এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল? 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনে কীরূপ পরিবর্তন এসেছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল? 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনে কীরূপ পরিবর্তন এসেছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল?
বাংলায় মহাবিদ্রোহের সূচনা হলেও শিক্ষিত বাঙালি সমাজ ছিল সরাসরি বিদ্রোহের বিরোধী তথা বিদ্রোহ দমনে ইংরেজের সমর্থক। শিক্ষিত বাঙালি সমাজ মনে করেছিল বিদ্রোহীরা জয়লাভ করলে ভারতে পুনরায় ‘মুঘল শাসনের দুর্দিন’ ফিরে আসবে। মধ্যযুগীয় গোড়া মুসলিম শাসন অপেক্ষা কোম্পানির প্রগতিশীল শাসনকে তারা অনেক বেশি কাম্য মনে করেছিল। তা ছাড়া আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজের কাছে খুলে দিয়েছিল ব্রিটিশের অধীনে কর্মসংস্থানের সুযোগ। নবজাগরিত বাঙালি সমাজ তাই ব্রিটিশ শাসনের দীর্ঘায়ু কামনা করেছিল।
1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনে কীরূপ পরিবর্তন এসেছিল?
1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের অভিঘাতে ভারতে কোম্পানির শাসনের উপর যবনিকা নেমে আসে, পরিবর্তে সূচিত হয় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রত্যক্ষ তথা মহারানির পরোক্ষ শাসন। 1858 খ্রিস্টাব্দের ‘উন্নততর ভারত শাসন’ আইনে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের 15 জন প্রতিনিধিকে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারত শাসন বিষয়ক সর্বোচ্চ সংস্থা – ‘কাউন্সিল অফ স্টেট’ এবং এর প্রধান নিযুক্ত হন ‘ভারত সচিব’। এই সংস্থাই ভারত শাসন বিষয়ে চূড়ান্ত নীতি নির্ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত মহারানির নামমাত্র সম্মতিতে তা আইনে পরিণত হয়। ভারতে অবস্থিত ‘ভাইসরয়’ নামধারী রাজপ্রতিনিধি এই আইন মোতাবেক ভারত শাসন করতে থাকেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
1857 সালের মহাবিদ্রোহ কী?
1857 সালের মহাবিদ্রোহ (যাকে সিপাহি বিদ্রোহ বা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামও বলা হয়) ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে ভারতীয় সৈন্যদের (সিপাহি) এবং বিভিন্ন স্থানীয় রাজা-জমিদারদের একটি বড়ো ধরনের বিদ্রোহ। এটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম বড়ো প্রতিরোধ আন্দোলন হিসেবে পরিচিত।
বাংলার শিক্ষিত বাঙালি সমাজ মহাবিদ্রোহের প্রতি কী মনোভাব পোষণ করেছিল?
বাংলার শিক্ষিত বাঙালি সমাজ সাধারণত মহাবিদ্রোহের বিরোধী ছিল। তারা ভেবেছিল যে বিদ্রোহ সফল হলে ভারতে আবার মোগল শাসন ফিরে আসবে, যা তাদের মতে পশ্চাৎপদ ছিল। তারা ব্রিটিশ শাসনকে আধুনিক ও প্রগতিশীল মনে করত এবং চাকরি ও শিক্ষার সুবিধার কারণে ব্রিটিশদের সমর্থন করেছিল।
মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ শাসনে কী পরিবর্তন হয়?
মহাবিদ্রোহের পর 1858 সালে ব্রিটিশ সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন বাতিল করে সরাসরি ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের অধীনে ভারত শাসন শুরু করে।
1. ভারত সচিব (Secretary of State for India) নিয়োগ করা হয় লন্ডনে।
2. ভাইসরয় (Governor-General) হন ভারতের সর্বোচ্চ প্রশাসক।
3. কাউন্সিল অফ স্টেট গঠন করে ভারত শাসনের নীতি নির্ধারণ করা হয়।
4. মহারানি ভিক্টোরিয়া “ভারতের সম্রাজ্ঞী” ঘোষিত হন (1876 সালে)।
মহাবিদ্রোহের প্রধান কারণ কী ছিল?
মহাবিদ্রোহের প্রধান কারণ ছিল –
1. সামরিক কারণ – এনফিল্ড রাইফেলে গরুর ও শূকরের চর্বি মাখানো কার্তুজ ব্যবহার, যা হিন্দু-মুসলিম সৈন্যদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছিল।
2. অর্থনৈতিক শোষণ – কৃষক ও জমিদারদের উপর অতিরিক্ত কর ও জমি কেড়ে নেওয়া।
3. রাজনৈতিক অসন্তুষ্টি – দেশীয় রাজ্যগুলির উপর ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপ (ডকট্রিন অফ ল্যাপস)।
4. সামাজিক-ধর্মীয় কারণ – খ্রিস্টান মিশনারিদের কার্যকলাপ ও ভারতীয় সংস্কৃতিতে হস্তক্ষেপ।
মহাবিদ্রোহের কিছু প্রধান নেতা কারা ছিলেন?
মহাবিদ্রোহের কিছু প্রধান নেতা ছিলেন – মঙ্গল পাণ্ডে (ব্যারাকপুরে প্রথম বিদ্রোহের সূচনা), বাহাদুর শাহ জাফর (দিল্লির শেষ মোগল সম্রাট, বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেন), ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ, তাতিয়া টোপে, কুনওয়ার সিং (বিহারের জমিদার)।
মহাবিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল?
মহাবিদ্রোহের ফলাফল –
1. ব্রিটিশরা বিদ্রোহ দমন করে আরও কঠোর শাসন শুরু করে।
2. ভারত সরাসরি ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের অধীনে চলে যায় (কোম্পানি শাসনের অবসান)।
3. সেনাবাহিনীতে ভারতীয়দের সংখ্যা কমিয়ে ইউরোপীয় সৈন্য বাড়ানো হয়।
4. ভারতীয় রাজ্যগুলিকে ব্রিটিশরা কিছু সুযোগ দিতে শুরু করে (নীতি পরিবর্তন)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল? 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনে কীরূপ পরিবর্তন এসেছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল? 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনে কীরূপ পরিবর্তন এসেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।