এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “1857 সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র আলোচনা করো। 1857 সালের বিদ্রোহকে কী ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বা ‘স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম’ বলা যায়?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “1857 সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র আলোচনা করো। 1857 সালের বিদ্রোহকে কী ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বা ‘স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম’ বলা যায়?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

1857 সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র আলোচনা করো।
1857 খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। অনেকেই এই বিদ্রোহ কে সিপাহী বিদ্রোহ, ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ, জাতীয় বিদ্রোহ, আবার অনেকে একে সামন্ততান্ত্রিক অভ্যুত্থান বলে উল্লেখ করেছেন।
সিপাহী বিদ্রোহ –
স্যার জন লরেন্স, জন সিলি, চার্লস রেকস প্রমূখ ইউরোপীয় ঐতিহাসিক এবং অক্ষয় কুমার দত্ত, হরিশচন্দ্র মুখার্জী, দাদাভাই নৌরাজি প্রমুখ ভারতীয়রা 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে সিপাহীবিদ্রোহ নামে উল্লেখ করেছেন। কিশোরী চাঁদ মিত্র বলেছেন এই বিদ্রোহ ছিল একান্তভাবে সিপাহিদের অভ্যুত্থান। দেশীয় কোনো রাজনৈতিক সংগঠন এই বিদ্রোহ সমর্থন করেনি।
প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ –
বিপ্লবী বীর সাভারকর 1857 সালের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন। কার্ল মার্ক্স, অধ্যাপক সুশোভন সরকার প্রমূখ এই বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন।
জাতীয় বিদ্রোহ –
ঐতিহাসিক হোমস, ডাফ, ম্যালেসন, জে. বি.নর্টন, কার্ল মার্ক্স প্রমূখ এই বিদ্রোহকে শুধুমাত্র সিপাহী বিদ্রোহ না ফলে এ কে জাতীয় বিদ্রোহ নামে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে এই বিদ্রোহ কেবল সিপাহিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এর একটি গণচরিত্র ছিল।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে জনসাধারণ বিশেষত অযোধ্যা, বুন্দেলখণ্ড, ও বিহারের জনসাধারণ নানাসাহেব, রানী লক্ষ্মীবাঈ, প্রমূখ রাজন্যবর্গ বহু তালুকদার জমিদার স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বিদ্রোহে যোগ দেন।
সামন্ত বিদ্রোহ –
রমেশচন্দ্র মজুমদার, রজনীপাম দত্ত, সুরেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ মার্কসবাদী ঐতিহাসিক 1857 সালের বিদ্রোহকে রক্ষনশীল ও নগন্ত্রিক শক্তি গুলির অভ্যুত্থান বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে নানাসাহেব, লক্ষ্মীবাঈ প্রমূখ সামন্তশ্রেণীর মানুষ এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। এটি ছিল ভারতের “সনাতনপন্থী দের বিদ্রোহ”।
পর্যালোচনা –
ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার এই বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলার বিপক্ষে মতপ্রকাশ করেছেন। তার মতে 1857 বিদ্রোহ তথাকথিত প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতার সংগ্রাম, জাতীয় বিদ্রোহ, স্বাধীনতা সংগ্রাম নয়। তার মতে এই বিদ্রোহ ভারতের কয়েকটি ক্ষুদ্র অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল।
এই বিদ্রোহকে নিছক সিপাহী বিদ্রোহ বা সামন্ত শ্রেণীর বিদ্রোহ বলে অভিহিত করা ঠিক না।
1857 সালের বিদ্রোহকে কী ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বা ‘স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম’ বলা যায়?
1857 সালের বিদ্রোহ বিষয়টি বিতর্কিত। তবে, এই বিদ্রোহের ব্যাপক বিস্তৃতি; ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাদের প্রায় অর্ধেকের অংশগ্রহণ; বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের এই বিদ্রোহকে সমর্থন ও অংশগ্রহণ; হিন্দু-মুসলিম ঐক্য; বিদ্রোহ দমনে সরকারের ব্যাপক যুদ্ধ পরিচালনা ও নিষ্ঠুর দমন নীতি প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের জন্য এই বিদ্রোহকে অনেকাংশে ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বা ‘স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম’ বলে অভিহিত করা যায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
1857 সালের বিদ্রোহকে কী সিপাহী বিদ্রোহ বলা যায়?
হ্যাঁ, কিছু ঐতিহাসিক যেমন স্যার জন লরেন্স, চার্লস রেকস এবং ভারতীয়দের মধ্যে অক্ষয় কুমার দত্ত, দাদাভাই নৌরোজি প্রমুখ এটিকে সিপাহী বিদ্রোহ বলেছেন। তাদের মতে, এটি মূলত সিপাহীদের অসন্তোষ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং সাধারণ জনগণ বা রাজনৈতিক সংগঠনগুলি এতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়নি।
1857 সালের বিদ্রোহকে ‘ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম’ বলা হয় কেন?
বিপ্লবী বিনায়ক দামোদর সাভারকর, কার্ল মার্ক্স এবং অধ্যাপক সুশোভন সরকার প্রমুখ এটিকে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলেন। তাদের যুক্তি হলো—
1. এটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটি সংগঠিত প্রতিরোধ ছিল।
2. বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ, রাজা-রানী ও সৈন্যরা একত্রে লড়াই করেছিলেন।
3. স্বাধীনতা অর্জনের চেতনা বিদ্রোহে প্রকাশ পেয়েছিল।
1857 সালের বিদ্রোহকে ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বলা যায় কি?
হোমস, ম্যালেসন, কার্ল মার্ক্স প্রমুখ এটিকে জাতীয় বিদ্রোহ বলেছেন, কারণ—
1. এটি শুধু সিপাহীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, সাধারণ মানুষ, জমিদার, রাজন্যবর্গও যোগ দিয়েছিলেন।
2. হিন্দু-মুসলিম ঐক্য দেখা গিয়েছিল।
3. ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের চরিত্র ছিল।
রমেশচন্দ্র মজুমদার কেন এই বিদ্রোহকে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ’ মানতে নারাজ?
রমেশচন্দ্র মজুমদার, রজনী পাম দত্ত প্রমুখ মার্ক্সবাদী ঐতিহাসিকরা এটিকে সামন্ততান্ত্রিক বিদ্রোহ বলেন, কারণ—
1. নানাসাহেব, লক্ষ্মীবাঈ প্রমুখ সামন্তশ্রেণীর নেতৃত্বে এটি সংঘটিত হয়েছিল।
2. এটি সমগ্র ভারতের ব্যাপক জনসমর্থন পায়নি, কয়েকটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল।
3. আধুনিক জাতীয়তাবাদের অভাব ছিল।
1857 সালের বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে বিতর্ক কেন?
1857 সালের বিদ্রোহের বহুমুখী চরিত্র এর কারণ—
1. কেউ এটিকে সামরিক বিদ্রোহ (সিপাহী বিদ্রোহ) বলেন।
2. কেউ জাতীয় সংগ্রাম বা স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসেবে দেখেন।
3. আবার কেউ একে পুরনো সামন্তশ্রেণীর ব্রিটিশ-বিরোধী প্রতিক্রিয়া বলে মনে করেন।
1857 সালের বিদ্রোহের গুরুত্ব কী?
1857 সালের বিদ্রোহের গুরুত্ব—
1. এটি ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছিল।
2. পরবর্তীতে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে প্রেরণা যুগিয়েছিল।
3. ব্রিটিশ সরকার সিপাহী ও জনগণের ওপর কঠোর দমননীতি প্রয়োগ করে, যা ভারতীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়ে তোলে।
হিন্দু-মুসলিম ঐক্য কীভাবে 1857 সালের বিদ্রোহে দেখা গিয়েছিল?
1. মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল।
2. হিন্দু-মুসলিম সিপাহীরা একসাথে লড়াই করেছিল।
3. ধর্মীয় বিভেদের বদলে ব্রিটিশ বিরোধিতা প্রধান লক্ষ্য ছিল।
1857 সালের বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ কী?
1857 সালের বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ—
1. কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অভাব,
2. আধুনিক অস্ত্র ও রণকৌশলের ঘাটতি,
3. সমস্ত ভারতের সমর্থন না পাওয়া,
4. ব্রিটিশদের কূটনীতি ও সামরিক শক্তি।
1857 সালের বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ শাসনে কী পরিবর্তন এলো?
1. ভারত শাসন আইন 1858 পাস করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন শেষ হয় ও ব্রিটিশ রাজ সরাসরি দায়িত্ব নেয়।
2. সেনাবাহিনীতে ভারতীয়দের সংখ্যা কমানো হয় ও গোরা সৈন্য বাড়ানো হয়।
3. ভারতীয় রাজন্যবর্গ ও জমিদারদের সাথে ব্রিটিশরা সহানুভূতিশীল নীতি নেয় (Divide and Rule)।
1857 সালের বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী?
এটি একটি জটিল ও বহুমাত্রিক ঘটনা—
1. শুধু সিপাহী বিদ্রোহ নয়, তবে পূর্ণাঙ্গ জাতীয় সংগ্রামও নয়।
2. এটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম বড় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, যা পরবর্তী স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করেছিল।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “1857 সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র আলোচনা করো। 1857 সালের বিদ্রোহকে কী ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বা ‘স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম’ বলা যায়?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “1857 সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র আলোচনা করো। 1857 সালের বিদ্রোহকে কী ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বা ‘স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম’ বলা যায়?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।