ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা লেখো।

Rohit

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা লেখো
ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা লেখো
Contents Show

ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা লেখো।

অথবা, ভারতের কৃষিকার্যে জলসেচের গুরুত্ব কতখানি?

ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের গুরুত্ব –

পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল অঞ্চল মৌসিনরাম (চেরাপুঞ্জি) ভারতে অবস্থান করলেও একাধিক কারণে ভারতের কৃষিকাজে জলসেচের প্রয়োজন হয়, যেমন –

মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা –

ভারতের বৃষ্টিব্যবস্থা মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে কখনও খরা আবার কখনও বন্যার সৃষ্টি হয়। তাই ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষিজমিতে জলসেচ ব্যবস্থা অপরিহার্য।

শীতকালীন বৃষ্টিপাতের অভাব –

ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্যের চাহিদা মেটাতে বর্ষাকালীন চাষের পাশাপাশি শীতকালেও খাদ্যশস্য ও রবিশস্যের চাষ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু শীতকালে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জলের চাহিদা মেটাতে জলসেচের প্রয়োজন। উদাহরণ – বিহার ও উত্তরপ্রদেশে জলসেচের অগ্রগতিতে রবিশস্যের উৎপাদন অনেকখানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন –

ভারতের সব স্থানে সমান বৃষ্টিপাত হয় না। উত্তর ভারতে পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং দক্ষিণ ভারতে পশ্চিম থেকে পূর্বে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। তাই সর্বত্র কৃষিকার্যের জন্য উপযুক্ত জলসেচের প্রয়োজন।

উচ্চফলনশীল শস্যের চাষ –

স্বাধীনোত্তর ভারতে সবুজ বিপ্লবের কারণে উচ্চফলনশীল শস্যের চাষ বেড়েছে। উচ্চফলনশীল বীজ রোপণের জন্য প্রচুর জলের প্রয়োজন। এই জলের চাহিদা মেটানোর জন্য জলসেচ প্রয়োজনীয়। উদাহরণ – পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থানে গম চাষের উন্নতিতে জলসেচের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা –

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন। যেসব মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা কম সেইসব মৃত্তিকায় জলসেচন অপরিহার্য। উদাহরণ – মহারাষ্ট্রের পূর্বাংশের মৃত্তিকায় খনিজের পরিমাণ বেশি থাকায় জলধারণ ক্ষমতা কম এবং জলসেচ অত্যন্ত জরুরি।

শস্যের জল-চাহিদার পার্থক্য –

ভারতে উৎপন্ন সমস্ত ফসলের জলের চাহিদা সমান নয়। ধান, পাট প্রভৃতি ফসলের জলের চাহিদা বেশি। গমের ক্ষেত্রে জলের চাহিদা মাঝারি, অন্যদিকে জোয়ার, বাজরা, রাগী প্রভৃতি ফসলের জলের চাহিদা কম, তাই যে ফসলে জলের চাহিদা বেশি তার জন্য উপযুক্ত সেচ কার্যের প্রয়োজন। উদাহরণ – ওড়িশায় পাট চাষের জন্য হীরাকুঁদ পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম।

বহুফসলি শস্যের চাষ –

একই জমি থেকে বছরে একাধিক ফসল পাওয়ার জন্য শস্যাবর্তন পদ্ধতির উন্নতি ঘটানো হয়েছে যা একমাত্র জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে সম্ভব। উদাহরণ – পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাংশে কৃষির উন্নতিতে ময়ূরাক্ষী ও দামোদর পরিকল্পনার ভূমিকা অপরিসীম।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ভারতীয় কৃষিতে জলসেচ কেন প্রয়োজন?

ভারতের কৃষিতে জলসেচ প্রয়োজন কারণ –
1. মৌসুমি বৃষ্টিপাত অনিশ্চিত এবং অসমভাবে বণ্টিত।
2. শীতকালে বৃষ্টিপাতের অভাব থাকে, ফলে রবিশস্য চাষের জন্য জলসেচ দরকার।
3. উচ্চফলনশীল শস্য (HYV) চাষের জন্য বেশি জল প্রয়োজন।
4. মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন।
5. ধান, পাটের মতো জল-সরবরাহ নির্ভর ফসলের চাষের জন্য সেচ অপরিহার্য।

জলসেচ ছাড়া ভারতের কৃষি কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

জলসেচ ছাড়া –
1. ফসল উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, বিশেষত খরা-প্রবণ অঞ্চলে।
2. শীতকালীন (রবি) শস্য চাষ ব্যাহত হবে।
3. উচ্চফলনশীল শস্যের উৎপাদন কমে যাবে, যা খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করবে।
4. কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস পেতে পারে।

ভারতের কোন অঞ্চলে জলসেচের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন?

1. শুষ্ক ও অর্ধ-শুষ্ক অঞ্চল – রাজস্থান, গুজরাটের কিছু অংশ।
2. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল – মহারাষ্ট্রের পূর্বাংশ, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর কিছু অংশ।
3. উত্তর-পশ্চিম ভারত – পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ (গম ও ধান চাষের জন্য)।

জলসেচের উন্নতিতে সবুজ বিপ্লব কীভাবে সাহায্য করেছে?

1. উচ্চফলনশীল বীজ (HYV) চাষের জন্য নিয়মিত জল সরবরাহ প্রয়োজন, যা জলসেচের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
2. পাঞ্জাব, হরিয়ানায় নলকূপ ও নহর ব্যবস্থার মাধ্যমে গম ও ধানের উৎপাদন বেড়েছে।
3. বহুফসলি চাষের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

জলসেচের প্রধান উৎসগুলি কী কী?

1. নদী ও খাল – নদী সংযোগ প্রকল্প (দামোদর ভ্যালি, ভাকরা নাঙ্গাল)।
2. কূপ ও নলকূপ – বিশেষত উত্তর-পশ্চিম ভারতে।
3. ট্যাঙ্ক ও জলাশয় – দক্ষিণ ভারতে প্রচলিত (তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ)।
4. বৃষ্টির জল সংরক্ষণ – জলাধার ও চেক ড্যাম তৈরি।

জলসেচের অত্যধিক ব্যবহারের কী কোনো ক্ষতিকর প্রভাব আছে?

হ্যাঁ, জলসেচের অত্যধিক ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব আছে। যেমন –
1. ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নিচে নেমে যাওয়া (পাঞ্জাব, হরিয়ানায় সমস্যা)।
2. মৃত্তিকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি (রাজস্থানের কিছু অংশে)।
3. জলাবদ্ধতা ও মৃত্তিকা ক্ষয় (অতিরিক্ত সেচের কারণে)।

জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ভারত সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

1. প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চয়ী যোজনা (PMKSY) – জল সংরক্ষণ ও সেচ সুবিধা বাড়ানো।
2. নদী সংযোগ প্রকল্প – নদীর জল বণ্টনের মাধ্যমে শুষ্ক অঞ্চলে জল পৌঁছানো।
3. ড্রিপ ও স্প্রিংকলার সেচের প্রসার – জল সাশ্রয়ের জন্য উৎসাহিত করা।

ভবিষ্যতে জলসেচ ব্যবস্থার কী উন্নতি প্রয়োজন?

1. জল সংরক্ষণ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি (ড্রিপ সেচ, রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং)।
2. ভূগর্ভস্থ জলের অত্যধিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ।
3. নদী-ভিত্তিক সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ।
4. কৃষকদের আধুনিক সেচ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলতে কী বোঝো

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বলতে কী বোঝো

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র কী? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্রের পার্থক্য

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্রিজমের মধ্য দিয়ে সাদা আলোর বিচ্ছুরণ চিত্রসহ আলোচনা করো।

উত্তল লেন্স কীভাবে সদ্‌, অবশীর্ষ ও খর্বাকার প্রতিবিম্ব গঠন করে তা রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখাও।

অবতল লেন্সকে কিছু প্রিজমের সমন্বয়রূপে কল্পনা করে অপসারী ক্রিয়ার ব্যাখ্যা করো।

স্বল্পদৃষ্টিজনিত ত্রুটি কাকে বলে? কীভাবে স্বল্পদৃষ্টিজনিত ত্রুটি দূর করা যায়?

দীর্ঘদৃষ্টিজনিত ত্রুটি কী? এই ত্রুটি কীভাবে দূর করা যায়?