আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যবইয়ের সপ্তম পাঠের তৃতীয় বিভাগ, “নদীর বিদ্রোহ” থেকে পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে।

নিম্নরেখ পদগুলির কারক ও অকারক সম্পর্ক এবং বিভক্তি ও অনুসর্গ নির্দেশ করো।
পাঁচদিন অবিরত বৃষ্টি হইয়া আজ এই বিকালের দিকে বর্ষণ থামিয়াছে।
উত্তর – পাঁচদিন – অধিকরণকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি। আজ – অধিকরণকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
নদেরচাঁদ বলিল, আর বৃষ্টি হবে না, কী বলো?
উত্তর – নদেরচাঁদ – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি। বৃষ্টি – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে।
উত্তর – পাগলামিতে – করণকারক, ‘তে’ বিভক্তি।
এতক্ষণ নদেরচাঁদ একটি ক্ষীণস্রোতা নদীর কথা ভাবিতেছিল।
উত্তর – এতক্ষণ – অধিকরণকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি। ক্ষীণস্রোতা নদীর – সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি।
তারপর নামিল বৃষ্টি, সে কী মুষলধারায় বর্ষণ!
উত্তর – মুষলধারায় (আকাদেমি বানান অভিধান অনুযায়ী ‘মুশলধারা’) – করণকারক, ‘য়’ বিভক্তি।
নদী হইতে একটা অশ্রুতপূর্ব শব্দ উঠিতেছিল।
উত্তর – নদী হইতে – অপাদানকারক, ‘হইতে’ অনুসর্গ। শব্দ – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
অন্ধকারে অতি সাবধানে লাইন ধরিয়া হাঁটিতে হাঁটিতে নদেরচাঁদ স্টেশনের দিকে ফিরিয়া চলিল।
উত্তর – সাবধানে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। স্টেশনের দিকে – অধিকরণকারক, ‘দিকে’ অনুসর্গ।
বাক্যগুলি থেকে সমাসবদ্ধ পদ বেছে নিয়ে তার ব্যাসবাক্য-সহ সমাস নির্ণয় করো।
নূতন সহকারী একবার মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে চাহিয়া বলিল, আজ্ঞে হ্যাঁ।
উত্তর – সহকারী – সহায়তা করে যে (উপপদ তৎপুরুষ)। মেঘাচ্ছন্ন – মেঘ দ্বারা আচ্ছন্ন (করণ তৎপুরুষ)।
নদেরচাঁদের এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক।
উত্তর – অস্বাভাবিক – নয় স্বাভাবিক (নঞ্ তৎপুরুষ)।
প্যাসেঞ্জার আর মালগাড়িগুলির তীব্র বেগে ছুটাছুটি নিয়ন্ত্রিত করিবার দায়িত্ব যাহাদের সেও তো তাহাদেরই একজন।
উত্তর – মালগাড়ি – মাল পরিবহণের গাড়ি (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)। ছুটাছুটি – ছুটে ছুটে যে কাজ (ব্যতিহার বহুব্রীহি)।
দেশের সেই ক্ষীণস্রোতা নির্জীব নদীটি অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়ার মতোই তার মমতা পাইয়াছিল।
উত্তর – ক্ষীণস্রোতা – ক্ষীণ স্রোত আছে যার (বহুব্রীহি)। নির্জীব – নেই জীব (জীবন) যার (নঞ্ বহুব্রীহি)। অসুস্থ – নয় সুস্থ (নঞ্ তৎপুরুষ)। দুর্বল – বলের অভাব (অব্যয়ীভাব)।
বড়ো হইয়া একবার অনাবৃষ্টির বছরে নদীর ক্ষীণ স্রোতধারাও …।
উত্তর – অনাবৃষ্টির – নয় বৃষ্টি (নঞ্ তৎপুরুষ), তার। স্রোতধারা – স্রোতের ধারা (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভূগিতে ভুগিতে পরমাত্মীয়া মরিয়া যাওয়ার উপক্রম করিলে মানুষ যেমন কাঁদে।
উত্তর – দুরারোগ্য – আরোগ্যের অভাব (অব্যয়ীভাব)। পরমাত্মীয়া – পরম যে আত্মীয়া (সাধারণ কর্মধারয়)। উপক্রম – ক্রমের সদৃশ (অব্যয়ীভাব)।
নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো।
নদেরচাঁদ বলিল, আর বৃষ্টি হবে না, কী বলো? (প্রশ্ন পরিহার করো)
উত্তর – আর বৃষ্টি হবে কি না তা নদেরচাঁদ জিজ্ঞাসা করিল।
নদেরচাঁদ ছেলেমানুষের মতো ঔৎসুক্য বোধ করিতে লাগিল। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর – নদেরচাঁদ কি ছেলেমানুষের মতো ঔৎসুক্য বোধ করিতে লাগিল না?
পাঁচদিনের আকাশ ভাঙা বৃষ্টি না জানি নদীকে আজ কী অপরূপ রূপ দিয়েছে? (বিস্ময়বোধক বাক্যে)
উত্তর – আহা! পাঁচদিনের আকাশভাঙা বৃষ্টি না জানি নদীকে আজ কী অপরূপ রূপ দিয়েছে!
ত্রিশ বছর বয়সে নদীর জন্য নদেরচাঁদের এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক। (জটিল বাক্যে)
উত্তর – যেহেতু ত্রিশ বছর বয়স হয়েছে তাই নদীর জন্য নদেরচাঁদের এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক।
নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে। (না-বাচক বাক্যে)
উত্তর – নিজের এই পাগলামিতে আনন্দ উপভোগ না করে পারে না।
নদেরচাঁদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর – নদেরচাঁদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল না কি?
চোখের পলকে কোথায় যে অদৃশ্য হইয়া গেল চিঠিখানা! (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর – চোখের পলকে চিঠিখানা কোথায় অদৃশ্য হল তা বোঝা গেল না।
ঘণ্টা তিনেক বিশ্রাম করিয়া মেঘের যেন নূতন শক্তি সঞ্চিত হইয়াছে। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর – ঘণ্টা তিনেক বিশ্রাম করিল এবং তা করিয়া মেঘের যেন নূতন শক্তি সঞ্চিত হইল।
নদেরচাঁদ বসিয়া বসিয়া ভিজিতে লাগিল, উঠিল না। (সরল বাক্যে)
উত্তর – নদেরচাঁদ বসিয়া বসিয়া ভিজিতে লাগিলেও উঠিল না।
স্টেশনের কাছে নূতন রং করা ব্রিজটির জন্য এতকাল নদেরচাঁদ গর্ব অনুভব করিয়াছে। (জটিল বাক্যে)
উত্তর – স্টেশনের কাছে যে নূতন রং করা যে ব্রিজটি আছে তার জন্য এতকাল নদেরচাঁদ গর্ব অনুভব করিয়াছে।
নির্দেশ অনুযায়ী বাচ্য পরিবর্তন করো।
পাঁচদিন নদীকে দেখা হয় নাই। (কর্তৃবাচ্যে)
উত্তর – পাঁচদিন নদীকে দেখি নাই।
চিরদিন নদীকে সে ভালোবাসিয়াছে। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – চিরদিন তার দ্বারা নদীকে ভালোবাসা হইয়াছে।
এতক্ষণ নদেরচাঁদ একটি সংকীর্ণ ক্ষীণস্রোতা নদীর কথা ভাবিতেছিল। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – এতক্ষণ নদেরচাঁদের দ্বারা একটি সংকীর্ণ ক্ষীণস্রোতা নদীর কথা ভাবা হইতেছিল।
নদেরচাঁদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল। (কর্তৃবাচ্যে)
উত্তর – নদেরচাঁদ ভারী আমোদ বোধ করিল।
ঘণ্টা তিনেক বিশ্রাম করিয়া মেঘের যেন নূতন শক্তি সঞ্চিত হইয়াছে। (কর্তৃবাচ্যে)
উত্তর – ঘণ্টা তিনেক বিশ্রাম করিয়া মেঘ যেন নূতন শক্তি সঞ্চয় করিয়াছে।
বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাঁদের। (কর্তৃবাচ্যে)
উত্তর – বড়ো ভয় পাইতে লাগিল নদেরচাঁদ।
নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – নদীর বিদ্রোহের কারণ তার দ্বারা বোঝা হইয়াছে।
পারিলেও মানুষ কি তাকে রেহাই দিবে? (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – পারিলেও মানুষের দ্বারা কি তাকে রেহাই দেওয়া হইবে?
আজ তার মনে হইল কী প্রয়োজন ছিল ব্রিজের? (কর্তৃবাচ্যে)
উত্তর – আজ সে মনে ভাবিল কী প্রয়োজন ছিল ব্রিজের?
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার সপ্তম পাঠের তৃতীয় বিভাগ, ‘নদীর বিদ্রোহ’ এর উপর ভিত্তি করে কিছু পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থেকে থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় আমার সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি সহায়তা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এছাড়া, এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন