মাধ্যমিক – জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় – স্নায়ুতন্ত্র – বিষয়সংক্ষেপ

Rahul

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” অধ্যায়ের ‘প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র‘ বিভাগের উপ-অধ্যায় ‘স্নায়বিক নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়; স্নায়বিক পথ; স্নায়ুকোশ, নিউরোগ্লিয়া এবং স্নায়ু; স্নায়ুর প্রকারভেদ; স্নায়ুগ্রন্থি; স্নায়ুসন্নিধি‘ -এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

নিউরোগ্লিয়া এবং স্নায়ু; স্নায়ুর প্রকারভেদ; স্নায়ুগ্রন্থি; স্নায়ুসন্নিধি – বিষয়সংক্ষেপ
নিউরোগ্লিয়া এবং স্নায়ু; স্নায়ুর প্রকারভেদ; স্নায়ুগ্রন্থি; স্নায়ুসন্নিধি – বিষয়সংক্ষেপ

স্নায়বিক নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়; স্নায়বিক পথ; স্নায়ুকোশ, নিউরোগ্লিয়া এবং স্নায়ু; স্নায়ুর প্রকারভেদ; স্নায়ুগ্রন্থি; স্নায়ুসন্নিধি

বিষয়সংক্ষেপ

  • রাসায়নিক (হরমোন) ক্ষরণ ছাড়াও প্রাণীদেহ গ্রাহক দ্বারা পরিবেশের পরিবর্তন অনুভব করে সেই অনুযায়ী সাড়াপ্রদান করতে পারে। যেমন – দরজায় কেউ বেল বাজালে তা শুনে (শ্রবণ গ্রাহক) আমরা পেশির সাহায্যে (কারক) দরজা খুলে দিই। স্নায়ুতন্ত্র প্রাণীদেহের এই ভৌত সমন্বয় ঘটিয়ে থাকে।
  • নির্দিষ্ট স্নায়বিক পথে আমরা বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনার পরিবর্তনে সাড়া দিই। এই স্নায়বিক পথটি হল উদ্দীপনা-গ্রাহক-স্নায়ুকেন্দ্র-কারক-সাড়াপ্রদান।
  • স্নায়ুতন্ত্রের একক হল নিউরোন বা স্নায়ুকোশ। এর গঠনগত তিনটি অংশ হল ডেনড্রন (সংজ্ঞাবহ প্রবর্ধক), কোশদেহ এবং অ্যাক্সন (চেষ্টীয় প্রবর্ধক)। এটি উদ্দীপনা প্রেরণে সাহায্য করে।
  • নিউরোন ছাড়াও নিউরোগ্লিয়া বা গ্লিয়াল কোশ স্নায়ুতন্ত্রে দেখা যায়। এরা নিউরোনকে ধারণ করা ছাড়াও প্রতিরক্ষা, পুষ্টি প্রদান, উদ্দীপনার দ্রুত প্রবাহে সহায়তা প্রভৃতি কাজ করে থাকে।
  • মূলত নিউরোন কোশের অ্যাক্সন নামক লম্বা প্রবর্ধকগুলি একসাথে একাধিক আবরণে আবৃত হয়ে স্নায়ু তৈরি করে।
  • প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের অন্তর্গত স্নায়ুসংলগ্ন নিউরোনের কোশদেহগুলি যোগকলা দ্বারা আবৃত হয়ে যে স্ফীত গ্রন্থি তৈরি করে তাকে স্নায়ুগ্রন্থি বলে। এরা মূলত গ্রাসনালী, পাচকগ্রন্থি প্রভৃতির কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • দুটি স্নায়ুপ্রবর্ধক উদ্দীপনা প্রবাহের জন্য যে স্থানে মিলিত হয়, তাকে স্নায়ুসন্নিধি বা সাইন্যাপস বলে।

স্নায়ুতন্ত্রের প্রকারভেদ; মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ড; প্রতিবর্ত ক্রিয়া ও প্রতিবর্ত পথ

বিষয়সংক্ষেপ

  • মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন – মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড নিয়ে গঠিত প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র, মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড থেকে নির্গত যথাক্রমে করোটি স্নায়ু ও সুষুম্না স্নায়ু নিয়ে গঠিত প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং সমবেদী ও পরাসমবেদী স্নায়ু নিয়ে গঠিত স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র।
  • মস্তিষ্কের প্রধান অংশ হল অগ্রমস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্স যা আমাদের বুদ্ধি-বৃত্তি, চিন্তা-ভাবনা, শ্রবণ-দর্শন প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া অগ্রমস্তিষ্কের থ্যালামাস চাপ, তাপ বুঝতে; খিদে-তৃষ্ণা অনুভবে হাইপোথ্যালামাস কাজ করে থাকে। অগ্র ও পশ্চাৎ মস্তিষ্কের কাজে সমন্বয় ঘটায় মধ্যমস্তিষ্ক। পশ্চাৎ মস্তিষ্কের পনস অংশটি হৃৎপিন্ডের সংকোচন-প্রসারণে, লঘুমস্তিষ্কে বা সেরিবেলাম দেহের ভারসাম্য রক্ষায় এবং সুষুম্নাশীর্ষক বা মেডালা অবলংগাটা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সুষুম্নাকাণ্ড প্রতিবর্ত ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
  • যে স্নায়ুপথে প্রাণীরা তাৎক্ষণিক ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো উদ্দীপনার প্রভাবে সাড়া দেয়, তাকে প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে। হাঁচি, কাশি, চোখের পলক পড়া প্রভৃতি হল জন্মগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া। আবার সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা প্রভৃতি হল অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়া। প্রাত্যহিক জীবনে হাঁচি, কাশি ইত্যাদি প্রতিবর্তের গুরুত্ব অসীম।

