এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়? জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কর্মসূচি কী ছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়? জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কর্মসূচি কী ছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে 1906 খ্রিস্টাব্দের 11ই মার্চ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে “জাতীয় শিক্ষা পরিষদ” প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল –
- জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল জাতীয়তাবাদী সাহিত্য, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা দানের মাধ্যমে এদেশের শিক্ষার্থীদের আত্ম-নির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। এবং জাতীয়স্বার্থ বিরোধী ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
- জাতীয় শিক্ষা পরিষদ মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা এবং জাতীয়তাবোধের প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি দেশপ্রেম জাগিয়ে ভারতীয়দের একটি মহান জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল।
জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কর্মসূচি কী ছিল?
কোনোপ্রকার সরকারি সাহায্য ছাড়াই জাতীয় শিক্ষা পরিষদের পরিচালনায় অসংখ্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুর দিকে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করে। প্রথমটি হল সাধারণ বিজ্ঞান ও কলাবিদ্যার জন্য ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ’ আর দ্বিতীয়টি হল কারিগরি শিক্ষার জন্য ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’। কারিগরি শিক্ষাকে সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করার জন্য জাতীয় শিক্ষা পরিষদ উদ্যোগ নেয়। মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করে এই পরিষদ।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রতিষ্ঠার পেছনে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের ভূমিকা কী ছিল?
1905 সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন ও স্বদেশি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই পরিষদ গঠিত হয়। এর লক্ষ্য ছিল ঔপনিবেশিক শিক্ষার বিকল্প একটি স্বাধীন শিক্ষাপদ্ধতি চালু করা।
জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?
জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল –
1. জাতীয়তাবাদী শিক্ষা প্রচার (বিজ্ঞান, সাহিত্য, কারিগরি শিক্ষা)।
2. মাতৃভাষায় শিক্ষাদান (ইংরেজির পরিবর্তে বাংলা মাধ্যমে শিক্ষা)।
3. স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল ভারতীয় গড়ে তোলা।
4. নৈতিক ও দেশপ্রেমমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটানো।
জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কী ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছিল?
1. বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ (সাধারণ বিজ্ঞান ও কলাবিদ্যা শিক্ষার জন্য)।
2. বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (কারিগরি শিক্ষার জন্য, যা পরে যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ-এ রূপান্তরিত হয়)।
জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিল?
1. সরকারি সাহায্য ছাড়াই স্বাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
2. ইংরেজির পরিবর্তে বাংলা মাধ্যমে শিক্ষাদান।
3. স্বদেশি কারিকুলাম তৈরি করে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকল্প দেওয়া।
কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ভূমিকা কী ছিল?
পরিষদ কারিগরি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও সর্বজনীন করার চেষ্টা করে এবং বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে, যা পরবর্তীতে ভারতের প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কর্মসূচিতে মাতৃভাষার গুরুত্ব কতটা ছিল?
এই পরিষদ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা দানের উপর জোর দিয়েছিল, যা ব্রিটিশ আমলে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার বিপরীতে একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ ছিল।
জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ধারণা কারা দিয়েছিলেন?
সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতা), তারকনাথ পালিত, অরবিন্দ ঘোষ, বিপিনচন্দ্র পাল প্রমুখ নেতারা এর প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
জাতীয় শিক্ষা পরিষদের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী ছিল?
এটি ভারতীয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষার ভিত্তি তৈরি করে এবং পরবর্তীতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলার জাতীয় বিদ্যালয় এবং স্বাধীন ভারতে মাতৃভাষায় শিক্ষার আন্দোলনকে প্রভাবিত করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়? জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কর্মসূচি কী ছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়? জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কর্মসূচি কী ছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন