এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়েছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়েছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়েছিল?
বিরাশি হাজার বর্গমাইল আয়তন বিশিষ্ট নিজাম শাসিত হায়দ্রাবাদ ছিল ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তম দেশীয় রাজ্য। এখানকার শাসক মুসলিম হলেও জনসংখ্যার শতকরা 85 ভাগই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত।
নিজামের ভারত বিদ্বেষ –
রাজ্যের সংখ্যাগোরিষ্ঠ জনগণ অর্থাৎ হিন্দুরা ভারতে যোগদানের পক্ষপাতী হলেও নিজাম তার স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে উদ্যোগী ছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ‘রাজাকার’ নামে এক উগ্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাহিনী গড়ে তুলে সংখ্যাগোরিষ্ঠ হিন্দু জনসাধারণের ওপর আক্রমণ ও অত্যাচার চালাতে থাকেন।
জটিলতা বৃদ্ধি –
এই সময় হায়দ্রাবাদ রাজ্যে সংঘটিত দুটি ঘটনা নিজামের অবস্থানকে জটিলতর করে তোলে।
- প্রথমত – 1947 খ্রিস্টাব্দে হায়দ্রাবাদ রাজ্য কংগ্রেস ভারতভুক্তির দাবিতে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করলে রাজাকার বাহিনী ও প্রশাসনের যৌথ আক্রমণ চলতে থাকে। ফলে শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহ সশস্ত্র সংগ্রামের রূপ নেয়।
- দ্বিতীয়ত –1946 খ্রিস্টাব্দে হায়দ্রাবাদের তেলেঙ্গানায় কমিউনিস্টদের উদ্যোগে সশস্ত্র কৃষক সংগ্রাম শুরু হয়। প্রশাসন ও রাজাকার বাহিনির নির্লজ্জ অত্যাচার সত্ত্বেও মাদ্রাজ প্রদেশের উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত এক বিরাট অঞ্চলে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে।
অপারেশন পোলো –
এইরকম জটিল পরিস্থিতিতে 1948 খ্রিস্টাব্দে জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরির নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদে প্রবেশ করে এবং অচিরেই সমগ্র রাজ্যটি দখল করে নেয়। 1949 খ্রিস্টাব্দে নিজাম ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন এবং তাকে ‘রাজপ্রমুখ’ উপাধি দিয়ে হায়দ্রাবাদের সাংবিধানিক প্রধান পদে রাখা হয়। 1950 খ্রিস্টাব্দের 26 জানুয়ারি হায়দ্রাবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতভুক্ত হয়।
মন্তব্য –
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশীয় রাজ্য হায়দ্রাবাদ স্বাধীন ভারতের অন্যতম অঙ্গরাজ্যরূপে আত্মপ্রকাশ করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভৌগোলিক ও জনসংখ্যাগত অবস্থা কী ছিল?
হায়দ্রাবাদ ছিল ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তম দেশীয় রাজ্য, যার আয়তন ছিল বিরাশি হাজার বর্গমাইল। শাসক নিজাম মুসলিম হলেও জনসংখ্যার 85% ছিল হিন্দু।
নিজাম কেন ভারতভুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন?
নিজাম তার স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে চেয়েছিলেন এবং ভারতের সঙ্গে যোগদানে অনিচ্ছুক ছিলেন। তিনি ‘রাজাকার’ নামে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক বাহিনী গঠন করে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার চালান।
রাজাকার বাহিনী কী ভূমিকা পালন করেছিল?
রাজাকার বাহিনী হিন্দু জনগণের ওপর হামলা, লুটপাট ও অত্যাচার চালিয়ে হায়দ্রাবাদে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল।
হায়দ্রাবাদে সত্যাগ্রহ আন্দোলন কীভাবে শুরু হয়?
1947 সালে হায়দ্রাবাদ রাজ্য কংগ্রেস ভারতভুক্তির দাবিতে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করলে রাজাকার বাহিনী ও প্রশাসন হিংসাত্মক দমননীতি প্রয়োগ করে।
তেলেঙ্গানায় কৃষক বিদ্রোহের প্রভাব কী ছিল?
1946 সালে তেলেঙ্গানায় কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয়, যা প্রশাসনের দমনপীড়ন সত্ত্বেও মাদ্রাজ প্রদেশের উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
অপারেশন পোলো কী এবং কখন এটি পরিচালিত হয়?
1948 সালে জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদে প্রবেশ করে (অপারেশন পোলো) এবং রাজ্যটি দখল করে নেয়।
হায়দ্রাবাদ কখন আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতভুক্ত হয়?
নিজাম 1949 সালে ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন এবং 1950 সালের 26 জানুয়ারি হায়দ্রাবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়।
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ভূমিকা কী ছিল?
সর্দার প্যাটেলের দৃঢ় নেতৃত্বে হায়দ্রাবাদকে ভারতভুক্ত করা সম্ভব হয় এবং তিনি দেশীয় রাজ্যগুলির একত্রীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
নিজামের পরিণতি কী হয়েছিল?
নিজামকে ‘রাজপ্রমুখ’ (সাংবিধানিক প্রধান) পদ দেওয়া হয়, কিন্তু তার স্বাধীন শাসনের অবসান ঘটে।
হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তির ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?
এটি ভারতের একত্রীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতে অন্তর্ভুক্তির নীতি প্রতিষ্ঠা করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়েছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়েছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন