দশম শ্রেণি – বাংলা – সিন্ধুতীরে – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

Rahul

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার ষষ্ঠ পাঠের প্রথম বিভাগ, “সিন্ধুতীরে” নিয়ে কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেগুলি পরীক্ষায় প্রায়শই দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

দশম শ্রেণি – বাংলা – সিন্ধুতীরে – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

“দিব্য পুরী সমুদ্র মাঝার।” – কোন পুরীকে ‘দিব্য পুরী’ বলা হয়েছে? তাকে ‘দিব্য’ বলার কারণ কী?

‘দিব্যপুরী’-র পরিচয় – সমুদ্রের ঢেউ পদ্মাবতীর মান্দাসকে যেখানে পৌঁছে দেয়, সেখানে জলের মধ্যে একটি সুন্দর নগরী ছিল। সেই নগরীকেই ‘দিব্যপুরী’ বলা হয়েছে।

‘দিব্যপুরী’ বলার কারণ – সেই পুরী ‘দিব্য’, কারণ সেখানে মানুষের কোনো দুঃখকষ্ট ছিল না। সমুদ্রকন্যা পদ্মার নিজস্ব বিচরণক্ষেত্র সেই স্থানের ফল-ফুলে শোভিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছিল অতুলনীয়। সেখানে বসবাস করা মানুষরা সবাই ধর্ম মেনে চলত এবং সবসময় সদাচরণ করত। অর্থাৎ নৈতিক আদর্শের উচ্চতাই সেই নগরীকে অলৌকিক মহিমা দিয়েছিল।

“অতি মনোহর দেশ।” – এই ‘মনোহর দেশে’-র সৌন্দর্যের পরিচয় দাও।

অথবা, সিন্ধুতীরে কবিতা অবলম্বনে দেশটির বর্ণনা দাও।
অথবা, কোন্ স্থানকে কেন মনোহর দেশ বলা হয়েছে?

মনোহর দেশ – পদ্মাবতীর মাঞ্জস সমুদ্রের ঢেউর দ্বারা জলের মধ্যে যে ‘দিব্য পুরী’-তে গিয়ে পৌঁছোয় তাকেই ‘মনোহর দেশ’ বলা হয়েছে।

মনোহর বলার কারণ – কবির বর্ণনানুসারে এই দিব্য পুরী অতি মনোহর। কেন-না সেখানে কোনো দুঃখকষ্ট নেই; আছে শুধু সত্যধর্ম এবং সদাচার। সেখানে আছে একটি পর্বত এবং নানা ফুলে ভরা অপূর্ব এক উদ্যান। সেখানকার গাছগুলিতে নানা ফল ও ফুলের সমারোহ। একদিকে প্রকৃতির শোভা, অন্যদিকে সুস্থ জীবনাদর্শ দেশটিকে মনোহর করে তুলেছিল।

“সিন্ধুতীরে দেখি দিব্যস্থান।” – সিন্ধুতীরে এই দিব্যস্থানে কে থাকেন? স্থানটিকে দিব্যস্থান বলা হয়েছে কেন?

দিব্যস্থানের বাসিন্দা – সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে সিন্ধুতীরের দিব্যস্থানে বাস করেন সমুদ্রকন্যা পদ্মা।

দিব্যস্থান বলার কারণ – ‘দিব্যস্থান’ কথাটির অর্থ হলো সুন্দর ও মনোহর স্থান। সমুদ্রবেষ্টিত এই স্থানটি খুবই মনোমুগ্ধকর। এখানে কোনো দুঃখ বা কষ্ট নেই। সত্য ও সদাচার স্থানটিকে স্বর্গীয় মহিমায় পূর্ণ করেছে। এখানে একটি পর্বত এবং সুরম্য এক উদ্যান রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন গাছে বিচিত্র ফুল ও ফলের সমারোহ দেখা যায়। তাই, এই স্থানটিকে ‘দিব্যস্থান’ বলা হয়েছে।

“তথা কন্যা থাকে সর্বক্ষণ” – মন্তব্যটির প্রসঙ্গ নির্দেশ করো। কন্যাটি কে? কোথায় সে সর্বক্ষণ থাকে?

প্রসঙ্গ – মান্দাস যখন পদ্মাবতীকে ভাসতে ভাসতে এক মনোহর দেশে নিয়ে যায়, সেখানে এক মূল্যবান রত্নে সজ্জিত প্রাসাদ ছিল। সেই প্রাসাদেই পদ্মা বাস করতেন। এই মনোহর দেশ এবং এর রত্নসজ্জিত প্রাসাদ প্রসঙ্গে এই মন্তব্যটি করা হয়েছে।

কন্যার পরিচয় – কন্যাটি সমুদ্রকন্যা পদ্মা।

পদ্মার বাসস্থান – আলোচ্য মনোহর দেশের রত্নসজ্জিত প্রাসাদেই পদ্মা সর্বক্ষণ বাস করতেন।

“মনেতে কৌতুক বাসি” – কার মনে, কেন কৌতুকের উদয় হয়েছিল?

উদ্দিষ্ট জন – সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে সমুদ্রকন্যা পদ্মার মনে কৌতুকের উদয় হয়েছিল।

কৌতুকের উদয় হওয়ার কারণ – সমুদ্রকন্যা পদ্মা পিতৃগৃহে রাত কাটিয়ে সকালে সখীদের সঙ্গে নিয়ে সুরম্য উদ্যানে এসেছিলেন। হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ে সমুদ্রতীরে একটি ভেলা পড়ে রয়েছে। সেই ভেলার চারদিকে চার সখী-সহ অপূর্ব সুন্দরী এক কন্যা অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। নির্জন সমুদ্রতীরে এমন দৃশ্য দেখে পদ্মার মনে কৌতূহলের উদয় হয়েছিল।

“রূপে অতি রম্ভা জিনি/নিপতিতা চেতন রহিত।” – কার কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।

উদ্দিষ্ট জন – উল্লিখিত অংশে সমুদ্রতীরে অচেতন পদ্মাবতীর কথা বলা হয়েছে।

ব্যাখ্যা – সকালবেলা সমুদ্রকন্যা পদ্মা তাঁর সখীদের নিয়ে নিজ উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন। এই সময় সমুদ্রের ধারে একটি ভেলা পড়ে থাকতে দেখে কৌতূহলী হয়ে তিনি দ্রুত সেখানে আসেন। সেখানে পৌঁছে পদ্মা দেখেন, চারপাশে তাঁর চারজন সখী নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে আছেন, আর মধ্যখানে এক অপরূপা কন্যা চেতনাহীন অবস্থায় পড়ে আছেন। তাঁর রূপের সৌন্দর্য এতটাই অতুলনীয় ছিল যে, তা স্বর্গের বিখ্যাত অপ্সরা রম্ভার সৌন্দর্যকেও হার মানায়।

“বিস্মিত হইল বালা।” — বালা কে? তাঁর বিস্ময়ের কারণ কী?

বালার পরিচয় – উল্লিখিত অংশে ‘বালা’ বলতে সমুদ্রকন্যা পদ্মার কথা বলা হয়েছে।

বিস্ময়ের কারণ – পদ্মা তাঁর সখীদের সঙ্গে নিয়ে সিন্ধুতীরে নিজের সুরম্য উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময় সমুদ্রের ধারে একটি ভেলা পড়ে থাকতে দেখে কৌতূহলী পদ্মা সেখানে যান এবং দেখেন, চারদিকে তাঁর চার সখীসহ এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। ওই মেয়েটির সৌন্দর্য স্বর্গের অপ্সরা রম্ভাকেও পরাজিত করে। তা দেখেই পদ্মা বিস্মিত হয়েছিলেন।

“অনুমান করে নিজ চিতে।” – কার, কোন্ অনুমানের কথা বলা হয়েছে আলোচনা করো।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – উল্লিখিত অংশে সমুদ্রকন্যা পদ্মার অনুমানের কথা বলা হয়েছে।

অনুমানের বিষয় – সখীদের সঙ্গে সকালে উদ্যানে যাবার সময় সমুদ্রকন্যা পদ্মা সমুদ্রতীরে একটি মন্দাস পড়ে থাকতে দেখেন। সেখানে গিয়ে তিনি সখীদের মধ্যে অচেতন পদ্মাবতীকে দেখতে পান। তার সৌন্দর্য এমন, যেন স্বর্গের অপ্সরা রম্ভাকেও পরাজিত করবে। পদ্মা তার সেই রূপের বিস্ময়ে নানারকম অনুমান করতে থাকেন। তখন তাঁর মনে হয়, এটি কোনো সাধারণ মানবী নয়, বরং স্বর্গের নর্তকী বিদ্যাধরী, যিনি স্বর্গ থেকে পতিত হয়ে পৃথিবীতে এসে পড়েছেন।

“ইন্দ্রশাপে বিদ্যাধরি” – কে কাকে ‘বিদ্যাধরি’ বলে অনুমান করেন? কেন এই অনুমান?

‘বিদ্যাধরি’ অনুমান – সমুদ্রকন্যা পদ্মা সমুদ্রতীরে অচেতন পদ্মাবতীকে দেখে তাঁকে ‘বিদ্যাধরি’ বলে অনুমান করেন।

অনুমানের কারণ – পিতৃপুরে রাত কাটিয়ে পদ্মা তাঁর সখীদের নিয়ে নিজের সুরম্য উদ্যানের দিকে আসছিলেন। সেই সময়ে সমুদ্রতীরে চার সখীর মধ্যে এক অচেতন কন্যাকে তিনি দেখতে পান, যিনি আসলে সিংহল রাজকন্যা পদ্মাবতী। তাঁর সৌন্দর্য এমনই যে, তা স্বর্গের অপ্সরা রম্ভাকেও হার মানায়। এই অসামান্য সৌন্দর্যের কারণেই পদ্মার মনে হয়েছিল, যেন স্বর্গের গায়িকা বিদ্যাধরি স্বর্গ থেকে পতিত হয়ে পৃথিবীতে এসে পড়েছেন।

“অচৈতন্য পড়িছে ভূমিতে।” – কে অচৈতন্য হয়ে ভূমিতে পড়েছিলেন? তাঁর অচৈতন্য হওয়ার কারণ কী?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – সিংহল রাজকন্যা এবং চিতোরের রানা রত্নসেনের পত্নী পদ্মাবতী অচৈতন্য হয়ে সমুদ্রতীরে পড়েছিলেন।

অচৈতন্য হওয়ার কারণ – রানা রত্নসেনের সঙ্গে পদ্মাবতী সমুদ্রপথে চিতোরে ফিরে যাচ্ছিলেন। সমুদ্রের ক্রোধের কারণে তাঁদের জলযান বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। কোনো রকমে একটি ভেলায় রত্নসেন এবং চার সখীসহ পদ্মাবতী আশ্রয় নেন। কিন্তু সেই ভেলাও দুই খণ্ড হয়ে যায় এবং পদ্মাবতী রত্নসেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সামুদ্রিক ঝঞ্ঝার তাণ্ডব এবং প্রাণহানির ভয়ে পদ্মাবতী জ্ঞান হারান।

“বেথানিত হৈছে কেশ বেশ।” – কার, কেন এরকম অবস্থা হয়েছিল?

উদ্দিষ্ট চরিত্র – সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যের একটি অংশে এরকম অবস্থা হয়েছিল সিংহল-রাজকন্যা পদ্মাবতীর।

বিপর্যস্ত অবস্থার কারণ – সিংহল-রাজকন্যা পদ্মাবতী স্বামী রত্নসেনের সঙ্গে চিতোরে ফিরছিলেন। সমুদ্রপথে তাঁদের জলযান বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। একটি কলার ভেলায় রত্নসেন, পদ্মাবতী ও চারজন সখী আশ্রয় নিলেও সেটি দুই খণ্ড হয়ে যায়। এর ফলে পদ্মাবতী সখীসহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে রাজকন্যার চুল এলোমেলো হয়ে যায় এবং সাজসজ্জা নষ্ট হয়।

“মোহিত পাইয়া সিন্ধু-ক্লেশ।” — কার কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উদ্দিষ্ট জন – উল্লিখিত অংশে সিংহল-রাজকন্যা পদ্মাবতীর কথা বলা হয়েছে।

বিশ্লেষণ – সখীদের সঙ্গে উদ্যানে যাওয়ার সময় পদ্মা অচেতন পদ্মাবতীকে দেখেন। অপরিচিতা সুন্দরী কন্যাকে দেখে তাঁর মনে নানারকম ভাবনা জাগে। বিধ্বস্ত সেই কন্যার চোখ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে, তার বেশভূষাই বিপর্যয়ের প্রমাণ দেয়। তার চুল এবং পোশাক এলোমেলো। সমুদ্রকন্যা পদ্মা ভেবে নেন যে, প্রবল বাতাস হয়তো নৌকা ভেঙে দিয়েছে। সমুদ্রের জলে ভাসতে ভাসতে প্রবল কষ্টেই হয়তো মেয়েটি অচেতন হয়ে আছে।

“চিত্রের পোতলি সমা/নিপতিত মনোরমা” – ‘মনোরমা’ কে? তিনি কোথায়, কেন নিপতিতা ছিলেন?

মনোরমার পরিচয় – সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে সিংহল-রাজকন্যা পদ্মাবতীকে ‘মনোরমা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

নিপতিতা হওয়ার স্থান ও কারণ – রানা রত্নসেনের সঙ্গে বিয়ের পর পদ্মাবতী সমুদ্রপথে চিতোরে আসছিলেন। কিন্তু প্রবল ঝড়ে তাঁদের জাহাজ ডুবে যায়। কলার মান্দাসে আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। পদ্মাবতী রত্নসেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এরপর বিধ্বস্ত রাজকন্যা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সমুদ্রের তীরে অচেতন অবস্থায় চারজন সখীর পরিবেষ্টনে পড়ে থাকেন তিনি।

“চিত্রের পোতলি সমা” – ‘পোতলি’ শব্দের অর্থ কী? কাকে চিত্রের পোতলির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এবং কেন?

‘পোতলি’ শব্দের অর্থ – ‘পোতলি’ শব্দের অর্থ ‘পুতুল’।

চিত্রের পোতলির সঙ্গে তুলনার কারণ – সমুদ্রতীরে অচেতন পদ্মাবতীকে পুতুলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তার অপরূপ সৌন্দর্য সমুদ্রকন্যা পদ্মাকে মুগ্ধ করেছিল। কখনও মনে হয়েছিল যে সেই সৌন্দর্য রম্ভাকেও পরাজিত করতে পারে। কখনও মনে হয়েছে ইন্দ্রের অভিশাপগ্রস্ত বিদ্যাধরি পৃথিবীতে এসে পড়েছেন। এই সৌন্দর্যের কারণেই তাঁকে ছবির পুতুলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

“বিধি মোরে না কর নৈরাশ” – কার প্রার্থনা? এমন প্রার্থনার কারণ কী?

প্রার্থনাকারী – উল্লিখিত প্রার্থনাটি করেছেন সমুদ্রকন্যা পদ্মা।

প্রার্থনার কারণ – সমুদ্রের তীরে অচৈতন্য পদ্মাবতীকে মান্দাসের উপর পড়ে থাকতে দেখে পদ্মা সেই অপরূপ নারীর জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন যে, ভয়াবহ কোনো সামুদ্রিক বিপর্যয়ের কারণেই ওই নারীর এই অবস্থা। ছবির প্রতিমার মতো সুন্দরী সেই নারীর শ্বাস সামান্য চলছে। পদ্মা সেই নারীর প্রতি স্নেহার্দ্র হয়ে পড়েন। প্রার্থনা করতে থাকেন, বিধাতা যেন তাঁকে নিরাশ না করেন অর্থাৎ সেই কন্যাকে বাঁচিয়ে রাখেন।

“বাহুরক কন্যার জীবন” – এখানে বক্তা কোন্ কন্যার জীবনের কথা বলেছেন? উল্লিখিত কন্যাকে বক্তা কোথায়, কী অবস্থায় প্রথম দেখেছিলেন?

উদ্দিষ্ট কন্যা – সমুদ্রকন্যা পদ্মা এখানে সিংহলের রাজকন্যা এবং চিতোরের রাজবধূ পদ্মাবতীর জীবনের কথা বলেছেন।

উদ্দিষ্ট কন্যাকে প্রথম দেখা – পদ্মা পদ্মাবতীকে প্রথমে সমুদ্রতীরে চার সখী-সহ অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তখন পদ্মাবতী মরণাপন্ন, তাঁর পোশাক ও চুল এলোমেলো অবস্থায় ছিল। তাঁকে দেখে পদ্মার মনে হয়েছিল কোনো অপরূপ স্বর্গকন্যা শাপভ্রষ্টা হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। তখনও তাঁর শ্বাসবায়ু অল্প অল্প প্রবাহিত হচ্ছে দেখে সমুদ্রকন্যা পদ্মা রাজকন্যাকে বাঁচানোর জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন।

“বাহুরক কন্যার জীবন” – এ আকাঙ্ক্ষা কার? তিনি কীভাবে কন্যার জীবন রক্ষা করলেন?

যার আকাঙ্ক্ষা – সমুদ্রকন্যা পদ্মা এই আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন।

কন্যার জীবন রক্ষা – সমুদ্রকন্যা পদ্মা ঈশ্বরের কাছে অচেতন পদ্মাবতীর জীবন ফিরে আসার প্রার্থনা করেন এবং চিকিৎসায় উদ্যোগী হন। সখীদের আদেশ দিয়ে পদ্মাবতী এবং তাঁর চার সখীকে বসনাবৃত করে উদ্যানের মধ্যে নিয়ে যান। তারপরে আগুনের সেঁক দিয়ে, তন্ত্র-মন্ত্র মহৌষধের সাহায্যে চারদণ্ড সেবাযত্ন করে চার সখী-সহ পদ্মাবতীর চেতনা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হল এবং তাঁদের জীবন রক্ষা হল।

“কৃপা কর নিরঞ্জন।” – বক্তা কে? এই প্রার্থনার কারণ আলোচনা করো।

বক্তা – উল্লিখিত অংশের বক্তা সমুদ্রকন্যা পদ্মা।

প্রার্থনার কারণ – সমুদ্রতীরে অচেতন পদ্মাবতীকে দেখে সমুদ্রকন্যা পদ্মা অত্যন্ত সমব্যথী হয়ে ওঠেন। তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন যে, তিনি যেন তাঁকে নিরাশ না করেন, অর্থাৎ বিধাতা যেন ওই কন্যার প্রাণ রক্ষা করেন। পিতার পুণ্য আর তাঁর নিজের ভাগ্যবলে কন্যার জীবন ফিরে আসুক বলে পদ্মা প্রার্থনা করেন। ওই কন্যাকে সুস্থ করার জন্য যথাসাধ্য চিকিৎসা করবেন বলেও পদ্মা জানান। এভাবে এক প্রবল স্নেহের বশে তিনি পদ্মাবতীর জীবনের জন্য প্রার্থনা করেন।

“সখী সবে আজ্ঞা দিল।” — সখীদের কে, কী আজ্ঞা দিলেন?

আজ্ঞাদানকারী – সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে সমুদ্রকন্যা পদ্মা সখীদের আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

আজ্ঞার বিষয় – আজ্ঞার বিষয় – সামুদ্রিক ঝড়ে বিধ্বস্ত সিংহল-রাজকন্যা অচৈতন্য অবস্থায় সমুদ্রতীরে পড়ে আছেন। চার জন সখী তাঁকে ঘিরে রয়েছে সুরম্য প্রাসাদ থেকে সমুদ্রকন্যা পদ্মা এই দৃশ্য দেখে অস্থির হলেন। তিনি তখনই রাজকন্যাকে উদ্ধার করে আনতে সখীদের নির্দেশ দিলেনি শুকনো বস্ত্র দিয়ে তাঁর শরীর ঢেকে, আগুন জ্বেলে সর্বাঙ্গ সেঁকে দিতে বললেন। আর তন্ত্রমন্ত্র সহকারে মহৌষধ দিতে আজ্ঞা করলেন।

“পঞ্চকন্যা পাইলা চেতন।” — এখানে ‘পঞ্চকন্যা’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? তাঁরা কীভাবে চেতনা ফিরে পেয়েছিল?

‘পঞ্চকন্যা’-র পরিচয় – এখানে ‘পঞ্চকন্যা’ বলতে পদ্মাবতী ও তাঁর চার সখীর কথা বলা হয়েছে।

চেতনা ফিরে পাওয়া – পদ্মার আদেশে তাঁর সখীরা অচেতন পদ্মাবতী ও তাঁর সখীদের দেহ বস্ত্রে ঢেকে উদ্যানের মধ্যে নিয়ে যান। তারপর তন্ত্র, মন্ত্র, ও মহৌষধি সহযোগে তাঁদের মাথায় এবং পায়ে আগুনের সাহায্যে সেঁক দেওয়া হয়। এইভাবে চার দণ্ড বহু যত্নসহ চিকিৎসা করার ফলে চন্দ্রপ্রভা, রোহিণী, বিজয়া ও বিধুন্নলা এই চার সখীসহ পদ্মাবতী চেতনা ফিরে পান।

“শ্রীযুত মাগন গুণী …” — ‘মাগন’ কে?

উদ্ধৃতাংশের মাগন ছিলেন রোসাঙরাজ নরপতির বিশ্বস্ত মন্ত্রী। তাঁর মৃত্যুর পর মাগন রাজা থদো-মিনতারের মুখ্য পাত্ররূপে নিযুক্ত হন। এরপর 1652 খ্রিস্টাব্দে থদো-মিনতারের মৃত্যু হলে মাগন রাজার নাবালক পুত্র চন্দ্রসুধর্মার অভিভাবক হিসেবে বিধবা রাজপত্নীকে রাজকার্যে সাহায্য করতেন।1645 খ্রিস্টাব্দে বা তার পরবর্তী কোনো সময়ে এই মাগন ঠাকুরই আলাওলকে আরাকানের অমাত্যসভায় নিয়ে আসেন। তিনি বহুভাষাবিদ, শাস্ত্রজ্ঞানী, বিদ্যোৎসাহী, কাব্যরসিক এবং সাহিত্যসংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।


আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার ষষ্ঠ পাঠের প্রথম বিভাগ, ‘সিন্ধুতীরে’ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ প্রায়ই এগুলো পরীক্ষায় আসার সম্ভাবনা থাকে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনারা উপকারী মনে করেছেন। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি যথাসাধ্য উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া, পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যাদের এটি কাজে লাগতে পারে। ধন্যবাদ।

Categories -
Please Share This Article

Related Posts

ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশে আদিম মানুষ

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশে আদিম মানুষ (যাযাবর জীবন থেকে স্থায়ী বসতি স্থাপন) – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

তোমার প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র - প্রবন্ধ রচনা

তোমার প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র – প্রবন্ধ রচনা

তোর আসল লজ্জা জলে, আসল গর্বও জলে। — কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভাঙ্গর ও খাদার বলতে কি বোঝো? ভাঙ্গর ও খাদারের মধ্যে পার্থক্য

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব আলোচনা করো।