এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “গোরা উপন্যাসটি কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “গোরা উপন্যাসটি কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

গোরা উপন্যাসটি কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?
বাংলা উপন্যাসে স্বদেশচিন্তা ও জাতীয়তাবোধের জাগরণের এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গোরা’।
গোরা উপন্যাসের প্রকাশ –
1910 খ্রিস্টাব্দে ‘গোরা’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
গোরা উপন্যাসের বিষয়বস্তু –
উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হল – এর কেন্দ্রীয় চরিত্র গোরা (গৌরমোহন) একজন আইরিশ দম্পতির পুত্র। সে বিদেশি, বিধর্মী। নিজের জন্ম পরিচয় না জেনে একটি হিন্দু পরিবারে সে মানুষ হয়। নিষ্ঠাবান হিন্দু হিসেবে সে ক্রমশ ইংরেজ বিদ্বেষী ও খ্রিস্টবিরোধী হয়ে ওঠে। কিন্তু একসময়ে সে তাঁর প্রকৃত পরিচয় জানতে পারে। কিন্তু এত বড়ো আঘাতেও গোরা ভেঙে পড়েনি বা দূরে সরে যায়নি। আত্মপরিচয় জানার পর তার সমস্ত সংকীর্ণতা নিমেষে ভেঙে যায়। পালিকা মাতা আনন্দময়ীকে প্রণাম করে সে বলে – ‘মা, তুমিই আমার মা, যে মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলুম, তিনিই আমার ঘরের মধ্যে এসে বসেছিলেন। তোমার জাত নেই, বিচার নেই, ঘৃণা নেই, শুধু তুমি কল্যাণময়ী প্রতিমা। তুমিই আমার ভারতবর্ষ।’
গোরা উপন্যাসের জাতীয়তাবোধের জাগরণ –
সুবিশাল ‘গোরা’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথের দেশপ্রেম, মানবপ্রেম ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। আনন্দময়ীর মতো ভারতমাতার কাছেও কোনো জাত-পাতের ভেদাভেদ নেই, জাত থাকলে ভারতবর্ষ যুগে যুগে ‘মহামানবের মিলনক্ষেত্র’ হয়ে উঠত না। অপরিসীম সহনশীলতা ও সুগভীর স্নেহ দিয়ে ভারতবর্ষ বহু শতাব্দী ধরে কত বিচিত্র জনগোষ্ঠীকে বেঁধে রেখেছে। কবির ভারতবর্ষে সহস্র বৈচিত্র্য থাকতে পারে, কিন্তু সংকীর্ণতার কোনো স্থান নেই সেখানে। সংকীর্ণ জাত-পাত-বর্ণের গণ্ডী যারা ভাঙতে পেরেছে, তারাই কবির ভারতবর্ষের নাগরিকত্ব লাভ করে ধন্য হয়েছে। গোরা, সুচরিতা, আনন্দময়ী, বিনয়, ললিতা – এঁরা সকলেই সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে স্থান পেয়েছে ভারতমাতার অন্তরে।
গোরা উপন্যাসের মন্তব্য –
কবিগুরুর ‘গোরা’ উপন্যাসে জাতীয়তাবাদের অসাম্প্রদায়িক সর্বভারতীয় রূপটি তুলে ধরা হয়েছে। ঐতিহাসিকতায় এই উপন্যাসের গুরুত্ব অনন্য।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
গোরা উপন্যাসটি কে রচনা করেছেন?
গোরা উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেন। এটি বাংলা সাহিত্যের একটি কালজয়ী উপন্যাস।
গোরা উপন্যাসটি কখন প্রকাশিত হয়?
1910 খ্রিস্টাব্দে ‘গোরা’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
গোরা উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু কী?
উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো জাতি, ধর্ম, সংস্কৃতি ও প্রকৃত স্বদেশচিন্তা। গোরা নামক এক বিদেশি সন্তান হিন্দু সমাজে বড় হয়ে উঠে এবং শেষে তার প্রকৃত পরিচয় জানার পরেও সে ভারতবর্ষকে তার মা হিসেবে গ্রহণ করে।
গোরা চরিত্রটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
গোরা প্রথমে একজন গোঁড়া হিন্দু জাতীয়তাবাদী হিসেবে আবির্ভূত হয়, কিন্তু শেষে সে বুঝতে পারে যে প্রকৃত ভারতবর্ষ কোনো সংকীর্ণ ধর্ম বা জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আনন্দময়ী মায়ের মতো ভারতবর্ষ সবার জন্য উন্মুক্ত।
গোরা উপন্যাসে জাতীয়তাবাদী চেতনা কীভাবে ফুটে উঠেছে?
1. গোরা চরিত্রের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন যে প্রকৃত জাতীয়তাবাদ ধর্ম, বর্ণ বা সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে।
2. আনন্দময়ীর চরিত্রে ভারতমাতার আদর্শ ফুটে উঠেছে, যিনি সকলকে সমানভাবে ভালোবাসেন।
3. উপন্যাসে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতাবাদী চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে।
গোরা উপন্যাসে আনন্দময়ীর ভূমিকা কী?
আনন্দময়ী হলেন গোরার পালিকা মা। তিনি কোনো ধর্ম বা জাতির গণ্ডিতে আবদ্ধ নন। তার চরিত্রে ভারতমাতার রূপ ফুটে উঠেছে, যিনি সকল সন্তানকে সমানভাবে স্নেহ করেন।
গোরা উপন্যাসের শেষে গোরার উপলব্ধি কী ছিল?
উপন্যাসের শেষে গোরা বুঝতে পারে যে, ভারতবর্ষ কোনো বিশেষ ধর্ম বা জাতির নয়—এটি সবার। আনন্দময়ীকে প্রণাম করে সে বলে, “তুমিই আমার ভারতবর্ষ।”
গোরা উপন্যাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
গোরা উপন্যাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিল –
1. এটি ব্রিটিশ শাসনকালে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বার্তা দেয়।
2. রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শন এখানে স্পষ্টভাবে প্রকাশিত।
3. এটি শুধু একটি উপন্যাস নয়, বাঙালির জাতীয়তাবাদী চিন্তার একটি দলিল।
গোরা উপন্যাসটি বর্তমান সময়েও প্রাসঙ্গিক কেন?
আজও যখন সমাজে ধর্ম, বর্ণ ও জাতিভেদের সংঘাত দেখা যায়, ‘গোরা’ উপন্যাস আমাদের শেখায় যে প্রকৃত দেশপ্রেম মানে সকলকে বিভেদ করা নয়।
গোরা উপন্যাসের অন্যতম প্রধান বার্তা কী?
গোরা উপন্যাসের অন্যতম প্রধান বার্তা – “ভারতবর্ষ কোনো বিশেষ ধর্ম বা জাতির নয়, এটি সবার। সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে মানবতাই হল প্রকৃত জাতীয়তাবাদ।”
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “গোরা উপন্যাসটি কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “গোরা উপন্যাসটি কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।