চোখ-মানুষের জ্ঞানেন্দ্রিয়; উপযোজন; দৃষ্টির ত্রুটি এবং সংশোধন পদ্ধতি

বিষয়সংক্ষেপ

  • চোখ হল মানুষের একটি জ্ঞানেন্দ্রিয়, যা আলোক উদ্দীপনা গ্রহণে ও দর্শনে সাহায্য করে। এটির প্রধান গঠনগত অংশগুলি হল – অক্ষিগোলক, চোখের রক্ষণমূলক অংশ ও অক্ষিপেশি।
  • অক্ষিগোলক মূলত তিনটি স্তর দিয়ে গঠিত। এর একদম বাইরে দুটি তন্তুসমৃদ্ধ স্তর স্ক্লেরা ও অচ্ছোদপটল বা কর্নিয়া থাকে। অক্ষিগোলকের মধ্যস্তরটি রক্তবাহসমৃদ্ধ কৃষ্ণমণ্ডল বা কোরয়েড, সিলিয়ারি বডি ও আইরিস বা কনীনিকা এই তিনটি অংশ নিয়ে নিয়ে গঠিত। অক্ষিগোলকের ভিতরের দিকে থাকে স্নায়বিক অন্তঃস্তর, রেটিনা। এটি রড ও কোন কোশ নিয়ে তৈরি।
  • চোখের ভিতর দ্বি-উত্তল স্থিতিস্থাপক লেন্স থাকে। অক্ষিগোলকে তিনটি প্রকোষ্ঠ থাকে। কর্নিয়া ও আইরিসের মধ্যবর্তী অগ্রপ্রকোষ্ঠ এবং আইরিস ও লেন্সের মধ্যবর্তী পশ্চাৎ প্রকোষ্ঠে অ্যাকুয়াস হিউমর নামে স্বচ্ছ তরল উপস্থিত থাকে। লেন্স ও রেটিনার মধ্যবর্তী ভিট্রিয়াস প্রকোষ্ঠে ভিট্রিয়াস হিউমর নামে স্বচ্ছ তরল উপস্থিত থাকে।
  • চোখকে রক্ষা করে এর রক্ষণশীল গঠনগুলি, যেমন – কনজাংটিভা বা নেত্রবর্ত্মকলা, অক্ষিপল্লব ও অশ্রুগ্রন্থি।
  • অক্ষিকোটরের ভিতরে অক্ষিগোলক নানা পেশি দ্বারা যুক্ত থাকে।
  • কিছু প্রাণীদের ক্ষেত্রে দুটি চোখের মাধ্যমে একটি মাত্র প্রতিবিম্ব তৈরি হয়, যেমন – মানুষ, প্যাঁচা, বেড়াল (শিকারি প্রাণী) প্রভৃতি। একে দ্বিনেত্র বা স্টিরিওস্কোপিক দৃষ্টি বলে। পক্ষান্তরে, যেসব প্রাণীরা শিকার হয়, দেখা যায় তাদের দুটি চোখ দিয়ে দুটি আলাদা প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। একে একনেত্র দৃষ্টি বলে।
  • চোখের সিলিয়ারি পেশি ও লেন্সের স্থিতিস্থাপকতার জন্য কোনো বস্তু কাছে বা দূরে থাকলেও দ্রুত চোখ তা নির্ণয় করে ঠিকভাবে দেখতে সাহায্য করে, একে চোখের উপযোজন বা অ্যাকোমোডেশন বলে।
  • অক্ষিগোলকের রেটিনা স্তরের সামনেই প্রতিবিম্ব গঠিত হলে তাকে মায়োপিয়া বলে। এই রোগে দূরের জিনিস দেখতে অসুবিধা হয়। এক্ষেত্রে চশমায় অবতল লেন্স ব্যবহার করতে হয়। উপযোজন ক্ষমতা হ্রাস পেলে চোখে নানা ত্রুটি দেখা দেয়। আবার হাইপারমেট্রোপিয়া বা হাইপেরোপিয়া ও প্রেসবায়োপিয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবিম্ব রেটিনা স্তরের পিছনে তৈরি হয়। ফলে কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা হয়। এক্ষেত্রে চশমায় উত্তল লেন্স ব্যবহার করতে হয়।
  • নানা কারণে চোখের লেন্সের প্রোটিন বিনষ্ট হলে বা তাতে রঙ্গক জমা হলে রেটিনায় অস্পষ্ট প্রতিবিম্ব তৈরি হয়ে থাকে। একে ছানি বলে।

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” অধ্যায়ের ‘প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র‘ বিভাগের উপ-অধ্যায় ‘স্নায়বিক নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়; স্নায়বিক পথ; স্নায়ুকোশ, নিউরোগ্লিয়া এবং স্নায়ু; স্নায়ুর প্রকারভেদ; স্নায়ুগ্রন্থি; স্নায়ুসন্নিধি‘ -এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
 

Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান - জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় - প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় - স্নায়ুতন্ত্র - সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় – স্নায়ুতন্ত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় - স্নায়ুতন্ত্র

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় – স্নায়ুতন্ত্র – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

ভারতের দ্বীপ অঞ্চল-

ভারতের দ্বীপ অঞ্চল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় – স্নায়ুতন্ত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় – স্নায়ুতন্ত্র – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

ভারতের দ্বীপ অঞ্চল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ভারতের পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

মাধ্যমিক – জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় – স্নায়ুতন্ত্র – বিষয়সংক্ষেপ