এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল কেন? কৃষক আন্দোলনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ভূমিকা কী?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল কেন? কৃষক আন্দোলনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ভূমিকা কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল কেন?
1917 খ্রিস্টাব্দে বলশেভিক দলের প্রচেষ্টায় রুশ বিপ্লবের সাফল্য কংগ্রেসের অভ্যন্তরে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার বিকাশ ঘটায়। সেই সঙ্গে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জনিত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাটাই, করভার, সাম্রাজ্যবাদী শোষণ এবং শ্রমিক-কৃষক শ্রেণিকে জাতীয় আন্দোলনে শামিল করার ক্ষেত্রে কংগ্রেসি নেতৃবৃন্দের অনীহা কংগ্রেসের যুব সদস্যদের মধ্যে বামপন্থী চিন্তাধারার বিকাশ ঘটায়।
কৃষক আন্দোলনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ভূমিকা কী?
কৃষক আন্দোলনে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ভূমিকা
বিংশ শতকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক আন্দোলনগুলি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনে জাতীয় কংগ্রেসের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।
জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে অসহযোগ আন্দোলন –
কংগ্রেসের উদ্যোগে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে কৃষক আন্দোলনও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কংগ্রেসের উদ্যোগে বাংলার মেদিনীপুর, পাবনা, কুমিল্লা, রাজশাহি, বগুড়া, রংপুর, বীরভূম, দিনাজপুর, বাঁকুড়া প্রভৃতি জেলায়, বিহারের ভাগলপুর, মুজফ্ফরপুর, পূর্ণিয়া, মুঙ্গের, দ্বারভাঙ্গা, মধুবনী প্রভৃতি জেলায়, যুক্তপ্রদেশের হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর প্রভৃতি জেলায় বাংলা প্রতিষ্ঠান কৃষক আন্দোলন চলে।
জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে একা আন্দোলন –
1921 খ্রিস্টাব্দের শেষ ও 1922 খ্রিস্টাব্দের শুরুতে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা অঞ্চলে মাদারি পাশি ও বাবা গরিবদাসের নেতৃত্বে ‘একা’ নামে কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। কংগ্রেস এই আন্দোলনকে সমর্থন জানায়।
জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে বারদৌলি সত্যাগ্রন্থ-
জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি অঞ্চলে 1928 খ্রিস্টাব্দে এক শক্তিশালী কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন গান্ধিবাদী কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেল।
জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে আইন অমান্য আন্দোলন –
কংগ্রেসের উদ্যোগে 1930 খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য শুরু হলে কৃষক আন্দোলন আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে। উত্তরপ্রদেশের আগ্রা, রায়বেরিলি, বারাবাঁকি, লখনউ, প্রতাপগড়, বাংলার মেদিনীপুর, শ্রীহট্ট, বিহারের বিভিন্ন স্থানে, গুজরাটের সুরাট, বারদৌলি, খেদা প্রভৃতি জেলায় কৃষক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে ভারত ছাড়ো আন্দোলন –
কংগ্রেসের নেতৃত্বে 1942 খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হলে বিহারের মুঙ্গের, ভাগলপুর, মুজফ্ফ্ফরপুর, পূর্ণিয়া, সাঁওতাল পরগনা, বাংলার মেদিনীপুর, দিনাজপুর, গুজরাটের সুরাট, খান্দেশ, ব্রোচ, উড়িষ্যার তালচের প্রভৃতি জেলায় শক্তিশালী কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে।
কৃষক আন্দোলনে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের উপসংহার –
সমগ্র বিশ শতক জুড়ে ভারতে সংগঠিত কৃষক আন্দোলনগুলি কংগ্রেসের নেতৃত্বে সমৃদ্ধ হয়। প্রাথমিক পর্বে কংগ্রেস কৃষকদের স্বার্থ উপেক্ষা করলেও পরবর্তীকালে তারা কৃষকদের স্বার্থের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়। ফলে কৃষকরা কংগ্রেসি রাজনীতির ঘনিষ্ঠ হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
কৃষক আন্দোলনে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সাফল্য কী ছিল?
কৃষক আন্দোলনে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সাফল্য ছিল –
1. কৃষকদের জাতীয় আন্দোলনে যুক্ত করা – কৃষকদের ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে যুক্ত করে গণভিত্তি বাড়ায়।
2. স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে তোলা – প্যাটেল, নেহরু প্রমুখ নেতারা কৃষকদের সংগঠিত করেন।
3. ভূমি ও কর সংস্কারের দাবি – বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে কৃষকদের অর্থনৈতিক দাবি জোরালো হয়।
কংগ্রেসের বামপন্থী প্রবণতা কি জাতীয় আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিল?
হ্যাঁ, বামপন্থীরা শ্রমিক-কৃষকদের সংগঠিত করে জাতীয় আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপান্তরিত করে।
1. সমাজতান্ত্রিক চিন্তার প্রসার – জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতারা বামধারার প্রতি আকৃষ্ট হন।
2. কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান – পরে এই ধারা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলির জন্ম দেয়।
জাতীয় কংগ্রেসের কৃষক আন্দোলনে সমর্থন কি সবসময় ছিল?
1. প্রাথমিক পর্যায়ে – কংগ্রেস কৃষকদের স্বার্থ উপেক্ষা করলেও পরবর্তীতে তাদের গুরুত্ব দেয়।
2. গান্ধীবাদী নেতৃত্ব – বল্লভভাই প্যাটেল, জওহরলাল নেহরু প্রমুখ নেতারা কৃষকদের সংগঠিত করেন।
3. বামপন্থীদের চাপ – সমাজতান্ত্রিক ও কমিউনিস্টদের চাপে কংগ্রেস কৃষক-শ্রমিক ইস্যুতে সক্রিয় হয়।
অসহযোগ আন্দোলন (1920-1922 খ্রিস্টাব্দ) কীভাবে কৃষক আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিল?
গান্ধীজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলা, বিহার ও যুক্তপ্রদেশে কৃষকরা জমিদার ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়।
জাতীয় কংগ্রেসে বারদৌলি সত্যাগ্রহ (1928 খ্রিস্টাব্দ) কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে গুজরাটের বারদৌলিতে কৃষকরা কর বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সফল প্রতিরোধ গড়ে তোলে, যা পরবর্তীতে কংগ্রেসের কৃষক সংযোগকে শক্তিশালী করে।
প্রাথমিক পর্যায়ে কংগ্রেস কৃষকদের প্রতি কী মনোভাব দেখিয়েছিল?
প্রথমদিকে কংগ্রেস জমিদার ও শিল্পপতিদের সমর্থন রাখায় কৃষকদের স্বার্থ উপেক্ষা করলেও, পরবর্তীতে গান্ধীবাদী নেতৃত্ব কৃষকদের সংগ্রামে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে।
কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল কেন গঠিত হয়?
1934 খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল। উদ্দেশ্য ছিল –
1. কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী গোষ্ঠীকে সুদৃঢ় করা এবং
2. শ্রমিক-কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা ও স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের শামিল করা।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল কেন? কৃষক আন্দোলনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ভূমিকা কী?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল কেন? কৃষক আন্দোলনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ভূমিকা কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন