এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে একটি টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে একটি টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে একটি টীকা লেখো।
দলিত মতাদর্শ ও অধিকার নিয়ে ভারতের জাতীয় আন্দোলনের প্রাণপুরুষ গান্ধিজি এবং দলিত আন্দোলনে সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা ডঃ বি. আর. আম্বেদকরের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক –
- প্রথমত – আম্বেদকর বিশ্বাস করতেন যে হিন্দু সমাজে প্রচলিত বর্ণাশ্রম প্রথাই দলিত সমাজের উপর সকল অনাচার ও অস্পৃশ্যতার কারণ। অপরপক্ষে গান্ধিজি ছিলেন বর্ণাশ্রম প্রথার সমর্থক কিন্তু অস্পৃশ্যতার প্রবল বিরোধী। বর্ণাশ্রম ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ণ রেখেই তিনি অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ ও দলিত সম্প্রদায়ের কল্যাণে মনোনিবেশ করেন। এইভাবে বর্ণাশ্রম প্রথার সমর্থন ও অসমর্থনের প্রশ্নে এই দুই ব্যক্তিত্বের মধ্যে বিতর্ক দানা বাঁধে।
- দ্বিতীয়ত – গান্ধিজি চেয়েছিলেন জাতীয়তার ভিত্তিতে সমস্ত শ্রেণিগুলির মধ্যে সমন্বয় ও ঐক্য স্থাপন। কিন্তু আম্বেদকর বলেছিলেন তা সম্ভব নয়। কেন-না, ব্রাহ্মণদের শোষণে দলিতরা ইতিমধ্যেই অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় রয়েছে।
- তৃতীয়ত – গান্ধিজি জোর দিয়েছিলেন সামগ্রিকভাবে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উপর। স্পর্শকাতর বিষয়গুলি জাতীয় আন্দোলনকে দুর্বল করুক তা তিনি চাননি।
- আম্বেদকরের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন। তিনি বলেছিলেন জাতীয়তাবাদ সঠিকভাবে তখনই সঞ্চারিত হবে যখন দলিতদের উপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে সমাজের মূল স্রোতে গ্রহণ করা হবে। তাদের সমানাধিকার দেওয়াটা ভীষণ প্রয়োজনীয় বলে আম্বেদকর অভিমত দিয়েছেন।
- চতুর্থত – গান্ধিজি ভারতের অতীত ইতিহাসকে উজ্জ্বলভাবে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আম্বেদকর বলেছিলেন এর মধ্যে বহু কলঙ্কজনক অধ্যায় রয়েছে। যেমন, দলিতদের যুগ-যুগান্তর ধরে নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা।
- পঞ্চমত – অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, দলিতদের উন্নতি প্রভৃতি বিষয়কে ‘গান্ধিজি দেখেছিলেন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। অন্যদিকে আম্বেদকর আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে দলিত সমস্যার বিচার করেছিলেন।
দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্কের মন্তব্য –
দলিত মতাদর্শ ও অধিকার নিয়ে এই দুই মহাপুরুষের বক্তব্যের মধ্যে আপাত পার্থক্য থাকলেও দলিত সমাজের উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধনে দুজনেই যে সমান আন্তরিক ছিলেন সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
গান্ধি ও আম্বেদকরের মধ্যে দলিত ইস্যুতে মূল পার্থক্য কী ছিল?
1. আম্বেদকর বর্ণাশ্রম প্রথাকে দলিতদের নিপীড়নের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে এর বিলোপ চেয়েছিলেন।
2. গান্ধিজি বর্ণাশ্রমকে ধর্মীয় কাঠামো হিসাবে মেনে নিলেও অস্পৃশ্যতার বিরোধিতা করতেন এবং সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে দলিত উন্নয়ন চাইতেন।
জাতীয় ঐক্য নিয়ে গান্ধি ও আম্বেদকরের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে ভিন্ন ছিল?
1. গান্ধিজি জাতীয় আন্দোলনে সব শ্রেণির সমন্বয় চেয়েছিলেন, দলিত ইস্যুকে স্বাধীনতা সংগ্রামের থেকে আলাদা রাখতে চাইতেন।
2. আম্বেদকর মনে করতেন, দলিতদের সমান অধিকার না দিলে প্রকৃত জাতীয় ঐক্য অসম্ভব। ব্রাহ্মণ্যবাদী শোষণ বন্ধ করাই তাঁর লক্ষ্য ছিল।
অস্পৃশ্যতা দূরীকরণে গান্ধি ও আম্বেদকরের পদ্ধতিগত পার্থক্য কী ছিল?
1. গান্ধিজি ধর্মীয় ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অস্পৃশ্যতা দূর করতে চেয়েছিলেন (হরিজন আন্দোলন)।
2. আম্বেদকর আইনি ও রাজনৈতিক সংস্কার (সংরক্ষণ, পৃথক নির্বাচন) এবং হিন্দু ধর্ম ত্যাগের (বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ) মাধ্যমে দলিতদের মুক্তি চেয়েছিলেন।
ভারতের ইতিহাস নিয়ে গান্ধি ও আম্বেদকরের বিতর্ক কী ছিল?
1. গান্ধিজি ভারতের ঐতিহ্যকে গৌরবান্বিত হিসেবে দেখতেন।
2. আম্বেদকর বলতেন, হিন্দু সমাজের ইতিহাসে দলিতদের উপর নির্যাতন একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।
গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্কের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?
দলিত আন্দোলনে এই বিতর্ক দুটি ভিন্ন কৌশলকে তুলে ধরে –
1. গান্ধিজির পথ – ধর্মীয় সংস্কার ও সামাজিক সমঝোতা।
2. আম্বেদকরের পথ – রাজনৈতিক অধিকার, আইনি সংস্কার ও সামাজিক বিদ্রোহ। উভয়েই দলিতদের উন্নয়ন চাইলেও তাদের পদ্ধতি ছিল ভিন্ন।
আম্বেদকর কেন গান্ধির ‘হরিজন’ শব্দটির বিরোধিতা করেছিলেন?
আম্বেদকর মনে করতেন, “হরিজন” (ঈশ্বরের মানুষ) শব্দটি অস্পৃশ্যতার সমস্যাকে রোমান্টিক করে তুলছে, কিন্তু এটি দলিতদের রাজনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা দেয় না। তিনি “দলিত” (নিপীড়িত) শব্দ ব্যবহার করে তাদের সংগ্রামকে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন।
পুনা চুক্তি (1932 খ্রিস্টাব্দ) কেন গুরুত্বপূর্ণ?
1. ব্রিটিশ সরকার দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা (Communal Award) দিলে গান্ধিজি অনশন শুরু করেন।
2. আম্বেদকর চেয়েছিলেন দলিতরা নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করুক, কিন্তু গান্ধির চাপে পুনা চুক্তি-তে সংরক্ষিত আসনে যৌথ নির্বাচন ব্যবস্থা গৃহীত হয়।
3. এই চুক্তি দলিতদের জন্য সংরক্ষণ বৃদ্ধি করলেও আম্বেদকর মনে করতেন এটি তাদের স্বাধীন রাজনৈতিক শক্তি কমিয়ে দিয়েছে।
গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক কি আজও প্রাসঙ্গিক?
হ্যাঁ, কারণ –
1. গান্ধিজির দর্শন সামাজিক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় সংস্কারের উপর জোর দেয়।
2. আম্বেদকরের দর্শন আইনি অধিকার, শিক্ষা ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের উপর গুরুত্ব দেয়। আজও দলিত আন্দোলনে এই দুটি ধারা (সংস্কার বনাম বিপ্লব) দেখা যায়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে একটি টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে একটি টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন