এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার বিকাশে ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের কীরূপ অবদান ছিল? অথবা, ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ – টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার বিকাশে ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের কীরূপ অবদান ছিল? অথবা, ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ – টীকা লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার বিকাশে ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের কীরূপ অবদান ছিল?
অথবা, ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ – টীকা লেখো।
কায়েমী স্বার্থরক্ষাকারী ও প্রভুত্ববাদী ঔপনিবেশিক বিজ্ঞানচর্চার প্রেক্ষাপটে ভারতীয়দের মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার সম্প্রসারণ এবং জাতীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার নির্মাণে এগিয়ে এসেছিলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় এম. ডি. ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার।
পেশায় চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকার মানুষের অন্ধবিশ্বাস দূর করে তাদের যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার পরামর্শ দেন। বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাদার ইউজিন লাঁফোর সহায়তায় 1876 খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ (আই. এ. সি. এস.) বা ‘ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা’।
বিশুদ্ধ বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণা, বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতার আয়োজন প্রভৃতিতে এই প্রতিষ্ঠান তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আই. এ. সি. এস. -এর নিজস্ব পত্রিকা ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স’-সহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিজ্ঞান পত্রিকায় এখানকার বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হত। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন, মেঘনাদ সাহা প্রমুখ খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও গবেষক নানা সময়ে এই প্রতিষ্ঠানে গবেষণাকর্মে নিযুক্ত ছিলেন। ডঃ রমন এখানে গবেষণা করেই তাঁর বিখ্যাত ‘রমন ক্রিয়া’ আবিষ্কার করেন এবং 1930 খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
বিজ্ঞানী মেঘনাথ সাহা পরবর্তীকালে এখানে একটি সক্রিয় গবেষণা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে এক্স রশ্মি, আলোকবিজ্ঞান, চৌম্বকত্ব, রমন ক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়ে নানা মৌলিক গবেষণার কাজ হয়।
ঔপনিবেশিক বাংলা তথা ভারতে বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে আই. এ. সি. এস. এবং তার প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের নাম নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য। আজও এই প্রতিষ্ঠান সগৌরবে তার অস্তিত্ব বজায় রেখে চলেছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার কে ছিলেন?
ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার ছিলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় এম.ডি. এবং একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক ও বিজ্ঞান প্রচারক। তিনি বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (IACS) কী?
এটি একটি স্বাধীন বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যা 1876 সালে ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয়দের মধ্যে বিশুদ্ধ বিজ্ঞানচর্চা ও মৌলিক গবেষণাকে উৎসাহিত করা।
IACS -এর প্রতিষ্ঠার পিছনে ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের উদ্দেশ্য কী ছিল?
ঔপনিবেশিক আমলে ইউরোপীয়দের প্রাধান্যপূর্ণ বিজ্ঞানচর্চার পরিবর্তে ভারতীয়দের মধ্যে স্বাধীন ও যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য।
IACS -এর উল্লেখযোগ্য অবদান কী কী?
IACS -এর উল্লেখযোগ্য অবদান হল –
1. গবেষণা – রমন ক্রিয়া (সি.ভি. রমন), এক্স-রে, আলোকবিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণা।
2. বিজ্ঞানী তৈরি – জগদীশচন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মতো বিজ্ঞানীদের গবেষণাক্ষেত্র।
3. প্রকাশনা – ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ।
ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের বিজ্ঞানচর্চার দর্শন কী ছিল?
তিনি অন্ধবিশ্বাসের বিরোধিতা করে যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রসারে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর মতে, জাতীয় উন্নয়নের জন্য স্বাধীন বিজ্ঞানচর্চা অপরিহার্য।
IACS -এর সাথে জড়িত কিছু বিখ্যাত বিজ্ঞানীর নাম লেখো।
IACS -এর সাথে জড়িত কিছু বিখ্যাত বিজ্ঞানীর নাম হল –
1. সি.ভি. রমন (নোবেল বিজয়ী, রমন ক্রিয়া আবিষ্কার),
2. জগদীশচন্দ্র বসু (উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও পদার্থবিদ্যা),
3. মেঘনাদ সাহা (থার্মোডাইনামিক্স),
4. আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (শিক্ষাবিদ ও গবেষক)।
রমন ক্রিয়া আবিষ্কারে IACS -এর ভূমিকা কী?
1928 সালে সি.ভি. রমন IACS -এর গবেষণাগারে আলোর বিচ্ছুরণ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে “রমন ক্রিয়া” আবিষ্কার করেন, যা তাঁকে 1930 সালে নোবেল পুরস্কার এনে দেয়।
আজও IACS কি সক্রিয়?
হ্যাঁ, IACS বর্তমানে কলকাতায় একটি স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উচ্চমানের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদানকে কীভাবে মূল্যায়ন করা হয়?
তাঁকে ভারতীয় বিজ্ঞান আন্দোলনের পথিকৃৎ বলা হয়, কারণ তিনি ঔপনিবেশিক যুগে ভারতীয়দের জন্য একটি স্বাধীন বিজ্ঞান গবেষণার কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন।
IACS -এর প্রতিষ্ঠা বাংলার বিজ্ঞান ইতিহাসে কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এটি ছিল ভারতের প্রথম স্বদেশী বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যা ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলির উপর নির্ভরতা কমিয়ে জাতীয় স্তরে বিজ্ঞানচর্চার ভিত্তি তৈরি করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার বিকাশে ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের কীরূপ অবদান ছিল? অথবা, ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ – টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার বিকাশে ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের কীরূপ অবদান ছিল? অথবা, ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ – টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন