‘দলিত’ কাদের বলা হত? দলিত আন্দোলনে আম্বেদকরের ভূমিকা

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “’দলিত’ কাদের বলা হত? দলিত আন্দোলনে আম্বেদকরের ভূমিকা কী ছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “‘দলিত’ কাদের বলা হত? দলিত আন্দোলনে আম্বেদকরের ভূমিকা কী ছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

'দলিত' কাদের বলা হত? দলিত আন্দোলনে আম্বেদকরের ভূমিকা কী ছিল?

‘দলিত’ কাদের বলা হত?

মারাঠা শব্দ ‘দলন’ থেকে দলিত শব্দের উৎপত্তি, যার আক্ষরিক অর্থ পদদলিত বা অবহেলিত। ভারতীয় বর্ণ-বিভক্ত সমাজ ব্যবস্থায় প্রান্তিক স্তরে অবস্থিত শোষিত, বঞ্চিত, অস্পৃশ্য জনগোষ্ঠী ‘দলিত’ নামে পরিচিত ছিল। গান্ধিজি ‘দলিত’ শব্দের পরিবর্তে ‘হরিজন’ (ঈশ্বরের সন্তান) শব্দটি ব্যবহারের পক্ষপাতী ছিলেন। সাধারণভাবে মাহার, নাদার, চামার, এঝাবা, পুলায়া, নমঃশূদ্র প্রভৃতি জনগোষ্ঠী দলিত নামে পরিচিত ছিল। স্বাধীন ভারতের সংবিধানে এদেরকে ‘তপশিলি জাতি’, ‘তপশিলি উপজাতি’ নামে সমাজভুক্ত করা হয়েছে।

দলিত আন্দোলনে আম্বেদকরের ভূমিকা কী ছিল?

দলিত আন্দোলনের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন বাবাসাহেব ভীমরাও রামজী আম্বেদকর। হিন্দু সমাজের অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে তিনি জোড়ালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। 1927 খ্রিস্টাব্দে তাঁর নেতৃত্বে ‘মাহার সত্যাগ্রহ’ অনুষ্ঠিত হয়। 1930 খ্রিস্টাব্দে তাঁর নেতৃত্বে কলারাম মন্দিরে প্রবেশের দাবিতে সত্যাগ্রহ আন্দোলন গড়ে ওঠে। স্বাধীন ভারতে তাঁর নেতৃত্বে রচিত নতুন সংবিধান অস্পৃশ্যতাকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

‘দলিত’ কারা?

‘দলিত’ শব্দটি মারাঠি শব্দ ‘দলন’ (অর্থ – পদদলিত বা অবহেলিত) থেকে এসেছে। এটি ভারতের বর্ণভিত্তিক সমাজে নিম্নস্তরের শোষিত, বঞ্চিত ও অস্পৃশ্য সম্প্রদায়কে বোঝায়। গান্ধিজি এদের ‘হরিজন’

আম্বেদকর দলিত আন্দোলনে কী ভূমিকা পালন করেছিলেন?

ডঃ বি. আর. আম্বেদকর দলিতদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে মাহার সত্যাগ্রহ (1927 খ্রিস্টাব্দ) ও কলারাম মন্দির প্রবেশ আন্দোলন (1930 খ্রিস্টাব্দ) সংঘটিত হয়। স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনায় তাঁর অবদানের ফলে অস্পৃশ্যতা বেআইনি ঘোষিত হয়।

দলিত ও হরিজন শব্দের মধ্যে পার্থক্য কী?

দলিত ও হরিজন শব্দের মধ্যে পার্থক্য –
1. দলিত – শোষিত ও বঞ্চিত সম্প্রদায়ের স্বতন্ত্র পরিচয় বোঝায় (আম্বেদকর এই শব্দ ব্যবহার করতেন)।
2. হরিজন – গান্ধিজি প্রবর্তিত শব্দ, অর্থ “ঈশ্বরের সন্তান”; কিন্তু অনেক দলিত এটিকে পিতৃতান্ত্রিক মনে করেন।

সংবিধানে দলিতদের জন্য কী ব্যবস্থা রয়েছে?

ভারতীয় সংবিধানের তপশিলি জাতি (SC) ও তপশিলি উপজাতি (ST) তালিকায় এদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষা, চাকরি ও রাজনীতিতে আরক্ষণ (সংরক্ষণ) সুবিধা প্রদান করা হয়।

দলিত আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো কী কী?

দলিত আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো হল –
1. মাহার সত্যাগ্রহ (1927 খ্রিস্টাব্দ) – জলপানির অধিকার আদায়।
2. কলারাম মন্দির আন্দোলন (1930 খ্রিস্টাব্দ) – ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
3. ভারতীয় সংবিধান (1950 খ্রিস্টাব্দ) – অস্পৃশ্যতা বিলোপ ও সমান অধিকার স্বীকৃতি।

আম্বেদকর বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন কেন?

হিন্দু বর্ণব্যবস্থার বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য 1956 সালে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং লক্ষাধিক দলিতকে তাঁর অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করেন।

দলিত সাহিত্য কী?

দলিতদের জীবনসংগ্রাম, বঞ্চনা ও অধিকারের কথা প্রকাশকারী সাহিত্য। উদাহরণ – ওমপ্রকাশ বাল্মীকির ‘জুথান’

বর্তমানে দলিতদের অবস্থান কেমন?

আইনি সুরক্ষা ও সংরক্ষণ থাকলেও সামাজিক বৈষম্য এখনও বিদ্যমান। তবে শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতা বেড়েছে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “’দলিত’ কাদের বলা হত? দলিত আন্দোলনে আম্বেদকরের ভূমিকা কী ছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “’দলিত’ কাদের বলা হত? দলিত আন্দোলনে আম্বেদকরের ভূমিকা কী ছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

কোনো প্রিজমের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখাও যে চ্যুতিকোণ(δ) = i1+i2−A

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা