বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উইলিয়াম কেরির কীরূপ অবদান ছিল?

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উইলিয়াম কেরির কীরূপ অবদান ছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উইলিয়াম কেরির কীরূপ অবদান ছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উইলিয়াম কেরির কীরূপ অবদান ছিল?
Contents Show

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উইলিয়াম কেরির কীরূপ অবদান ছিল?

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে প্রথম দিককার যেসব অগ্রণী পুরুষ পথপ্রদর্শকের ভূমিকা নিয়েছিলেন শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনের প্রাণপুরুষ উইলিয়াম কেরি ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। 1800 খ্রিস্টাব্দে একটি মাত্র কাঠের মুদ্রণ যন্ত্র নিয়ে তাঁর নেতৃত্বে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস যে যাত্রা শুরু করে, অল্পকালের মধ্যেই বাংলা মুদ্রণ শিল্পের জগতে তা বিপ্লব ঘটায়।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উইলিয়াম কেরির অবদান

উইলিয়াম কেরি কেবলমাত্র একজন ধর্মপ্রচারক ও মুদ্রণ ব্যবসায়ী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সুলেখক। 1812 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘ইতিহাসমালা’ গ্রন্থটি। তবে তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি হল ‘A Dictionary of Bengal Language’ নামক গ্রন্থটি।

ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার অল্পদিনের মধ্যেই তিনি বাংলা হরফের অসামান্য শিল্পী পঞ্চানন কর্মকারকে শ্রীরামপুরে নিয়ে আসেন। কেরি এবং তাঁর অন্যতম দুই সহযোগী জোশুয়া মাশম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ডের উদ্যোগেই শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে প্রথম বাংলা সাময়িকপত্র মাসিক ‘দিগ্দর্শন’ (এপ্রিল, 1818 খ্রিস্টাব্দ) এবং সাপ্তাহিক ‘সমাচার দর্পণ’ (মে, 1818) প্রকাশিত হয়। এখান থেকে ছাপা প্রথম বই ছিল বাইবেলের বঙ্গানুবাদ ‘মঙ্গল মতীয়ের সমাচার’। ক্রমে স্কুলপাঠ্য বই ছাড়াও অন্যান্য গ্রন্থ যেমন – মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের ‘বত্রিশ সিংহাসন’, ‘রাজাবলি’, রামরাম বসু রচিত ‘লিপিমালা’ প্রভৃতি ছাপা হয়।

প্রথমে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও কিছুটা পরে ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি’র সহযোগী হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশন প্রেস উদ্যোগী হয়। 1820 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এখানে মুদ্রণযন্ত্রের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল 14টি তে। কেরির জীবদ্দশায় 1832 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে লক্ষাধিক বই প্রকাশিত হয়েছিল।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উইলিয়াম কেরির মন্তব্য –

উইলিয়াম কেরি ছিলেন একাধারে সুলেখক, প্রকাশক, পুস্তক-বিক্রেতা ও মুদ্রণ ব্যবসায়ী। শিক্ষা-সংস্কারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সাফল্য লাভ যে অসম্ভব নয়, তা তিনি প্রমাণ করেছেন। প্রথম যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রয় সংস্থার মালিক হিসেবে তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

উইলিয়াম কেরি কে ছিলেন?

উইলিয়াম কেরি ছিলেন একজন ব্রিটিশ ধর্মপ্রচারক, ভাষাবিদ ও মুদ্রণ শিল্পের পথিকৃৎ। তিনি শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম এবং বাংলায় আধুনিক মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে কেরির প্রধান অবদান কী ছিল?

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে কেরির প্রধান অবদান ছিল –
1. তিনি 1800 সালে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন।
2. বাংলা হরফ উন্নয়নে পঞ্চানন কর্মকারকে নিয়োগ দেন।
3. প্রথম বাংলা সাময়িকী ‘দিগ্দর্শন’ (1818) ও ‘সমাচার দর্পণ’ প্রকাশ করেন।
4. বাংলা ভাষায় বাইবেল অনুবাদ ও স্কুলপাঠ্য বই প্রকাশে অগ্রণী ভূমিকা নেন।

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত প্রথম বই কোনটি?

প্রথম মুদ্রিত বই ছিল বাংলায় অনূদিত বাইবেলের অংশ ‘মঙ্গল মতীয়ের সমাচার’

উইলিয়াম কেরির লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ কোনগুলো?

উইলিয়াম কেরির লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলো হল – ‘ইতিহাসমালা’ (1812), ‘A Dictionary of Bengal Language’ (বাংলা-ইংরেজি অভিধান)।

বাংলা মুদ্রণ শিল্পে পঞ্চানন কর্মকারের ভূমিকা কী ছিল?

পঞ্চানন কর্মকার বাংলা টাইপ বা হরফ নির্মাণের দক্ষ শিল্পী ছিলেন। কেরি তাকে শ্রীরামপুরে নিয়ে এসে বাংলা মুদ্রণযন্ত্রের উন্নতি সাধন করেন।

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বই কী কী?

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বই হল ‘বত্রিশ সিংহাসন’ (মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার), ‘রাজাবলি’, ‘লিপিমালা’ (রামরাম বসু)।

উইলিয়াম কেরির সময়ে শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের সম্প্রসারণ কেমন ছিল?

1820 নাগাদ মুদ্রণযন্ত্রের সংখ্যা 14টিতে পৌঁছায় এবং 1832 সালের মধ্যে লক্ষাধিক বই প্রকাশিত হয়।

বাংলা সাংবাদিকতার বিকাশে কেরির ভূমিকা কী?

তিনি ‘দিগ্দর্শন’ (মাসিক) ও ‘সমাচার দর্পণ’ (সাপ্তাহিক) প্রকাশ করে বাংলা সাংবাদিকতার ভিত্তি স্থাপন করেন।

উইলিয়াম কেরি কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?

উইলিয়াম কেরি 1834 সালে মৃত্যুবরণ করেন।

বাংলা মুদ্রণ শিল্পে উইলিয়াম কেরির ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

তিনি শুধু ধর্মপ্রচারক নন, বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও মুদ্রণ শিল্পের অগ্রদূত। তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলা বই ছাপার প্রযুক্তি সহজলভ্য হয়, যা পরবর্তীতে শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উইলিয়াম কেরির কীরূপ অবদান ছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উইলিয়াম কেরির কীরূপ অবদান ছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

দার কমিশন কী? দার কমিশন (1948 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল?

দার কমিশন কী? দার কমিশন (1948 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল?

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

কোনো প্রিজমের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখাও যে চ্যুতিকোণ(δ) = i1+i2−A

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা