ। – কার, কেন এরকম অবস্থা হয়েছিল?

উদ্দিষ্ট জন – সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে এরকম অবস্থা হয়েছিল পদ্মাবতীর।

বিপর্যস্ত অবস্থার কারণ – সিংহল-রাজকন্যা পদ্মাবতী স্বামী রত্নসেনের সঙ্গে চিতোরে ফিরছিলেন। সমুদ্রপথে তাঁদের জলযান বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। একটি কলার ভেলায় রত্নসেন, পদ্মাবতী ও চারজন সখী আশ্রয় নিলেও সেটি দু-খণ্ড হয়ে যায়। এর ফলে পদ্মাবতী সখী-সহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে রাজকন্যার চুল এলোমেলো হয়ে পড়ে এবং সাজসজ্জা নষ্ট হয়।

মোহিত পাইয়া সিন্ধু-ক্লেশ। — কার কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উদ্দিষ্ট জন – উল্লিখিত অংশে সিংহল-রাজকন্যা পদ্মাবতীর কথা বলা হয়েছে।

বিশ্লেষণ – সখীদের সঙ্গে উদ্যানে যাওয়ার সময় পদ্মা অচেতন পদ্মাবতীকে দেখেন। অপরিচিতা সুন্দরী কন্যাকে দেখে তাঁর মনে নানারকম ভাবনা জাগে। বিধ্বস্ত সেই কন্যার চোখ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে, তার বেশভূষাই বিপর্যয়ের প্রমাণ দেয়। তার চুল এবং পোশাক এলোমেলো। সমুদ্রকন্যা পদ্মা ভেবে নেন যে, প্রবল বাতাস হয়তো নৌকা ভেঙে দিয়েছে। সমুদ্রের জলে ভাসতে ভাসতে প্রবল কষ্টেই হয়তো মেয়েটি অচৈতন্য হয়ে আছে।

চিত্রের পোতলি সমা / নিপতিত মনোরমা – ‘মনোরমা’ কে? তিনি কোথায়, কেন নিপতিতা ছিলেন?

মনোরমা-র পরিচয় – সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে সিংহল-রাজকন্যা পদ্মাবতীকে ‘মনোরমা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

নিপতিতা হওয়ার স্থান ও কারণ – রানা রত্নসেনের সঙ্গে বিয়ের পর পদ্মারতী সমুদ্রপথে চিতোরে আসছিলেন। কিন্তু প্রবল ঝড়ে তাঁদের জাহাজ ডুবে যায়। কলার মান্দাসে আশ্রয় নিলেও শেষরক্ষা হয়নি। পদ্মাবতী রত্নসেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এরপর বিধ্বস্ত রাজকন্যা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সমুদ্রের তীরে অচৈতন্য অবস্থায় চার জন সখীপরিবেষ্টিত হয়ে পড়ে থাকেন তিনি।

চিত্রের পোতলি সমা – ‘পোতলি’ শব্দের অর্থ কী? কাকে চিত্রের পোতলির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এবং কেন?

পোতলি শব্দের অর্থ – ‘পোতলি’ শব্দের অর্থ পুতুল।

চিত্রের পোতলির সঙ্গে তুলনার কারণ – সমুদ্রতীরে অচেতন পদ্মাবতীকে পুতুলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তার অপরূপ সৌন্দর্য সমুদ্রকন্যা পদ্মাকে মুগ্ধ করেছিল। কখনও মনে হয়েছিল যে সেই সৌন্দর্য রম্ভাকেও পরাজিত করতে পারে। কখনও মনে হয়েছে ইন্দ্রের অভিশাপগ্রস্ত বিদ্যাধরি পৃথিবীতে এসে পড়েছেন। এই সৌন্দর্যের কারণেই তাঁকে ছবির পুতুলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

বিধি মোরে না কর নৈরাশ – কার প্রার্থনা? এমন প্রার্থনার কারণ কী?

প্রার্থনাকারী – উল্লিখিত প্রার্থনাটি করেছেন সমুদ্রকন্যা পদ্মা।

প্রার্থনার কারণ – সমুদ্রের তীরে অচৈতন্য পদ্মাবতীকে মান্দাসের উপরে দেখে পদ্মা সেই অপরূপ নারীর জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন যে, ভয়াবহ কোনো সামুদ্রিক বিপর্যয়ের জন্যই ওই নারীর এই অবস্থা। ছবির প্রতিমার মতো সুন্দরী সেই নারীর শ্বাস সামান্য পড়ছে। পদ্মা সেই নারীর প্রতি স্নেহার্দ্র হয়ে পড়েন। প্রার্থনা করতে থাকেন, বিধাতা যেন তাঁকে নিরাশ না করেন অর্থাৎ সেই কন্যাকে বাঁচিয়ে রাখেন।

বাহুরক কন্যার জীবন – এখানে বক্তা কোন্ কন্যার জীবনের কথা বলেছেন? উল্লিখিত কন্যাকে বক্তা কোথায়, কী অবস্থায় প্রথম দেখেছিলেন?

উদ্দিষ্ট কন্যা – সমুদ্রকন্যা পদ্মা এখানে সিংহলের রাজকন্যা এবং চিতোরের রাজবধূ পদ্মাবতীর জীবনের কথা বলেছেন।

উদ্দিষ্ট কন্যাকে প্রথম দেখা – পদ্মা পদ্মাবতীকে প্রথমে সমুদ্রতীরে চার সখী-সহ অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তখন পদ্মাবতী মরণাপন্ন, তাঁর পোশাক ও চুল এলোমেলো অবস্থায় ছিল। তাঁকে দেখে পদ্মার মনে হয়েছিল কোনো অপরূপ স্বর্গকন্যা শাপভ্রষ্টা হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। তখনও তাঁর শ্বাসবায়ু অল্প অল্প প্রবাহিত হচ্ছে দেখে সমুদ্রকন্যা পদ্মা রাজকন্যাকে বাঁচানোর জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন।

বাহুরক কন্যার জীবন – এ আকাঙ্ক্ষা কার? তিনি কীভাবে কন্যার জীবন রক্ষা করলেন?

যার আকাঙ্ক্ষা – সমুদ্রকন্যা পদ্মা এই আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন।

কন্যার জীবন রক্ষা – সমুদ্রকন্যা পদ্মা ঈশ্বরের কাছে অচেতন পদ্মাবতীর জীবন ফিরে আসার প্রার্থনা করেন এবং চিকিৎসায় উদ্যোগী হন। সখীদের আদেশ দিয়ে পদ্মাবতী এবং তাঁর চার সখীকে বসনাবৃত করে উদ্যানের মধ্যে নিয়ে যান। তারপরে আগুনের সেঁক দিয়ে, তন্ত্র-মন্ত্র মহৌষধের সাহায্যে চারদণ্ড সেবাযত্ন করে চার সখী-সহ পদ্মাবতীর চেতনা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হল এবং তাঁদের জীবন রক্ষা হল।

কৃপা কর নিরঞ্জন। – বক্তা কে? এই প্রার্থনার কারণ আলোচনা করো।

বক্তা – উল্লিখিত অংশের বক্তা সমুদ্রকন্যা পদ্মা।

প্রার্থনার কারণ – সমুদ্রতীরে অচেতন পদ্মাবতীকে দেখে সমুদ্রকন্যা পদ্মা অত্যন্ত সমব্যথী হয়ে ওঠেন। তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন যে, তিনি যেন তাঁকে নিরাশ না করেন, অর্থাৎ বিধাতা যেন ওই কন্যার প্রাণ রক্ষা করেন। পিতার পুণ্য আর তাঁর নিজের ভাগ্যবলে কন্যার জীবন ফিরে আসুক বলে পদ্মা প্রার্থনা করেন। ওই কন্যাকে সুস্থ করার জন্য যথাসাধ্য চিকিৎসা করবেন বলেও পদ্মা জানান। এভাবে এক প্রবল স্নেহের বশে তিনি পদ্মাবতীর জীবনের জন্য প্রার্থনা করেন।

সখী সবে আজ্ঞা দিল। — সখীদের কে, কী আজ্ঞা দিলেন?

আজ্ঞাদানকারী – সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে সমুদ্রকন্যা পদ্মা সখীদের আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

আজ্ঞার বিষয় – সামুদ্রিক ঝড়ে বিধ্বস্ত সিংহল-রাজকন্যা অচৈতন্য অবস্থায় সমুদ্রতীরে পড়ে আছেন। চার জন সখী তাঁকে ঘিরে রয়েছে। সুরম্য প্রাসাদ থেকে সমুদ্রকন্যা পদ্মা এই দৃশ্য দেখে অস্থির হলেন। তিনি তখনই রাজকন্যাকে উদ্ধার করে আনতে সখীদের নির্দেশ দিলেন শুকনো বস্ত্র দিয়ে তাঁর শরীর ঢেকে, আগুন জ্বেলে সর্বাঙ্গ সেঁকে দিতে বললেন। আর তন্ত্রমন্ত্র সহকারে মহৌষধ দিতে আজ্ঞা করলেন।

পঞ্চকন্যা পাইলা চেতন। — এখানে ‘পঞ্চকন্যা’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? তাঁরা কীভাবে চেতনা ফিরে পেয়েছিল?

পঞ্চকন্যা-র পরিচয় – এখানে ‘পঞ্চকন্যা’ বলতে পদ্মাবতী ও তাঁর চার সখীর কথা বলা হয়েছে।

চেতনা ফিরে পাওয়া – পদ্মার আদেশে তাঁর সখীরা অচেতন পদ্মাবতী ও তাঁর সখীদের দেহ বস্ত্রে ঢেকে উদ্যানের মধ্যে নিয়ে যান। তারপরে তন্ত্র-মন্ত্র-মহৌষধি সহযোগে তাদের মাথায় এবং পায়ে আগুনের সাহায্যে সেঁক দেওয়া হয়। এইভাবে চার দণ্ড বহু যত্ন-সহ চিকিৎসা করার ফলে চন্দ্রপ্রভা, রোহিণী, বিজয়া ও বিধুন্নলা এই চার সখী-সহ পদ্মাবতী প্রাণ ফিরে পান।।

শ্রীযুত মাগন গুণী — ‘মাগন’ কে?

উদ্ধৃতাংশের মাগন ছিলেন রোসাঙরাজ নরপদিগ্যির বিশ্বস্ত মন্ত্রী। তাঁর মৃত্যুর পর মাগন রাজা থদো-মিনতারের মুখ্য পাত্ররূপে নিযুক্ত হন। এরপর ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দে থদো-মিনতারের মৃত্যু হলে মাগন রাজার নাবালক পুত্র চন্দ্রসুধর্মার অভিভাবক হিসেবে বিধবা রাজপত্নীকে রাজকার্যে সাহায্য করতেন। ১৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে বা তার পরবর্তী কোনো সময়ে এই মাগন ঠাকুরই আলাওলকে আরাকানের অমাত্যসভায় নিয়ে আসেন। তিনি বহুভাষাবিদ, শাস্ত্রজ্ঞানী, বিদ্যোৎসাহী, কাব্যরসিক এবং সাহিত্যসংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

সিন্ধুতীরে কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ। এটি একটি কবিতা যা পাঠককে প্রেমের অপার মহিমায় নিয়ে যায়। কবিতাটিতে কবি তার প্রিয়তমার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। তিনি তার প্রিয়তমার রূপ ও গুণের বর্ণনা দিয়েছেন।

Share via:

মন্তব্য করুন