এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ -এর ভূমিকা কী ছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ -এর ভূমিকা কী ছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ -এর ভূমিকা কী ছিল?
ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থায় অবহেলিত বিজ্ঞানচর্চার প্রক্ষাপটে ভারতীয়দের মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার সম্প্রসারণ এবং জাতীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার নির্মাণে এগিয়ে এসেছিলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় এম. ডি. ‘জাতীয় বিজ্ঞানচর্চার জনক’ ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার।
তৎকালীন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার রিচার্ড টেম্পল, ফাদার লাঁফো, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ ব্যক্তির সহযোগিতায় ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার 1876 খ্রিষ্টাব্দের 29 শে জুলাই 210, বৌবাজার স্ট্রীটে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স’ (IACS), যার MOREDম অধিকর্তা হন প্যারিমোহন মুখোপাধ্যায়।
এই প্রতিষ্ঠানের বিশ্বমানের গবেষণাগারে সম্পূর্ণ নিজস্ব তত্ত্বাবধানে স্বাধীনভাবে পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নিয়মিত মৌলিক গবেষণা এবং এই কেন্দ্রের আধুনিক লেকচার থিয়েটার হলে বিজ্ঞানবিষয়ক বক্তৃতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। IACS নিজেদের বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণামূলক কাজগুলি প্রকাশের জন্য ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স’ নামে একটি পত্রিকায় প্রকাশ করার পাশাপাশি দেশবিদেশের বিভিন্ন বিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকায় এখানকার গবেষক ও বিজ্ঞানীদের গবেষণার কাজ প্রকাশের ব্যবস্থা করে।
বিজ্ঞানী সি. ভি. রমন এখানে গবেষণা করেন এবং 1930 খৃষ্টাব্দে তাঁর বিখ্যাত ‘রমন এফেক্ট’-এর জন্য পদার্থবিদ্যায় ‘নোবেল পুরস্কার’ পান এবং 1933 খ্রিস্টাব্দে কে. এস. কৃষ্ণান ‘Crystal Magnetism’ এর ওপর গবেষণা করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেন।
এখানে যেসকল খ্যতনামা বিজ্ঞানী গবেষণা করেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জগদীশ চন্দ্র বসু, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, চুনীলাল বোস, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, মেঘনাদ সাহা, কে. এস. কৃষ্ণান প্রমুখ।
ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা জনপ্রিয় করে তুলতে ভারতীয়দের বিজ্ঞান চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে এবং নারীদের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনা জাগ্রত করতে IACS গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (IACS) কী এবং কে এটি প্রতিষ্ঠা করেন?
1876 সালের 29 জুলাই ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার কলকাতার 210, বৌবাজার স্ট্রিটে IACS প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল ভারতের প্রথম স্বদেশী বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (IACS) -এর প্রতিষ্ঠার পেছনে মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
ঔপনিবেশিক আমলে বিজ্ঞানশিক্ষার অবহেলার প্রেক্ষাপটে ভারতীয়দের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চা প্রসার এবং জাতীয় পর্যায়ে গবেষণাগার নির্মাণ করা।
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (IACS) -এর গবেষণার মূল ক্ষেত্রগুলি কী ছিল?
মূলত পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন গবেষণার উপর জোর দেওয়া হত। এখানে মৌলিক গবেষণা, লেকচার থিয়েটারে বিজ্ঞানবিষয়ক আলোচনা এবং গবেষণাপত্র প্রকাশের ব্যবস্থা ছিল।
IACS -এর সাথে জড়িত বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের নাম উল্লেখ করুন।
IACS -এর সাথে জড়িত বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের নাম হল – সি. ভি. রমন (নোবেল বিজয়ী, রমন এফেক্ট আবিষ্কার), জগদীশ চন্দ্র বসু (অন্তর্জাল ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান), মেঘনাদ সাহা (তাপীয় আয়নীকরণ তত্ত্ব), কে. এস. কৃষ্ণান (ক্রিস্টাল ম্যাগনেটিজম গবেষণা)।
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (IACS) কীভাবে বিজ্ঞানচর্চাকে জনপ্রিয় করেছিল?
1. ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স প্রকাশের মাধ্যমে গবেষণা প্রচার।
2. বিজ্ঞানীদের জন্য স্বাধীন গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি।
3. নারী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষা প্রসারে উদ্যোগ।
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (IACS) -এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান কী?
রমন এফেক্ট -এর আবিষ্কার (1930), যা সি. ভি. রমনকে নোবেল পুরস্কার এনে দেয় এবং ভারতীয় বিজ্ঞানকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করে।
IACS বর্তমানে কীভাবে কাজ করছে?
এটি এখনও কলকাতায় একটি প্রতিষ্ঠিত গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে এবং ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়।
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (IACS) প্রতিষ্ঠায় অন্যান্য কাদের অবদান ছিল?
স্যার রিচার্ড টেম্পল, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের সমর্থন ছিল।
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (IACS) কেন “জাতীয় বিজ্ঞানচর্চার জনক” হিসেবে পরিচিত?
কারণ এটি ভারতীয়দের দ্বারা ভারতীয়দের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রথম বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র ছিল, যা বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে স্বাধীন গবেষণাকে উৎসাহিত করেছিল।
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (IACS) -এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
এটি ভারতে আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার ভিত্তি স্থাপন করে এবং পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (IISc) ও TIFR -এর মতো প্রতিষ্ঠানের পথিকৃৎ হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ -এর ভূমিকা কী ছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ -এর ভূমিকা কী ছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন