এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

মহারানির ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “মহারানির ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “মহারানির ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

মহারানির ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?

মহারানির ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?

1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের অভিঘাতে ভারতে কোম্পানির শাসনের উপর যবনিকা নেমে আসে, পরিবর্তে সূচিত হয় ইংল্যান্ডের মহারানির প্রত্যক্ষ শাসন। 1858 খ্রিস্টাব্দের 1 নভেম্বর এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত এক রাজকীয় দরবারে এক ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র জারি করে মহারানি ভিক্টোরিয়া ভারতের শাসনভার স্বহস্তে তুলে নেন এবং ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় নতুন নীতি ও আদর্শ প্রবর্তনের কথা ঘোষণা করে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করেন। 1858 খ্রিস্টাব্দের ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে মহারানির ঘোষিত এই ঐতিহাসিক প্রচারপত্র ‘মহারানির ঘোষণাপত্র’ নামে পরিচিত।

মহারানির ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?

মহারানির ঘোষণাপত্র –

মহারানির ঘোষণায় বলা হয় যে –

  • ভারতবাসীর ধর্মীয় ও সামাজিক কোনো ব্যাপারেই সরকার কোনোরূপ হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে।
  • প্রত্যেক ভারতবাসী ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে।
  • জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে যোগ্যতাসম্পন্ন সকল ভারতবাসীই সরকারি চাকুরিতে নিযুক্ত হতে পারবে।
  • দেশীয় রাজারা দত্তকপুত্র গ্রহণের অধিকার ফিরে পাবেন।
  • সাম্রাজ্যবিস্তার নীতি পরিত্যক্ত হবে।
  • স্বত্ববিলোপ নীতিও সরকার প্রত্যাহার করে নেবে।
  • দেশীয় রাজাদের আশ্বস্ত করা হয় যে, কোম্পানির সঙ্গে তাদের এযাবৎ স্বাক্ষরিত সকল চুক্তি ও সন্ধিপত্রগুলি যথাযথ রক্ষিত হবে।

মহারানির ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য –

মহারানির ঘোষণাপত্র ভারতে দীর্ঘ একশত বছরের কোম্পানির রাজত্বের অবসান ঘটায়, পরিবর্তে সূচিত হয় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রত্যক্ষ শাসন। বস্তুতপক্ষে, 1773 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট থেকে ধাপে ধাপে ক্ষমতা হস্তান্তরের যে প্রক্রিয়া চলছিল, ইতিহাসের এই পর্বে তা সম্পূর্ণ হয়। ‘ভাইসরয়’ নামধারী রাজপ্রতিনিধির হাতে শাসনভার অর্পিত হয়।

সাধারণ ভারতবাসীর কাছে মহারানির ঘোষণাপত্র আসলে ছিল গালভরা প্রতিশ্রুতির সংকলন মাত্র। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এই ঘোষণায় যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার প্রায় কোনোটিই ভবিষ্যতে রক্ষিত হয়নি। ভারতবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ন্যায় বিচার ও প্রতিনিধিত্ব মূলক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের কোনো প্রচেষ্টা এতে ছিল না, বরং তা ছিল নতুন পাত্রে পুরাতন পানীয় পরিবেশনের অপচেষ্টা মাত্র। বাস্তবিকই শাসকের নাম ফলকের পরিবর্তন ব্যতীত শাসনের চরিত্রগত কোনোরূপ পরিবর্তন সাধিত হয়নি। ডঃ বিপানচন্দ্র একে ‘রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজি’ বলেই আখ্যায়িত করেছেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

মহারানির ঘোষণাপত্র কী এবং কখন জারি করা হয়?

1858 সালের 1 নভেম্বর ব্রিটিশ রানি ভিক্টোরিয়া ভারতের শাসনভার সরাসরি নিজের হাতে নেওয়ার ঘোষণা দেন। এটি এলাহাবাদে একটি রাজকীয় দরবারে পাঠ করা হয় এবং এটি “মহারানির ঘোষণাপত্র” নামে পরিচিত।

মহারানির ঘোষণাপত্র জারির কারণ কী ছিল?

মহারানির ঘোষণাপত্র জারির কারণ ছিল –
1. 1857 সালের মহাবিদ্রোহের পরিণতি – বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে।
2. ভারতীয়দের মন জয় করার চেষ্টা – বিদ্রোহের পর ভারতীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দূর করতে কিছু উদারনৈতিক নীতি ঘোষণা করা হয়।
3. সরকারি ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ – কোম্পানির শাসন শেষ করে ব্রিটিশ রাজতন্ত্র সরাসরি ভারত শাসন শুরু করে।

মহারানির ঘোষণাপত্রের মূল বিষয়গুলি কী ছিল?

মহারানির ঘোষণাপত্রের মূল বিষয়গুলি ছিল
1. ধর্মীয় স্বাধীনতা – সরকার ভারতীয়দের ধর্মে হস্তক্ষেপ করবে না।
2. চাকরিতে সমান সুযোগ – জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরি দেওয়া হবে।
3. দত্তকপুত্রের অধিকার – দেশীয় রাজারা দত্তকপুত্র গ্রহণ করতে পারবেন।
4. সাম্রাজ্যবিস্তার নীতি বন্ধ – আর নতুন এলাকা দখল করা হবে না।
5. স্বত্ববিলোপ নীতি বাতিল – জমিদারি বাজেয়াপ্ত করার নীতি প্রত্যাহার।

মহারানির ঘোষণাপত্র কি সত্যিই ভারতীয়দের জন্য উপকারী ছিল?

1. প্রতিশ্রুতির বনাম বাস্তবতা – ঘোষণায় অনেক আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে ব্রিটিশ শাসন আগের চেয়েও বেশি শোষণমূলক হয়ে ওঠে।
2. ধর্মীয় স্বাধীনতা সীমিত – পরে ব্রিটিশরা সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে উৎসাহিত করে।
3. চাকরিতে বৈষম্য – উচ্চপদে ভারতীয়দের নিয়োগ খুবই সীমিত ছিল।
4. রাজনৈতিক কৌশল – অনেক ঐতিহাসিক (যেমন – ডঃ বিপান চন্দ্র) একে “রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজি” বলে উল্লেখ করেছেন।

মহারানির ঘোষণাপত্রের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী ছিল?

মহারানির ঘোষণাপত্রের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ছিল
1. ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উত্থান – ব্রিটিশদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ভারতীয়দের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করে, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয়।
2. শাসন কাঠামোর পরিবর্তন – কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা শক্তিশালী হয় এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায়।
3. দেশীয় রাজ্যগুলির অবস্থান – রাজ্যগুলি ব্রিটিশদের অধীনস্থ মিত্রে পরিণত হয়।

মহারানির ঘোষণাপত্রকে কেন ‘পুরানো মদ নতুন বোতলে’ বলা হয়?

কারণ, শাসক শুধু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে পরিবর্তিত হলেও শোষণ ও নিয়ন্ত্রণের নীতি একই রয়ে যায়। ভারতীয়দের স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থই প্রাধান্য পায়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “মহারানির ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “মহারানির ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন