নবম শ্রেণি বাংলা – হিমালয় দর্শন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের তৃতীয় পাঠের প্রথম অধ্যায়, ‘হিমালয় দর্শন’ -এর কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

নবম শ্রেণি - বাংলা - হিমালয় দর্শন - ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Contents Show

‘হিমালয় দর্শন’ -প্রবন্ধাংশ অবলম্বনে যাত্রাপথে লেখিকার রেলগাড়ি চড়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।

অভিজ্ঞতার বর্ণনা – ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধাংশে লেখিকা বেগম রোকেয়া হিমালয়ান রেলগাড়িতে হিমালয় দর্শনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। খেলনা গাড়ির মতো গাড়িগুলি খুব ছোটো ও নীচু। গাড়িতে চলার সময় যাত্রীরা অনায়াসে নামাওঠা করতে পারে। আঁকাবাঁকা পথে ‘কটাটটা’ শব্দ করে উত্তরে ও দক্ষিণে এঁকেবেঁকে গাড়িগুলি চলে। রেলপথের দু-ধারে রয়েছে মনোরম দৃশ্য। কোথাও বা উঁচু চূড়া আবার কোথাও ঘন অরণ্য। প্রকৃতির এই সুন্দর পরিবেশে রেলগাড়িতে ভ্রমণ লেখিকাকে সত্যিই রসসিক্ত করে তোলে।

‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধাংশ অনুসরণে লেখিকার যাত্রাপথের বর্ণনা দাও।

যাত্রাপথের বর্ণনা – ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধের বর্ণনা অনুযায়ী লেখিকা বেগম রোকেয়ার যাত্রাপথ যথেষ্ট চড়াই উতরাই ছিল। তারই মধ্য দিয়ে রেলগাড়ি চলেছে। পথের দু-ধারের উঁচু চূড়া কিংবা নিবিড় অরণ্য লেখিকাকে আকৃষ্ট করে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চ হলেও প্রথমে শীত অনুভূত হয় না। নীচু উপত্যকায় কুয়াশাকে নদী বলেই ভুল হয়। দূরে সারি সারি হরিদ্বর্ণ চা ক্ষেত্রগুলি প্রকৃতির মনোরম শোভাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। রেলপথের পাশে রয়েছে ঝরনা। ঝরনার ছন্দধারার কলকল্লোলগীতিতে যেন মানবমনে সুরমুর্ছনার সৃষ্টি হয়।

“হরিদ্বর্ণ চায়ের ক্ষেত্রগুলি প্রাকৃতিক শোভা আরও শতগুণ বৃদ্ধি করিয়াছে।” – চা ক্ষেত্রগুলির বর্ণনা করো।

চা ক্ষেত্রের বর্ণনা – হিমালয়ের কোলে পাহাড়ের ঢালু অংশে চায়ের ক্ষেত্রগুলি অবস্থিত। সবুজ রঙের এই ক্ষেত্রগুলি প্রাকৃতিক শোভাকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। দূরে সারি সারি চা ক্ষেত্রগুলি অত্যন্ত সুন্দর। মাঝে মাঝে মানুষ চলাচলের জন্য সংকীর্ণ পথ। এই পথগুলি যেন ধরণির সীমন্ত। নিবিড় শ্যামল বন যেন বসুমতীর ঘন কেশপাশ এবং পথগুলি যেন আঁকাবাঁকা সিঁথি। সবুজ চা গাছগুলি যেন অরণ্যের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধাংশে বেগম রোকেয়া দেখিয়েছেন – হিমালয়ের পার্বত্যপথে চা বীথিকা এভাবেই শোভাবর্ধন করেছে।

“… আমরা প্রাণ ভরিয়া জলপ্রবাহ দেখিতে পাই,” – কে, কোথায় জলপ্রপাত দেখেছিলেন? হিমালয় দর্শনে জলপ্রপাত তাকে কীভাবে আনন্দ দিয়েছিল?

‘হিমালয় দর্শন’ গদ্যাংশের লেখিকা বেগম রোকেয়া হিমালয় যাত্রাপথে জলপ্রপাত দেখেছিলেন।

যেভাবে আনন্দ দিয়েছিল – রেলপথে যাত্রাকালে জলপ্রপাত বা নির্ঝর লেখিকার দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। এইগুলি ধরণির কোনো এক প্রান্ত থেকে উৎপত্তি লাভ করে প্রচণ্ডবেগে ধাবিত হয়ে, প্রস্তর হৃদয় বিদ্ধ করে আবার অনন্তের দিকে ছুটে চলেছে। এই গতির শেষ বা বিরাম বলে কিছুই নেই। লেখিকার রেলগাড়ি জল পরিবর্তনের জন্য সেখানে কিছু সময় থেমেছিল। তিনি প্রাণভরে তখন জলপ্রপাতের সেই সৌন্দর্যরূপ দর্শন করেন।

“ইহাদেরই কোন একটি বিশালকায় জাহ্নবীর উৎস,” – ‘জাহ্নবীর উৎস’ কী? কেনই বা তা ‘জাহ্নবীর উৎস’?

হিমালয় চূড়াস্থিত নির্ঝরকেই ‘জাহ্নবীর উৎস’ বলে মনে করেছেন আলোচ্য প্রবন্ধের লেখিকা বেগম রোকেয়া।

কারণ – হিমালয় দর্শনকালে লেখিকা দর্শন করেন কোনো না কোনো ঝরনা থেকে নদীর উৎপত্তি। এমনিভাবে প্রচণ্ড গতিতে হিমালয়ের প্রস্তর হৃদয় বিদীর্ণ করে স্রোতধারা বহমান হয়েছে। অবিশ্রান্ত ধারায় বহমান এই জলধারা দেখেই তার মনে হয়েছিল জাহ্নবীরও উৎস এমনি এক নির্ঝর। আর এই নিরন্তর জলপ্রবাহ দেখে লেখিকার মন ভরে উঠেছিল।

“অবশেষে কারসিয়ং স্টেশনে উপস্থিত হইলাম,” – কার্সিয়াং স্টেশন কোথায়? কার্সিয়াং সম্পর্কে লেখিকা কী বলেছেন?

শিলিগুড়ি থেকে আঁকাবাঁকা পথে প্রায় চার হাজার ফিট ওপরে কার্সিয়াং।

যা বলেছেন – লেখিকা বেগম রোকেয়া হিমালয় দর্শনকালে চড়াই উতরাই পথে রেলগাড়িতে করে সেখানে এসে উপস্থিত হন। এখানকার উচ্চতা 4864 ফিট। গরমের জ্বালা সেখানে অনুভূত হয় না। অতি উচ্চে ওঠা সত্ত্বেও সেখানে শীত ততটাও তীব্র নয়। বাতাস এখানে মৃদুমন্দ গতিতে বয়ে চলে। দার্জিলিং ও শিলিগুড়ির কেন্দ্রভূমি কার্সিয়াং। এর চারদিকের অরণ্য প্রকৃতির শোভা অত্যন্ত মনোরম।

“… তথাকার বায়ু সেবন করিয়া চরিতার্থ হইল!” – কোথাকার বায়ুসেবন করার কথা বলা হয়েছে সংক্ষেপে লেখো।

শিলিগুড়ি হয়ে লেখিকা বেগম রোকেয়া রেলপথে হিমালয় দর্শনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। যাত্রার পূর্বে লেখিকার গরমবস্ত্রের ট্রাঙ্কগুলি ভুলবশত দার্জিলিং -এর ঠিকানায় বুক করা হয়েছিল। নিজের জিনিসপত্রের অভাবে গৃহসুখ অনুভব করতে পারেননি তিনি। সন্ধ্যার আগে সেই গরমবস্ত্র অর্থাৎ পশমিবস্ত্রের ট্রাঙ্কগুলি ফিরে এলে লেখিকা কৌতুককর ভাষায় এ কথা বলেন। ভুল না হলে ট্রাঙ্কগুলোর দার্জিলিং -এর বায়ুসেবন করা হত না। ভুল হওয়ার কারণেই ট্রাঙ্কগুলোর দার্জিলিং -এর বায়ুসেবন চরিতার্থ হয়েছিল।

“এ সময়কে পার্বত্য বসন্তকাল বলিলে কেমন হয়?” – কথাটির তাৎপর্য কী?

তাৎপর্য – লেখিকা বেগম রোকেয়া হিমালয় দর্শনকালে পার্বত্য অঞ্চলের মনোরম স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্নে প্রদত্ত উক্তিটি করেছেন। ওই সময় পার্বত্য অঞ্চলের বায়ু হালকা ও পরিষ্কার হয়। খুব শীত বা খুব গ্রীষ্ম কোনোটিই অনুভূত হয় না। শীত ও গ্রীষ্মের মাঝামাঝি তাই আবহাওয়া থাকে বসন্তকালীন। সূর্যকিরণও মোটামুটি প্রখর হয়ে থাকে। আবার কখনো-কখনো সামান্য বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। তাই লেখিকা ওই আবহাওয়াকে ‘পার্বত্য বসন্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।

পার্বত্য প্রদেশে জলপ্রাপ্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

জলপ্রাপ্তির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা – ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধে বেগম রোকেয়া বলেছেন – পার্বত্য প্রদেশে জলপ্রাপ্তির একমাত্র উৎস ঝরনা বা জলপ্রপাত। কিন্তু জল খুব স্বাস্থ্যকর নয়। যদিও জল দেখতে খুবই পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ। কিন্তু পানীয় জল ফিলটারে ছেঁকে পান করা হয়। সেখানে কোনো কূপ বা পুকুর নেই। শুধুই রয়েছে ঝরনার জল। ঝরনার জল সুবিমল। সেই জল দর্শনেও চোখ জুড়িয়ে যায়। পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টির জল কোথাও জমে থাকে না, পার্বত্য নদীতে অপসৃত হয়।

‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধে বেগম রোকেয়া হিমালয় প্রদেশে মেঘের কী বর্ণনা দিয়েছেন।

মেঘের বর্ণনা – হিমালয়ের পার্বত্য প্রদেশে বায়ু ও মেঘের মধ্যে সুন্দর লুকোচুরি খেলা দেখা যায়। একদিকে মেঘ, আরেকদিকে বাতাস। বাতাসের তাড়নায় মেঘ এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চলে যায়। প্রতিদিনই অস্তায়মান সূর্য মেঘ ও বায়ুর মধ্যে রূপসৌন্দর্য রচনা করে। পশ্চিমাকাশে পাহাড়ের গায়ে সূর্যের স্বর্ণাভ আভায় সুকুমার মেঘেরা সোনা মেখে বায়ুর ভারে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। লেখিকা বেগম রোকেয়া মেঘেদের এই আলোছায়ার খেলায় বিমোহিত হন।

ঢেঁকিশাক কী? ঢেঁকিশাক সম্পর্কে লেখো।

ঢেঁকিশাক পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদেরা সবুজ রংবিশিষ্ট।

ঢেঁকিশাকের পরিচয় – ঢেঁকিশাক ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদ। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম Dryopteris Filixmas। এটি অপুষ্পক উদ্ভিদ। এর নবীন অপরিণত পাতাগুলি কুণ্ডলিকৃত হয়ে থাকে। সাধারণত পাতাগুলো খাঁজকাটা থাকে। কচি অবস্থায় এই ঢেঁকিশাক মানুষ ও গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমরা ঢেঁকিশাক শাক হিসেবে ভোজন করি। এর কান্ডগুলি গ্রন্থিকাণ্ড। এর ফুলফল হয় না বা বীজ হয় না।

লেখিকা বেগম রোকেয়ার হিমালয়ের অরণ্য প্রকৃতিতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লেখো।

অভিজ্ঞতা – ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধে লেখিকা বেগম রোকেয়া লিখেছেন – হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে অরণ্যপ্রকৃতি অত্যন্ত ঘন ও সন্নিবিষ্ট। নির্জন বন্যপথে বাঘ নেই, তাই নির্ভয়ে ভ্রমণ উপযোগী। তবে সাপ ও ছিনে জোঁক অরণ্য অঞ্চলে লক্ষণীয়। জোঁক মানুষের দেহ থেকে রক্ত শোষণ করে নেয়। শোষণ শেষ হলে আপনাআপনি তারা চলে যায়। সেখানকার স্ত্রীলোকেরা অর্থাৎ ভুটিয়া চাকরানিরা জোঁককে ‘ভালু’ বলে। বন্যপ্রকৃতির শোভাবর্ধন করেছে নিবিড় বনানী ও সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থানকারী মানুষেরা।

‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধাংশ অবলম্বনে ভুটিয়ানিদের পরিচয় দাও।

পরিচয় – হিমালয় পার্বত্য প্রদেশে বসবাসকারী স্ত্রীজাতিকে ভুটিয়ানি বলা হয়। তারা নিজেদের ‘পাহাড়নি’ বলে আখ্যা দেয়। স্বভাবতই তারা শ্রমশীলা, কর্মঠ, সৎ ও সাহসী। তারা বন্য প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠে। বন্যপ্রাণীকে ভয় না পেলেও জোঁকের উপদ্রব থেকে নিস্তার নেই। ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধে বেগম রোকেয়া লিখেছেন ভুটিয়ানিরা সাত গজ লম্বা কাপড় ঘাঘরার মতো করে পরে, কোমরে এক খণ্ড কাপড় জড়ানো থাকে। গায়ে জ্যাকেট এবং বিলাতি শাল দিয়ে মাথা ঢাকা থাকে। পিঠে এক মন বোঝা নিয়ে অনায়াসে উঁচুতে উঠতে পারে তারা, আবার একইভাবে তারা নীচেও যায়।

পার্বত্য অঞ্চলে রমণী জাতি দুর্বল কিনা এ নিয়ে লেখিকার মনে সংশয় তৈরি হয়েছিল কেন?

কারণ – সমাজ ও সংসারের নিরিখে রমণীকে পুরুষ অপেক্ষা সবসময়ই দুর্বল বলে মনে করা হয়। ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধাংশে বেগম রোকেয়া দেখিয়েছেন পার্বত্য প্রদেশে পুরুষদের অপেক্ষা রমণীরা অনেক কর্মঠ হয়। কর্মনিষ্ঠ এই রমণীদের তথাকথিত অবলা আখ্যা দেওয়া যায় না। তারা উদরান্নের জন্য পুরুষদের উপর নির্ভরশীল নয়। প্রস্তরসংকুল এবড়ো-খেবড়ো পথে তারা সহজে উঠে যায়। অবলারা পাথর বহন করে, আর সবল পুরুষেরা সেইগুলো বিছিয়ে পাহাড়ি পথ তৈরি করে।

“যেন ইহাদের মতে ‘নীচেকা আদমি-ই অসভ্য’!” – ভুটিয়ানিদের ভাবনায় ‘নীচেকা আদমি’ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

সংক্ষিপ্ত আলোচনা – ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধাংশে বেগম রোকেয়া লিখেছেন, ‘ভুটিয়ানিরা’ নিজেদের ‘পাহাড়নি’ বলে। আর সমতলের মানুষদের তারা ‘নীচেকা আদমি’ বলে। তারা সৎ, সাহসী, শ্রমশীলা ও কর্মঠ। কিন্তু বর্তমানে নীচেকা আদমির সংস্রবে তারা তাদের সদগুণ হারাচ্ছে। বাজারের পয়সা অল্পস্বল্প চুরি করে, দুধে জল মেশায়। তাদের কাছে ‘নীচেকা আদমি’ই অসভ্য। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ‘নীচেকা আদমি’র সঙ্গেই আবার তারা পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়।

“আমাদের বাসা হইতে প্রায় এক মাইল দূরে বড়ো একটা ঝরনা বহিতেছে;” – কোথায় লেখিকার বাসা? সেখানে দেখা ঝরনা সম্পর্কে লেখো।

হিমালয় দর্শনের উদ্দেশে যাত্রাকালে সমতল অর্থাৎ শিলিগুড়ি থেকে চার হাজার ফিটের উপরে কার্সিয়াং শহরে লেখিকা বেগম রোকেয়া অবস্থান করেছিলেন। সেখানকার বাসার কথাই বলা হয়েছে ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধাংশ থেকে সংকলিত প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে।

ঝরনা – লেখিকার বাড়ির অনতিদূরে যে ঝরনা দৃষ্ট হয়েছিল তার জলধারা যেন দুধের ফেনার ন্যায় দুরন্ত গতিতে প্রবহমান। অতি শীতল স্বচ্ছ জলধারায় হৃদয় ও প্রাণ উভয়ই সিক্ত হয়। দিবানিশি যেন আপন গতিধারায় কলকল্লোল গতিতে সেই জলরাশি প্রবাহিত হয়ে চলেছে।

“সমুদ্রের সামান্য নমুনা, অর্থাৎ বঙ্গোপসাগর দেখিয়াছি, বাকি ছিল পর্বতের একটু নমুনা দেখা।” – বক্তব্যের আড়ালে যে ইঙ্গিত রয়েছে, তা আলোচনা করো।

বক্তব্যের আড়ালের ইঙ্গিত – পর্বত দর্শনের পিপাসাকে চরিতার্থ করার জন্য হিমালয় দর্শন উপলক্ষ্যে লেখিকা বেগম রোকেয়া বেরিয়েছিলেন। পর্বতদর্শনে তিনি মুগ্ধ ও আপ্লুত। সমুদ্রের সামান্য নমুনা হিসেবে তিনি বঙ্গোপসাগর দেখেছিলেন আবার পর্বতভূমি দর্শন ও তার পাদদেশের বিস্তৃতি ও অনন্যতায় তিনি উচ্ছ্বসিত। প্রশ্নোদ্ধৃত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর সৃষ্ট পৃথিবী যে কত সুন্দর এবং সেই সৌন্দর্য উপভোগের বাসনা যে লেখিকা মনের মধ্যে পোষণ করেন তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

ঈশ্বরের প্রতি লেখিকা কেন কৃতজ্ঞ?

‘হিমালয় দর্শন’ গদ্যাংশের লেখিকা বেগম রোকেয়া ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ তাঁকে মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করায়। তিনি মানুষ বলেই প্রকৃতির অগাধ বৈচিত্র্য আর অপরূপ সৌন্দর্য প্রাণ-মন-মস্তিষ্ক দিয়ে উপলব্ধি করতে পারেন। একদিকে অতলান্ত সমুদ্র, অন্যদিকে উদার পর্বতমালা, সৌন্দর্যময় প্রকৃতির এই বৈচিত্র্যে তাঁর দর্শনপিপাসা শতগুণ বেড়ে যায়। এই সৌন্দর্য আস্বাদনকালে লেখিকার মন প্রাণ স্বতই সমস্বরে বলে ওঠে ‘ঈশ্বর প্রশংসার যোগ্য। তিনিই ধন্য!’

“না, সাধ তো মিটে নাই!” – কার, কোন্ সাধ মিটে নাই? কেনই বা মেটেনি?

‘হিমালয় দর্শন’ গদ্যাংশে লেখিকা বেগম রোকেয়ার হিমালয় দর্শনের সাধ মেটেনি।

কারণ – হিমালয় দর্শনকালে লেখিকা যতই বিবিধ ক্ষেত্রে ভ্রমণ করেছেন, ততই তাঁর দর্শনপিপাসা আরও বেড়ে গেছে। বনরাজি, মানুষ, জীবজন্তু থেকে শুরু করে পাহাড়ি পথ, প্রাকৃতিক পরিবেশ, আবহাওয়া, পার্বত্য অঞ্চল সমস্তই লেখিকাকে আকৃষ্ট করেছিল। তাই তিনি হিমালয় দর্শন করেও দর্শনপিপাসামুক্ত হননি, দর্শনপিপাসা শতগুণ বেড়ে গেছে।

“কিন্তু কেবল দুইটি চক্ষু দিয়াছেন,” – কোন্ প্রসঙ্গে কেন লেখিকা এ কথা বলেছেন?

কারণ – লেখিকা বেগম রোকেয়া হিমালয় দর্শন করে অত্যন্ত সুখ অনুভব করেছেন। ঈশ্বরের কাছে তাঁর কৃতজ্ঞতার সীমা নেই। যতই তিনি ভ্রমণ করেছেন, ততই তাঁর ভ্রমণপিপাসা আরও বেড়ে গেছে, বেড়েছে দর্শনপিপাসাও। তাই তার মনে হয়েছে বিধাতা দুটি চোখ দিয়েছেন কিন্তু তা দিয়ে যতটা দেখা যায়, আরও অনেক চোখ দিলে তার থেকে আরও বেশি দেখা যেত। উঁচু শৃঙ্গ কিংবা ঝরনা প্রত্যেকেই যেন বলছে তাদের না দেখে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে। মহাশিল্পীর শিল্পকে উপাসনা করতে, শ্রদ্ধার্পণ করতে হবে। তবেই ধন্য হয়ে উঠবে সৃষ্টি ও স্রষ্টা।

“চিত্র দেখিয়া চিত্রকরের নৈপুণ্য বুঝা যায়।” – চিত্রকর কে? তার নৈপুণ্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধাংশে বেগম রোকেয়া ‘চিত্রকর’ বলতে জগতের সৃষ্টিকর্তা অর্থাৎ বিশ্ববিধাতাকে বুঝিয়েছেন।

চিত্রকরের নৈপুণ্য – হিমালয় দর্শনকালে পার্বত্য প্রকৃতির শোভা দেখে লেখিকার মনে হয়েছিল যে বিধাতা যেন চিত্রকর। এই বিশ্ব-প্রকৃতি তার ক্যানভাস। রং-তুলির টানে পার্বত্যভূমির চিত্র অঙ্কন করে রেখেছেন তিনি। বনভূমি, ঝরনা, নদী, উপত্যকা, মেঘ, হরিৎক্ষেত্র, শ্যামল চায়ের ক্ষেত্র সমস্তই তার চিত্রিত নিপুণ ছবি। মহান শিল্পীর আঁকা সেই বিস্তৃত ক্ষেত্রের মাঝে হিমালয় বালুকণার চেয়েও ছোটো।

“… হিমালয় কত ক্ষুদ্র!” কী কারণে লেখিকা এই মন্তব্য করেছেন?

কারণ – ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধাংশে লেখিকা বেগম রোকেয়া বলেছেন, এই বিশ্বজগৎ বিধাতার সৃষ্টি। পার্বত্যভূমি তার অংশবিশেষ। হিমালয়যাত্রা ও তার পাদদেশে অবস্থানকালে লেখিকার মনে হয় হিমালয়ের পাদদেশ অত্যন্ত বিস্তৃত এবং ব্যাপক। চারপাশে বনরাজি, শ্যামলক্ষেত্র, চায়ের বৃক্ষরাজি, ঝরনা, পার্বত্য মানুষ, জীবজন্তু, নদী, মেঘ, সংকীর্ণ পথ ইত্যাদির অসীম বিস্তৃতি। এই বিস্তৃতির মধ্যে রয়েছে সুউচ্চ হিমালয়। আপন মহত্ত্বে মহীয়ান হলেও স্থিতধী হিমালয় বিস্তৃতির ক্ষেত্রে ছোটো বলেই তাঁর মনে হয়।

“মন, মস্তিষ্ক, প্রাণ সব লইয়া উপাসনা করিলে, তবে তৃপ্তি হয়।” – উপাসনা কী? কেনই তা করার কথা লেখিকা উল্লেখ করেছেন?

উপাসনা বলতে বোঝায় ঈশ্বরের আরাধনা।

কারণ – সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি দেখে শুধু তার গুণকীর্তনই শেষ কথা নয়। সেই সৃষ্টি ইন্দ্রিয় অর্থাৎ চক্ষু কর্ণ দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে বলে ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধে বেগম রোকেয়া মনে করেছেন। মন ও প্রাণের আবেগে তার শ্রেষ্ঠত্ব অনুধাবন করলেই তা ধন্য হয়ে উঠবে। কিছু মন্ত্র উচ্চারণই ঈশ্বর উপাসনার একমাত্র পথ নয়। প্রাণের আবেগই হল মুখ্য উপাসনা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শন করলে আমরা চেতনার অমোঘ নিয়মে বলে উঠি ‘ঈশ্বরের অসামান্য সৃষ্টি।’ সেই সৃষ্টিকে দেখার ও বোঝার সুযোগ লাভে নিজেকে ধন্য মনে করে থাকি।

“ঈশ্বরই প্রশংসার যোগ্য।” – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা করো।

ব্যাখ্যা – ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধাংশে লেখিকা বেগম রোকেয়া ঈশ্বরের অদ্ভুত সৃষ্টিসৌন্দর্যে বিমোহিত মানুষের মুগ্ধতার প্রকাশ প্রসঙ্গে প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন। ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। বোধবুদ্ধি দিয়ে অনুধাবন করার ক্ষমতাও ঈশ্বরপ্রদত্ত। চোখ ও কানের মতো ইন্দ্রিয়যোগে মনপ্রাণের মেলবন্ধনে এই সৃষ্টিগুলি চর্চিত হয় আর তখনই সৃষ্টি হয়ে উঠে সার্থক ও ধন্য। শুধু গুণকীর্তন নয়, প্রাণের আবেগে তখন আমরা শ্রদ্ধার্পন করি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শনে সৃষ্টিকর্তার বিধানে আমাদের মনও সুন্দর হয়ে ওঠে। জীবন হয় সার্থক। তাই সৃষ্টিকর্তার প্রশংসায় আমরা স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠি।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের তৃতীয় পাঠের প্রথম অধ্যায়, ‘হিমালয় দর্শন’ -এর কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

নবম শ্রেণি - বাংলা - চিঠি - ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – চিঠি – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি - বাংলা - চিঠি - অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – চিঠি – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণি - বাংলা - চিঠি - বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণি বাংলা – চিঠি – বিষয়সংক্ষেপ

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

নবম শ্রেণি বাংলা – চিঠি – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – চিঠি – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার কাকে বলে? ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার -এর মধ্যে পার্থক্য

নবম শ্রেণি বাংলা – চিঠি – বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণি বাংলা – হিমালয় দর্শন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর