এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহকে কী সামন্ত শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায়?

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহকে কী সামন্ত শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায়?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহকে কী সামন্ত শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায়?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহকে কী সামন্ত শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায়?
Contents Show

1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহকে কী সামন্ত শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায়?

1857 খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষের বুকে ঘটে যাওয়া বহুচর্চিত বিদ্রোহটির প্রকৃতি বা চরিত্র নির্ধারণে এর সার্ধ-শতবৎসর অতিক্রান্তেও কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভবপর হয়নি। স্বভাবতই তাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক মহলে উঠে এসেছে নানান পরস্পর বিরোধী ব্যাখ্যা।

সামন্ত বিদ্রোহ

সামন্ত বিদ্রোহের প্রবক্তা –

ডঃ রজনীপাম দত্ত, আর. সি. মজুমদার, ডঃ সুরেন্দ্রনাথ সেন, শশিভূষণ চৌধুরি প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ‘সামন্ত বিদ্রোহ’ আখ্যা দিয়েছেন।

সামন্ত বিদ্রোহের মূল বক্তব্য –

এঁদের মতে, গদিচ্যুত ও রাজ্যচ্যুত সামন্তরাজারা (যথা – নানাসাহেব, তাঁতিয়া টোপি, লক্ষ্মীবাঈ প্রমুখ) নিজের নিজের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে নিজ নিজ অঞ্চলে জনগণকে খেপিয়ে তুলে বিদ্রোহে শামিল হয়েছিলেন। ইংরেজ শাসন ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতি সামন্তপ্রভুদের মনে ভীতির সঞ্চার করেছিল এবং তাদের ক্ষমতা খর্ব করেছিল। তাই দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে সামনে রেখে তারা রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর পুনঃপ্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন। তাদের হাতেই ছিল বিদ্রোহের মূল, নেতৃত্ব। ডঃ মজুমদার এই বিদ্রোহকে ‘ক্ষয়িষ্ণু অভিজাত তন্ত্র ও মৃতপ্রায় সামন্ত শ্রেণির মৃত্যুকালীন আর্তনাদ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আরও লিখেছেন – “The ‘First National War of Independence’ is neither ‘first’ nor ‘national’ nor ‘the war of independence”.

সামন্ত বিদ্রোহের সমালোচনা –

অন্যদিকে কার্ল মার্কস, সুশোভন সরকার, বীর সাভারকার প্রমুখ ঐতিহাসিক ও তাত্ত্বিকগণ 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ‘সামন্ত বিদ্রোহ’ হিসেবে দেখতে নারাজ। তাঁদের মতে, সিপাইদের দ্বারা বিদ্রোহের সূচনা হলেও এবং বিদ্রোহের নেতৃত্ব সামন্ত শ্রেণির হাতে থাকলেও অচিরেই এই বিদ্রোহের বিপুল বিস্তার, জনগণের বিপুল সমর্থন ও অংশগ্রহণ, হিন্দু-মুসলিম ঐক্য, বিদ্রোহ দমনে সরকারের ব্যাপক যুদ্ধ পরিচালনা প্রভৃতি এই বিদ্রোহকে গণসংগ্রামের চরিত্র দান করেছে। বীর সাভারকার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই বিদ্রোহকে ‘ভারতের স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম’ বলে অভিহিত করেছেন।

সামন্ত বিদ্রোহের মন্তব্য –

বস্তুতপক্ষে 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ কোনো ঐতিহাসিকের নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক বক্তব্য মেনে পরিচালিত হয়নি। গতির আবেগে বিদ্রোহ সমস্ত তত্ত্বকেই সংমিশ্রিত করেছিল। তাই ঐতিহাসিক C.A. Bayly কে উদ্ধৃত করেই আলোচনার ইতি টানা যায় – “The Indian Rebellion of 1857 was not one movement-it was many.”

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

1857 সালের বিদ্রোহকে কেন “সামন্ত শ্রেণির বিদ্রোহ” বলা হয়?

কিছু ঐতিহাসিক (যেমন— ডঃ রজনী পাম দত্ত, আর. সি. মজুমদার, ডঃ সুরেন্দ্রনাথ সেন) এই বিদ্রোহকে সামন্ত শ্রেণির বিদ্রোহ বলেছেন, কারণ নানাসাহেব, লক্ষ্মীবাঈ, তাতিয়া টোপি প্রমুখ রাজ্যচ্যুত ও ক্ষমতাহারা সামন্তপ্রভুরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাদের মতে, এই বিদ্রোহ ছিল ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততন্ত্রের শেষ প্রচেষ্টা।

1857 সালের বিদ্রোহকে “জাতীয় বিদ্রোহ” বলা যায় কি?

বীর সাভারকার, কার্ল মার্কস, সুশোভন সরকার প্রমুখ এই বিদ্রোহকে জাতীয় সংগ্রাম হিসেবে দেখেন। তাদের যুক্তি হলো—
1. হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে উঠেছিল।
2. সাধারণ কৃষক, সৈন্য ও জনগণ ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছিল।
3. ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সারাদেশে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল।

আর. সি. মজুমদার কেন এই বিদ্রোহকে “জাতীয় সংগ্রাম” মানতে নারাজ?

মজুমদারের মতে, এই বিদ্রোহ—
1. জাতীয় ছিল না, কারণ সমগ্র ভারত একসাথে অংশগ্রহণ করেনি (পাঞ্জাব, মাদ্রাজ, বোম্বাইয়ে বিদ্রোহ ছড়ায়নি)।
2. স্বাধীনতার যুদ্ধ ছিল না, কারণ নেতারা শুধু নিজেদের ক্ষমতা ফিরে পেতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি একে “সামন্ত শ্রেণির শেষ আর্তনাদ” বলেছেন।

1857 সালের বিদ্রোহের সূচনা কারা করেছিলেন—সিপাহীরা নাকি সামন্তপ্রভুরা?

সিপাহীরাই প্রথম বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন (বারুদে গরু ও শূকরের চর্বি লাগানো কার্তুজ ব্যবহারের বিরুদ্ধে), কিন্তু পরে নানাসাহেব, লক্ষ্মীবাঈ, তাতিয়া টোপি প্রমুখ সামন্ত নেতারা নেতৃত্ব দেন।

1857 সালের বিদ্রোহ কি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ ছিল?

1857 সালের বিদ্রোহ –
1. ব্যর্থতা – ইংরেজরা দমন করতে সক্ষম হয়, শেষপর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন আসেনি।
2. সাফল্য – এটি পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রেরণা দিয়েছিল এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে সরাসরি ব্রিটিশ রাজত্ব শুরু হয়

1857 সালের বিদ্রোহের প্রকৃতি কি একমুখী ছিল?

না, C.A. Bayly -র মতে, “এটি একক কোনো আন্দোলন ছিল না—এটি ছিল বহুমুখী সংঘাতের সমষ্টি।” বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থ ও উদ্দেশ্য মিশে গিয়েছিল এতে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহকে কী সামন্ত শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায়?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহকে কী সামন্ত শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায়?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন